পাইকগাছার চাঁদখালী বাজার হতে কয়রা নাকশা পর্যন্ত চলছে শতাধিক অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি
- আপডেট টাইম : ০৪:৪২:০৪ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
- / ২৩৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
শেখ সিরাজুল ইসলাম : খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চাঁদখালী বাজার হতে পার্শ্ববর্তী কয়রার নকশা পর্যন্ত বীরদর্পে অবৈধভাবে চলছে শতাধিক অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি। একেকটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ মন থেকে ৩০০ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। শতাধিক এই কাঠ-কয়লার চুল্লিতে প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে তিন থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। এর ফলে প্রতিমাসে এই অবৈধ কাঠ কালার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এর ফলে ধ্বংস হচ্ছে গাছগাছালি, উজাড় হচ্ছে বন, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় সব দিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের মধ্যে অবৈধ এই কাঠ-কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন ধামরাইলে আইয়ুব ও তার পার্টনার, ফতেপুর জিল্লুর ও তার পার্টনার। চাঁদখালী বাজারের পর থেকে সারিবদ্ধ ভাবে অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন , মিন্টু , মিঠু, দিপু, জিয়া ,লাচু , হাবিব , খোকন মেম্বার, সাঈদ, শাহাদাত সহ কয়েকজন। চাঁদখালীর পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলায় নকশা এলাকায় অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন মোঃ ইকরামিন সহ কয়েকজন। দুটি থানার সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে অবৈধ কাঠ কয়লার এই চুল্লি চালানো হচ্ছে। অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য চুল্লি মালিকদের রয়েছে একটি কমিটিও। কমিটি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবদিক ম্যানেজ করেন বলে জানিয়েছেন জিল্লু নামের একজন চুল্লি মালিক। এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোন প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই নির্ভাবনায় এই অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানো হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি আরো বলেন, কাঠ-কয়লার চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না , চোখ জ্বালা করতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকাবাসী আরও বলেন, এসকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। এলাকাবাসী আরো বলেন, এসব কয়লার চুল্লি মালিকরা এলাকার প্রভাবশালী মহল সহ বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করে এই অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে তাদের এই অবৈধ কাজে তেমন কোনো বাধা আসে না এব়ং কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, আমাদের এ এলাকাটি যেন অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির একটি নগরীতে পরিণত হয়েছে। পাইকগাছা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছগাছালি ও বন উজাড় করে সারিবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন যানবাহনে তাজা কাচা কাঠ গিয়ে পৌছাচ্ছে এসব কাঠ-কয়লা চুল্লিতে। কোন প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই অবৈধভাবে বীরদর্পে এই অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানো হচ্ছে। শাসনহীন রাজ্যের মত অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির রাজ্য হিসেবে পরিচিত এই এলাকাটি । কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জিল্লু নামের ওই চুল্লি মালিক বলেন, আমাদের কোনো কাগজপত্র লাগে না, বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এটা চালাতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কোন অভিযান পরিচালনা করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চুল্লি মালিক জিল্লু আরো বলেন, বছরে একবার খুলনা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আসেন, কিন্তু আসার আগে ওখান থেকে ফোনে জানিয়ে দেয় তখন সবাই কয়েকদিন চুল্লি বন্ধ করে রাখে। কাঠ কয়লার চুল্লির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই স্থানে পাশাপাশি কয়েকটি ইট ভাটায় সমানতালে বিপুল পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সংবাদ সংগ্রহ করার সময় ভাটায় বিপুল পরিমাণ কাঠ দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু ইলিয়াস বলেন, আমি অল্প কিছুদিন হলো চেয়ারম্যান হয়েছি, তাই কাঠ-কয়লার চুল্লির বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন, আমরা যেখানে এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালাচ্ছি, ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই চাঁদখালী ও নাকশা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট নাই।