ঢাকা ০৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
এখন রাজপথে থাকা বেশি প্রয়োজন, তাই পদত্যাগ করেছি: নাহিদ ইসলাম পিলখানা হত্যাকাণ্ড হুমকির মুখে বাংলাদেশ, সেনাবাহিনীর প্রধান অপারেশন ডেভিল হান্টে মোংলায় ২ জনকে আটক জামায়াত নেতা আজহার লিভ টু আপিলের অনুমতি পাবেন, আদেশ বুধবার শতাধিক সদস্যের কমিটি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করছে ছাত্রদের নতুন দল জেলা বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে ফুলবাড়ীতে মানবন্ধন ভৈরবে সুইচ গিয়ার এক ছিনতাইকারী কে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৪ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের বিশুদ্ধানন্দ – শুভানন্দ অডিটোরিয়াম অনুষ্ঠিত ২০২৫ সাজেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক কটেজ ও রেস্টুরেন্টে রমজানে সরকারি অফিসের সময়সূচি ঘোষণা

শতাধিক সদস্যের কমিটি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করছে ছাত্রদের নতুন দল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩ ৫০০০.০ বার পাঠক

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের দিনেই দলটির নাম, নেতৃত্ব ও কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে দলের নির্বাচনি প্রতীক কী হবে, সেটি এখন অপ্রকাশিত রাখা হতে পারে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন এই দল।

দলটির শীর্ষ পদ থাকছে ছয়টি। যাত্রার শুরুতে আহ্বায়কের নেতৃত্বে ছয়টি শীর্ষ পদসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে ১০০ থেকে ১৫০ জন। দলের আত্মপ্রকাশের দিনে এই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। পরে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ জন করা হতে পারে। আর এই কমিটি নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে দলটি।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দলের কাউন্সিল করতে সময় লাগতে পারে দুই বছর। সেজন্য আহ্বায়ক কমিটিই দলকে এগিয়ে নিয়ে নির্বাচনে যাবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, কাউন্সিল করার পর সেখানে যে সাংগঠনিক কাঠামো আসবে, সেটি দলের মূল কাঠামো হিসেবে থাকবে এবং নির্বাচনের আগে কাউন্সিল করা সম্ভব না।

ফলে এই কমিটি নিয়েই দলটির নির্বাচনের দিকে এগোনোর কৌশল এক্ষেত্রে অনেকটাই স্পষ্ট।

দলের নাম কী হতে পারে?

আগামী ২৮ তারিখ রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে বিকেল তিনটায় নতুন দলের আত্মপ্রকাশের কথা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

সোমবার সন্ধ্যায় বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আসন্ন রাজনৈতিক দলটির সম্ভাব্য শীর্ষ পদের একজন নেতা বলেন, নতুন দলের নামে ‘নাগরিক’, ‘ছাত্রজনতা’ কিংবা ‘রেভ্যুলেশন’- এর মতো শব্দ থাকতে পারে।

এই মুহূর্তেই দলীয় প্রতীক ঘোষণা করা না হলেও কলম ও শাপলার মতো প্রতীক আলোচনার টেবিলে আছে বলেও জানা যাচ্ছে।

এরইমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচন করার যে আলোচনা শোনা যাচ্ছে, তা মাথায় রেখে নিজেদের তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামোও গুছিয়ে নিচ্ছে দলটি।

বিশেষ করে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখান থেকে অনেকেই দলটিতে যোগ দেবেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রতিনিধি তৈরির অভ্যন্তরীণ কাজও এগিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে সারা দেশ থেকে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে; যার মাধ্যমে শুরুতে ঘোষণা করা কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি পরে বাড়ানো হবে। দল ঘোষণার পরপরই দ্রুততম সময়ে জেলা, উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে।

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সমঝোতা

শীর্ষ পদগুলোতে কারা থাকবেন, এ বিষয়টি পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে দলের যাত্রা শুরুর আগেই । পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিভেদের বিষয় নিয়েও খবর হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলটির শীর্ষ পদে নাহিদ ইসলামের থাকার বিষয়টি এখন চূড়ান্ত। উপদেষ্টা পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তার নেতৃত্বেই আত্মপ্রকাশ করবে নতুন রাজনৈতিক দল।

এর বাইরে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদলেই চারজন নিয়ে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটি হবার কথা জানিয়েছিলেন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত একাধিক নেতা।

শেষ সময়ে সব পক্ষের মন যোগাতে পদের সমঝোতা করা হচ্ছে বলেই জানা যাচ্ছে। ফলে চারজনের পরিবর্তে আহ্বায়ক কমিটিতে থাকতে পারেন ছয়জন ব্যক্তি। যতদূর জানা গেছে, শীর্ষ পদের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো নারী নেই।

জুলাই আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুটি পদে থাকার বিষয়টিও প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া মধ্যপন্থার দল হিসেবেই দলটি আত্মপ্রকাশ করবে বলে বলা হচ্ছে।

‘সরকারের আনুকূল্যের’ তকমা কাটাতে পারবে নতুন দল?

