শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পুলিশের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
- আপডেট টাইম : ০৮:২৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ৩ জানুয়ারি ২০২১
- / ৩৪৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শান্তি শৃঙ্খলা-রক্ষা এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করতে নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধ দমনে নিজেদের প্রতিনিয়ত যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
আজ রবিবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পুলিশের ৩৭তম বিসিএস-পুলিশ ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারগণের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে অপরাধের ধরণ ও প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, মানবপাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা-নির্যাতনসহ নিত্য নতুন সামাজিক অপরাধ ও সামাজিক সমস্যা নিরসনে পুলিশের সব সদস্যকে সর্বদা আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে বাহিনীকে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রেখে জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্য নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবে। জাতির পিতার আর্দশ ধারণ করে জনপ্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও ভরসারন্থল হয়ে উঠবে- মুজিববর্ষে এই আমাদের প্রত্যাশা।
শিক্ষানবিশ নবীন সহকারী পুলিশ সুপারদের উদ্দেশ্যে পুলিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা প্রকাশ করি তোমাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সােনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকবে। আজকের নবীণ কর্মকর্তারাই হবে আগামী দিনের কর্ণধার। তোমরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তোমরাই হবে আগামী দিনের অগ্রযাত্রার সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তাই তোমাদের আন্তর্জাতিক পরিম-লে নেতৃত্বদানের যোগ্য হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
পুলিশ বাহিনী গঠনে জাতির পিতার অবদান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে ঔপনিবেশিক পুলিশ হতে স্বাধীন বাংলাদেশের জনমানুষের পুলিশে পরিণত করতে জাতির পিতা বিভিন্ন মহতী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যথার্থই বলেছিলেন ‘একটা কথা ভুললে চলবে না তোমাদের। তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, তোমরা ইংরেজের পুলিশ নও, তোমরা পাকিস্তানিদের শোষকদের পুলিশ নও, তোমরা জনগণের পুলিশ। তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’ জাতির পিতার চিন্তা, চেতনা ও দর্শন তোমাদের সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে চলার পাথেয় হিসেবে কাজ করবে। তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ সর্বদা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়ােজিত করবে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। এক্ষেত্রে আমি জাতির পিতার আরও একটি উদ্ধৃতি কোট করছি ‘মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অন্যান্যের মধ্যে পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ খন্দকার গোলাম ফারুক, রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, সংসদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।