ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ভাঙ্গুড়ায় তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রদর্শনী, নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস Logo ইলিশ রক্ষায় ব্যার্থ মৎস অধিদপ্তর সাংবাদিক দেখে দৌড়ে পালালেন ইলিশ বোঝায় ট্রলার Logo সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে নাগরিক প্লাটফর্ম ও যুব ফোরামের পরামর্শ সভা Logo মিরপুরে গার্মেন্টস ও কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন Logo মার্চ টু সচিবালয়’ এ অংশ নিতে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের ঢল Logo রাজধানীতে জামায়াতসহ সাত দলের মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু Logo আমরা কারাগারে নয়, ছিলাম এক কসাইখানায় Logo হয়রানি নিরসনে চালু হচ্ছে অনলাইন জামিননামা: আইন উপদেষ্টা Logo আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলায় শ্রমিক নেতা গ্রেপ্তার Logo কালিয়াকৈরে প্রতারণা করে জমির মালিক হওয়ার চেষ্টা: প্রতারক থেকে জমি রক্ষা করতে ইউএনও’র নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের মালিকদের

বিদেশ থেকে যুদ্ধাস্ত্রসহ সমস্ত পণ্য ক্রয় কারো কাছে সরকারি ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ১২:৩৫:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৬৬ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবে কোটি কোটি মানুষের ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী মনোভাবের প্রকাশ দেখে আমেরিকা এবং পশ্চিমা মহল মনে করেছিলো যে, বাংলাদেশ সম্ভবত ভারতের কবল থেকে বের হয়ে পশ্চিমা বিশ^, বিশেষ করে, মার্কিন কবলে প্রবেশ করবে। কিন্তু পশ্চিমারা জুলাই বিপ্লবের মূল স্পিরিটকেই ভুল বুঝেছিলো। জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী কোটি কোটি ছাত্র জনতা চেয়েছিলেন যথার্থ অর্থে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এটি হবে এমন একটি স্বাধীন দেশ যারা আমেরিকা বা চীনÑ কারো পক্ষপুটে প্রবেশ করবে না।

মনে হয় বাংলাদেশের জনগণের এই প্রকৃত স্বাধীনতার স্পৃহা তারা বুঝতে পারেনি। তাই তারা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশকে জড়িত করার জন্য চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে আরাকানে প্রবেশের মানবিক করিডোর দাবি করেছিলো। তারা ভেবেছিলো যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা বলয়ের লোক। আর বাংলাদেশের মানুষকে পশ্চিমা ব্লকে ঢুকানোর জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও এমন এক ব্যক্তিকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়েছে যিনি ধ্যান ধারণায় সম্পূর্ণ পশ্চিমা বলে পাবলিক পারসেপশন রয়েছে। ইনি হলেন ড. খলিলুর রহমান।

ড. ইউনূস বা ড. খলিল বা পশ্চিমা বিশ^ বাংলাদেশের জনগণের পাল্স সঠিক ভাবে স্টাডি করতে পারে নাই। তাই দেখা গেলো, সেই তথাকথিত মানবিক করিডোরের বিরুদ্ধে জনগণের সুতীব্র প্রতিবাদ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রথমে বলেছিলেন যে, মানবিক করিডোরের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন। তবে জনমতের বিরুদ্ধে কিছু করা হবে না। জনগণের প্রবল প্রতিবাদের মুখে অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার মানবিক করিডোর প্রদানের চিন্তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর তার ঈগল চক্ষু নিবদ্ধ করে আছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা মার্কিন প্রভাবিত দুবাইয়ের এক কোম্পানির হাতে প্রদানের তদবির করে আমেরিকা। এ ব্যাপারে আলোচনাও অনেক দূর এগিয়ে ছিলো। দুবাইয়ের সেই কোম্পানিটির মার্কিন প্রতিনিধি চট্টগ্রামে এসে কন্টেইনার টার্মিনাল সার্ভেও করেছিলেন। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে বাংলাদেশের লাইফ লাইন বিবেচনা করা হয়। এই চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে প্রথম থেকেই ছিলো ভারতের লোভাতুর দৃষ্টি। শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বন্দরকে বলতে গেলে ভারতের হাতে তুলেই দিয়েছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পর অন্তত ভারতের কব্জা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে মুক্ত করা গেছে। ভারতের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, চট্টগ্রাম বন্দর বা বন্দর টার্মিনাল আমেরিকা বা তার কোনো এজেন্টকে দেওয়া হবে। এ ব্যাপরেও জনগণের মধ্য থেকে তীব্র প্রতিবাদ উচ্চারিত হওয়ায় এই টার্মিনালকেও পশ্চিমাদের হাতে অথবা পশ্চিমা প্রভাবিত কোনো বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া থেকে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। তার পরিবর্তে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ওপরের দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আমেরিকা এবার আরো বড় উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। এবার তারা দাবি করেছে যে, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে যতরকম পণ্য ক্রয় করে তার উৎস এবং বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হোক। এই প্রস্তাবের আড়ালে রয়েছে আমেরিকার সুদূর প্রসারী অভিলাষ। তারা চায় যে সরকার যেসব কেনাকাটা করে সেগুলো যেনো আমেরিকা থেকে ক্রয় করা হয়।

