হয় ডাক্তার দিন। না হয়, হাসপাতাল বন্ধ করে দিন। ১’লাখ ৭৭ হাজার ৮শত ৯৩ জনে, ডা: মাত্র ১ (এক) জন’
- আপডেট টাইম : ১২:১৩:২২ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৪ ৫০০০.০ বার পাঠক
“হাসপাতালে ডাক্তার চাই, পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করুন,হাসপাতালে ডাক্তার দিন না হয় বন্ধ করে দিন” এমন নানান স্লোগানে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সহ জনবল নিয়োগ এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবার দাবিতে মানববন্ধন করেছে উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ।
মঙ্গলবার সকাল ১০.৪৫ মিনিটে পাথরঘাটার গোল চত্বরে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জরুরী ভিত্তিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সহ জনবল নিয়োগ এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য জেলা সিভিল সার্জনের কাছে দাবি তোলেন মানববন্ধনকারীরা।
স্থানীয় একটি বেসরকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আইনজীবী এ্যডভোকেট নজরুল ইসলাম, পাথরঘাটা পৌর বিএনপি যুগ্ন আহবায়ক, ইরফান আহমেদ সোয়েন,পৌর বিএনপি’র সদস্য সচিব ইসমাইল সিকদার এসমে, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আল বকর মেছাল, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক মারুফ চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক গিয়াস আহমেদ, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব এম.আরাফাত রহমান অভি, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাকিবুল হাসান, পাথরঘাটা পৌর বণিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের খান সহ মানবিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন(প্রত্যয়)এর প্রতিষ্ঠতা মেহেদী সিকদার প্রমূখ।
বক্তারা বলেন,সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার গুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়াটা অন্যতম। প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলা এবং বিভাগে নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য সরকারি ভাবে তৈরি করা হয়েছে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা কমপ্লেক্স। সে হিসেবে পাথরঘাটায় ১লক্ষ ৭৭হাজার ৮শত ৯৩ জন নাগরিকের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও এখানে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ২জন চিকিৎসক। আমরা পাথরঘাটার জনসাধারণ একাধিকবার মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও নির্দিষ্ট পরিমাণের চিকিৎসকের জন্য দাবি দয়া করলেও বরগুনার সিভিল সার্জন এখন পর্যন্ত এ বিষয়টির সমাধান দেওয়া তো দূরের কথা। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপও নেননি। এতে বক্তারা আরো বলেন,যেহেতু পাথরঘাটা উপজেলাটি দেশের সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থিত। তাই আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বরগুনার সিভিল সার্জন এর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যদি আপনারা পাথরঘাটার জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা অর্থাৎ আমাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারেন তবে আমাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক নেই এবং মানসম্মত চিকিৎসা সেবা মেলে না এমন নামমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দরকার নাই।
এর প্রেক্ষিতে আমরা সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাই, প্রতিদিনের মতো আজ পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের একটি দীর্ঘ লাইন। আমরা চিকিৎসা নিতে কয়েকজনের সাথে কথা বললে তাদের মধ্য থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রাবেয়া বেগম দৈনিক সময়ের কণ্ঠকে জানান, সকাল দশটায় আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলেও এখন বেলা বারোটা বাজলেও আমার বাচ্চাকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা নিতে পারিনি। কারণ এত বড় একটি হাসপাতলে যদি মাত্র দুইজন ডাক্তার থাকে তবে যে দুজন ডাক্তার আছে তাদেরও বা কি করার। তিনি আরো বলেন, হয়তোবা আমরা গরিব বলেই সকাল থেকে এখনো পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমি বর্তমান সরকারের কাছে দাবি রাখতে চাই সরকার যাতে আমাদের মত গরিবের কথা চিন্তা করে পাথরঘাটা হসপিটালের দিকে একটু তাকায়।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আব্দুর রহিম নামের একজন জানান,নতুন করে আমরা স্বাধীনতা পেলেও ভালো থাকার জন্য বা আমাদের মৌলিক অধিকার থেকে আমরা এখনো অনেকটা বঞ্চিত রয়েছি আজও যদি আমাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত না হয় তবে হবেটা কবে। সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসকের দেখা পেলেও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পায়নি। এত বড় একটি হাসপাতালে যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না হয় তবে আমাদের জন্য ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না। আমি সরকারের কাছে পাথরঘাটার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে পাথরঘাটা কাঁঠালতলী ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বললে, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ২জন চিকিৎসক। আমার পোস্টিং কাঁঠালতলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হলেও পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার না থাকায় প্রথমে আমাকে এখানে আনা হয়েছে। পরবর্তীতে এখানের প্রধান কর্মকর্তা বদলি হয়ে যাওয়াতে আমি এখন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।তিনি আরো জানান, আমি এখানে আসার পরে দুমাস আগে চারজন চিকিৎসক থাকলেও পরবর্তী মাসে একজন চলে যাওয়াতে আমরা তিনজনের চিকিৎসা সেবা দিতে চেয়েছিলাম। এ মাসে আরো একজন চলে যাওয়াতে এখন আমরা দুজন চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।