ঢাকা ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাফুফের নিবন্ধন লাভ করেছে দক্ষিণ হালিশহর ফুটবল একাডেমি কোস্ট গার্ডের আয়োজনে নৌপথ ও সুন্দরবনের নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা সভা রুলার সরকার না থাকায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রকম অসুবিধায় রয়েছে।। ঠাকুরগাঁওয়ে ভার্চুয়ালি মির্জা ফখরুল ইসলাম ৫ আগস্টের পর সব রাজবন্দি মুক্তি পেলেন, আজহার পেলেন না এবার করা হলো শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও জাতীয় ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন কাকরাইল আগুরাগলি এলাকায় মজুমদার ভিলা—৯৪ নং আবাসিক ভবন রাজউক কর্তক অবৈধ নকশায় নির্মাণ করার প্রমাণিত হওয়ায় মালিককে চিঠি পর্ব ২ শ্রীপুরে ওসি’র ঘুষ লেনদেনের অডিও ভাইরাল গুলশানে র‍্যাবের ক্যাশিয়ার শাহ আলমের ইস্পায় গড়ে তুলেছে অপরাধের আখড়া। পর্ব ২ জানাযায় প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে গুরুত্ব পাবে কতটুকু নার্সিং ডিপ্লোমাকে ডিগ্রী সমমান করার দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থান কর্মসূচি

রোগীর সমস্যা ডান চোখে ডাক্তার অপারেশন করলেন বাম চোখ!

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল ২০২১
  • / ৩২৬ ৫০০০.০ বার পাঠক

সাইফুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি।।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের একটি চক্ষু হাসপাতালে ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করায় দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছে অসহায় এক বৃদ্ধা মহিলা। অন্যদিকে চিকিৎসার দায় এড়াতে টেস্ট রিপোর্ট দাতা টেকনিশিয়ানের ভুল বলে দাবি করছেন চিকিৎসক। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি জানাজানি হলেও রহস্য উদঘাটনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানা যায়, গত মার্চে ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে ডাক্তার দেখান গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের হরিষা গ্রামের সুফিয়া বেগম (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধা। এ সময় টেস্টের মাধ্যমে তার ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করা হয়। এ কারণে চিকিৎসক তার চোখ অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেন। নির্ধারিত তারিখ অনুসারে ৬ মার্চ তার অপারেশন হয়। তবে ওইদিন ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করা হয়। ভুক্তভোগী রোগী আপত্তি জানালেও ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান।

রোগীসহ স্বজনরা ওই ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদ করায় ওই চিকিৎসক অপারেশনটি ভুল নয়, হাসপাতালের ল্যাব টেস্টের রিপোর্টে ভুলবশত বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে বলে জানান। এ কারণেই বাম চোখের অপারেশন করা হয়েছে। এতে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয় এবং ভুল চিকিৎসার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরবর্তীতে ১৬ মার্চ বিনা পয়সায় ডানের চোখের অপারেশনটি করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগী সুফিয়া বেগম (৬৫) বলেন, আমার ডান চোখে সমস্যা ছিল। কিন্তু ডাক্তার আমার বাম চোখের অপারেশন করেছেন। এতে আমি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছি।

রোগীর ছেলে জজ মিয়া বলেন, আমি আমার আম্মাকে নিয়ে ৬ মার্চ ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে যাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে ডান চোখে ব্লক আছে ও অপারেশন করতে হবে বলে জানান। আম্মার অপারেশন করার অনুমতি দেই আমি। অপারেশন শেষে দেখি আমার আম্মার বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছে। বিষয়টি ডাক্তারকে জানালে তিনি বলেন, পরীক্ষায় আপনার আম্মার বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে। এটি কেন হলো এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।

এর ১০ দিন পর আবার হাসপাতালে আম্মার চোখের সেলাই কাটতে যাই। ওইদিন ডাক্তার বিনা পয়সায় আমার আম্মার ডান চোখের অপারেশনটি করে দেন।

হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাদিয়া বলেন, টেস্ট রিপোর্টে ডান চোখেই ব্লক দেখানো হয়েছে। এরপরও ডাক্তার বাম চোখ অপারেশন করেছেন। এখন তার ভুল ধামাচাপা দিতে আমার ও রিপোর্টের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান বলেন, আমি রোগী ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করি এবং অপারেশনের জন্য বলি। তবে ল্যাব টেকনিশিয়ান ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখে ব্লক দেখিয়ে রিপোর্ট করেন। এ কারণে আমি ডান চোখের পরিবর্তে আমি বাম চোখের অপারেশনটি করে ফেলি। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন।

পরবর্তীতে ১৬ মার্চ আমার তত্ত্বাবধানে ওই রোগীর ডান চোখের অপারেশনটি বিনা পয়সায় করে দেয়া হয়েছে। ভুল চিকিৎসার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত কমিটি করেননি বলেও জানান তিনি।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছিল। পরে পরিবারের সাথে কথা বলে রোগীর ডান চোখটির অপারেশন করে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কি কারণে আর কেন এমন ভুল হয়েছে সেটি উদঘাটনে এখনও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. শাহবুদ্দিন খান বলেন, অতি দ্রুতই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রোগীর সমস্যা ডান চোখে ডাক্তার অপারেশন করলেন বাম চোখ!

