বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নতুন ঋণ পাওয়ার ফলে ২০২৫ সালের জুন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে, যা টাকায় প্রায় ১৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা।
মাত্র তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ৭৩৫ কোটি ডলার বা ৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ কমলেও সরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির কারণে মোট ঋণ বেড়েছে।
আগের সরকারের সময়ে ডলার ঘাটতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছিল। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনাও বেড়েছিল, এমনকি ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গেও টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নতুন প্রশাসন অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে রেকর্ড ৫৭০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি এবং রপ্তানি আয়ে হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। এর সঙ্গে কম সুদের বৈদেশিক ঋণ পাওয়ায় ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। ২০২৫ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে (গ্রস রিজার্ভ), যা প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীলভাবে ১২২ টাকার মধ্যে রয়েছে।
বিস্তারিত তথ্যে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কিছুটা কমে জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে। অপরদিকে সরকারি খাতে ঋণ তিন মাসে প্রায় ৮.৭৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৩৮ কোটি ডলারে। এর ফলে বৈদেশিক ঋণের বোঝা প্রধানত সরকারি খাতেই পড়ছে। বর্তমানে মোট ঋণের ৮২ শতাংশ সরকারি খাতে এবং ১৮ শতাংশ বেসরকারি খাতে রয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি হিসাব বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল মাত্র ৪১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, গত এক দশকে ঋণের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৩৮ ডলার বা প্রায় ৭৭ হাজার টাকা। যা দশ বছর আগে ছিল মাত্র ২৫৭ ডলার। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ঋণ ব্যবস্থাপনায় সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে চাপ বাড়তে পারে।
প্রিন্ট
																			
																নিজস্ব সংবাদ :								 




















