ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশে মানুষের পরিকল্পনার কী মূল্য রহিয়াছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : ০৯:১২:১৬ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
  • / ১৩ ০০.০০০বার পাঠক

অর্থবিত্ত সকলেই চাহে। সম্পদ অর্জনের লোভ সকলেরই। বলা হয় যে, ‘লোভ’ হইল আধুনিক সমাজের চালিকাশক্তি; কিন্তু উহার লাগাম থাকা প্রয়োজন; কিন্তু অনেকেই রহিয়াছেন, যাহাদের লোভের দাঁড়ি-কমা থাকে না। তাহারা অত্যন্ত গোপনে এমন সকল কাজ বা পরিকল্পনা করিতে চাহেন—যাহার পরিপ্রেক্ষিতে মনে করেন,পৃথিবীর কেহ দেখে নাই। তাহারা মনে করেন, তাহারাই সবচাইতে বড় পরিকল্পনাকারী। মনে রাখিতে হইবে, মহান সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত ছাড়া কেহ কোনো কিছু অর্জন করিতে পারেন না। বিশ্বের বৃহত্ অর্থনীতির রাষ্ট্রসমূহের তুলনায় আমরা ছোটস্য ছোট দেশ। অর্থ উপার্জন তো অন্যায় কোনো কাজ নহে। আমাদের দেশে যাহারা বিপুল এবং বিশাল অর্থসম্পদের মালিক, বিশ্বের শীর্ষপর্যায়ের ধনকুবেরদের তুলনায় তাহারা যোজনপথ পিছনে পড়িয়া রহিয়াছেন। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের শত শত প্রতিষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। উহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু সমস্যা বাধে তখনই যখন অর্থ উপার্জনের পথটি নিয়মনিষ্ঠ হয় না। তখন সেই অর্থ রাষ্ট্রের মানুষের কাজে লাগে না। সেই অর্থ যাহারা কুক্ষিগত করেন, তাহারা নিজেদের রক্ষা করিতে বিচিত্র সকল উপায়ে অর্থ পাচার করেন বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। স্বাধীনতার পর হইতে অদ্যাবধি আমাদের দেশে যেই পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হইয়াছে, তাহা যদি না হইত তাহা হইলে যতখানি উন্নয়ন আমাদের হইয়াছে, তাহা আরো অধিক হইত নিঃসন্দেহে। যেই অর্থনৈতিক সংকটে আমাদের পড়িতে হয়, তাহা এইভাবে হইত না নিশ্চয়ই; কিন্তু কেন অর্থপাচার হয়? কেন অনেকে দেশ ত্যাগ করেন?

