কোটা সংস্কার সিলেট: ১৮-২৩ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ
- আপডেট টাইম : ০৫:২৮:১৪ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪
- / ১০৬ ৫০০০.০ বার পাঠক
গত ১৮ জুলাই শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। ছবি: শেখ নাসির/রিপোর্ট
১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সৃষ্ট অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ততক্ষণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গতি কমানো হয় মোবাইল ইন্টারনেটের।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সেদিন রাতে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় সবধরনের ইন্টারনেট সেবা। বিঘ্নিত হয় তথ্যপ্রবাহ, বন্ধ হয়ে যায় অনলাইনে সংবাদ পরিবেশন।
সেদিন সকাল থেকে গত বুধবার ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত সিলেট নগরীতে যা ঘটেছে, তা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সিলেট প্রতিনিধি দ্বোহা চৌধুরী লিখেছেন রিপোর্টারের ডায়েরি।
১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার
আগের দিন বন্ধ ঘোষিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিকেল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও অনেক শিক্ষার্থী থেকে যান। তাদের অপসারণের জন্য সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের প্রতিটি হলে অভিযান চালিয়ে সকল শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান নেয় পুলিশ। সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকরাও অবস্থান নেন ফটকের পাশে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চললেও ১টার দিকে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের অপসারণ করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখের নির্দেশে ক্রিটিক্যাল রেসপন্স ইউনিটসহ বাকি ইউনিটগুলো গেটের সামনে এসে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
কিছুক্ষণ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ ও অনুরোধ করে আরও ঘণ্টাখানেক অবস্থান ধরে রাখতে পুলিশের সহযোগিতা চায় শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশের অনড় অবস্থানের কারণে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দিক থেকে ইটপাটকেল ও পাথর ছোড়া শুরু হয় পুলিশের দিকে। সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া দেখায় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও শটগানের শেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সংঘর্ষের শুরুতে ফটকের একপাশে দাঁড়িয়ে ভিডিও ধারণ করার সময় একটি ঢিল এসে আমার বুকের বা পাশে সজোড়ে আঘাত করলে লুটিয়ে পড়ে যাই। পরে কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের ভিতরে ঢুকে নিজেকে নিরাপদ করি।
প্রায় আধাঘণ্টা সংঘর্ষ চলার সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে তিন জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং এক পথচারীকে আহত হতে দেখি। এছাড়াও একজন পুলিশ সদস্যও আহত হন শিক্ষার্থীদের ঢিলের আঘাতে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বহিরাগত একজনকে আটক করে।
যে অবরোধ কর্মসূচি ২টার মধ্যে শেষ করবে বল শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিল, তা অপসারণে পুলিশি অ্যাকশনের সিদ্ধান্তের কারণে সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত আর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষের মধ্যেই বিকেল ৫টা থেকে শিক্ষার্থী নয় এমন বিপুল পরিমাণ মানুষও আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আখালিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করলে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে গিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি খাল ভেলায় চড়ে পাড় হতে গিয়ে পানিতে ডুবে নিহত হন শাবিপ্রবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও পলিমার সায়েন্সেস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন।
সে রাতে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। ১০টার দিকে সিলেটে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হলে বিক্ষোভ কর্মসূচি সেদিনের মতো একেবারেই থেমে যায়।
রাতে ইন্টারনেট একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংবাদমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনও বন্ধ হয়ে যায়। বাঁধাগ্রস্ত হয়ে যায় তথ্যপ্রবাহ। সঠিক সংবাদ জানার কোনো মাধ্যম না থাকায় গুজবে ভর করতে থাকেন সাধারণ মানুষ।
একবার শোনা যায় ঢাকায় প্রচণ্ড সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন। আরেকবার শোনা যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদ। সেই রাতে ঢাকার রাস্তায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে হত্যা করে গুম করে ফেলা হয়েছে এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে সিলেটে। কিন্তু গুজব প্রতিরোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি প্রশাসন কিংবা সরকারের।
১৯ জুলাই, শুক্রবার
আগেরদিন সন্ধ্যায় নিহত শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেনের মরদেহের পোস্টমর্টেম শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। এ সময় মেডিকেল কলেজে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে মেডিকেল কলেজের বিকল্প পথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন উপাচার্য। তবে অন্যান্য শিক্ষকরা বেশ কিছুক্ষণ শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে থাকেন।