উল্লেখকরা যেতে পারে যে, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশে^র বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পণ্য আমদানী করে থাকে তার সিংগ ভাগ আমদানী করে গণচীন থেকে। গণচীন থেকে আমদানীকৃত দ্রব্য সামগ্রী দামে ও মানে ঈড়সঢ়বঃরঃরাব বা প্রতিযোগিতা মূলক।
এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সরকার কিছু চিকিৎসার যন্ত্রপাতি (মেডিকেল ইকুয়িপমেন্ট) চীন থেকে আমদানীর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ইউনূস সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা মার্কিন পন্থী পদস্থ অফিসাররা বিভিন্ন নোক্তা তুলে সেই উদ্যোগ বানচাল করে দেয়।

সরকারী কেনাকাটার পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের দাবি আমেরিকা করছে এজন্য যে, চীন থেকে যে বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী কেনা হচ্ছে সেগুলো আমেরিকা থেকে কেনার বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র প্রধানত চীন থেকে ক্রয় করা হয়। নৌবাহিনীতে যে দুটি সাবমেরিন রয়েছে সেগুলোও চীনের। বিমান বাহিনীতে যেসব জঙ্গি বিমান রয়েছে সেগুলোও গণচীন থেকে সংগ্রহ করা। শেখ মুজিবের আমলে বাংলাদেশ তার বিমান বাহিনীর জন্য রাশিয়া থেকে এক স্কোয়াড্রন বা ১২টি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান কিনেছিলো। সেগুলো ছিলো সম্ভবত অনেক পুরানা। তাই সেগুলো খুব বেশি দিন টেকেনি। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সেগুলো গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়। শেখ মুজিব সরকারের পতনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া শেখ মুজিবের আমলে সূচিত রুশ-ভারত অক্ষশক্তি নির্ভর পররাষ্ট্র নীতি থেকে বেরিয়ে আসেন। একই সাথে ইন্দোসেন্ট্রিক পররাষ্ট্রনীতি বা একান্তভাবে ভারত নির্ভর পররাষ্ট্রনীতি থেকেও তিনি বেরিয়ে আসেন। তারপর তিনি সামরিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দেন। সমর সম্ভার সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি অতঃপর চীনের দিকে দৃষ্টি ফেরান।

চীন থেকে সেনাবাহিনীর জন্য যেসব যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ৩২০টি ট্যাঙ্ক। এর মধ্যে প্রধানত চীনা নির্মিত টাইপ ফিফটি নাইন দুর্র্জয় (Type 59 Durjoy), টাইপ 69-IIG (Type 69-IIG) এবং এমবিটি-২০০০ (MBT-2000) ট্যাংক রয়েছে।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে মোট ৪৪টি জঙ্গি বিমান আছে এবং এর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৭,৪০০ জন। যুদ্ধবিমান রয়েছে (Fighters): ৪৪টি। এই ৪৪টি জঙ্গি বিমানের মধ্যে চেংদু এফ-৭ এই যুদ্ধবিমানগুলো চীনের তৈরি এবং এগুলোর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩৬টি। এটি মূলত সোভিয়েট ইউনিয়নের তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের চীনা সংস্করণ। এছাড়া রুশ নির্মিত ১২টি মিগ-২৯ এর মধ্যে ৮টি মিগ-২৯ মেরামত করা হয়েছে বলে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্টে প্রকাশ।

অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ, ক্রয় সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ করার মার্কিনী দাবির পেছনে রয়েছে বাংলাদেশে মার্কিন যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ। কিছু দিন আগে একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকের একটি রিপোর্টে বাংলাদেশের জন্য চীনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ সরকার বিমান বাহিনীর জন্য উন্নত প্রযুক্তির এই যুদ্ধবিমানগুলো কিনতে আগ্রহী।

রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের সময় এই যুদ্ধবিমান ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং চীনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। কূটনৈতিক সূত্র মতে, এই সফরের আগেই উভয় দেশের মধ্যে জে-১০সি ক্রয়ের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছিল।

বাংলাদেশ তার বিমান বাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে চীনের তৈরি এই উন্নত যুদ্ধবিমানগুলো সংগ্রহের প্রাথমিক আলাপ আলোচনা শুরু করে মাত্র।

বিশ^স্ত সূত্রের খবর মোতাবেক আমেরিকা এই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করে। আমেরিকা বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব করে যে, তারা বাংলাদেশকে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন সরবরাহ করবে। শুধু তাই নয়, তারা বাংলাদেশের সমগ্র সামরিক বাহিনীকে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত করবে।

অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, আমেরিকা যে দেশেই সামরিক সাহায্য দিয়েছে সে দেশেরই সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে। আফগানিস্তানে আমেরিকা যখন হামলা শুরু করে তখন আমেরিকার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড আরমিটেজ তখনকার সেনা শাসককে বলেছিলেন যে, এই যুদ্ধে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নাই। হয় তাদেরকে মার্কিন পক্ষে থাকতে হবে। না হলে বিপক্ষে। বিপক্ষে গেলে তার ভাষায় Pakistan will be bombed to the stone age, অর্থাৎ পাকিস্তানকে এমন ভাবে বোমা মারা হবে যাতে করে দেশটি প্রস্তর যুগে ফিরে যায়।

এই হলো মার্কিন সাহায্যের নমুনা। কোথা থেকে কোন পণ্য সংগ্রহ বা ক্রয় করা হবে তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে বাংলাদেশের। সেটি আমেরিকা, রাশিয়া বা চীন যে দেশেরই হোক না কেনো। যে সূত্র থেকেই আমদানী বা ক্রয় বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল হবে সেখান থেকেই আমদানী বা সংগ্রহ করা হবে।

তবে ভারতের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশের রিজার্ভেশন থাকবে। কারণ গত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য বড়ই তিক্ত। তারা শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে করদ রাজ্যে পরিণত করেছিলো। তাই আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের সাথে ভারতকে একই ব্র্যাকেটে ফেলা যাবে না।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাঙ্গুড়ায় তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রদর্শনী, নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস

বিদেশ থেকে যুদ্ধাস্ত্রসহ সমস্ত পণ্য ক্রয় কারো কাছে সরকারি ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ

আপডেট সময় ১২:৩৫:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবে কোটি কোটি মানুষের ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী মনোভাবের প্রকাশ দেখে আমেরিকা এবং পশ্চিমা মহল মনে করেছিলো যে, বাংলাদেশ সম্ভবত ভারতের কবল থেকে বের হয়ে পশ্চিমা বিশ^, বিশেষ করে, মার্কিন কবলে প্রবেশ করবে। কিন্তু পশ্চিমারা জুলাই বিপ্লবের মূল স্পিরিটকেই ভুল বুঝেছিলো। জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী কোটি কোটি ছাত্র জনতা চেয়েছিলেন যথার্থ অর্থে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এটি হবে এমন একটি স্বাধীন দেশ যারা আমেরিকা বা চীনÑ কারো পক্ষপুটে প্রবেশ করবে না।

মনে হয় বাংলাদেশের জনগণের এই প্রকৃত স্বাধীনতার স্পৃহা তারা বুঝতে পারেনি। তাই তারা মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশকে জড়িত করার জন্য চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে আরাকানে প্রবেশের মানবিক করিডোর দাবি করেছিলো। তারা ভেবেছিলো যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা বলয়ের লোক। আর বাংলাদেশের মানুষকে পশ্চিমা ব্লকে ঢুকানোর জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ছাড়াও এমন এক ব্যক্তিকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়েছে যিনি ধ্যান ধারণায় সম্পূর্ণ পশ্চিমা বলে পাবলিক পারসেপশন রয়েছে। ইনি হলেন ড. খলিলুর রহমান।