নতুন দলে যোগ দেওয়ার আগে ছাড়তে হবে আগের পদ, সেটা হোক জাতীয় নাগরিক কমিটি বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিংবা উপদেষ্টা পরিষদের। সে জন্য দলের নেতৃত্বে আসতে নাহিদ ইসলামকে উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রথম থেকেই নতুন দলের বিরুদ্ধে সরকারের আনুকূল্য পাবার অভিযোগ করছে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। সরকারে বসে সুযোগ সুবিধা নিয়ে দল গঠন করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত বুধবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, তার মানে কি আমরা মনে করবো, তারা সরকারে থেকে দল গোছানোর চেষ্টা করছেন? সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেবো না। এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।

নতুন দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের গন্ধ পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রলম্বিত করে, এই সময়কে ব্যবহার করে, দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে- একটা প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, যেটা শেখ হাসিনার প্রক্রিয়া- ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আর ক্ষমতায় থাকার জন্য। আমরা সেই গন্ধটা এখন পাচ্ছি, সেই ভূততো এখন চেপে বসেছে। সরকারকে ব্যবহার করে, সরকারের এপারেটাস ব্যবহার করে, সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে যদি কিছু হয় সেখানেই তো সমস্যা।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দল করার এসব অভিযোগ কি নতুন দলের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, অবশ্যই জনগণের কাছে আমাদের (বিরুদ্ধে) অভিযোগের জায়গা আছে, সেটা ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে, আমরা করছিও। ব্যাখ্যা করার পর আমরা জনগণকে কনভিন্স করতে পেরেছি।

তার ভাষ্য, কিন্তু এটাতো সত্য, শুরুতেই আমরা যখন জনগণের কাছে যাচ্ছি, সে জায়গায় যখন অভিযোগের কথাটা আসছে, তখন আমাদের আগে ক্লিয়ারেন্স দিতে হচ্ছে। আমাদের নিজেদের পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হচ্ছে। এতটুকু বিঘ্ন, হ্যাসেলের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে।

তবে এই অভিযোগ স্বল্পমেয়াদে দলের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও অভিযোগের বাস্তবসম্মত পরিস্থিতি না থাকায় দীর্ঘমেয়াদে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন আখতার হোসেন।

উল্লেখ্য, আসন্ন নতুন দলের শীর্ষ পদের তালিকায় আখতার হোসেনের নাম বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে।

এদিকে গণতান্ত্রিক চর্চা করতে পারলে সরকারি আনুকূল্যের অভিযোগ কাটাতে পারবে তরুণদের এই দলটি – এমনটাও বলছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, প্রশ্নটা হচ্ছে, সরকার কতটুকু প্রশ্রয় দেবে। সরকার যদি সবাইকে সমসুযোগ দেয় তাহলে সমস্যা নেই, সরকারে থেকে যদি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়- তাহলে সেটা অন্যায্য হবে।

কিংস পার্টির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

দল গঠনে বিএনপির সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রশ্নে তাদের দিকেও তোলা হয়েছে পাল্টা অভিযোগ।

বিএনপিকে বাংলাদেশের প্রথম কিংস পার্টি বলেও অভিহিত করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। যদিও বিএনপির প্রতিষ্ঠা নিয়ে এসব বক্তব্যকে একেবারেই নাকচ করে দিচ্ছে দলটি।

এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিপাহী জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ওনার (জিয়াউর রহমান) উত্থান হয়েছে। উনি ক্ষমতা নেননি, উনাকে বসানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকারের বাইরে বিএনপি গঠন হওয়ায় ছাত্রদের দলের সঙ্গে বিএনপির কোনো তুলনা করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে বিএনপির এই সমালোচনার সুযোগ নেই বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের।

তিনি বলছেন, বিএনপি যখন গঠন হয়েছিল, জিয়াউর রহমান যখন দলের চেয়ারম্যান তখনও কিন্তু দেশে সামরিক শাসন। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ওইটার তুলনায় আমরা যদি ডিফারেন্স দেখতে যাই, অন্তত বিএনপির এই সমালোচনা করার সুযোগ দেখি না।

রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য নিয়ে দল গঠনের অভিযোগ আছে বাংলাদেশের আরেক রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও। তবে তিনটি দলের প্রেক্ষাপট ভিন্ন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শেষ পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে নতুন দল ভোটের রাজনীতিতে কতটা সুবিধা করতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

শতাধিক সদস্যের কমিটি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করছে ছাত্রদের নতুন দল

আপডেট টাইম : ০৬:৩১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের দিনেই দলটির নাম, নেতৃত্ব ও কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে দলের নির্বাচনি প্রতীক কী হবে, সেটি এখন অপ্রকাশিত রাখা হতে পারে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন এই দল।

দলটির শীর্ষ পদ থাকছে ছয়টি। যাত্রার শুরুতে আহ্বায়কের নেতৃত্বে ছয়টি শীর্ষ পদসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা হবে ১০০ থেকে ১৫০ জন। দলের আত্মপ্রকাশের দিনে এই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। পরে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ জন করা হতে পারে। আর এই কমিটি নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে দলটি।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দলের কাউন্সিল করতে সময় লাগতে পারে দুই বছর। সেজন্য আহ্বায়ক কমিটিই দলকে এগিয়ে নিয়ে নির্বাচনে যাবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, কাউন্সিল করার পর সেখানে যে সাংগঠনিক কাঠামো আসবে, সেটি দলের মূল কাঠামো হিসেবে থাকবে এবং নির্বাচনের আগে কাউন্সিল করা সম্ভব না।

ফলে এই কমিটি নিয়েই দলটির নির্বাচনের দিকে এগোনোর কৌশল এক্ষেত্রে অনেকটাই স্পষ্ট।

দলের নাম কী হতে পারে?

আগামী ২৮ তারিখ রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে বিকেল তিনটায় নতুন দলের আত্মপ্রকাশের কথা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

সোমবার সন্ধ্যায় বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আসন্ন রাজনৈতিক দলটির সম্ভাব্য শীর্ষ পদের একজন নেতা বলেন, নতুন দলের নামে ‘নাগরিক’, ‘ছাত্রজনতা’ কিংবা ‘রেভ্যুলেশন’- এর মতো শব্দ থাকতে পারে।

এই মুহূর্তেই দলীয় প্রতীক ঘোষণা করা না হলেও কলম ও শাপলার মতো প্রতীক আলোচনার টেবিলে আছে বলেও জানা যাচ্ছে।

এরইমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচন করার যে আলোচনা শোনা যাচ্ছে, তা মাথায় রেখে নিজেদের তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামোও গুছিয়ে নিচ্ছে দলটি।

বিশেষ করে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখান থেকে অনেকেই দলটিতে যোগ দেবেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রতিনিধি তৈরির অভ্যন্তরীণ কাজও এগিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে সারা দেশ থেকে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে; যার মাধ্যমে শুরুতে ঘোষণা করা কেন্দ্রীয় কমিটির পরিধি পরে বাড়ানো হবে। দল ঘোষণার পরপরই দ্রুততম সময়ে জেলা, উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে।

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সমঝোতা

শীর্ষ পদগুলোতে কারা থাকবেন, এ বিষয়টি পত্রপত্রিকায় শিরোনাম হচ্ছে দলের যাত্রা শুরুর আগেই । পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিভেদের বিষয় নিয়েও খবর হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলটির শীর্ষ পদে নাহিদ ইসলামের থাকার বিষয়টি এখন চূড়ান্ত। উপদেষ্টা পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তার নেতৃত্বেই আত্মপ্রকাশ করবে নতুন রাজনৈতিক দল।

এর বাইরে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদলেই চারজন নিয়ে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটি হবার কথা জানিয়েছিলেন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত একাধিক নেতা।

শেষ সময়ে সব পক্ষের মন যোগাতে পদের সমঝোতা করা হচ্ছে বলেই জানা যাচ্ছে। ফলে চারজনের পরিবর্তে আহ্বায়ক কমিটিতে থাকতে পারেন ছয়জন ব্যক্তি। যতদূর জানা গেছে, শীর্ষ পদের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো নারী নেই।

জুলাই আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুটি পদে থাকার বিষয়টিও প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া মধ্যপন্থার দল হিসেবেই দলটি আত্মপ্রকাশ করবে বলে বলা হচ্ছে।

‘সরকারের আনুকূল্যের’ তকমা কাটাতে পারবে নতুন দল?

