একদিকে গ্যাসের চলমান সংকট অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধির যাতা কলেপৃষ্ঠ ভক্ত
- আপডেট টাইম : ০৯:০৬:২৭ পূর্বাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
- / ৯৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
একদিকে বাংলাদেশে চলমান গ্যাসে সংকট অন্যদিকে দাম বৃদ্ধি,
এই নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানান সংশয়, এর মধ্যে আবাসিক খাতে মিটারবিহীন গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
গ্যাস সংকটে মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক তখন দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ দাবি করছে তারা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি, শুধু মাসিক গ্যাস ব্যবহারের ইউনিট পুনর্নিধারণের প্রস্তাব করেছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিতাসের প্রস্তাব অনুযায়ী গ্যাসের ইউনিট পুনর্নির্ধারণ করা হলে গ্যাসের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। আর এই প্রস্তাব কার্যকর হলে আবাসিক খাতে এক চুলার বিল ৩৮৯ টাকা বেড়ে হবে ১ হাজার ৩৭৯ টাকা এবং দুই চুলার বিল ৫১২ টাকা বেড়ে হবে ১ হাজার ৫৯২ টাকা।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধিতে দেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে গ্যাসের দাম পুনরায় বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন তারা।
একদিকে সারাদিন গ্যাস থাকে না অন্যদিকে মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস সংকটের মধ্যে এ ধরণের প্রস্তাবের দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও জনমনে নানান প্রশ্ন উঠেছে।
তিতাসের দাবি তারা দাম বাড়াতে নয় বরং ‘সিস্টেম লস’ কমাতে এই প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
যদিও এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত ভিন্ন।
এর আগে সবশেষ গত বছরের জুনে আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) । তখন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৮ টাকা।
এরপরেই চলতি বছর ১৮ই জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে আবার গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও বাসাবাড়িতে বাড়ানো হয়নি।
সে হিসাবে বর্তমানে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের মাসিক বিল এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ১০৮০ টাকা দিতে হয়।
সে সময় মিটার ছাড়া গ্রাহকদের জন্য মাসে গ্যাস ব্যবহারের পরিমাণ দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার ও এক চুলায় ৫৫ ঘনমিটার ধরে এই দাম নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি।
এদিকে গত দোসরা মে বিইআরসি’র কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে তিতাস অনুরোধ জানায়, যেন মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহক শ্রেণীর একমুখী ও দ্বিমুখী চুলার বিপরীতে মাসিক গ্যাস ব্যবহার যথাক্রমে ৭৬.৬৫ ও ৮৮.৪৪ ঘনমিটার পুননির্ধারন করা হয়।
তিতাসের দাবি, বরাদ্দকৃত গ্যাসের তুলনায় আবাসিক গ্রাহকরা আরও বেশি পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করছে, এতে ‘সিস্টেম লস’ হচ্ছে।
এ পর্যায়ে গ্রাহকদের মতামত ভিন্ন,
সেখানে বলা হচ্ছে সারাদিন যেখানে গ্যাস থাকে না সেখানে তাদের তথ্য মুণ্ডহীন, এবং মন গড়া,
তিতাসের দাবি, বর্তমানে ২৫ লাখ ২৫ হাজার চুলায় মিটারবিহীন গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। এসব গ্রাহকের বিপরীতে কোনও সমীক্ষা বা তথ্য বিশ্লেষণ না করেই বিইআরসি ঘনমিটারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে। এতে কারিগরি ক্ষতি বেড়েছে এবং সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তিতাস আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে তিতাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
যেখানে আবাসিকে প্রয়োজন মতো গ্যাস মেলে না সেখানে গ্যাস দাম বাড়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দেশের গ্যাস ব্যবহারকারীরা, গ্যাস ব্যবহারকারী মালিক ভাড়াটিয়া উভয় তাদের মতামত আমাদের বিদেশ শেষ প্রতিনিধি মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানকে জানিয়েছেন।, অনেকে বলছেন “সুযোগ পেলেই সবকিছুর দাম বাড়ানোর চেষ্টায় থাকে। কিন্তু আমরা তো গ্যাস পাই না। সারাদিনই চুলা বন্ধ। তারা গ্যাস দিবে না, লাইন ঠিক করবে না। খালি দাম বাড়ানোর কথা বলবে।” শুধু বাড়ানোর কথা বললে ভুল হবে ঘোষণা দিয়ে তার কার্যকর করতে দ্বিধাবোধ করে না, আসলে সাধারণ মানুষের কথা কেউ মনেই রাখে না,
