ঢাকা ০১:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
আরও আঘাত পাবে হামাস’, গাজায় গিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন নেতানিয়াহু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির ৮ শীর্ষ নেতা দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, চসিক মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে দেশটির জনগণ: যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে যমুনায় বিএনপি নেতারা ডিসি-এসপি, এমনকি থানার ওসিরাও আমাদের কথা শুনে না: কবির আহমেদ ভূঁইয়া শাহ আলম ও কথিত সাংবাদিক পরিচয় দানকারী আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসা -পর্ব ১ সিটি কলেজ-ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হঠাৎ বিসিবিতে অভিযানে দুদক তরমুজ যেভাবে ফিলিস্তিনের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠল

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির ৮ শীর্ষ নেতা

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩১:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১ ৫০০০.০ বার পাঠক

ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিএনপি শীর্ষস্থানীয় নেতারা। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গেছেন।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয় বলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান।

এর আগে বিএনপির প্রতিনিধি দল যমুনায় পৌঁছান।

প্রতিনিধি দলের অন্যদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

এর আগে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিএনপি সময় চেয়েছে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে বিএনপি। ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে দল। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কাটাতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা জরুরি বলেও জানান দলটির প্রভাবশালী এই নেতা।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

দুই বৈঠকসহ সার্বিক বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। লন্ডন থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, এতে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে পৃথক দুই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে, তা ঠিক করা হয়।

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং নির্বাচন ঘিরে বিভ্রান্তি দূর করা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী, তা স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন। একই সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও তারা কথা বলবেন।

এছাড়াও সংস্কার ইস্যুতে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন। সে বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টাকে বিস্তারিত ব্যাখা করবে বিএনপি। নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে থাকেন, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কাটাতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা জরুরি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চাইব।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে পূর্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তিনি সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আমরা সেটা জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর অনুরোধ করেছিলাম, যাতে জাতি আশ্বস্ত হয়, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়। কিন্তু তিনি এখন নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে করার কথা বলছেন। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে আমরা একমত নই।

বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার ছোট সংস্কার ও বড় সংস্কারের কথা বলছে। অথচ সংস্কারের বিষয়টি বিএনপি দেড় বছর আগে ৩১ দফায় ঘোষণা করেছেন। এটি বিএনপির প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সংস্কারের কথা বলে র্কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন হলে তা হবে জাতির জন্য দুঃখজনক। কোনো কোনো দল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সংস্কারের কথা বলে জাতীয় নির্বাচনকে পেছানোর পাঁয়তারা করছে, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এসব দলের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে জনগণের চওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে বলব সরকারকে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি যেহেতু এই সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে এবং আগামী দিনেও করবে, সে কারণে নির্বাচনি রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক চাওয়া-এসব বিবেচনায় নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। দলটি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন বিএনপির এমন একাধিক নেতা বলেন, সংস্কার ইস্যুতে বিএনপিকে দোষারোপের চক্রান্ত হচ্ছে। বিএনপি বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি পুনর্বহাল চায় বলে যে গুঞ্জন ছড়ানো হয়েছে, তা দলটিকে একদিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি মতামত দিয়ে পরিষ্কার করেছে, ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে সংবিধানে যে চার মূলনীতি ছিল, তা পুনবর্হাল চায় বিএনপি। এর ব্যাখ্যায় নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান বলে ১৯৭৬ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’কে সংবিধানের মূলনীতি করেন। আরেক মূলনীতি ‘সমাজতন্ত্র’-এর অর্থ করা হয় সামাজিক ন্যায়বিচার। বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে মূলনীতি করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা অনুমোদন করা হয়। ২০১০ সালে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। পরের বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের মূলনীতি ফিরিয়ে আনে। অন্তর্বতী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংক্রান্ত সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি হিসাবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। বিএনপি এতে একমত নয়। বিএনপি অনুচ্ছেদ ৮, ৯, ১০ ও ১২-কে ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থা, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’কে ফিরিয়ে আনতে মতামত দিয়েছে। এরপরও বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। ২০১১ সালের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া মানেই ১৯৭৯ সালের মূলনীতিতে ফেরা; বাহাত্তরের সংবিধানে নয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি আগে থেকেই বলে আসছে, সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়-এমন প্রয়োজনীয় সংস্কার ঐক্যের ভিত্তিতে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব। নির্বাচন আয়োজনে দরকার এমন সংস্কারের জন্য একই পথ অবলম্বন করা যায়। এর জন্য সময়ক্ষেপণের দরকার নেই।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির ৮ শীর্ষ নেতা

