চীন হয়ে উঠেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ
- আপডেট টাইম : ০৯:৩২:৩৮ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১
- / ২৬১ ৫০০০.০ বার পাঠক
আন্তর্জাতিক রিপোর্ট।।
এখন এমন এক সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের শতবার্ষিকী উদযাপন করছে, যখন চীন হয়ে উঠেছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
বিবিসি’র জন সাডওয়ার্থ লিখছেন, চীনের এই সাফল্যের একেবারে কেন্দ্রস্থলে রয়েছে এই কমিউনিস্ট পার্টির একক শাসন এবং তার একচ্ছত্র ক্ষমতার মূল্যবোধ, যা বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সময় আরও জোরালো হচ্ছে। একই সাথে পশ্চিমা দুনিয়াতেও এ বিতর্ক ক্রমশঃ তীব্র হচ্ছে যে এই মূল্যবোধের মোকাবিলা কীভাবে করা হবে। অবশ্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য আজকের দিনটি “নতুন স্নায়ুযুদ্ধের” কথা বলার সময় নয়। তাদের কাছে আজকের দিনটি হলো গণমানুষের বন্দনায় স্নাত হওয়ার দিন। সাবেক মার্কিন ডেমোক্র্যাট সেনেটর ম্যাক্স বাওকাস – যিনি ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চীনে রাষ্ট্রদূত ছিলেন – তিনি এ ব্যাপারে পুরোপুরি একমত।
“চীনের বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় অংশই এই পার্টিতে কোন পরিবর্তনের ব্যাপার নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না … তারা অনেক বেশি চিন্তা করে তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে,” বলছিলেন তিনি।
“গত ২০ বছরে চীনের জীবনযাত্রার নাটকীয় উন্নতি হয়েছে, এবং তারা এ নিয়ে খুবই খুশি।”
কথা হয় চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক মুন্সি ফয়েজ আহমদের সাথে। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে পাল্টেছে। “তবে তাদের মুল লক্ষ্য যে চীনা জনগণের উন্নতি, তা থেকে তারা সরে যায়নি। সেই জন্য এই পার্টির ওপর চীনা জনগণের আস্থা এখনও অটুট আছে।”
“যতদিন কমিউনিস্ট পার্টি চীনের মানুষকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি এনে দিতে পারবে, ততদিন তারা অন্য কোন বিকল্পের কথা ভাববে না এটাই স্বাভাবিক,” বলেন মি. আহমদ।
চীনের ক্ষমতা কাঠামোর ওপর কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ যে আরও শক্ত হচ্ছে, তাদের নেতা শি জিনপিংকে কেন্দ্র করে যে ‘কাল্ট’ বা ব্যক্তিপূজার আবহ ক্রমাগত বাড়ছে, দেশটির অভ্যন্তরীণ নীতিগুলো ক্রমশঃই আরও কড়া হচ্ছে – এগুলোর ব্যাপারে হয়তো তেমন কিছুই আসলে করার নেই। কিন্তু এটি বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক নীতিগত বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে।
চীনের চ্যালেঞ্জ প্রশ্নে পশ্চিমে ঐকমত্য নেই :
তবে ওয়াশিংটনে আর ইউরোপে এই প্রশ্নে মতপার্থক্য আছে। এক পক্ষ মনে করে, আদর্শগত দিক থেকে চীনকে ‘কনফ্রন্ট’ বা মুখোমুখি মোকাবিলা করা উচিত, আবার আরেক পক্ষ মনে করে যে চীনের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক রেখে চলাটাই হবে সঠিক পথ।
বেজিংয়ের অভিজাত সেন্ট্রাল পার্টি স্কুলের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হচ্ছের কাই শিয়া। তার কর্মজীবন কেটেছে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে কাজ করে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে। কিন্তু পরের দিকে চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে তার মনে সংশয় আর সমালোচনা বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত বছর তিনি কার্যত নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। চীনের জনগণ রাজনৈতিক পরিবর্তন চায় না, এমন কথাবার্তার সঙ্গে তিনি একমত নন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে তার সাথে ‘এনগেজড’ হওয়াটাই উত্তম পন্থা, এমন ধারণাও সমর্থন করেন না কাই শিয়া।
“চীনকে একটি একনায়কতান্ত্রিক পদ্ধতি থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন করার সময় কখনোই পার হয়ে যায়নি,” বলেন তিনি।
“এটা যত তাড়াতাড়ি করা হয়, ততই ভালো – চীনের জন্য, বিশ্বের জন্যও। শি জিনপিং যদিও ‘পুরো মানবজাতির জন্য অভিন্ন ভবিষ্যতের’ আহ্বান জানাচ্ছেন, কিন্তু তিনি আসলে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন এবং তা কখনও বন্ধ হচ্ছে না।”
চীনের আসল চিত্রটা কী?
পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে চীনে নানা আড়ম্বর, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
এর বিপরীতে আছে ভবিষ্যৎ চীনের চিত্র – আরও বেশি প্রভাবশালী, আরও সমৃদ্ধ, ধনতান্ত্রিক চীন, এবং যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি অনড় লেনিনিস্ট পদ্ধতি।
সাবেক কূটনীতিক মুন্সি ফয়েজ আহমদের মতে অবশ্য চীনের রাজনৈতিক পদ্ধতিতে গণতন্ত্র নেই এমন কথা পুরোপুরি ঠিক নয়।
“চীনা সিস্টেমে গণতন্ত্র নেই এটা যারা বলে তারা ভুল করে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি। “এটা পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র নয় ঠিকই, কিন্তু পার্টির ভেতরে গণতন্ত্র আছে। কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে নিচের স্তরে ভোটের মাধ্যমেই নেতৃত্ব তৈরি হয়। এর ওপরের স্তরে প্রত্যক্ষ নির্বাচন না হলেও পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব ওপর দিকে উঠে আসে।”
মি. আহমদের মতে, চীনের ব্যবস্থাকে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে একটি ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা, পুরোপুরি এমনটা বলা যায় না।
“তারা পশ্চিমা ধাঁচের বাজার ব্যবস্থাকে অনেকটা গ্রহণ করেছে, কিন্তু চীনা ব্যবস্থায় এমন অনেক কিছুই আছে, যা ধনতান্ত্রিক নয়। তারা দারিদ্র্য দূরীকরণে অনেক এগিযে গেছে। প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য আছে, যার ভিত্তিতে তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।”
প্রশ্ন হচ্ছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শতবার্ষিকী উপলক্ষে এই যে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান, এ কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র? না-কি কোটি কোটি সাধারণ চীনা জনগণের জন্য ব্যক্তিগত উন্নতি আর সমৃদ্ধির এটাই আসল গল্প? তাছাড়া, এই যে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি আর ক্ষমতা, এর সবকিছু কেন্দ্রীভূত আছে একটি একদলীয় রাষ্ট্রের হাতে। এই রাষ্ট্র তার নিজের জনগণের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, বাকি বিশ্বের বিরুদ্ধেও এ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে। এই আনন্দ-উদযাপন কি সেই উদ্বেগজনক কথাটাকেও মনে করিয়ে দিচ্ছে না?
ওয়াশিংটনের মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে:
ম্যাক্স বাউকাস এমন এক ধরনের চিন্তার অনুসারী যা গত কয়েক দশক ধরে চীন-মার্কিন সম্পর্ককে প্রভাবিত করে চলেছে।
চিন্তাটা হলো, বাণিজ্য আর সম্পর্ক রক্ষা করা – এর বাইরে আর কোন কিছুই যেন নেই। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, চীনের সমৃদ্ধি আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান দেশটিতে ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসবে। এটা যদি অতি ধীরে ধীরে হয়, বা কখনও নাও হয়, তাহলেও এটা চীনকে সামনাসামনি মোকাবিলা করার চাইতে ভালো বিকল্প।
কিন্তু মি. বাউকাস এখন উদ্বিগ্ন যে সেই সর্বসম্মত অবস্থানে একটা পরিবর্তন আসছে। এবং একটা নতুন স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ওয়াশিংটনে শিকড় গাড়ছে।
“এখন কংগ্রেস সদস্য, প্রেসিডেন্ট – সবার জন্যই চীনের বিরুদ্ধে কথা বলা খুব সহজ হয়ে গেছে। ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই শিবিরেই। এটা এক বিরাট সমস্যা,” বলছেন বাউকাস। তিনি মনে করেন, আমেরিকাকে চীনের সাথে মিলে কাজ করতে হবে।
“চীন আর আমেরিকার মানুষ অনেকটা একই রকম। তারা তাদের পরিবার, তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়া, এগুলো নিয়েই চিন্তা করে। নীতিনির্ধারকদের এটা মাথায় রাখতে হবে।”
কিন্তু কাই শিয়া এর সঙ্গে একমত নন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছুটিতে থাকার সময় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর নিরাপত্তার ভয়ে তিনি চীনে ফিরতে পারছেন না।
