ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ঘিরে শিক্ষার্থী সমাজে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যা তাদের প্রতিনিধিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশে প্রভাব বিস্তার করে। প্রতিটি শিক্ষার্থী এবং ছাত্রসংগঠন ভোটের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে সক্ষম হবে।
সম্প্রতি, হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করার আদেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি আদালত জানতে চেয়েছিল, ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন, বাছাই ও চূড়ান্তকরণ এবং ভোটের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া কীভাবে হচ্ছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিভাগে আবেদন করলে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই স্থগিতাদেশ আটকে যায়। এর ফলে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর ভোট আয়োজনের পথে আর কোনো বাধা রইল না।
ডাকসু নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা প্রতিবাদ করেছিলেন। কিছু হলে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তীব্র হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।
নির্বাচনের প্রার্থী তালিকায় ডাকসু নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল সমর্থিত জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা বৈধ কিনা তা চ্যালেঞ্জ করে বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক বিএম ফাহমিদা আলম একটি রিট করেন। হাইকোর্ট এই রিটের শুনানি নিয়ে ভোট স্থগিত করার নির্দেশ দেন এবং একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালকে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে হাইকোর্টে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির, আর রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ইতিমধ্যেই ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এবং বামপন্থী ছাত্রসংগঠনসহ মোট ১০টি প্যানেল মনোনীত হয়েছে।
এই নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ১৮টি হলে ১৩টি পদে মোট এক হাজার ৩৫ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
শেষ পর্যন্ত, সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিভাগের স্থগিতাদেশ ডাকসু নির্বাচনের পথে বাধা তুলে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে যে, ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের সুযোগ পাবে। এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রিন্ট