আপডেট টাইম : ০৭:৩১:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বিএনপি শীর্ষস্থানীয় নেতারা। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গেছেন।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয় বলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান।

এর আগে বিএনপির প্রতিনিধি দল যমুনায় পৌঁছান।

প্রতিনিধি দলের অন্যদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

এর আগে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিএনপি সময় চেয়েছে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছে বিএনপি। ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে দল। নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কাটাতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা জরুরি বলেও জানান দলটির প্রভাবশালী এই নেতা।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

দুই বৈঠকসহ সার্বিক বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। লন্ডন থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, এতে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে পৃথক দুই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে, তা ঠিক করা হয়।

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং নির্বাচন ঘিরে বিভ্রান্তি দূর করা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী, তা স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন। একই সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও তারা কথা বলবেন।

এছাড়াও সংস্কার ইস্যুতে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন। সে বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টাকে বিস্তারিত ব্যাখা করবে বিএনপি। নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে থাকেন, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কাটাতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা জরুরি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চাইব।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে পূর্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তিনি সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আমরা সেটা জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর অনুরোধ করেছিলাম, যাতে জাতি আশ্বস্ত হয়, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়। কিন্তু তিনি এখন নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে করার কথা বলছেন। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে আমরা একমত নই।

বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার ছোট সংস্কার ও বড় সংস্কারের কথা বলছে। অথচ সংস্কারের বিষয়টি বিএনপি দেড় বছর আগে ৩১ দফায় ঘোষণা করেছেন। এটি বিএনপির প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সংস্কারের কথা বলে র্কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন হলে তা হবে জাতির জন্য দুঃখজনক। কোনো কোনো দল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সংস্কারের কথা বলে জাতীয় নির্বাচনকে পেছানোর পাঁয়তারা করছে, তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। এসব দলের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে জনগণের চওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে বলব সরকারকে।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি যেহেতু এই সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে এবং আগামী দিনেও করবে, সে কারণে নির্বাচনি রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক চাওয়া-এসব বিবেচনায় নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। দলটি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন বিএনপির এমন একাধিক নেতা বলেন, সংস্কার ইস্যুতে বিএনপিকে দোষারোপের চক্রান্ত হচ্ছে। বিএনপি বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি পুনর্বহাল চায় বলে যে গুঞ্জন ছড়ানো হয়েছে, তা দলটিকে একদিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি মতামত দিয়ে পরিষ্কার করেছে, ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে সংবিধানে যে চার মূলনীতি ছিল, তা পুনবর্হাল চায় বিএনপি। এর ব্যাখ্যায় নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান বলে ১৯৭৬ সালে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’কে সংবিধানের মূলনীতি করেন। আরেক মূলনীতি ‘সমাজতন্ত্র’-এর অর্থ করা হয় সামাজিক ন্যায়বিচার। বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে মূলনীতি করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তা অনুমোদন করা হয়। ২০১০ সালে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। পরের বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের মূলনীতি ফিরিয়ে আনে। অন্তর্বতী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংক্রান্ত সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দিয়ে সংবিধানের মূলনীতি হিসাবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। বিএনপি এতে একমত নয়। বিএনপি অনুচ্ছেদ ৮, ৯, ১০ ও ১২-কে ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থা, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’কে ফিরিয়ে আনতে মতামত দিয়েছে। এরপরও বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। ২০১১ সালের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া মানেই ১৯৭৯ সালের মূলনীতিতে ফেরা; বাহাত্তরের সংবিধানে নয়।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি আগে থেকেই বলে আসছে, সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়-এমন প্রয়োজনীয় সংস্কার ঐক্যের ভিত্তিতে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব। নির্বাচন আয়োজনে দরকার এমন সংস্কারের জন্য একই পথ অবলম্বন করা যায়। এর জন্য সময়ক্ষেপণের দরকার নেই।