ঢাকা ০২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
পরিবহণসহ ৫ খাতে ৭০ শতাংশ বরাদ্দ ট্রাম্পের পরোক্ষ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান পুতিনের মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ লিগ্যাল নোটিশ করতে প্রস্তুতি বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর আমড়াগাছি খালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন বাংলাদেশ সিরিজের দল ঘোষণা আমিরাতের ঠাকুরগাঁওয়ে আ:লীগ অফিস দখল, ভূল সিদ্ধান্ত ছিলো// সংবাদ সম্মেলনে জুলাই যোদ্ধার আহবায়ক গাজা দখল করে ‘ফ্রিডম জোন’ বানাতে চান ট্রাম্প মধ্যরাতের অধ্যাদেশ’ বাতিলে সারাদেশে কলম বিরতি এনবিআরের একাধিক নেতাদের গণপদত্যাগ আগামী ১৫ ও ১৭ মে পর্যন্ত চলবে কর্মসূচি বিডিআর বিদ্রোহ: কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলেন ২৭ জন পালানো’র সময় বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আটক

খাগড়াছড়িতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে বাঁশ কোড়ল

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : ০১:০৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ২৬৭ ১৫০০০.০ বার পাঠক

জুন আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বাঁশের প্রজনন মৌসুম। বাঁশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সময় বাঁশ কোড়লে অংকুর সংগ্রহ ও বিক্রি করা যাবেনা বলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেদারছে চলছে বাঁশকোড়ল বেচাকেনা। বাঁশ কোড়ল সবজি হিসেবে জনপ্রিয় ও চাহিদা বৃদ্ধির কারনে এক শ্রেনীর অর্থলোভী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙ্গালী জাতির মানুষ চলতি মৌসুমে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ ও বিক্রি করে বিক্রি করাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর নির্বিচারে ধ্বংশ করছেন কচি বাঁশ। খাদ্য হিসেবে বাঁশ কোড়লের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোর কোন উদ্যোগ নেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নেই তৎপরতা। আর একারনে বন্ধ হচ্ছেনা বাঁশ কোড়ল আহরন ও বিক্রি।
শনিবার গুইমারা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বাঁশ কোড়ল বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন নৃগোষ্ঠীর মহিলারা। প্রতি কেজি বাশঁ কোগল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বর্ষা শুরু হলে বাঁশের চারা গজানো আরম্ভ হয়। আর বাঁশের কচি অংশ সংগ্রহ করে প্রতি হাটের দিন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়েরা বাঁশ কোড়ল নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চাহিদার তুলনায় বাঁশ কোড়ল এখন অপ্রতুল। বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়। যদিও বাঁশ কোড়ল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় খাবার। এখন বাঙ্গালি জাতি গোষ্ঠীর মানুষও বাঁশ কোড়ল খেতে পছন্দ করেন। বাঁশ কোড়লের অনেক নাম। মারমারা একে বলে মহ্ই আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’। চাকমা ভাষায় বলা হয় বাচ্ছুরি।
বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়ল স্বাদে ভিন্ন। তবে মুলি বাঁশের কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা ও দাম কিছুটা বেশি। স্যুপ, মুন্ডি, মাংস দিয়ে রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায় বাঁশ কোড়ল।
বাঁশ দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয় যেমন, বাঁশের দোলনা থেকে শুরু করে বাড়ি—ঘরের বেড়া, ঘরের খুঁটি, ঝুড়ি, ঝাকা, চালুন, খাঁচা, পাটি, খাড়ি, ঝাড়ু, কুলা, হাতপাখা, মাদুর, ঘরের মাচা, ঘরের খাটও বাঁশ দিয়ে তৈর করা যায়।
কিন্তু বাঁশের অঙ্কুরকালে এটাকে অনেকেই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করায় ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ বাঁশ শিল্প ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষে বাঁশ কোঁড়ল অর্থাৎ বাঁশের অঙ্কুর নষ্ট না করার জন্য বলা থাকলেও স্থানীয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি না থাকায় গুইমারা উপজেলা থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশের বংশ। এটাকে অনেকেই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করায় এ ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদিপ চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের মানুষ বাঁশ কোড়লকে খাবার হিসেবেই খেয়ে থাকে। বাঁশ কোড়ল কাটারও একটা নিয়ম আছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্ক্ না করে বাশের বংশঁ ধ্বংস করা হচ্ছে দেদারছে। বাঁশ কোড়ল বানিজ্যিক সবজি হিসেবে দেশের বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করার কারনে হুমকির মুখে বাঁশ শিল্প। এখনি সরকারি ভাবে ব্যবস্থা না নিলে একসময় হারিয়ে যাবে বাঁশ।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, বাঁশ কোঁড়ল অর্থাৎ বাঁশের অঙ্কুর নষ্ট না করার জন্য নির্দেশনা আছে। এখন নিষিদ্ধ সময় চলছে। কোনভাবেই কেউ বাঁশকোড়ল আহরন ও বাজারজাত করতে পারবেনা। যদি কেউ আইন অমান্য কেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