স্বাধীনতার পর আমাদের বাজেট বৃদ্ধি পাইতে পাইতে সাত লক্ষাধিক টাকায় উন্নীত হইয়াছে। অনেকের মতে, আমাদের বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন খাতে যেই বরাদ্দ রহিয়াছে এবং সেই বরাদ্দে যাহারা বৃহত্তর কাজকর্মগুলি করিতেছেন, কিংবা সার্বিকভাবে যাহারা সুবিধার সিংহভাগ লইতেছেন, দেখা যাইবে—তাহাদের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। অর্থাত্ স্বল্পসংখ্যক বিশেষ ব্যক্তিই কেবল বেনিফিশিয়ারি হইতেছেন। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিকট উন্নয়নের ব্যাপ্তি যতখানি হইতে পারিত, ততখানি হইতেছে না। এই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতো আমাদেরও জিজ্ঞাসা—কিছু মানুষ কেন এত টাকা বানাইয়া ফেলেন যে দেশ ছাড়িয়া ভাগিতে হয়? আসলে, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের এই অনিয়ন্ত্রিত ‘লোভ’ অত্যন্ত মারাত্মক। এই লোভের ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত লেখক লেভ তলস্তয় তাহার ‘সাড়ে তিন হাত জমি’ গল্পে দেখাইয়াছেন আদিগন্ত বিপুল ভূমি ক্রয় করিতে গিয়া পাখোম কীভাবে মারা গিয়াছিলেন জমি দখলের একদম শেষ মুহূর্তে। জমি ক্রয়ের শর্ত ছিল, পাখোম সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যতখানি হাঁটিবেন ততখানি জমির মালিক হইবেন; কিন্তু অধিক জমি পাইবার অনিয়ন্ত্রিত লোভে পাখোম ক্রমশ এত দূর অবধি চলিয়া গিয়াছেন যে, সূর্যাস্তের পূর্বে মূল জায়গায় ফিরিয়া আসিবার অন্তিমক্ষণে তাহার মৃত্যু হয়। আর মৃত্যুর পর তাহার কবরের জন্য প্রয়োজন হয় মাত্র ‘সাড়ে তিন হাত জমি’। আমরা কেন ভুলিয়া যাই, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর শেষ ইচ্ছার কথা? তিনি মৃত্যুর পূর্বে বলিয়া গিয়াছিলেন যে, তাহার উভয় হাত যেন তাহার কফিনের বাহিরে ঝুলাইয়া রাখা হয়। গ্রিক হইতে ভারতবর্ষ অবধি বিস্তৃত সর্বকালের বৃহত্তম সাম্রাজ্য তিনি তৈরি করিয়াছিলেন। মাত্র ৩০ বত্সর বয়সে আকস্মিক মৃত্যুশয্যায় তিনি বুঝিতে পারেন—তাহার জয় করা বিশাল সাম্রাজ্য, যুদ্ধের দ্বারা লুণ্ঠিত সম্পদ—সকল কিছু ত্যাগ করিয়া কেবল শূন্য হাতে তাহাকে ইহলোক ত্যাগ করিতে হইবে। এই জন্য তিনি পৃথিবীবাসীকে একটি বার্তা দিতে চাহিয়াছিলেন—বিশ্ববাসী দেখুক কফিনবন্দি এই বিশ্বজয়ী ব্যক্তিটির হাতটি আসলে নিঃস্ব-শূন্য-রিক্ত।
সুতরাং নিজেকে সংবরণ করিতে হইবে। সময়মতো নিজেকে সংবরণ করিতে না পারিলে তিনি বিশাল সম্পদের অধিকারী হইবেন ঠিকই; কিন্তু সেই সম্পদ তাহার ইহকালে কিংবা পরকালে কোনো কাজেই লাগিবে না। মাঝেমধ্যে আমাদের আত্মীয়স্বজনের কবরের নিকটে গিয়া দাঁড়াইয়া চুপচাপ মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করিতে হইবে। কারণ, নিজেই নিজেকে বারংবার মনে করাইতে হইবে যে, আমাদের সকলেরই প্রয়োজন ঐ মাত্র সাড়ে তিন হাত মাটি। আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার ক্রীড়ানক মাত্র। আমাদের পরিকল্পনার কোনো মূল্যই নাই। সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী একমাত্র মহান আল্লাহ।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশে মানুষের পরিকল্পনার কী মূল্য রহিয়াছে

আপডেট টাইম : ০৯:১২:১৬ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

অর্থবিত্ত সকলেই চাহে। সম্পদ অর্জনের লোভ সকলেরই। বলা হয় যে, ‘লোভ’ হইল আধুনিক সমাজের চালিকাশক্তি; কিন্তু উহার লাগাম থাকা প্রয়োজন; কিন্তু অনেকেই রহিয়াছেন, যাহাদের লোভের দাঁড়ি-কমা থাকে না। তাহারা অত্যন্ত গোপনে এমন সকল কাজ বা পরিকল্পনা করিতে চাহেন—যাহার পরিপ্রেক্ষিতে মনে করেন,পৃথিবীর কেহ দেখে নাই। তাহারা মনে করেন, তাহারাই সবচাইতে বড় পরিকল্পনাকারী। মনে রাখিতে হইবে, মহান সৃষ্টিকর্তার নিয়ামত ছাড়া কেহ কোনো কিছু অর্জন করিতে পারেন না। বিশ্বের বৃহত্ অর্থনীতির রাষ্ট্রসমূহের তুলনায় আমরা ছোটস্য ছোট দেশ। অর্থ উপার্জন তো অন্যায় কোনো কাজ নহে। আমাদের দেশে যাহারা বিপুল এবং বিশাল অর্থসম্পদের মালিক, বিশ্বের শীর্ষপর্যায়ের ধনকুবেরদের তুলনায় তাহারা যোজনপথ পিছনে পড়িয়া রহিয়াছেন। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের শত শত প্রতিষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। উহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু সমস্যা বাধে তখনই যখন অর্থ উপার্জনের পথটি নিয়মনিষ্ঠ হয় না। তখন সেই অর্থ রাষ্ট্রের মানুষের কাজে লাগে না। সেই অর্থ যাহারা কুক্ষিগত করেন, তাহারা নিজেদের রক্ষা করিতে বিচিত্র সকল উপায়ে অর্থ পাচার করেন বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। স্বাধীনতার পর হইতে অদ্যাবধি আমাদের দেশে যেই পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হইয়াছে, তাহা যদি না হইত তাহা হইলে যতখানি উন্নয়ন আমাদের হইয়াছে, তাহা আরো অধিক হইত নিঃসন্দেহে। যেই অর্থনৈতিক সংকটে আমাদের পড়িতে হয়, তাহা এইভাবে হইত না নিশ্চয়ই; কিন্তু কেন অর্থপাচার হয়? কেন অনেকে দেশ ত্যাগ করেন?

