৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বিদ্যমান, সংস্কারের দাবি
- আপডেট টাইম : ০৭:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
- / ২ ৫০০০.০ বার পাঠক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের পর দেশের ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান পোষ্য কোটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীরা চাচ্ছে পোষ্য কোটা বাতিল, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চাচ্ছে সংস্কার।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়—এই ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১১ ধরনের কোটার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পোষ্য কোটার বাইরে বাকি ১০ ধরনের কোটা হলো প্রতিবন্ধী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেলোয়াড়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অ–উপজাতি (পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী বাঙালী), বিদেশি শিক্ষার্থী, দলিত, চা–শ্রমিক ও বিকেএসপি (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) কোটা। অবশ্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ১১ ধরনের কোটার সব কটি নেই। এর বাইরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কোটা ছিল, যার আওতায় উপাচার্য ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারতেন।
এছাড়া এই পোষ্য কোটার মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান, স্ত্রী ও ভাই-বোনদের ভর্তি করাতে পারেন। পরীক্ষায় পাস করলেই পোষ্যরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির সুযোগ পান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যতজন আবেদন করেন, ততজনকেই ভর্তি করা হয়। এবার অবশ্য পোষ্য কোটায় প্রতি বিভাগে চারজনের বেশি ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। ফলে ৩৭টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সর্বোচ্চ ১৪৮ জন পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। বিগত পাঁচ বছরে পোষ্য কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সর্বনিম্ন ৫৩, সর্বোচ্চ ৫৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবদুর রশিদ বলেন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পোষ্য কোটা থাকতে পারে, তবে সেখানে সংস্কার করতে হবে। একটি বিভাগে একজনের বেশি পোষ্য কোটায় ভর্তি করা যাবে না। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কোনোমতে পাস করলেই ভর্তির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানায়, পোষ্যরা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এবং কোনো নির্দিষ্ট বিভাগে ভর্তির শর্ত পূরণ করলে, তাকে সেখানে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এ জন্য মেধাতালিকার কাউকে বঞ্চিত করা হয় না; বরং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিভাগে একটি–দুটি আসন বাড়ে। চার বছরে ভর্তির চিত্রে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ২৪ থেকে ৩০ জন ভর্তি হয়েছেন পোষ্য কোটায়। আবেদন করেছিলেন অনেক বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্যদের জন্য ১৬৬টি আসন রয়েছে। তবে সেখানে ভর্তি হয় সাধারণ মেধাতালিকার বাইরে থেকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার নির্দিষ্ট আসন সংখ্যা নেই। পাস করলেই পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে পারেন আবেদনকারীরা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ২০টি আসন রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ ধরনের কোটা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮টি আসন রাখা হয়েছে পোষ্য কোটায়, যা ওয়ার্ড কোটা নামে পরিচিত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মো. হান্নান রাহিম বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এই মুহূর্তে আমরা পোষ্য কোটা বাতিল চেয়ে আন্দোলন করছি। তবে অনগ্রসর মানুষের জন্য কিছু কোটা থাকা দরকার, তাই অন্যান্য কোটা সংস্কার করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটা কিছুটা হলেও রাখার দাবি করছেন। প্রয়োজনে তা সংস্কারের পক্ষ তারা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের বাড়তি টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সক্ষমতা নেই। তাই আমরা পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সংখ্যাটা কমিয়ে সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। আন্দোলনের পর গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা ৩ শতাংশ করার কথা জানায়। তবে আন্দোলন থামেনি। একপর্যায়ে ১ জানুয়ারি শিক্ষক ও কর্মকর্তার সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করে শুধু কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন। তা–ও মানেননি আন্দোলনকারীরা। পরে উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্য কোটা পুরো বাতিলের ঘোষণা দেন, যার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, দাবি না মানা হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতেই হবে। পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে আসন ও সম্পর্কের ধরন সীমিত করা যেতে পারে। আবার ভর্তির ক্ষেত্রে যোগ্যতার শর্তও পর্যালোচনা করা যায়। একেবারে বাদ দেওয়া কঠিন হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনকারী এখন আর খুব একটা থাকে বলে মনে হয় না। নাতিপুতিদের ক্ষেত্রে কোটা নির্দিষ্ট সময় দিয়ে রহিত করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা থাকতেই হবে। পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে আসন ও সম্পর্কের ধরন সীমিত করা যেতে পারে। একেবারে বাদ দেওয়া কঠিন হবে।