খাগড়াছড়িতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে বাঁশ কোড়ল

আপডেট টাইম : ০১:০৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জুন আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বাঁশের প্রজনন মৌসুম। বাঁশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সময় বাঁশ কোড়লে অংকুর সংগ্রহ ও বিক্রি করা যাবেনা বলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেদারছে চলছে বাঁশকোড়ল বেচাকেনা। বাঁশ কোড়ল সবজি হিসেবে জনপ্রিয় ও চাহিদা বৃদ্ধির কারনে এক শ্রেনীর অর্থলোভী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙ্গালী জাতির মানুষ চলতি মৌসুমে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ ও বিক্রি করে বিক্রি করাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর নির্বিচারে ধ্বংশ করছেন কচি বাঁশ। খাদ্য হিসেবে বাঁশ কোড়লের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোর কোন উদ্যোগ নেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নেই তৎপরতা। আর একারনে বন্ধ হচ্ছেনা বাঁশ কোড়ল আহরন ও বিক্রি।
শনিবার গুইমারা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বাঁশ কোড়ল বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন নৃগোষ্ঠীর মহিলারা। প্রতি কেজি বাশঁ কোগল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বর্ষা শুরু হলে বাঁশের চারা গজানো আরম্ভ হয়। আর বাঁশের কচি অংশ সংগ্রহ করে প্রতি হাটের দিন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়েরা বাঁশ কোড়ল নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চাহিদার তুলনায় বাঁশ কোড়ল এখন অপ্রতুল। বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়। যদিও বাঁশ কোড়ল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় খাবার। এখন বাঙ্গালি জাতি গোষ্ঠীর মানুষও বাঁশ কোড়ল খেতে পছন্দ করেন। বাঁশ কোড়লের অনেক নাম। মারমারা একে বলে মহ্ই আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’। চাকমা ভাষায় বলা হয় বাচ্ছুরি।
বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়ল স্বাদে ভিন্ন। তবে মুলি বাঁশের কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা ও দাম কিছুটা বেশি। স্যুপ, মুন্ডি, মাংস দিয়ে রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায় বাঁশ কোড়ল।
বাঁশ দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয় যেমন, বাঁশের দোলনা থেকে শুরু করে বাড়ি—ঘরের বেড়া, ঘরের খুঁটি, ঝুড়ি, ঝাকা, চালুন, খাঁচা, পাটি, খাড়ি, ঝাড়ু, কুলা, হাতপাখা, মাদুর, ঘরের মাচা, ঘরের খাটও বাঁশ দিয়ে তৈর করা যায়।
কিন্তু বাঁশের অঙ্কুরকালে এটাকে অনেকেই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করায় ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ বাঁশ শিল্প ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষে বাঁশ কোঁড়ল অর্থাৎ বাঁশের অঙ্কুর নষ্ট না করার জন্য বলা থাকলেও স্থানীয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি না থাকায় গুইমারা উপজেলা থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশের বংশ। এটাকে অনেকেই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করায় এ ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদিপ চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের মানুষ বাঁশ কোড়লকে খাবার হিসেবেই খেয়ে থাকে। বাঁশ কোড়ল কাটারও একটা নিয়ম আছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্ক্ না করে বাশের বংশঁ ধ্বংস করা হচ্ছে দেদারছে। বাঁশ কোড়ল বানিজ্যিক সবজি হিসেবে দেশের বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করার কারনে হুমকির মুখে বাঁশ শিল্প। এখনি সরকারি ভাবে ব্যবস্থা না নিলে একসময় হারিয়ে যাবে বাঁশ।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, বাঁশ কোঁড়ল অর্থাৎ বাঁশের অঙ্কুর নষ্ট না করার জন্য নির্দেশনা আছে। এখন নিষিদ্ধ সময় চলছে। কোনভাবেই কেউ বাঁশকোড়ল আহরন ও বাজারজাত করতে পারবেনা। যদি কেউ আইন অমান্য কেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।