অস্তিত্ব সংকটে জাতীয় ফল কাঁঠাল খাগড়াছড়িতে গত এক বছরে ৬ শত ৯৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কম
- আপডেট টাইম : ০১:১১:৩৬ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১৯২ ৫০০০.০ বার পাঠক
পাহাড়ের জেলাগুলোতে আগে প্রচুর পরিমানে কাঠাল গাছ থাকলেও এখন আর চোঁখে পড়েনা। দাম না পাওয়া এবং পরিবহন সুবিধা না থাকায় এখন আর কৃষকরা নতুন করে কাঁঠাল গাছ লাগিয়ে বাগান বৃদ্ধিতে মন দেন না। কাঠাল গাছের বদলে আম ও লিচু চাষে আগ্রহ তাদের। বাপ—দাদারা যে গাছ লাগিয়েছিল—তা এখনও দুয়েকটা বিদ্যমান। কাঁঠালকে ঘিরেই একসময় গুইমারা বাজার রমরমা ছিল। জেলার সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবেও খ্যাতি ছিল। জেলার অন্য উপজেলায়ও ছিল কাঁঠালের হাঁট। মৌসুমজুড়ে বাজারগুলোতে হাঁকডাক চলতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা কাঁঠাল কেনার জন্য আসতেন। কিন্তু কাঁঠাল গাছ কেটে আম ও অন্নান্য ফলের বাগান সৃজনের ফলে কাঁঠালের চাষ কমে গেছে। এখন কাঁঠালের বাজার আর আগের অবস্থানে নেই। পাইকাররাও এখন আর আসেন না কাঠলি কিনতে। নিজ খরচেই কাঠাল বাজার জাত কনা হয় বলে জানান কৃষকরা।
গুইমারা বাজারে কাঠাল নিয়ে আসা একজন কাঠাল বিক্রেতা বলেন, বাজাো কোন পাইকার নেই। আগে কাঠালের প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর নেই। আগে বাড়ীতে কাঁঠালের বাগান ছিল । গাছ ছিল ৩শত। আর এখন আছে ২০টা। এমন বাক্য বাজারে কাঁঠাল নিয়ে আসা কৃষকদের।
খাগড়াছড়ি কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২২ সালে খাগড়াছড়িতে কাঁঠালের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১০৬ হেক্টর জমিতে। লক্ষমাত্রা ছিল ১ লক্ষ্য ৪০ হাজার ৮ শত ৫১ মেট্রিক টন। ২০২৩ সালে কাঠালের আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪ শত ৯ হেক্টর জমিতে।
২০২৩ সালে খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলায় কাঁঠাল চাষ হয়েছে , গুইমারায় ১৮০ হেক্টর, লক্ষীছড়িতে ১৮২ হেক্টর, মানিকছড়ি ৬৫০ হেক্টর, রামগড় ৫৪০ হেক্টর, মাটিরাঙ্গা ৫৪২ হেক্টর, মহাছড়ি ৪০ হেক্টর, দীঘিনালা ৩৩৫ হেক্টর, পানছড়ি ২০০ হেক্টর, সদর ৩৩০ হেক্টর জমিতে। যা বিগত বছরেরর চেয়ে ৬শত ৯৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ কম হয়েছে। চাষাবাদ কম হওয়াই লক্ষমাত্রার চেয়ে ৪৯ হাজার মেট্রিকটন কাঁঠাল উৎপাদন কম হবে।
কাঁঠাল এর বৈজ্ঞানিক নাম অৎঃড়পধৎঢ়ঁং যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং ইংরেজি নাম: ঔধপশভৎঁরঃ। কাঠাল মুলত মোরাসিয়া পরিবারের ডুমুর পরিবারের প্রজাতি ও আর্টোকার্পাস গোত্রের ফল।
বাংলাদেশে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হচ্ছে। কাঁঠাল চাষে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে কৃষি বিভাগের তথ্যে জানা যায়।
জাতীয় ফসল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ফলটির কদর এতই কম যে, তারা কাঁচা ও পাকা কাঁঠাল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে তাদের খাওয়ানো হয়। পাকা কাঁঠালের বিচিই গৃহবধূদের কাছে বেশি পছন্দের তরকারি হিসেবে খাওয়ার জন্য।
প্রচুর পুষ্ঠিগুনে ভরপুর কাঁঠাল। কাঁঠাল ফলে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, বি—১, বি—২, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা রকমের পুষ্টি ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস— আলসার, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। কাঁঠালে প্রচুর ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। প্রাকৃতিক ভাবে মানবদেহে ভিটামিন সি তৈরি হয় না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করে ভিটামিন। শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও কাঁঠালে ২০ ধরনের উপকারিতা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়।
পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এ ফল দিনদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে। সচেতন মহল দাবি করেন, সরকার এখনি জাতীয় ফলটি রক্ষার দায়িত্ব না নিলে একদিন বাংলাদেশে কাঁঠাল নামে কোন ফল ছিল কেউ জানবেনা। শুধু কাগজে কলমে বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খাগড়াছড়ির উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানান, কাঁঠা চাষে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। কাঁঠালের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিও জন্য ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের পক্ষ্য থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।