গত রবিবার(২৯ জুলাই) বিকেলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম নাশকতায় ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতা চলাকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয়েছে আরও ১৩টি যানবাহন। এরমধ্যে জিপ ৩টি, পিকআপ ৫টি, ড্রাম ট্রাক ১৮টি, ভেকু ১টি, মোবাইল কোর্টের গাড়ি ১টি, বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়ি ২টি, হুইল লোডার ১টি এবং টেম্পু ১টি। এছাড়াও গাজীপুর সিটির জোন-১ এর ভবনের দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে, নিচতলার তিনটি কক্ষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয় জোন-৩ এর ভবনের দরজা জানালাও ভাঙ্চুর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, কয়েকদিনের আন্দোলনে নাশকতাকারীরা মহানগরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙ্চুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়। বিশেষ করে হামলাকারীরা সরকারি অফিসে নাশকতা করেছে।
হামলাকারীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তার পুলিশ বক্সের টিনের চাল, চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্রে এবং কোনাবাড়ী এলাকার পুলিশবক্সে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, এর পাশেই সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের ভেতরে রাখা চারটি গাড়িতেও তারা আগুন দেয়। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের স্টেশনগুলোতে রাখা এক্সেলেটরগুলোর আংশিক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম জানান, টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ কার্যালয়ের মূল ফটকের পাশে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও যন্ত্র বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার দুটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙ্চুর ও অগ্নিসংযোগ করে নাশকতাকারীরা। কক্ষের ভেতরে পড়ে আছে আগুনে পোড়া আসবাবপত্রসহ মূল্যবান কাগজপত্র। কক্ষের সামনে সারিবদ্ধভাবে রাখা ২৫টি গাড়ি ভাঙ্চুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।
এছাড়া হামলায় বিআরটি প্রজেক্টের ২৫টি এক্সেলেটর, দুই হাজার বর্গ মিটার এসএস রেলিং, একটি এস্কাভেটর, ৬টি ইলেকট্রিক হ্যামার, ৪টি ওয়েল্ডিং মেশিন, ২টি রোড-কাটিং মেশিন, ৩৬০ মিটার ফেন্সিং ও প্লাস্টিক ট্রাফিক ব্যারিয়ার, ৭টি স্টেশনে জেনারেটর, পানির লাইন ও ইউলিটি সংযোগ এবং একটি প্রকল্প সাইট অফিসের ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ৭টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপ-কেন্দ্রের অফিস ভবন, ১০টি কম্পিউটার, ৭টি প্রিন্টার, এসি কম্প্রেসারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী ব্যাপক ভাঙ্চুর করে ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। হামলাকারীরা টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মা’র ভেতরে ৪টি গাড়ি পুড়িয়েছে। ৬টি সিসি ক্যামেরা, ৬টি কাভার্ড ভ্যান, ২টি মাইক্রোবাস ভাঙ্চুর ও বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মোট ৩ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাজীপুরা, বোর্ড বাজার, গাছা, কোনাবাড়ি ও চান্দনা চৌরাস্তা ৫টি পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে এপিসি গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। এতে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও টঙ্গী পশ্চিম ও গাছা থানায় ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙ্চুর করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে থানা ও পুলিশ বক্সে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. মো. শরিফুল আলম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় আমাদের আনুমানিক ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যানবাহনের পাশাপাশি ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভবনের জানালার গ্লাসও ভাঙচুর করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম জানান, আন্দোলনকারীরা সিটি কর্পোরেশেনের যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হিসাবে ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।