রায়পুরে সংখ্যালঘু পাড়ার আতঙ্ক এক গৃহবধূ
- আপডেট টাইম : ০২:১১:৪৫ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২
- / ১৫৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে নূপুর রানী কীর্ত্তনীয়া (২৮) নামে এক নারীর ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েছে গ্রামের লোকজন। উপজেলার দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়নের গাইয়ারচর গ্রামের মাঝি বাড়ির বাসিন্দা রাজীব মজুমদারের স্ত্রী তিনি। কয়েকটি প্রতারণার ঘটনায় আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘু পাড়ার লোকজন। কখন কে তাঁর দৃষ্টিতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নূপুরের স্বামী রাজীব মজুমদার। তিনি এটিকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন।
ওই গৃহবধূর এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ট হয়ে এলাকার লোকজন বখাটেপনা প্রতিরোধে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। শতাধিক লোক স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে। ক্ষতিগ্রস্ত রিনা মজুমদার নামের এক গৃহবধূ মামলা করার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন নূপুর। অপরদিকে ওই গৃহবধূর পক্ষ হয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি মামলা ও অভিযোগ থেকে তাঁকে রেহাই পাইয়ে দিতে শুরু করেছেন চেষ্টা তদবির।
ভূক্তভোগী রিনা মজুমদার (৪০) বলেন, আমার স্বামী বিপ্লব মজুমদারের দোকান থেকে ৮ হাজার টাকা বাকিতে মালামাল নেন নূপুর। দীর্ঘদিন টাকা না দেওয়ায় গত ৪ জুন দুপুরে আমি টাকার জন্য তাঁর কাছে গেলে আমাকে গালমন্দ করেন। আমার স্বামী সেখানে গেলে তাঁকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিপ্লব। ওই ঘটনায় আমি বাদি হয়ে মামলা করেছি। ওই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য হায়দরগঞ্জের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আমাদেরকে চাপ দেওয়ায় আমরা আতঙ্কিত।
মাঝি বাড়ির মুক্তা রানী মজুমদার (৫০) বলেন, স্বামীর চাকুরী হওয়ার সময় নূপুর আমার স্বামীর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাওলাত নেন। ওই টাকা চাইতে গেলে ঘরের দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে আমার স্বামী সুশিল মজুমদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনেন। পরে হায়দরগঞ্জে এক নেতার অফিসে শালিসের নামে আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই নেতা নিয়মিতই নূপুরের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন।
হয়রানির শিকার দুলাল ঢালী (৫৫) বলেন, নূপুর আমার ফার্নিচারের দোকান থেকে বাকিতে দুটি খাট নিতে চায়। না দেওয়ায় প্রায় ৬ মাস আমাকে হয়রানি করা হয়। উল্টো ১০ হাজার টাকা পাওনা আছেন প্রচার করে ওই টাকা হাতিয়ে নিতে চায়। প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে আমার দোকানে পাঠিয়ে শাসানো হয়। আমার মতো ৬-৭ জনকে একইভাবে হয়রানি ও টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
বখাটেপনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, নূপুরের কারণে এলাকার হিন্দু, মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনই অতিষ্ট। হাওলাদ টাকা চেয়ে না পেলে যেমন লোকজনকে হয়রানি করেন। তেমনি দিলেও ওই টাকা ফেরত চাইতে গেলে লোকজনকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে ঘটনা সাজিয়ে হয়রানি করেন। ইতোমধ্যে লোকজনের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটা ওর এক ধরণের পেশা বা ব্যবসা। আমরা লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করেছি। লিখিতভাবে এলাকার শতাধিক লোকের একটি অভিযোগ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে।
রায়পুর উপজেলা পূজা উদ্্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও গাইয়ারচরের বাসিন্দা বলরাম মজুমদার বলেন, অভিযুক্ত নূপুর কীর্ত্তনীয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত দাবিদারদের অধিকাংশই আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন। এজন্য আমরা চাচ্ছি সব পক্ষ বসে সামাজিক সমঝোতার মাধ্যমে লোকজন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ওই গৃহবধূও যেনো কোনো খারাপ বিষয়ের সাথে না জড়ায় সেটির নিশ্চিত একটি ব্যবস্থা করা।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য চেষ্টা করেও নূপুর রানী কীর্ত্তনীয়াকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্বামী রাজীব মজুমদার বলেন, আমি আনসার সদস্য হিসেবে ব্রাক্ষণবাড়িয়াতে কর্মরত রয়েছি। ছুটিতে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসি। কয়েকটি ঘটনা থাকলেও ঢালাওভাবে আমাদেরকে দোষ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে সমাধার চেষ্টা করবো।
দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাওলাদার নুরে আলম ঝিকু বলেন, কয়েকটি ঘটনা নিয়ে ওই গৃহবধূ ও লোকজনের বিরোধ চলে আসছে। খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিপন বড়ুয়া বলেন, একটি ঘটনায় গত ১১ জুন থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত নূপুর রানীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।