গাজীপুরে একাধিক হত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৩৬ জনের নাম উল্লেখ: অজ্ঞাত আরও কয়েক শত
- আপডেট টাইম : ০৩:৫৭:১৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৬৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় গত (২০ জুলাই) নজরুল ইসলাম (৩২) নামে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মোছা. পূর্নিমা বেগম বাদী হয়ে বুধবার (২৮ আগস্ট) এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও দুইশত জনকে আসামি করা হয়েছে। বাসন থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, মেহের আফরোজ চুমকি, সিমিন হোসেন রিমি, রুমানা আলী টুসি, আখতার উজ্জামান, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মন্ডল, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি, আসাদুর রহমান কিরণ, আফজাল হোসেন, সরকার রিপন, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত নজরুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার বারইভাগ এলাকার মো. জামাল শেখের ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানহগরীর বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার শাহাবুদ্দিন মন্ডলের বাসায় ভাড়া থাকতেন।
এজাহারে মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী মোছাঃ পূর্ণিমা বেগম উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে গত (২০ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে তার স্বামী নজরুল ইসলাম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাসন থানাধীন চান্দনা এলাকায় পশমী সোয়েটার গার্মেন্টসের পাঁকা রাস্তার উপর এসে সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে মামলার প্রথম ১৬ জন আসামির নির্দেশে তাদের সঙ্গে থাকা বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, লোহার রড, রামদা, ছেন, চাপাতি, কোবাসহ মারাত্মক দেশীয় অস্ত্রসশ্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। তারা হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরীভাবে কিল ঘুষি মেরে, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে এলোপাথারী মারধর এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে একাধিক আন্দোলনকারীদের শরীরের নীলাফুলা, জখমসহ গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। অবৈধ অস্ত্রধারী এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত বিবাদীরা ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারীভাবে গুলি ছুড়তে থাকে, ঐ সময় বিবাদীদের ছোড়া গুলিতে নজরুল ইসলাম তার পিঠের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে।
পরে তাৎক্ষণিক মোছাঃ পূর্ণিমা বেগম স্বামীর লাশ নিয়ে শ্বশুরবাড়ী সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানাধীন বারইবাগ গ্রামে লাশ দাফন সম্পন্ন করেন। স্বামীর মৃত্যুতে আমার পরিবারের লোকজন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় এবং বর্তমানে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক থাকায় উক্ত আসামীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়।
অপরদিকে, (সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৫৭ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানায়)
গাজীপুরে অটোরিকশা চালক হৃদয়কে গুলি করে হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে নগরীর কোনাবাড়ি থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। নিহতের ফুফাত ভাই টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার আলমনগর এলাকার লাল মিয়ার ছেলে মো. ইব্রাহিম বাদী হয়ে গত সোমবার (২ আগস্ট) রাতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হককে প্রধান এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লাহ খান, সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, কোনাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, কাউন্সিলর সেলিম রহমান, কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন খোকন, কাউন্সিলর কাউসার আহমেদ, কাউন্সিলর শফিকুল আমিন তপন, সঞ্জিত সরকার, গাজীপুর মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ভূমিদস্যু সাইজুদ্দিন মোল্লা, কাউন্সিলর তুলা, মনির হোসেন, সঞ্জিত সরকারসড় ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কোনাবাড়ি থানার ওসি শাহ আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, নিহত হৃদয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ী থানার হরিনাচালা এলাকায় বাসা ভাড়া থেকে হৃদয় ও বাদী মো. ইব্রাহীম অটোরিকশা চালাতেন। গত (৫ আগস্ট) বিকেলে তারা কোনাবাড়ী থানার কুদ্দুছ নগর এঞ্জেল গেইট এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা কোনাবাড়ী থেকে কাশিমপুর সড়ক দিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে কোনাবাড়ী থানার দিকে আসতে থাকে। এ সময় সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে অন্য আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, রাম’দা, রড, চাপাতি, লাঠি সোটা নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর আক্রমণ করে। এতে হৃদয় ঘটনাস্থলে নিহত হয় এবং পরবর্তীতে আসামিরা তার লাশ গুম করে।
ওদিকে, প্রায় ২৪ জনের মতো আসামির নাম উল্লেখ করে কাশিমপুর থানার প্রেসক্লাব সহ একাধিক মামলা রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (৫ আগস্ট) হত্যাকান্ড নিয়ে। হত্যা মামলার আসামি দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু সাইজুদ্দিন মোল্লাসহ হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরা ফেরা করলেও গ্রেফতার করছে না কাশিমপুর থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। এরকম দূর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরা ফেরা করার পরও কোন অদৃশ্য শক্তির সামনে পুলিশ এদের গ্রেফতার করছে না প্রশ্ন জনমনে।অনুসন্ধানে আরও বাড়তে পারে