সেই দুই বোন বাবার কোটি টাকা নিয়ে উধাও মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের ব্যাংকে রাখা দেড় কোটি টাকার হিসাব মিলছে না।
- আপডেট টাইম : ১০:৪২:০৫ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৩ জানুয়ারি ২০২১
- / ৩৩১ ৫০০০.০ বার পাঠক
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।
গুলশানে বাড়ির সামনে অবস্থান করা দুই বোন মুশফিকা ও মোবাশ্বেরার বাবা প্রয়াত মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের ব্যাংকে রাখা দেড় কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। অভিযোগ উঠেছে, স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ গোপন করে সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে চেক মারফত ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন প্রয়াত জগলুলের দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুর। মৃত্যুর পর ম্যানডাটি ক্ষমতা অকার্যকর হলেও তা গোপন করে টাকা উঠানোর অভিযোগে গুলশান থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন বড় বোন মুশফিকা মোস্তফা।
দুই বোন এবং তাদের দ্বিতীয় মা আঞ্জু কাপুরের সম্পত্তি দাবির সপক্ষে কাগজপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশের পর ব্যাংক হিসাবের স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন অস্বাভাবিক লেনদেন চোখের পড়ে দুই বোনের।
মামলার এজাহারে বাদী মুশফিকা মোস্তফা অভিযোগ করেন, আমার বাবা ১০ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুর আগে আঞ্জু কাপুর ব্যাঙ্গালোর ইন্ডিয়া থেকে এক ভারতীয় নারীকে তার গৃহপরিচারিকা হিসেবে নিয়োগ করেন। আমার বাবার মৃত্যুর পর তার মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে গত ১২ অক্টোবর আমি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখা গেলে, ব্যাংক থেকে জানানো হয় গতকাল ১১ অক্টোবর আঞ্জু কাপুর ব্যাংকে এসে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। বাবার মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানেন না।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট দুই বোন এবং তাদের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর আঞ্জু কাপুরের সম্পত্তি দাবির সপক্ষে কাগজপত্র হলফনামা আকারে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে আদেশ দেন। একইসঙ্গে গুলশানের (২-এ ৯৫ নম্বর) ওই বাড়িতে থাকা জিনিসপত্র কোনও পক্ষ বাইরে নিতে পারবে না এবং দুই বোনের নিরাপত্তা অব্যাহত রাখতে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়।
মুশফিকা মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর আমি ১৫ ডিসেম্বর বাবার সিটি ব্যাংকের হিসেবে স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিলে আমি দেখতে পাই, বাবার মৃত্যুর পরের দিন আনুমানিক ১০টা থেকে চারটের মধ্যে আমার বাবার হিসাব থেকে চেক দিয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা আমাকে জানান, আঞ্জু কাপুর আমার বাবার মৃত্যুর খবর গোপন করে টাকা উত্তোলন করেছেন।
মুশফিকা মোস্তফা বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী আমার বাবার মৃত্যুর পর তার আর ম্যানডাটি ক্ষমতা বলবত থাকে না। তাই সে ব্যাংকে আমার বাবার মৃত্যুর খবর অবগত না করে প্রতারণার আশ্রয় নেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন, আমি তদন্ত করছি। এখানে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার, ক্লুলেস কিছু নেই। মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ সাহেব ১০ অক্টোবর মারা যান। তার মারা যাবার সংবাদ গোপন করে ১১ অক্টোবর আঞ্জু কাপুর সিটি ব্যাংকের ১৩৬ গুলশান অ্যাভিনিউ শাখা থেকে চেক মারফত নগদ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। তদন্ত শেষে সব কিছু জানানো যাবে।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে বাবার মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে গুলশান ২-এ ৯৫ নম্বর সড়কের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন দুই বোন। তাদের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। পরে এই দুই বোনের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ আসায় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ বাড়িতে প্রবেশ ও সেখানে তাঁদের অবস্থান নিশ্চিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ওই দিন রাতেই আদালতকে জানাতে বলা হয়।