ঢাকা ০৫:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে রেন্ট এ কারের গাড়ী ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে জুলাই গণঅভুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে নান্দাইলে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আবরার ফাহাদ হত্যা : হাইকোর্টের রায় রোববার ৪৩ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন ট্রাম্প কালিয়াকৈরে ট্রাক ও সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩ আহত ২ নাসিরনগরে ধরমন্ডল ইউনিয়ন যুবদলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের থানায় মামলার বাদীকে মারধর, গুলির চেষ্টা রংপুরে উপপুলিশ কমিশনার শিবলি কায়সার চাতলপাড় ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অনুষ্ঠিত মোংলায় জামায়াতের উদ্যোগে এক বিশাল ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

বাঘা সাবরেজিষ্টার অফিসে শ্রেণী পরিবর্তন করে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৫:৩৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
  • / ৩৪৭ ৫০০০.০ বার পাঠক

বাঘা ( রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঘা সাবরেজিষ্ট্রার অফিসের ১৮৭ নম্বর সনদধারি দলিল লেখক শাহিনুর রহমান ও সাবরেজিষ্ট্রার সাকিব রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া যায় ।

বাঘা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর বাঘা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড চকছাতারী গ্রামের আব্দুল গফুরের স্ত্রী জহুরা বেগম একই গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মিন্টু রহমান এর নিকট সাড়ে ৮ শতাংশ জমি বিক্রয় করেন। যার দাগ নম্বর ১৩৮, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং- ১০৬৯, আর/এস খতিয়ান নং- ৪৬, শ্রেনী-ধানি, মুল্য ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা,সম্পাদিত দলিল নং ২৭১১। কিন্তু জমির শ্রেনী পরিবর্তনের অভিযোগ পাবার পর সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে গিয়ে ওই দাগের খতিয়ান তুলে দেখা যায়, সেখানে জমির শ্রেনী রয়েছে খরবন।

সরকার কর্তৃক চকছাতারী মৌজায় নির্ধারিত মূল্য তালিকায় খরবন উল্লেখ না থাকায় নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারন করে জমি রেজিস্ট্রি করতে হবে । সে হিসেবে চকছাতারী মৌজায় সর্বোচ্চ সরকারি নির্ধারিত মূল্য প্রতি শতক ৭৪ হাজার চারশত ৬৯ টাকা। আর ধানি জমির জন্য মূল্য ২২ হাজার দুইশত ৭৪ টাকা। সরকারি রেজিষ্ট্রেশন নিয়ম অনুযায়ী মোট মুল্যের ৭.৫০ শতাংশ টাকা ব্যাংকে চালান হবে। এ টাকা সরকারের কোষাগারে যাবে। বিধি অনুযায়ী ওই সাড়ে ৮ শতক খরবন জমির দলিল হওয়ার কথা ছয় লাখ ৩২ হাজার নয়শত ৮৬ টাকা। এতে সরকারি হিসেব অনুযায়ী সরকার পেত ৪৭ হাজার ছয়শত টাকা। কিন্তু আসল খতিয়ান ফেলে দিয়ে নকল খতিয়ানে সেই জমি ধানি উল্লেখ করে দুই লক্ষ ১৫ হাজার টাকার দলিল সম্পাদন করায় সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১৬ হাজার তিনশত ৮৫ ঠাকা। ফলে সরকার রাজ্স্ব হারিয়েছে প্রায় ৩১ হাজার পাঁচশত টাকা।

এ বিষয়ে জমির ক্রেতা মিন্টু রহমান বলেন, আমরা মুর্খ মানুষ । জমির হিসাব নিকাশ অত বুঝিনা । জমির কাগজপত্র দেবার পর মুহরী যা যা চেয়েছে আমি তাই দিয়েছি । পরে তারা কত টাকার দলিল রেজিষ্ট্রেশন করেছে আমি জানিনা।

