ঢাকা ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
দুদক সংস্কারে ৪৭ প্রস্তাবনা কমিশন যাদের কেয়ামত হওয়া নিয়ে অবিশ্বাস আছে তাদের জন্য এই দৃশ্য এক প্রকার নিদর্শন জলসুখা গ্রামে দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী পৌষ সংক্রান্তি মেলা শেষ হল মোংলায় বঙ্গবন্ধু মহিলা সরকারি কলেজের আয়োজনে তারুণ্য উৎসব পালিত শীতার্তদের মাঝে জয়পুরহাট ২০ বিজিবি’র শীতবস্ত্র বিতরণ মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক, মুখ খুললো দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে অভিষেকের আগে হামজাকে ছেড়ে দিচ্ছে লেস্টার সিটি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন চায় বিএনপি। মীরজা ফখরুল সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, মোট আসন ৫০৫ লে- অফ ব্রেক্সিমকো কোম্পানি ৪০ হাজার শ্রমিকের মানববন্ধন

উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ট্রুথ কমিশনে দায় স্বীকার করা কর্মকর্তা একসঙ্গে ৫ পদে

শহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৪৬ ৫০০০.০ বার পাঠক

একাধারে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক। পদাধিকারবলে তিনি আবার নগর উন্নয়ন কমিটিরও সদস্য। একই সঙ্গে যার এত পদ, সর্বশেষ তার ভাগ্যে জুটেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বও। সৌভাগ্যবান এ ব্যক্তির নাম কাজী হাসান বিন শামস। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (চউক) কর্মরত আছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতির দায় স্বীকার করে ট্রুথ কমিশনে মুচলেকা দিয়ে আসা এ কর্মকর্তাকে একসঙ্গে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বটি তিনি চউক চেয়ারম্যানকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রণালয় থেকেই বাগিয়ে এনেছেন বলে অভিযোগ আছে।

জানা যায়, কাজী হাসান বিন শামস চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় তিনি অক্সিজেন-কুয়াইশ-বুড়িশ্চর সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ওই প্রকল্পে কাজ না করেই বিপুল অঙ্কের বিল উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অন্তত ১৬টি মামলা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এমন মামলার আসামি তিনি নিজেও। সূত্র জানায়, ট্রুথ কমিশনে দায় স্বীকার ও মামলার কারণে অনেকের মতো কাজী হাসানেরও আর নিয়মিত পদোন্নতি হয়নি। তবে কাগজে-কলমে পদোন্নতি না হলেও প্রকৌশল ও পরিকল্পনা বিভাগের সর্বোচ্চ পদসহ অন্তত ৫টি পদ তিনি একাই দখল করে আছেন। তাকে চউক কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব), প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। একইভাবে তিনি বর্তমানে সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)। ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল) অনুযায়ী ওই প্রকল্পে ফুলটাইম বা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের কথা তার। সেখান থেকে তিনি ৪০ শতাংশ ভাতাও পান। বড় প্রকল্পে পরিচালক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন না করলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায় না। একাধিক দায়িত্ব থাকলে কাজের বিঘ্ন ঘটে। আড়াই হাজার কোটি টাকার রিং রোড প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২-এ এসেও তা শেষ হয়নি। প্রকল্পভুক্ত দুই ফিডার রোডের কাজ এখনো ঝুলে আছে।

জানা যায়, চউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (সিটিপি) শাহীনুল ইসলাম খান ফেব্রুয়ারিতে অবসরে গেলে প্রথমে কাজী হাসান বিন শামসকে দায়িত্ব দেন চউক চেয়ারম্যান। কাজী হাসান বিদেশ গমনের কারণে প্রধান প্রকৌশলীর সমসাময়িক হিসাবে চউকের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মনজুর হাসানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের স্বাক্ষরে এ দায়িত্ব দেওয়া হয় চলতি বছরের ৭ জুলাই। কিন্তু তিন মাস না যেতেই তার জায়গায় মন্ত্রণালয় থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে কাজী হাসান বিন শামসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের (প্রশাসন-৬) শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত ১১ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে বলা হয়, দৈনন্দিন কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হলো।

চারটি দায়িত্বে থাকার পর কাজী হাসান বিন শামসকে আরও একটি দায়িত্ব দেওয়ার এমন চিঠির ঘটনা আলোচনার জন্ম দেয় চউকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব সাধারণত চউক চেয়ারম্যানের নির্দেশেই দেওয়া হয়। এমনিতেই চউকের কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্থবির। তার ওপর একই ব্যক্তিকে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও অস্বাভাবিক।