ড. ইউনূস বা ড. খলিল বা পশ্চিমা বিশ^ বাংলাদেশের জনগণের পাল্স সঠিক ভাবে স্টাডি করতে পারে নাই। তাই দেখা গেলো, সেই তথাকথিত মানবিক করিডোরের বিরুদ্ধে জনগণের সুতীব্র প্রতিবাদ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন প্রথমে বলেছিলেন যে, মানবিক করিডোরের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন। তবে জনমতের বিরুদ্ধে কিছু করা হবে না। জনগণের প্রবল প্রতিবাদের মুখে অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার মানবিক করিডোর প্রদানের চিন্তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর তার ঈগল চক্ষু নিবদ্ধ করে আছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা মার্কিন প্রভাবিত দুবাইয়ের এক কোম্পানির হাতে প্রদানের তদবির করে আমেরিকা। এ ব্যাপারে আলোচনাও অনেক দূর এগিয়ে ছিলো। দুবাইয়ের সেই কোম্পানিটির মার্কিন প্রতিনিধি চট্টগ্রামে এসে কন্টেইনার টার্মিনাল সার্ভেও করেছিলেন। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে বাংলাদেশের লাইফ লাইন বিবেচনা করা হয়। এই চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে প্রথম থেকেই ছিলো ভারতের লোভাতুর দৃষ্টি। শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বন্দরকে বলতে গেলে ভারতের হাতে তুলেই দিয়েছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পর অন্তত ভারতের কব্জা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরকে মুক্ত করা গেছে। ভারতের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, চট্টগ্রাম বন্দর বা বন্দর টার্মিনাল আমেরিকা বা তার কোনো এজেন্টকে দেওয়া হবে। এ ব্যাপরেও জনগণের মধ্য থেকে তীব্র প্রতিবাদ উচ্চারিত হওয়ায় এই টার্মিনালকেও পশ্চিমাদের হাতে অথবা পশ্চিমা প্রভাবিত কোনো বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া থেকে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। তার পরিবর্তে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ওপরের দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আমেরিকা এবার আরো বড় উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। এবার তারা দাবি করেছে যে, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে যতরকম পণ্য ক্রয় করে তার উৎস এবং বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হোক। এই প্রস্তাবের আড়ালে রয়েছে আমেরিকার সুদূর প্রসারী অভিলাষ। তারা চায় যে সরকার যেসব কেনাকাটা করে সেগুলো যেনো আমেরিকা থেকে ক্রয় করা হয়।

উল্লেখকরা যেতে পারে যে, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশে^র বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পণ্য আমদানী করে থাকে তার সিংগ ভাগ আমদানী করে গণচীন থেকে। গণচীন থেকে আমদানীকৃত দ্রব্য সামগ্রী দামে ও মানে ঈড়সঢ়বঃরঃরাব বা প্রতিযোগিতা মূলক।
এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সরকার কিছু চিকিৎসার যন্ত্রপাতি (মেডিকেল ইকুয়িপমেন্ট) চীন থেকে আমদানীর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ইউনূস সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা মার্কিন পন্থী পদস্থ অফিসাররা বিভিন্ন নোক্তা তুলে সেই উদ্যোগ বানচাল করে দেয়।

সরকারী কেনাকাটার পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের দাবি আমেরিকা করছে এজন্য যে, চীন থেকে যে বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী কেনা হচ্ছে সেগুলো আমেরিকা থেকে কেনার বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র প্রধানত চীন থেকে ক্রয় করা হয়। নৌবাহিনীতে যে দুটি সাবমেরিন রয়েছে সেগুলোও চীনের। বিমান বাহিনীতে যেসব জঙ্গি বিমান রয়েছে সেগুলোও গণচীন থেকে সংগ্রহ করা। শেখ মুজিবের আমলে বাংলাদেশ তার বিমান বাহিনীর জন্য রাশিয়া থেকে এক স্কোয়াড্রন বা ১২টি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান কিনেছিলো। সেগুলো ছিলো সম্ভবত অনেক পুরানা। তাই সেগুলো খুব বেশি দিন টেকেনি। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই সেগুলো গ্রাউন্ডেড হয়ে যায়। শেখ মুজিব সরকারের পতনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া শেখ মুজিবের আমলে সূচিত রুশ-ভারত অক্ষশক্তি নির্ভর পররাষ্ট্র নীতি থেকে বেরিয়ে আসেন। একই সাথে ইন্দোসেন্ট্রিক পররাষ্ট্রনীতি বা একান্তভাবে ভারত নির্ভর পররাষ্ট্রনীতি থেকেও তিনি বেরিয়ে আসেন। তারপর তিনি সামরিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দেন। সমর সম্ভার সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিনি অতঃপর চীনের দিকে দৃষ্টি ফেরান।