তার মতে, পার্টির রাজনীতিকে উপেক্ষা করে ইতিবাচক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দিকে মন দেয়াটা হবে এক বড় ভুল। “পশ্চিমা রাজনীতিবিদ এবং পণ্ডিতদের মধ্যে প্রকৃত চীনকে বোঝার ক্ষেত্রে অনেক অভাব আছে,” বলেন তিনি।
“চীনের দরজা যখন বিশ্বের জন্য খুলে গেল, তখন চীন আশা করেছিল যে তারা তাদের নিজের ক্ষমতাকে আরও জোরদার করতে বিশ্বব্যবস্থাকে ব্যবহার করবে। এটাই ছিল তাদের আসল ইচ্ছা।
“একারণেই তারা বাইরের বিশ্বের কাছে নিজেদের বন্ধুসুলভ ও উন্মুক্ত বলে তুলে ধরে, কিন্তু পার্টির স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা কখনও বদলায়নি।”‘
কাই শিয়া জোর দিয়ে বলছেন যে পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পারছে না যে তারা এর মধ্যেই একটি আদর্শগত লড়াইয়ে ঢুকে পড়েছে – তাদের ইচ্ছায়ই হোক বা অনিচ্ছাতেই হোক।
মুন্সি ফয়েজ আহমদ অবশ্য বলেন যে প্রথম যখন চীন উন্নতি করছিল, “তখন কমিউনিস্ট পার্টি একে বলতো ‘রাইজ অব চায়না’, কিন্তু পরে তারা একে নমনীয় করে বলতে শুরু করে ‘পিসফুল ডেভেলপমেন্ট অব চায়না।’
“একটা সময় ছিল যে পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো চীনকে কন্টেইন করার কথা বললেও চীন তাদের সাথে বিরূপ আচরণ করা থেকে বিরত ছিল। কিন্তু এখন চীন ধীরে ধীরে তার জবাব দিতে শুরু করেছে। তবে চীন আগামী আরও অনেকদিন পর্যন্ত বিরোধ সংঘাত এড়িয়ে চলতে পারলেই তা সবার জন্য ভালো হবে।”
শি জিনপিং চান দেশের ওপর পার্টির সর্বময় নিয়ন্ত্রণ:
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রভাবশালী পত্রিকা দি স্টাডি টাইমসের সাবেক সম্পাদক দেং ইউয়েন হচ্ছেন চীনের রাজনীতির অন্দরমহলের আরেকজন লোক, যিনি এখন নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। চীনের রাজনৈতিক পদ্ধতির প্রকাশ্য সমালোচনা করার ফলে তিনিও এখন গ্রেফতার হবার ভয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না। তিনি মনে করেন, চীনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন এক সময় রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে আসতে পারে, এমন সম্ভাবনা এক সময় ছিল।
“দশ বছর আগে পার্টি ধীরে ধীরে পিছনের কাতারে চলে যাচ্ছিল,” দেং বলেন, “কিন্তু শি জিনপিং এটা নিয়ে খুশি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন এটা বিপজ্জনক। তাই তারই ভাষায় বলি, ‘পার্টি এখন উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম সবখানেই দেশকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করছে’।”
মি. দেং মনে করেন যে পার্টির এই প্রভুত্ব বিস্তারের ফলে চীন পেছন দিকে ফিরে গেছে।
বৈশ্বিক মঞ্চেও চীনা মূল্যবোধ:
চীন এখন দেশের ভেতরে ক্রমাগত দমন-নিপীড়নমূলক হয়ে উঠছে। শিনজিয়াংয়ের উইঘুরদের ক্ষেত্রে এবং হংকংয়ে তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক মঞ্চেও চীন এখন তার একনায়কতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠা করতে প্রস্তত হচ্ছে। মি. দেং বলছেন, “যেহেতু চীন এখন ক্ষমতাধর, তারা সারা বিশ্বের সাথে ব্যবসাবাণিজ্য করছে, তাই অন্য দেশগুলোকেও চীনের রীতিনীতি এবং আবেগ সম্পর্কে সাবধান থাকতে হচ্ছে।”
“এর ফলে ওই সব দেশের ওপর এর একটা প্রভাব পড়বে। চীনের পদ্ধতি এবং তার যুক্তি গ্রহণ করে হয়তো পশ্চিমা বিশ্বই এক সময় ধীরে ধীরে বদলে যেতে পারে, যা হবে তাদের জন্য একটা বিপদ।”
অধ্যাপক কাই আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছেন যে এটাকে এখন সচেতনভাবেই একটা নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। যদি বিশ্বায়নের শক্তি কমিউনিস্ট পার্টিতে সংস্কার আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে চীন ওই একই শক্তিকে ব্যবহার করবে পশ্চিমের ওপরই তাদের মূল্যবোধকে চাপিয়ে দেবার জন্য।