এদিকে পুরনো ঢাকাতেই শুধু নয় সারা বাংলাদেশে ফ্লাট ভাড়া দেয়ার সময় গ্যাস এবং পানি দুটো আলাদা করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হলে সেটা ভাড়াটিয়া বুঝবেন, যে হারে ঘন ঘন সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেন এই নিয়ে বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় যার কারণে এমনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে তিতাস গ্যাস লিমিটেডের-কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই নিয়ে কোন কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া গেলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক সময়ের কন্ঠের বিশেষ প্রতিনিধিকে বলেছেন, তারা এই প্রস্তাব দিয়েছেন কেবল সিস্টেম লসকে বন্ধে কারার জন্য, এর সাথে ‘দাম বাড়ানোর’ কোন সম্পর্ক নেই।
বিইআরসি মিটারবিহীন এক চুলা ও দুই চুলার জন্য গ্যাস বরাদ্দ করেছে ৫৫ থেকে ৬০ ঘনমিটার, এই হিসাবটা করা হয়েছে প্রিপেইডে গ্যাস ব্যবহারের ভিত্তিতে। কিন্তু মানুষ প্রিপেইডে অল্প গ্যাস ব্যবহার করে আর মিটারের বাইরে অনেক গ্যাস ব্যবহার করে।
আমরা দাম বাড়ানো নিয়ে কিছু বলিনি। তিতাস শুধু গ্যাস বিতরণ করে আর ১৩ পয়সা হারে মার্জিন পায়। গ্যাসের দাম বাড়লে আমাদের কোন লাভ নাই।
যদিও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বলছে গ্যাসের বরাদ্দ বাড়ানো হলে দামও বাড়বে।
কমিশনের চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন বলেন তিতাস তাদের চুলায় কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয় সে বিষয়ে একটি পর্যালোচনা দিয়েছে। আমরা তাদের দাবি যাচাই বাছাই করছি তারপর নির্ধারণ করবো।
তিতাসের যুক্তি এবং গ্রাহকদের স্বার্থ দুটি বিষয় বিবেচনা করেই দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
২০১৯ সালে বিইআরসি একটি পরিপত্রের মাধ্যমে সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার বসানোর নির্দেশনা দেয়।
২০২৪ সালের মধ্যে সব আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড সিস্টেমের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এই বিষয় নির্দেশ থাকা স্বত্বেও বাস্তবে আবাসিক গ্রাহকদের মাত্র ১০% চুলায় প্রিপেইড মিটার বসেছে বলে বিইআরসি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে।
শুরুতে অনেকেই প্রিপেইড মিটার বসাতে আগ্রহী হননি। কিন্তু আবাসিকে প্রিপেইড মিটার বসানোর পর গ্যাস ব্যবহারকারীরা এর বেশকিছু সুবিধা ভোগ করেন।
গ্রাহরা জানিয়েছেন, এতে তারা গ্যাসের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েছেন, গ্যাসের অপচয় রোধ করতে পারছেন। বিলও ৪০% কম আসছে। এতো সুবিধা থাকার কারণে অনেক গ্রাহক মিটার বসাতে আগ্রহী হলেও বসাতে পারছেন না।
আর এই নিয়েও তিতাসের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের রয়েছে নানান অভিযোগ।
গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য মিটারের চাইতে চুলা প্রতি অর্থ পরিশোধ বেশি লাভজনক হওয়ায় এই কার্যক্রমে এতো ধীরগতির বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।
দেশে আবিষ্কৃত গ্যাসের পরিমাণ মোট ২৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট বা টিসিএফের চাইতে কিছু বেশি এটি ৯ বছর পর্যন্ত চলতে পারে। নতুন গ্যাস কূপের অনুসন্ধান যদি না পারা যায়, তবে আগামী দশকে গ্যাস সংকটের জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়বে বাংলাদেশ।
তিতাস গ্যাস এর পক্ষ থেকে যে দাবি করা হোক না কেন দেশের বাস্তবচিত্র ভিন্ন।
আর এর দুর্নীতি দুর্বৃত্তায় কাজ না করে টাকা নেয়ার অলস দিনযাপনের অভিযোগ রয়েছে, তাদের হিসেবের খাতায় ভোক্তার পরিশোধকৃত টাকা উঠানো হয় না এমনটি অভিযোগ রয়েছে সারা দেশের মানুষের।
অন্যদিকে গ্রাহকের কোন বই যদি হারিয়ে যায় তখন সেই সুযোগটা তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা নিয়ে থাকেন।
আর এই জন্য মোটা অংকের ডোনেশন তাদের দিতে হয়।