চীন থেকে সেনাবাহিনীর জন্য যেসব যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ৩২০টি ট্যাঙ্ক। এর মধ্যে প্রধানত চীনা নির্মিত টাইপ ফিফটি নাইন দুর্র্জয় (Type 59 Durjoy), টাইপ 69-IIG (Type 69-IIG) এবং এমবিটি-২০০০ (MBT-2000) ট্যাংক রয়েছে।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে মোট ৪৪টি জঙ্গি বিমান আছে এবং এর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৭,৪০০ জন। যুদ্ধবিমান রয়েছে (Fighters): ৪৪টি। এই ৪৪টি জঙ্গি বিমানের মধ্যে চেংদু এফ-৭ এই যুদ্ধবিমানগুলো চীনের তৈরি এবং এগুলোর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩৬টি। এটি মূলত সোভিয়েট ইউনিয়নের তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের চীনা সংস্করণ। এছাড়া রুশ নির্মিত ১২টি মিগ-২৯ এর মধ্যে ৮টি মিগ-২৯ মেরামত করা হয়েছে বলে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের রিপোর্টে প্রকাশ।

অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ, ক্রয় সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ করার মার্কিনী দাবির পেছনে রয়েছে বাংলাদেশে মার্কিন যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ। কিছু দিন আগে একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকের একটি রিপোর্টে বাংলাদেশের জন্য চীনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশ সরকার বিমান বাহিনীর জন্য উন্নত প্রযুক্তির এই যুদ্ধবিমানগুলো কিনতে আগ্রহী।

রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের সময় এই যুদ্ধবিমান ক্রয়ের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং চীনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। কূটনৈতিক সূত্র মতে, এই সফরের আগেই উভয় দেশের মধ্যে জে-১০সি ক্রয়ের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছিল।

বাংলাদেশ তার বিমান বাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে চীনের তৈরি এই উন্নত যুদ্ধবিমানগুলো সংগ্রহের প্রাথমিক আলাপ আলোচনা শুরু করে মাত্র।

বিশ^স্ত সূত্রের খবর মোতাবেক আমেরিকা এই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করে। আমেরিকা বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব করে যে, তারা বাংলাদেশকে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন সরবরাহ করবে। শুধু তাই নয়, তারা বাংলাদেশের সমগ্র সামরিক বাহিনীকে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত করবে।

অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, আমেরিকা যে দেশেই সামরিক সাহায্য দিয়েছে সে দেশেরই সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে। আফগানিস্তানে আমেরিকা যখন হামলা শুরু করে তখন আমেরিকার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড আরমিটেজ তখনকার সেনা শাসককে বলেছিলেন যে, এই যুদ্ধে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নাই। হয় তাদেরকে মার্কিন পক্ষে থাকতে হবে। না হলে বিপক্ষে। বিপক্ষে গেলে তার ভাষায় Pakistan will be bombed to the stone age, অর্থাৎ পাকিস্তানকে এমন ভাবে বোমা মারা হবে যাতে করে দেশটি প্রস্তর যুগে ফিরে যায়।

এই হলো মার্কিন সাহায্যের নমুনা। কোথা থেকে কোন পণ্য সংগ্রহ বা ক্রয় করা হবে তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে বাংলাদেশের। সেটি আমেরিকা, রাশিয়া বা চীন যে দেশেরই হোক না কেনো। যে সূত্র থেকেই আমদানী বা ক্রয় বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল হবে সেখান থেকেই আমদানী বা সংগ্রহ করা হবে।

তবে ভারতের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশের রিজার্ভেশন থাকবে। কারণ গত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য বড়ই তিক্ত। তারা শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে করদ রাজ্যে পরিণত করেছিলো। তাই আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের সাথে ভারতকে একই ব্র্যাকেটে ফেলা যাবে না।


প্রিন্ট