কাজী হাসান বিন শামস যুগান্তরকে বলেন, চউক চেয়ারম্যানের চিঠির ভিত্তিতেই আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিতে চাইনি। একসঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামের জন্য কাজ করছি। শুক্র-শনিবারও অফিস করি।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ট্রুথ কমিশনে দায় স্বীকার করা কর্মকর্তা একসঙ্গে ৫ পদে

আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

একাধারে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক। পদাধিকারবলে তিনি আবার নগর উন্নয়ন কমিটিরও সদস্য। একই সঙ্গে যার এত পদ, সর্বশেষ তার ভাগ্যে জুটেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বও। সৌভাগ্যবান এ ব্যক্তির নাম কাজী হাসান বিন শামস। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (চউক) কর্মরত আছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতির দায় স্বীকার করে ট্রুথ কমিশনে মুচলেকা দিয়ে আসা এ কর্মকর্তাকে একসঙ্গে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বটি তিনি চউক চেয়ারম্যানকে পাশ কাটিয়ে মন্ত্রণালয় থেকেই বাগিয়ে এনেছেন বলে অভিযোগ আছে।

জানা যায়, কাজী হাসান বিন শামস চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় তিনি অক্সিজেন-কুয়াইশ-বুড়িশ্চর সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ওই প্রকল্পে কাজ না করেই বিপুল অঙ্কের বিল উত্তোলনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অন্তত ১৬টি মামলা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এমন মামলার আসামি তিনি নিজেও। সূত্র জানায়, ট্রুথ কমিশনে দায় স্বীকার ও মামলার কারণে অনেকের মতো কাজী হাসানেরও আর নিয়মিত পদোন্নতি হয়নি। তবে কাগজে-কলমে পদোন্নতি না হলেও প্রকৌশল ও পরিকল্পনা বিভাগের সর্বোচ্চ পদসহ অন্তত ৫টি পদ তিনি একাই দখল করে আছেন। তাকে চউক কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব), প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। একইভাবে তিনি বর্তমানে সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)। ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল) অনুযায়ী ওই প্রকল্পে ফুলটাইম বা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের কথা তার। সেখান থেকে তিনি ৪০ শতাংশ ভাতাও পান। বড় প্রকল্পে পরিচালক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন না করলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায় না। একাধিক দায়িত্ব থাকলে কাজের বিঘ্ন ঘটে। আড়াই হাজার কোটি টাকার রিং রোড প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২-এ এসেও তা শেষ হয়নি। প্রকল্পভুক্ত দুই ফিডার রোডের কাজ এখনো ঝুলে আছে।

জানা যায়, চউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (সিটিপি) শাহীনুল ইসলাম খান ফেব্রুয়ারিতে অবসরে গেলে প্রথমে কাজী হাসান বিন শামসকে দায়িত্ব দেন চউক চেয়ারম্যান। কাজী হাসান বিদেশ গমনের কারণে প্রধান প্রকৌশলীর সমসাময়িক হিসাবে চউকের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মনজুর হাসানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের স্বাক্ষরে এ দায়িত্ব দেওয়া হয় চলতি বছরের ৭ জুলাই। কিন্তু তিন মাস না যেতেই তার জায়গায় মন্ত্রণালয় থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে কাজী হাসান বিন শামসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের (প্রশাসন-৬) শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত ১১ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে বলা হয়, দৈনন্দিন কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হলো।

চারটি দায়িত্বে থাকার পর কাজী হাসান বিন শামসকে আরও একটি দায়িত্ব দেওয়ার এমন চিঠির ঘটনা আলোচনার জন্ম দেয় চউকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব সাধারণত চউক চেয়ারম্যানের নির্দেশেই দেওয়া হয়। এমনিতেই চউকের কার্যক্রম এখন অনেকটাই স্থবির। তার ওপর একই ব্যক্তিকে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও অস্বাভাবিক।

কাজী হাসান বিন শামস যুগান্তরকে বলেন, চউক চেয়ারম্যানের চিঠির ভিত্তিতেই আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিতে চাইনি। একসঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামের জন্য কাজ করছি। শুক্র-শনিবারও অফিস করি।