সিলেটের মোগলাবাজার তেমুখি নামক স্থানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন
- আপডেট টাইম : ০৩:৫৮:৪৫ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
- / ২৭২ ৫০০০.০ বার পাঠক
বেদে সম্প্রদায়ের জীবন ব্যবস্থা এবং তাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প-উপন্যাস, নির্মিত হয়েছে নাটক-সিনেমা। কিন্তু তার পরও কষ্টের মধ্যে দিন পার করছে দেশের একমাত্র যাযাবর শ্রেণিভুক্ত মানুষ বেদে সম্প্রদায়।
বাঁচার তাগিদে রাষ্ট্রের অনেক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে না দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো হত দরিদ্র এসব মানুষগুলো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে আরাকানরাজ বল্লার রাজার সাথে তাদের প্রথম ঢাকায় আগমন ঘটে। প্রথমে তারা বিক্রমপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তারপর জীবিকার তাগিদে সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এই যাযাবর বেদেরা এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকে না। আজ এখানে তো কাল সেখানে।
তেমনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানাধীন ৯ নং দাউদপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড তিরাশি গাও, প্রকাশিত কোনারচর তেমুখির দক্ষিণ পাশে অস্থায়ীভাবে পলিথিনের তাবু করে এদের বসবাস করতে দেখা যায়। সেখানে ২৪ টি পরিবারে মোট ৯১ জন লোক বসবাস করে।
দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকার সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো চীফ সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু সেখানে সরেজমিন পরিদর্শনকালে বেদে সম্প্রদায়ের সর্দারের ভাতিজা মোঃ সাইদুল হোসেন জানান আমাদের অবস্থা ভালো নেই। ছেলে মেয়ে সহ পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। বাপ-দাদার ব্যবসায় আজ পরিবর্তন করতে হচ্ছে। আগের মত এখন আর গ্রাম-গঞ্জে, হাটে-বাজারে ব্যবসা হয় না। সাপও আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের মহিলাদের গ্রামে গ্রামে বাত এবং দাঁতে পোকার যে চিকিৎসা করে, গ্রামের মানুষজন এখন আগের মত গ্রহন করে না।
পেশাগত নানান সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা অধিকাংশ বেদেরা বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়ছি। আগে সাপ খেলা দেখিয়ে অনেক টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু এখনতো সাপই পাওয়া যাচ্ছে না চলবো কি করে?
সরকারি কোন অনুদান পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ ৪-৫ মাস যাবত এখানে আছি কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। এই শীতকালীন সময়েও আমরা শীতবস্ত্রও পাইনি। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, কোয়াশার চাদরেঢাকা কিন্তু আমাদের বাচ্চা ও বয়স্ক যারা আছেন তারা খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
একজন বেদে নারী জানান, এখন আগের মত চলতেও পারিনা তবো সিঙ্গা লাগাই আর টুকিটাকি কবিরাজি করে যা পাই তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে।
তিনি আরো বলেন, আমরা যাযাবর মানুষ, নিদিষ্ট কোন জায়গা নেই, ঝড়, বৃষ্টি ও শীতে আমাদের কষ্টের শেষ থাকেনা। আমাদের কথা কোন সরকারই ভাবে না।
ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের আমরা নিশ্চিত অন্ধকারের দিকে নিজেরাই ঠেলে দিচ্ছি। আমরা যাযাবর মানুষ আজ এখানে তো কাল ওখানে । সন্তানদের পড়াবো কিভাবে?
সন্তানদেরও এই পেশায় আনবেন কিনা জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কি করবো আমাদের দেশের বাড়িতে নিজেদের কোন জায়গা জমি নেই, নিদিষ্ট জায়গা না থাকলে সন্তানদের পড়াবো কিভাবে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমাদের যদি কোন ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে সন্তানদের আমরা লেখাপড়া করাতে পারবো। আমরা চাই না আমাদের মতো আমাদের সন্তানরা এই পেশায় আসুক।
এখানকার অস্থায়ী বসবাসকারী বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের মানবেতর জীবনযাপনে সরকারি ভাবে কোন সহযোগিতা করা যায় কিনা জানতে মুঠোফোনে কথা হয় ৯ নং দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুল হক এর সাথে তিনি জানান তাদেরকে সহযোগিতা করার মতো কোনো বরাদ্দ তার কাছে নেই।
এবিষয়ে ৯ নং দাউদপুর ইউনিয়নের ১ নং ইউপি সদস্য মতিন মিয়া জানান, তার জানা মতে এদেরকে দেওয়ার মতো কোন বাজেট নাই।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, শীঘ্রই তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলাপ করে একটা ব্যবস্থা করবেন।
এবিষয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূসরাত লায়লা নীরা এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান শীঘ্রই এখানকার বেদে সম্প্রদায়কে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন এবং তাদের জন্য একটা প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার ব্যবস্থাও তিনি করবেন।