দলিলের সাক্ষি সাবেক ইউপি সদস্য মজিবর রহমান বলেন, ক্রেতার নিকট কাগজপত্র অনুযায়ী টাকা নিয়ে পরবর্তিতে রেকর্ড পরিবর্তন করে দলিল কিভাবে সম্পাদিত হলো এ বিষয়ে আপনি সাবরেজিষ্টার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন। শুধু এতটুকুই বলতে পারি, আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে জমি রেজিষ্টেশন করতনা। আমরা জনগন বড় অসহায়।

স্থানীয় এক প্রবিন দলিল লেখক নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, শুধু একটি নয়, বাঘায় এখন অহরহ শ্রেনী পরিবর্তন করে কম মূল্যে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভুমি রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে। তাদের এ অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গেলে দলীল লেখক সমিতির রোষানলে পড়তে হয়। লাইসেন্স বাতিলসহ নানা রকম হুমকি প্রদান করা হয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।

আরেক জন স্থানীয় পৌর নাগরিক মাইনুল ইসলাম বলেন, সাব রেজিস্ট্রার সপ্তাহে দুই দিন (রবি ও সোমবার) অফিস করে জমি রেজিষ্ট্রি করেন। এই দু’দিনে দলিল সম্পাদন হয় ১০০-১৫০টি। জমির ক্রেতার নিকট থেকে সঠিক রেজিষ্ট্রি ফি আদায় করলেও প্রায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদন করা হয়। একেকটি জমির শ্রেণী পরিবর্তনে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। গত দুই বছর আগে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভুমি রেজিষ্টেশন করার সময় তৎকালিন সাবরেজিষ্ট্রার তিথি রানি মন্ডল দলিল রেজিষ্টেশন না করলে পরবর্তিতে দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে তাঁর বদলির জন্য আন্দোলন করা হয়।

উপজেলা ভূমি অফিসের এক সার্ভেয়ার অভিযোগ করে বলেন, জমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ প্রায় খারিজ আবেদন করা হয়। সেই ক্ষেত্রে আমরা সমস্যায় পড়ে যায়।

দলিল সম্পাদনকারি শাহিনুর রহমান কে মুঠোফোনে শ্রেনী পরিবর্তন করে জমি রেজিষ্ট্রেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই, আপনার যা খুশি লিখতে পারেন ।

অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বাঘা সাবরেজিস্ট্রার শাকিব রায়হান শরিফ কে মুঠোফোনে কল করলে তিনি জানান, আমি ছুটিতে আছি ,এ বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব না ।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মুঠোফোনে জানান, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পায়নি। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিল সম্পাদিত হবার বিষয়ে সু নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাঘা সাবরেজিষ্টার অফিসে শ্রেণী পরিবর্তন করে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন

আপডেট টাইম : ০৫:৩৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১

বাঘা ( রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঘা সাবরেজিষ্ট্রার অফিসের ১৮৭ নম্বর সনদধারি দলিল লেখক শাহিনুর রহমান ও সাবরেজিষ্ট্রার সাকিব রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পাওয়া যায় ।

বাঘা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর বাঘা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড চকছাতারী গ্রামের আব্দুল গফুরের স্ত্রী জহুরা বেগম একই গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মিন্টু রহমান এর নিকট সাড়ে ৮ শতাংশ জমি বিক্রয় করেন। যার দাগ নম্বর ১৩৮, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং- ১০৬৯, আর/এস খতিয়ান নং- ৪৬, শ্রেনী-ধানি, মুল্য ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা,সম্পাদিত দলিল নং ২৭১১। কিন্তু জমির শ্রেনী পরিবর্তনের অভিযোগ পাবার পর সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে গিয়ে ওই দাগের খতিয়ান তুলে দেখা যায়, সেখানে জমির শ্রেনী রয়েছে খরবন।

