ডিসি অফিস এলএ শাখায় সেবাপ্রাপ্তিদের জিম্মি করে ঘুষ বানিজ্য

- আপডেট টাইম : ০৪:০১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫
- / ৭১ ৫০০০.০ বার পাঠক
ডিসি অফিস এলএ শাখা-৩ এ কর্মরত সার্ভেয়ার আফজাল হোসেন, কানুনগো শামসুল হক ও সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর কিছু দালালের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটটি ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের অধিগ্রহণকৃত জমির বিল নিতে আসা সেবাপ্রার্থীদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানির মাধ্যমে ঘুষ বানিজ্য করে আসছে। এমনকি সিন্ডিকেটটির বিরুদ্ধে ভুয়া বিল উত্তোলন ও নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলএ শাখা-৩ এ ভুক্তভোগীরা চরম হয়রানির শিকার হলে ও দৈনিক বর্তমান কথা এর সম্পাদক ও প্রকাশক টি.এম সওকত আলী মোস্তফা ভূমি বন্দোবস্ত নিতে এসে নিজেও হয়রানি ও ঘুষ দাবির মুখে জিম্মি হয়ে জনস্বার্থে দুদক ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে পৃথকভাবে দুটি অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগে বলেন, আমি আমার আর.এস প্রিন্টিং প্রেসের জন্য দীর্ঘমেয়াদি লিজ/বন্দোবস্ত প্রাপ্তির প্রত্যাশায় ২০২২ সালে জেলা প্রশাসক, ঢাকা বরাবর একটি আবেদন করি। জেলা প্রশাসক ০৬/০৩/২০২২ ইং তারিখে আর.ডি.সিকে দায়িত্ব প্রদান করেন। আর.ডি.সি ০৭/০৮/২০২২ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার ভূমি মতিঝিল সার্কেলকে সরেজমিনে তদন্ত ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে মতামত প্রেরণের নির্দেশ দেন। সহকারী কমিশনার ভূমি ২২/০৮/২০২২ ইং তারিখে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ধনিয়া ভূমি অফিসকে সরেজমিনে তদন্ত ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে মতামত প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ধনিয়া ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ০৫/০৯/২০২২ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। সহকারী কমিশনার ভূমি ৩০/১১/২০২২ ইং তারিখে উক্ত প্রতিবেদনে একমত হয়ে তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণ করে আর.ডি.সিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু আর.ডি.সি ১২/০১/২০২৩ ইং তারিখে পূনরায় সহকারী কমিশনার ভূমি মতিঝিলকে সি.এস ও এস.এ রেকর্ডের ধারাবাহিকতা, দেওয়ানী আদালতে কোন মামলা-মোকদ্দমা বিচারাধীন আছে কি-না তা পর্যালোচনা করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। তিনি ১৯/০৩/২০২৩ ইং তারিখে ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে চাহিদামতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহনের জন্য প্রেরণ করা হয়। ধনিয়া ভূমি অফিস ০৬/০৩/২০২৩ ইং তারিখে সুস্পষ্ট মতামতসহ সহকারী কমিশনার ভূমি মতিঝিলকে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে আমি আমার স্টাফ রিপোর্টারসহ সহকারী কমিশনার ভূমি এর সাথে দেখা করলে আমাদের সামনে সার্ভেয়ার আফজালকে প্রতিবেদন তৈরি করার দায়িত্ব দেন। সার্ভেয়ার আফজাল আমাদের সাথে কথা বলার জন্য বাহিরে নিয়ে বলেন, ১০,০০০০০/-(দশ লাখ) টাকার ব্যবস্থা করেন আমি বিষয়টি দেখবো। আফজালের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় আমাদের ছলে বলে কৌশলে কয়েক মাস ঘুরিয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অমান্য করে নাসরিন হীরা, জীবন গড়ি উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রতিবেদনের ভেতর তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে ২১/০৫/২০২৩ ইং তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। যা সরকারি চাকরি বিধিমালায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সার্ভেয়ার আফজালের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি ২৮/১০/২০০৪ ইং তারিখে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তিনি ডিসি অফিস, এলএ শাখায় কর্মরত থেকে দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। ইতিপূর্বে এলএ (বর্তমান) শাখা-১ এ দূর্নীতির দ্বায়ে তিনিসহ দূদকে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ৬ জনের ভেতর ৫ জনই ঢাকার বাইরে বদলি ও সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু আফজাল হোসেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হওয়ায় তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়নি। এমনকি তিনি দুদকের মামলাটিও ধামাচাপা দিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আফজাল হোসেন কিছুদিন নিজেকে আড়ালে রাখলেও বর্তমানে এলএ শাখা-৩ এ কর্মরত থেকে তৈরি করেছেন নতুন সিন্ডিকেট। এছাড়া ০৫/২০২২-২৩ নং এলএ কেসমূলে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণের টাকা মোঃ রমিজুল ইসলাম, সাং- পশ্চিম নন্দীপাড়া এওয়াডে নাম অন্তর্ভুক্ত করে ভূয়া বিল তৈরি করে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন এলএ শাখা-৩ এ কর্মরত সার্ভেয়ার আফজাল হোসেন, কানুনগো আমিনুল ইসলাম ও সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীর। যা মোঃ কবির হোসেন ইয়াকুব, দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগ দ্বায়ের করেছেন। উক্ত অভিযোগটি ঢাকা এডিসি,এলএ ২২/০১/২০২৫ ইং তারিখে শুনানি গ্রহণ করেন। উক্ত শুনানি গ্রহনের পরে মোঃ কবির হোসেনকে চাপ সৃষ্টি ও বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সিন্ডিকেটের প্রধান আফজাল হোসেন আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে অভিযোগটি প্রত্যাহার করিয়ে এডিসি এলএ মোঃ বদরুদ্দোজা শুভর মাধ্যমে তাদের পক্ষে বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করিয়েছেন। কিন্তু বদরুদ্দোজা শুভ ভুয়া বিল তৈরির কারিগর আফজাল গংদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এখনো আফজাল-শামসুল সিন্ডিকেট ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিগণের ক্ষতিপূরণের বিলের বিপরীতে (২-৩)% টাকা ঘুষ হিসেবে নিচ্ছেন। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করেন সিন্ডিকেটটি তাদের নানাভাবে হয়রানি করে চলেছেন। এমনকি সিন্ডিকেটটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে যারা ঘুষের টাকা অগ্রীম দেন তাদের ক্ষতিপূরণের টাকার চেক দ্রুত সম্পন্ন করে দেন। অপরদিকে যেসব ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি ঘুষের টাকা অগ্রীম না দেন তাদের বিভিন্ন অজুহাতে মাসের পর মাস ঘুরিয়ে হয়রানি করে থাকেন। এভাবে আফজাল-শামসুল সিন্ডিকেট দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন যা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
অভিযোগের ব্যাপার জানতে ডিসি অফিস এলএ শাখা-৩ এ আফজালের সাথে কথা বললে, তিনি অভিযোগের বিষয়বস্তুর বাইরে গিয়ে কথা বলতে শুরু করেন ও তৎক্ষনাৎ অভিযোগের ব্যাপারে স্পষ্ট করলে তিনি বলেন, আমি টি.এম সওকত আলী মোস্তফাকে চিনা। এছাড়া অভিযুক্ত কানুনগো শামসুল হকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি মিডিয়াতে কথা বলা নিষেধ বলে কর্তৃপক্ষ এলও সাদিয়া সুলতানা স্যারের সাথে কথা বলতে বলেন। সাদিয়া সুলতানার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি একই দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ ডিসি স্যারের সাথে কথা বলতে বলেন। তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ রয়েছে বলে বক্তব্য দিতে আবারও অনুরোধ করলে, তিনি একই অভিমত পূনঃব্যাক্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে ডিসি তানভীর আহমেদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তাকে না পাওয়ায় ডিসি তানভীর আহমেদের বক্তব্য প্রকাশ করা সম্ভব হলনা।