ঢাকা ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

২২ বছরেও সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি দ্রুত অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

  • সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৬:২১:২১ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০
  • ২৬৪ ০.০০০ বার পাঠক

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।

বিয়ের সময় ছায়া রানীকে ১৩ লাখ টাকার যৌতুক দেওয়া হয়েছে বলে স্বামীর ঘর ছাড়ার পর বাবার বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। ভাইয়েরা বলেন, তোকে বিয়ের সময় ১৩ লাখ টাকা নগদ দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংসার করতে পারিস নাই। এখন আমরা কোথা থেকে তোকে খেতে দেব। সন্তান না হওয়ার অজুহাতে ছায়া রানীকে তার স্বামী ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এখন ছায়া পথের ভিখারি।

লালমনিরহাট উপজেলার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম। মরিয়মের বিয়ের সময় তার বাবা কথা দিয়েছিলেন যে মেয়ের জামাইকে ৫ লাখ টাকা দেবেন ব্যবসা করার জন্যে। কিন্তু মরিয়ম বেগমের বাবা হঠাত্ মারা যাওয়ায় তার ভাইয়েরা আর সেই টাকা দিতে চাচ্ছেন না। এতে মরিয়মের সংসারে চলছে তুমুল অশান্তি। বাবার সম্পত্তির অংশ দেওয়ার কথা বললেও ভাইরা তা দিতে নারাজ।

এমন ঘটনা কেবল ছায়া রানী কিংবা মরিয়ম বেগমেরই নয়, দেশ জুড়ে সম্পত্তিতে সমান ভাগ না-পাওয়ার কারণে নারীরা অবহেলা আর অধীনস্থ হয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও সেই নারীরা এখনো নিজ পরিবার থেকে শুরু করে সব জায়গায় বৈষম্যে শিকার। সম্পত্তিতে ভাগ পাওয়ার অধিকার নেই হিন্দু নারীদের| মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে শরিয়া আইনে তাদের ভাগ পুরুষের অর্ধেক, সেটাও অধিকাংশের ভাগ্যে জোটে না। এভাবে যুগ যুগ ধরে ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বাংলাদেশের নারীরা।

সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিয়ে নানা সময় বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলে এলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ১৯৯৭ সালে নারী উন্নয়ননীতিতে ভূমির অধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও পরে তা স্পষ্টাক্ষরে সংযুক্ত হয়নি। এমনকি নীতি প্রণয়ন হলেও নতুন আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি গত ২২ বছরেও।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি পরিচালক আইনজীবী মাকছুদা আখতার বলেন, বেশির ভাগ নারীই তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। যারা সম্পত্তি পান, তারা স্বাধীনভাবে ভোগ করতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। যারা ভাইদের কাছ থেকে সম্পত্তির অধিকার চান, তাদেরকে অনেক সময় একঘরে করে ফেলা হয়। অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি)-এর আলোকে প্রস্তাবিত অভিন্ন উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সম-অধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য জেড আই খান পান্না বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইনের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বাধা আসলে সেই বাধা অতিক্রমের জন্য জনমত গঠন প্রয়োজন। তবে ইতিমধ্যে এ সম্পর্কে জনমত তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইন সংস্কার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য আইনজীবী জেয়াদ আল-মালুম বলেন, প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইনের খসড়া প্রণয়নের সময় সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ, অধিকার কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মতামত নেওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধান, ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র, সিডও সনদ ও অন্যান্য মানবাধিকার দলিলের অনুসরণে এই প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক বলেন, পারিবারিক আইন ধর্মীয় আইন দ্বারা নির্ধারিত। কাজেই ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ নির্বিশেষে একটি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের দেশে একটি আইন দরকার।

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভৈরবে আগানগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ

২২ বছরেও সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি দ্রুত অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

আপডেট টাইম : ০৬:২১:২১ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০

সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার।।

বিয়ের সময় ছায়া রানীকে ১৩ লাখ টাকার যৌতুক দেওয়া হয়েছে বলে স্বামীর ঘর ছাড়ার পর বাবার বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। ভাইয়েরা বলেন, তোকে বিয়ের সময় ১৩ লাখ টাকা নগদ দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংসার করতে পারিস নাই। এখন আমরা কোথা থেকে তোকে খেতে দেব। সন্তান না হওয়ার অজুহাতে ছায়া রানীকে তার স্বামী ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এখন ছায়া পথের ভিখারি।

লালমনিরহাট উপজেলার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম। মরিয়মের বিয়ের সময় তার বাবা কথা দিয়েছিলেন যে মেয়ের জামাইকে ৫ লাখ টাকা দেবেন ব্যবসা করার জন্যে। কিন্তু মরিয়ম বেগমের বাবা হঠাত্ মারা যাওয়ায় তার ভাইয়েরা আর সেই টাকা দিতে চাচ্ছেন না। এতে মরিয়মের সংসারে চলছে তুমুল অশান্তি। বাবার সম্পত্তির অংশ দেওয়ার কথা বললেও ভাইরা তা দিতে নারাজ।

এমন ঘটনা কেবল ছায়া রানী কিংবা মরিয়ম বেগমেরই নয়, দেশ জুড়ে সম্পত্তিতে সমান ভাগ না-পাওয়ার কারণে নারীরা অবহেলা আর অধীনস্থ হয়ে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও সেই নারীরা এখনো নিজ পরিবার থেকে শুরু করে সব জায়গায় বৈষম্যে শিকার। সম্পত্তিতে ভাগ পাওয়ার অধিকার নেই হিন্দু নারীদের| মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে শরিয়া আইনে তাদের ভাগ পুরুষের অর্ধেক, সেটাও অধিকাংশের ভাগ্যে জোটে না। এভাবে যুগ যুগ ধরে ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বাংলাদেশের নারীরা।

সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিয়ে নানা সময় বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলে এলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ১৯৯৭ সালে নারী উন্নয়ননীতিতে ভূমির অধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও পরে তা স্পষ্টাক্ষরে সংযুক্ত হয়নি। এমনকি নীতি প্রণয়ন হলেও নতুন আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি গত ২২ বছরেও।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি পরিচালক আইনজীবী মাকছুদা আখতার বলেন, বেশির ভাগ নারীই তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। যারা সম্পত্তি পান, তারা স্বাধীনভাবে ভোগ করতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। যারা ভাইদের কাছ থেকে সম্পত্তির অধিকার চান, তাদেরকে অনেক সময় একঘরে করে ফেলা হয়। অভিন্ন পারিবারিক আইন (ইউএফসি)-এর আলোকে প্রস্তাবিত অভিন্ন উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সম-অধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য জেড আই খান পান্না বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইনের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নে বাধা আসলে সেই বাধা অতিক্রমের জন্য জনমত গঠন প্রয়োজন। তবে ইতিমধ্যে এ সম্পর্কে জনমত তৈরি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইন সংস্কার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য আইনজীবী জেয়াদ আল-মালুম বলেন, প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইনের খসড়া প্রণয়নের সময় সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ, অধিকার কর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মতামত নেওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধান, ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র, সিডও সনদ ও অন্যান্য মানবাধিকার দলিলের অনুসরণে এই প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক বলেন, পারিবারিক আইন ধর্মীয় আইন দ্বারা নির্ধারিত। কাজেই ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ নির্বিশেষে একটি অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের দেশে একটি আইন দরকার।