তবে মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলছেন, “চীন যখন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সাথে ছিল তখন তারা বিভিন্ন দেশে কমিউনিজম ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন তারা আর অন্য কোন দেশে তাদের মডেল চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছে না। আবার চীনের ওপর কেউ অন্য কোন সিস্টেম চাপিয়ে দিক, এটাও তারা চায় না।”
কাজেই চীনের রাজনৈতিক পদ্ধতি পশ্চিমা বিশ্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে, এমন সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন মি. আহমদ। অধ্যাপক কাই মনে করেন যে চীন এখন শান্তিপূর্ণ বিবর্তনকে প্রতিরোধ করছে, “যাতে পশ্চিমা মূল্যবোধ চীনে ঢুকে পড়ে চীনের জনগণকে প্রভাবিত করতে না পারে। এবং তারা এই প্রতিরোধের কাজটা করছে সব রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে।”
“এর পাশাপাশি চীন পশ্চিমা দুনিয়ার বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে তাদের তথ্য, বিভ্রম এবং প্রচারণাগুলোকে অন্য দেশে রপ্তানি করছে।”
চীনের শিক্ষাবিদরা কথা বলেননি:
বিবিসি একাধিক চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ডজনেরও বেশি শিক্ষাবিদের সাথে যোগাযোগ করেছিল – উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিস্ট পার্টি, তাদের শতবার্ষিকী এবং চীনা সমাজে পাটির অবস্থান বিষয়ে তাদের মতামত নেয়া। এর মধ্যে অধ্যাপক কাইয়ের পুরোনো কর্মস্থল পার্টি স্কুলের কয়েকজনও ছিলেন। তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি, অথবা তারা কথা বলতে রাজি হননি। চীনে এখন তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ এতই কঠোর।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছিল, যাতে তারা পার্টি বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। একাধিকবার অনুরোধ পাঠিয়েও এর কোন জবাব পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত বাউকাস মনে করেন, চীনকে প্রভাবিত করতে না পারলেও পশ্চিমা দুনিয়ার উচিত তাদের উদারনৈতিক মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলে যাওয়া।
তিনি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তবে এর একটা সীমা আছে বলে তার ধারণা।
“তারা বেশ ভালোভাবেই তার নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ঠিক করে। খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করলে জনগণ ক্ষুব্ধ হবে। তারা দমনমূলক নীতি নিচ্ছে একটা সীমা পর্যন্ত।”
কিন্তু অধ্যাপিক কাই – যিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে একেবারে ভেতর থেকে চেনেন – বলছেন যে পার্টির ক্ষমতা সীমিত করতে পারে এমন কোন অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা খুবই কম আছে। তার মতে, এখন একটা ভিন্ন ধারা আসার সময় হয়ে গেছে।
“আমি আশা করি বিশ্ব ও পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা চীনের পরিস্থিতি দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবে। এই একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা চিরকাল টিকবে না, এ রকম কোন পদ্ধতিই চিরকাল টিকতে পারে না। একদিন এটার পরিবর্তন হবে এবং আমাদের উচিত তাতে সহায়তা করা।”
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য তিনি এত বছর কাজ করেছেন, তার ১০০ বছরপূর্তিতে কি ইতিবাচক কোন কিছুই তার বলার নেই?
জবাবে তিনি বলেন, “চীনে কারও ১০০ বছর বয়স হলে মনে করা হয় যে সে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে, এবং এখন তার মৃত্যুর কথা ভাবা উচিত।”
“আমার মনে হয় কমিউনিস্ট পার্টির উচিত অতীতের গুরুতর ভুলগুলো পর্যালোচনা করা, যা চীনা জনগণের দুর্ভোগ ডেকে এনেছে, তাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। তাদের এই বার্ষিকী উদযাপন না করে বরং সেই দায় মেটানো উচিত।”
সূত্র : বিবিসি বাংলা