দুপুরে জুম্মার নামাজের পর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেয় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন। রাজনৈতিক এই কর্মসূচি শুরুর আগেই বাধা দেয় পুলিশ, শুরু হয় সংঘর্ষ। সংঘাতের সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বরত অবস্থায় গুরুতর আহত হন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন দলটির নেতারা।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান ও দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার তুরাব সেদিন সন্ধ্যায় বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনাস্থলে থাকা অন্যান্য সাংবাদিক সহকর্মীরা জানিয়েছেন পুলিশের শটগানের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তুরাব।
এদিন দুপুর থেকেই সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে রাখেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বিকেল ৪টা থেকে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তবে রাত ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় অবরোধকারীদের। এ সময় মুহূর্মুহূ সাউন্ড গ্রেনেড, শটগান ও রাবার বুলেটের শব্দ পাওয়া যায় মদিনা মার্কেট থেকে আখালিয়া এলাকায়।
রাত ১১টার দিকে খবর আসে সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা মোতায়েনের ঘোষণাও দেয়া হয়। একই সময়ে সিলেটে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
২০ জুলাই, শনিবার
ইন্টারনেট বন্ধ থাকা, কারফিউ জারি এবং সেনা মোতায়েনের ফলে আগের রাতে গুজব ছড়াতে থাকে। তবে সকাল থেকেই সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
কারফিউ থাকলেও সকালে রাস্তায় সেনাবাহিনীর কোনো টহল ছিল না তাই পর্যাপ্ত দোকানপাট খোলা ছিল, লোকচলাচলও ছিল সড়কে। এর মধ্যে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হলে প্রচুর লোকসমাগম দেখা যায় বিভিন্ন বাজারে।
সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগেরদিন পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাবের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে মানিক পীর মাজার প্রাঙ্গণে জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
দুপুরে কারফিউ শিথিল থাকায় তুরাবের জানাজায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ কয়েকশত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারপর তার মরদেহ কিছুক্ষণের জন্য সিলেট প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রাখা হয়। পরে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে রওনা হন তার পরিবার।
দুপুর ২টা থেকে আবারও কারফিউ শুরু হলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। এ ছাড়াও পুলিশও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল বজায় রাখে। বিকেলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভের জন্য লোকসমাগমের চেষ্টা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহলের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এদিন রাতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারে দাবির আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় থাকায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ অন্তত পাঁচ জন নেতাকে আটক করে পুলিশ।
২১ জুলাই, রোববার
কোটা বহাল রেখে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল শুনানির জন্য ধার্য্যকৃত দিন হওয়ায় সকাল থেকেই বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল। পরে দুপুরে সাত শতাংশ কোটা রেখে ৯৩ শতাংশ মেধায় নিয়োগে আপিল বিভাগের নির্দেশনার আদেশের খবর আসে।
আপিল বিভাগের এ সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জেলা কোটা ও নারী কোটা বাতিল হওয়ায় বৈষম্য আরও বাড়ল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে আরও বেশি বৈষম্যের শিকার হবেন বলে সচেতন নাগরিকরা মন্তব্য করেন।
বিকেলে কারফিউ শিথিল থাকার সময় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সাতটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে তুরাব হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তুরাবের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়।
আপিল বিভাগের নির্দেশনার পরও আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়ে দেশব্যাপী শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
সিলেটে আন্দোলনের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল-গালিব জানান, ইন্টারনেট সেবা চালু করা, সড়ক থেকে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর অপসারণ এবং আটক সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি সরকার মেনে নিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আলোচনা করে সার্বিক বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
২২ ও ২৩ জুলাই, সোমবার ও মঙ্গলবার
কারফিউ চলমান থাকায় সিলেটে কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেননি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তিন শর্তে বহাল থেকে তারা কোটা সংস্কারে আপিল বিভাগের রায় প্রসঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে মসজিদে-মন্দিরে নিহতদের জন্য প্রার্থনার আহবান জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মামলা, আসামি ও আটক
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর গত ১৭ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬টি থানার মধ্যে তিনটি থানায় মোট ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর মধ্যে কোতোয়ালী থানায় ৫টি, জালালাবাদ থানায় ৪টি এবং দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সকল মামলায় মোট ২৪৪ জন আসামির নামোল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও অন্তত ১২ হাজার ৮১০ থেকে ১৬ হাজার ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ১০টি মামলায় ২৩ জুলাই রাত পর্যন্ত মোট ১০৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে কোনো মামলায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।