সরকার কর্তৃক চকছাতারী মৌজায় নির্ধারিত মূল্য তালিকায় খরবন উল্লেখ না থাকায় নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারন করে জমি রেজিস্ট্রি করতে হবে । সে হিসেবে চকছাতারী মৌজায় সর্বোচ্চ সরকারি নির্ধারিত মূল্য প্রতি শতক ৭৪ হাজার চারশত ৬৯ টাকা। আর ধানি জমির জন্য মূল্য ২২ হাজার দুইশত ৭৪ টাকা। সরকারি রেজিষ্ট্রেশন নিয়ম অনুযায়ী মোট মুল্যের ৭.৫০ শতাংশ টাকা ব্যাংকে চালান হবে। এ টাকা সরকারের কোষাগারে যাবে। বিধি অনুযায়ী ওই সাড়ে ৮ শতক খরবন জমির দলিল হওয়ার কথা ছয় লাখ ৩২ হাজার নয়শত ৮৬ টাকা। এতে সরকারি হিসেব অনুযায়ী সরকার পেত ৪৭ হাজার ছয়শত টাকা। কিন্তু আসল খতিয়ান ফেলে দিয়ে নকল খতিয়ানে সেই জমি ধানি উল্লেখ করে দুই লক্ষ ১৫ হাজার টাকার দলিল সম্পাদন করায় সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১৬ হাজার তিনশত ৮৫ ঠাকা। ফলে সরকার রাজ্স্ব হারিয়েছে প্রায় ৩১ হাজার পাঁচশত টাকা।

এ বিষয়ে জমির ক্রেতা মিন্টু রহমান বলেন, আমরা মুর্খ মানুষ । জমির হিসাব নিকাশ অত বুঝিনা । জমির কাগজপত্র দেবার পর মুহরী যা যা চেয়েছে আমি তাই দিয়েছি । পরে তারা কত টাকার দলিল রেজিষ্ট্রেশন করেছে আমি জানিনা।

দলিলের সাক্ষি সাবেক ইউপি সদস্য মজিবর রহমান বলেন, ক্রেতার নিকট কাগজপত্র অনুযায়ী টাকা নিয়ে পরবর্তিতে রেকর্ড পরিবর্তন করে দলিল কিভাবে সম্পাদিত হলো এ বিষয়ে আপনি সাবরেজিষ্টার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন। শুধু এতটুকুই বলতে পারি, আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে জমি রেজিষ্টেশন করতনা। আমরা জনগন বড় অসহায়।

স্থানীয় এক প্রবিন দলিল লেখক নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, শুধু একটি নয়, বাঘায় এখন অহরহ শ্রেনী পরিবর্তন করে কম মূল্যে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভুমি রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে। তাদের এ অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গেলে দলীল লেখক সমিতির রোষানলে পড়তে হয়। লাইসেন্স বাতিলসহ নানা রকম হুমকি প্রদান করা হয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।

আরেক জন স্থানীয় পৌর নাগরিক মাইনুল ইসলাম বলেন, সাব রেজিস্ট্রার সপ্তাহে দুই দিন (রবি ও সোমবার) অফিস করে জমি রেজিষ্ট্রি করেন। এই দু’দিনে দলিল সম্পাদন হয় ১০০-১৫০টি। জমির ক্রেতার নিকট থেকে সঠিক রেজিষ্ট্রি ফি আদায় করলেও প্রায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদন করা হয়। একেকটি জমির শ্রেণী পরিবর্তনে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়। গত দুই বছর আগে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভুমি রেজিষ্টেশন করার সময় তৎকালিন সাবরেজিষ্ট্রার তিথি রানি মন্ডল দলিল রেজিষ্টেশন না করলে পরবর্তিতে দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে তাঁর বদলির জন্য আন্দোলন করা হয়।

উপজেলা ভূমি অফিসের এক সার্ভেয়ার অভিযোগ করে বলেন, জমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ প্রায় খারিজ আবেদন করা হয়। সেই ক্ষেত্রে আমরা সমস্যায় পড়ে যায়।

দলিল সম্পাদনকারি শাহিনুর রহমান কে মুঠোফোনে শ্রেনী পরিবর্তন করে জমি রেজিষ্ট্রেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই, আপনার যা খুশি লিখতে পারেন ।

অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য নিতে বাঘা সাবরেজিস্ট্রার শাকিব রায়হান শরিফ কে মুঠোফোনে কল করলে তিনি জানান, আমি ছুটিতে আছি ,এ বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব না ।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মুঠোফোনে জানান, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পায়নি। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দলিল সম্পাদিত হবার বিষয়ে সু নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।