শ্রীপুরে ওসি’র ঘুষ লেনদেনের অডিও ভাইরাল

- আপডেট টাইম : ০৫:৪৭:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
- / ২ ৫০০০.০ বার পাঠক
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ লেনদেন নিয়ে ওসি বলেন, তুমি তো আমাকে গেঞ্জি দিলা না, ফুলহাতা। আচ্ছা ঢাকা থেকে নিয়ে আসবো। তোমার নানা আমাকে দেখে না কেন? ৫ হাজার ১০ হাজার এটা কোনো টাকা? এই টাকা দিয়ে কী হয়। আমি এত চাপ নিচ্ছি। তোমার নানাকে বইলো আমাকে লাখ পাঁচেক টাকা দিতে। তবে ওসি বলছেন একটি চক্র তার কথা এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছড়িয়ে দিয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের সঙ্গে একটি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা গ্রামের ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদারের সঙ্গে কথা বলছে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর থেকেই ওসি বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি অব্যাহত রেখেছেন বলে তিনি জানান। গতকাল সকালে ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার নিজেই রেকর্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং ওসি তাকে অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
বলে জানান। সেলিম শিকদার বলেন, অনেক টেনশনে আছি, অনেক হুমকি খাইলাম। আমার এক আত্মীয় আছে, তার মাধ্যমে রোববার সকাল থেকেই ওসি ফোন দিতাছে। পরে রাতে যখন রেকর্ড ফাঁস হয়ে গেছে, তখন আর ফোন দেয় নাই। উনার তৈরি করা একটি লেখা (প্রেসক্রিপশন) আমাকে ধরাইয়া দিছে। কয় এভাবে ফেসবুক লাইভে এসে বলবেন এই রেকর্ড ভুয়া, তাহলে আমার কোনো প্রবলেম হবে না, আপনারও কোনো প্রবলেম হবে না। নইলে কিন্তু আপনার খবর আছে। তিনি জানান, উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা গ্রামে ফর্মুলা ওয়ান স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানা তার (সেলিম শিকদার) নানা ১০/১৫ বছর আগে জমি কিনে দেয়াসহ কারখানা স্থাপনে সহযোগিতা করেন। এ সুবাদে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমরা ঝুট ব্যবসাসহ কারখানার ভালোমন্দ দেখে আসছি, এখানে কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যবসা করতাম না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আমাদের ব্যবসায় বাধা দিয়েছিল। কিন্তু কারখানার মালিক বলেছিল, যেহেতু উনি আমার কারখানার জায়গা জমি কিনে
দিয়েছে এই সূত্রে উনাকে ব্যবসা দিয়েছি। এখানে রাজনৈতিক লোকের কোনো কাজ হয়নি আরকি। এই সূত্রে আমরা ব্যবসা করতাম। সেলিম শিকদার আরও বলেন, ৫ই আগস্টের পরে ওসি খানায় আসার পর পুরনো এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) কাছ থেকে আমার নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে থানায় যাইতে বলছে। থানায় যাওয়ার পর ওসি বলতেছে যদি ব্যবসা করতে চান তাহলে আমাকে মান্থলি টাকা দিতে হবে দুই লাখ করে। তো প্রথম দিন আমি ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তারপরে উনারে বললাম স্যার ব্যবসাই হয় ২/৩ লাখ টাকা। যদি আপনারে দুই লাখ টাকা দিয়া দেই তাহলে কিভাবে হবে। পরে ওই জায়গায় এক লাখ টাকা মাসে তার সঙ্গে চুক্তি হলো। এক লাখ টাকা করে দিয়েছিলাম। প্রথম মাসে এক লাখই নিছিল, পরের মাসে দুই লাখ। দেড় লাখ দুই লাখ এ রকম করে নিতো। এ ছাড়াও সাহাবুদ্দিন নামে ৫০ হাজার, আমার খালু জাকিরের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। অডিওতে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল। পরে ওসিকে বললাম, ব্যবসা-বাণিজ্য ওই রকম নাই। যে দুই লাখ টাকা । বলছেন সেই দুই লাখ টাকা আমি
দেবো। কিন্তু ৫ লাখ টাকা দিতে পারবো না। পরে এই টাকা না দেয়াতে, আমাকে যেকোনো নেতার মাধ্যমে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করে। পরে আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। ১০ লাখ টাকা দিতে হবে, নইলে ১০টা হত্যা মামলা দিয়ে দেবে। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের শর্তে বাসায় গরু বিক্রির আড়াই
লাখ টাকা দেয়া হয়। উনি বলেছিল ৫৪ ধারায় চালান দিয়েছিল। টাকা হাতে পাওয়ার পর ওসি থানায় আসেনি। আমাকে আদালতে নেয়ার পর তিনি থানায় আসেন। পরে আমাকে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় চালান দেয়া হয়। শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, এটা আমি
শুনেছি, এটা আমার কণ্ঠ না। আমার কথা এডিট (সম্পাদনা) করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র। গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী যাবের সাদেকের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।