স্বাধীনতার পর আমাদের বাজেট বৃদ্ধি পাইতে পাইতে সাত লক্ষাধিক টাকায় উন্নীত হইয়াছে। অনেকের মতে, আমাদের বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন খাতে যেই বরাদ্দ রহিয়াছে এবং সেই বরাদ্দে যাহারা বৃহত্তর কাজকর্মগুলি করিতেছেন, কিংবা সার্বিকভাবে যাহারা সুবিধার সিংহভাগ লইতেছেন, দেখা যাইবে—তাহাদের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। অর্থাত্ স্বল্পসংখ্যক বিশেষ ব্যক্তিই কেবল বেনিফিশিয়ারি হইতেছেন। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিকট উন্নয়নের ব্যাপ্তি যতখানি হইতে পারিত, ততখানি হইতেছে না। এই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতো আমাদেরও জিজ্ঞাসা—কিছু মানুষ কেন এত টাকা বানাইয়া ফেলেন যে দেশ ছাড়িয়া ভাগিতে হয়? আসলে, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের এই অনিয়ন্ত্রিত ‘লোভ’ অত্যন্ত মারাত্মক। এই লোভের ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত লেখক লেভ তলস্তয় তাহার ‘সাড়ে তিন হাত জমি’ গল্পে দেখাইয়াছেন আদিগন্ত বিপুল ভূমি ক্রয় করিতে গিয়া পাখোম কীভাবে মারা গিয়াছিলেন জমি দখলের একদম শেষ মুহূর্তে। জমি ক্রয়ের শর্ত ছিল, পাখোম সূর্যোদয় হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যতখানি হাঁটিবেন ততখানি জমির মালিক হইবেন; কিন্তু অধিক জমি পাইবার অনিয়ন্ত্রিত লোভে পাখোম ক্রমশ এত দূর অবধি চলিয়া গিয়াছেন যে, সূর্যাস্তের পূর্বে মূল জায়গায় ফিরিয়া আসিবার অন্তিমক্ষণে তাহার মৃত্যু হয়। আর মৃত্যুর পর তাহার কবরের জন্য প্রয়োজন হয় মাত্র ‘সাড়ে তিন হাত জমি’। আমরা কেন ভুলিয়া যাই, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর শেষ ইচ্ছার কথা? তিনি মৃত্যুর পূর্বে বলিয়া গিয়াছিলেন যে, তাহার উভয় হাত যেন তাহার কফিনের বাহিরে ঝুলাইয়া রাখা হয়। গ্রিক হইতে ভারতবর্ষ অবধি বিস্তৃত সর্বকালের বৃহত্তম সাম্রাজ্য তিনি তৈরি করিয়াছিলেন। মাত্র ৩০ বত্সর বয়সে আকস্মিক মৃত্যুশয্যায় তিনি বুঝিতে পারেন—তাহার জয় করা বিশাল সাম্রাজ্য, যুদ্ধের দ্বারা লুণ্ঠিত সম্পদ—সকল কিছু ত্যাগ করিয়া কেবল শূন্য হাতে তাহাকে ইহলোক ত্যাগ করিতে হইবে। এই জন্য তিনি পৃথিবীবাসীকে একটি বার্তা দিতে চাহিয়াছিলেন—বিশ্ববাসী দেখুক কফিনবন্দি এই বিশ্বজয়ী ব্যক্তিটির হাতটি আসলে নিঃস্ব-শূন্য-রিক্ত।
সুতরাং নিজেকে সংবরণ করিতে হইবে। সময়মতো নিজেকে সংবরণ করিতে না পারিলে তিনি বিশাল সম্পদের অধিকারী হইবেন ঠিকই; কিন্তু সেই সম্পদ তাহার ইহকালে কিংবা পরকালে কোনো কাজেই লাগিবে না। মাঝেমধ্যে আমাদের আত্মীয়স্বজনের কবরের নিকটে গিয়া দাঁড়াইয়া চুপচাপ মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করিতে হইবে। কারণ, নিজেই নিজেকে বারংবার মনে করাইতে হইবে যে, আমাদের সকলেরই প্রয়োজন ঐ মাত্র সাড়ে তিন হাত মাটি। আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার ক্রীড়ানক মাত্র। আমাদের পরিকল্পনার কোনো মূল্যই নাই। সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী একমাত্র মহান আল্লাহ।