নতুন দলে যোগ দেওয়ার আগে ছাড়তে হবে আগের পদ, সেটা হোক জাতীয় নাগরিক কমিটি বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিংবা উপদেষ্টা পরিষদের। সে জন্য দলের নেতৃত্বে আসতে নাহিদ ইসলামকে উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রথম থেকেই নতুন দলের বিরুদ্ধে সরকারের আনুকূল্য পাবার অভিযোগ করছে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। সরকারে বসে সুযোগ সুবিধা নিয়ে দল গঠন করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত বুধবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, তার মানে কি আমরা মনে করবো, তারা সরকারে থেকে দল গোছানোর চেষ্টা করছেন? সেই কৌশল নিলে আমরা তা হতে দেবো না। এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না।

নতুন দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের গন্ধ পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রলম্বিত করে, এই সময়কে ব্যবহার করে, দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে- একটা প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, যেটা শেখ হাসিনার প্রক্রিয়া- ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আর ক্ষমতায় থাকার জন্য। আমরা সেই গন্ধটা এখন পাচ্ছি, সেই ভূততো এখন চেপে বসেছে। সরকারকে ব্যবহার করে, সরকারের এপারেটাস ব্যবহার করে, সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে যদি কিছু হয় সেখানেই তো সমস্যা।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দল করার এসব অভিযোগ কি নতুন দলের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, অবশ্যই জনগণের কাছে আমাদের (বিরুদ্ধে) অভিযোগের জায়গা আছে, সেটা ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে, আমরা করছিও। ব্যাখ্যা করার পর আমরা জনগণকে কনভিন্স করতে পেরেছি।

তার ভাষ্য, কিন্তু এটাতো সত্য, শুরুতেই আমরা যখন জনগণের কাছে যাচ্ছি, সে জায়গায় যখন অভিযোগের কথাটা আসছে, তখন আমাদের আগে ক্লিয়ারেন্স দিতে হচ্ছে। আমাদের নিজেদের পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে হচ্ছে। এতটুকু বিঘ্ন, হ্যাসেলের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে।

তবে এই অভিযোগ স্বল্পমেয়াদে দলের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও অভিযোগের বাস্তবসম্মত পরিস্থিতি না থাকায় দীর্ঘমেয়াদে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন আখতার হোসেন।

উল্লেখ্য, আসন্ন নতুন দলের শীর্ষ পদের তালিকায় আখতার হোসেনের নাম বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে।

এদিকে গণতান্ত্রিক চর্চা করতে পারলে সরকারি আনুকূল্যের অভিযোগ কাটাতে পারবে তরুণদের এই দলটি – এমনটাও বলছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, প্রশ্নটা হচ্ছে, সরকার কতটুকু প্রশ্রয় দেবে। সরকার যদি সবাইকে সমসুযোগ দেয় তাহলে সমস্যা নেই, সরকারে থেকে যদি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়- তাহলে সেটা অন্যায্য হবে।

কিংস পার্টির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

দল গঠনে বিএনপির সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রশ্নে তাদের দিকেও তোলা হয়েছে পাল্টা অভিযোগ।

বিএনপিকে বাংলাদেশের প্রথম কিংস পার্টি বলেও অভিহিত করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। যদিও বিএনপির প্রতিষ্ঠা নিয়ে এসব বক্তব্যকে একেবারেই নাকচ করে দিচ্ছে দলটি।

এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিপাহী জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ওনার (জিয়াউর রহমান) উত্থান হয়েছে। উনি ক্ষমতা নেননি, উনাকে বসানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকারের বাইরে বিএনপি গঠন হওয়ায় ছাত্রদের দলের সঙ্গে বিএনপির কোনো তুলনা করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে বিএনপির এই সমালোচনার সুযোগ নেই বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের।

তিনি বলছেন, বিএনপি যখন গঠন হয়েছিল, জিয়াউর রহমান যখন দলের চেয়ারম্যান তখনও কিন্তু দেশে সামরিক শাসন। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ওইটার তুলনায় আমরা যদি ডিফারেন্স দেখতে যাই, অন্তত বিএনপির এই সমালোচনা করার সুযোগ দেখি না।

রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য নিয়ে দল গঠনের অভিযোগ আছে বাংলাদেশের আরেক রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও। তবে তিনটি দলের প্রেক্ষাপট ভিন্ন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শেষ পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে নতুন দল ভোটের রাজনীতিতে কতটা সুবিধা করতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।