আপডেট টাইম : ১২:৪৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল ২০২১

সাইফুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি।।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের একটি চক্ষু হাসপাতালে ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করায় দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছে অসহায় এক বৃদ্ধা মহিলা। অন্যদিকে চিকিৎসার দায় এড়াতে টেস্ট রিপোর্ট দাতা টেকনিশিয়ানের ভুল বলে দাবি করছেন চিকিৎসক। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি জানাজানি হলেও রহস্য উদঘাটনে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানা যায়, গত মার্চে ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে ডাক্তার দেখান গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের হরিষা গ্রামের সুফিয়া বেগম (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধা। এ সময় টেস্টের মাধ্যমে তার ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করা হয়। এ কারণে চিকিৎসক তার চোখ অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেন। নির্ধারিত তারিখ অনুসারে ৬ মার্চ তার অপারেশন হয়। তবে ওইদিন ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করা হয়। ভুক্তভোগী রোগী আপত্তি জানালেও ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখের অপারেশন করেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান।

রোগীসহ স্বজনরা ওই ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদ করায় ওই চিকিৎসক অপারেশনটি ভুল নয়, হাসপাতালের ল্যাব টেস্টের রিপোর্টে ভুলবশত বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে বলে জানান। এ কারণেই বাম চোখের অপারেশন করা হয়েছে। এতে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয় এবং ভুল চিকিৎসার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরবর্তীতে ১৬ মার্চ বিনা পয়সায় ডানের চোখের অপারেশনটি করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগী সুফিয়া বেগম (৬৫) বলেন, আমার ডান চোখে সমস্যা ছিল। কিন্তু ডাক্তার আমার বাম চোখের অপারেশন করেছেন। এতে আমি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছি।

রোগীর ছেলে জজ মিয়া বলেন, আমি আমার আম্মাকে নিয়ে ৬ মার্চ ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালে যাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে ডান চোখে ব্লক আছে ও অপারেশন করতে হবে বলে জানান। আম্মার অপারেশন করার অনুমতি দেই আমি। অপারেশন শেষে দেখি আমার আম্মার বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছে। বিষয়টি ডাক্তারকে জানালে তিনি বলেন, পরীক্ষায় আপনার আম্মার বাম চোখে ব্লক দেখানো হয়েছে। এটি কেন হলো এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।

এর ১০ দিন পর আবার হাসপাতালে আম্মার চোখের সেলাই কাটতে যাই। ওইদিন ডাক্তার বিনা পয়সায় আমার আম্মার ডান চোখের অপারেশনটি করে দেন।

হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাদিয়া বলেন, টেস্ট রিপোর্টে ডান চোখেই ব্লক দেখানো হয়েছে। এরপরও ডাক্তার বাম চোখ অপারেশন করেছেন। এখন তার ভুল ধামাচাপা দিতে আমার ও রিপোর্টের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফারুক হাসান বলেন, আমি রোগী ডান চোখে ব্লক নির্ণয় করি এবং অপারেশনের জন্য বলি। তবে ল্যাব টেকনিশিয়ান ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখে ব্লক দেখিয়ে রিপোর্ট করেন। এ কারণে আমি ডান চোখের পরিবর্তে আমি বাম চোখের অপারেশনটি করে ফেলি। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন।

পরবর্তীতে ১৬ মার্চ আমার তত্ত্বাবধানে ওই রোগীর ডান চোখের অপারেশনটি বিনা পয়সায় করে দেয়া হয়েছে। ভুল চিকিৎসার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত কমিটি করেননি বলেও জানান তিনি।

ভূঞাপুর চক্ষু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ভুলবশত ডান চোখের পরিবর্তে বাম চোখ অপারেশন করা হয়েছিল। পরে পরিবারের সাথে কথা বলে রোগীর ডান চোখটির অপারেশন করে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কি কারণে আর কেন এমন ভুল হয়েছে সেটি উদঘাটনে এখনও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. শাহবুদ্দিন খান বলেন, অতি দ্রুতই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঘটনাটির রহস্য উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।