আগুনের ঝুঁকিতে গাউছিয়া ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট
- আপডেট টাইম : ০১:৪৪:৫৮ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট ২০২১
- / ৬৬৮ ৫০০০.০ বার পাঠক
স্টাফ রিপোর্টার আবু তালেব।।
৬৫ বছরের পুরোনো রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেট। এর বিভিন্ন গলিতে দোকানগুলো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে পরিবেশটা একেবারে ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে। মার্কেটের ভেতরে-বাইরে হাঁটার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। গা ঘেঁষে পথ চলতে হয় ক্রেতাদের। ভেতরে প্রবেশ করলে বের হওয়ার পথ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক এখানে শপিংয়ের জন্য আসেন। এদের অধিকাংশই নারী। কারণ অনেক পুরুষই ঠেলাঠেলির কারণে এ মার্কেটে যেতে চান না। নারীদের শপিংয়ের জন্য পছন্দের তালিকার প্রথম দিকে গাউছিয়া মার্কেট থাকলেও, সেখানে নেই কোনো অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এখানে একবার আগুন লাগলেই ভেতরের লোকরা দ্রুত পথ চিনে বাইরে বের হতে পারবে না। এর ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
একই চিত্র পাশেই অবস্থিত চাঁদনি চক শপিং কমপ্লেক্স, রাস্তার ওপারে অবস্থিত ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নূরজাহান সুপার মার্কেট, নেহার ভবন শপিং সেন্টার, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেটসহ নিউমার্কেটের অন্যান্য পোশাক মার্কেটের। কোনোটাতেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পানি ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম নেই। নেই অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত বের হওয়ার বিকল্প পথ।
সাইন্সল্যাব মোড় থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মিরপুর রোডের পাশ ঘিরে বেশ কয়েকটি শপিং মল গড়ে উঠলেও কোনোটাতে অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। অথচ এখানে মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। ঝুঁকি নিয়ে চলে কেনা-বেচা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নিউমার্কেটও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায়। মার্কেটটি ভাঙার জন্য সিটি করপোরেশন তোড়জোড় চালালেও ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।
ডিএসসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সর্দার বলেন, বেসরকারি মার্কেটগুলো দেখভাল করে ফায়ার সার্ভিস। তবে আমাদের যেসব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট রয়েছে, ফায়ারের জন্য সেগুলোতে কি কি রাখতে হবে সে বিষয়ে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি সভা হয়েছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষকে সেভাবে নির্দেশনা দিব।
২০১৭ সালে ডিএনসিসি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকার মার্কেটগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে জরিপ করে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের করা ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায়ও রয়েছে নিউমার্কেট এলাকার ওইসব মার্কেট। মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা জোরদার করতে কয়েক দফা চিঠি দেয় সংস্থাটি। তবে এখন পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা জোরদার করেনি মার্কেট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বেশ কয়েক দফায় চিঠি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব মার্কেট ভাঙতে পারেনি।
রাজউক এর জোন-৫ এর অথোরাইজড অফিসার মো. নরুজ্জামান জাহির বলেন, মার্কেটগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। রাজউকের চলমান অনুসন্ধানে আমরা দশ তলা এবং তার চেয়ে বেশি উঁচু ভবনগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছি। এরপর এসব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরই মধ্যে গত রবিবার নিউমার্কেট গাউছিয়া মার্কেটের পিছনে গাউছিয়া রেস্টুরেন্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও নিউমার্কেটের পোশাকের দোকানগুলো মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব মার্কেটে আগুন লাগলে তা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে ছোট ছোট দোকানে পোশাকের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন দোকানিরা। মার্কেটের ভেতরে সরু গলি পথ। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে পথ চলা কঠিন। মাথার ঠিক তিন ফুট উপরেই ঝুলছে বৈদ্যুতিক তার। এসির তারগুলোও সুরক্ষিত নয়। আবার মার্কেটগুলোর আশেপাশে রয়েছে রেস্টুরেন্ট। সেগুলোতে প্রতিদিন গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না-বান্না করা হয়। তবে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদাসীন মার্কেট কর্তৃপক্ষ।
অগ্নিনির্বাপণ আইন অনুযায়ী, আগুনের ঝুঁকি এড়াতে মার্কেটে ছাদে ওঠার সিঁড়ি, ছাদের দরজা খোলা রাখা, বাইরে বের হওয়ার একাধিক দরজা রাখা, আন্ডারগ্রাউন্ডে ৫০ হাজার গ্যালন পানি মজুদ রাখা, ওভারহেডে ১০ হাজার গ্যালন পানি জমা রাখা এবং শপিং মার্কেটে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগুন নেভানোর কর্মী রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই আইন মেনে গড়ে ওঠেনি এসব শপিং সেন্টার।
দোকানিরা বলছেন, মার্কেটে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা হবে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। স্বাভাবিকভাবে মানুষের গাদাগাদিতে মার্কেটের ভেতর পথ চলাই কঠিন হয়ে যায়। ফলে এসব মার্কেটে আগুন লাগলে অসংখ্য প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
গাউছিয়া মার্কেট এবং ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, গাউছিয়া পুরাতন মার্কেট, পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে ওঠেনি। তবে সমপ্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আমরা সবসময় সতর্ক আছি। এছাড়া বৈদুতিক লাইন মনিটর করার জন্য সার্বক্ষণিক লোক নিয়োগ করা আছে।