জুলাই বিপ্লবে ঢাকার বংশালে পুলিশের গুলিতে কুমিল্লার মেধাবী শিক্ষার্থী হামিদুর রহমান সাদমান (২০) নিহত হয়। তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে থাকতে পারছেন না মা কাজী শারমিন আক্তার। অ্যালবামে সাদমানের পুরোনো ছবি দেখে দিন কাটে শারমিনের। সাদমানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার চান তিনি।
জানা গেছে, সাদমান কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের দিঘলগাঁও মজুমদার বাড়ির বাহরাইন প্রবাসী ইকবাল হোসেন মজুমদারের ছেলে। মায়ের সঙ্গে সে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জের গোয়াল পট্টি এলাকায় থাকত। সিসিএন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ২০২৪ সালের জুনে সাদমান ঢাকায় ইন্টার্ন করতে যায়।
স্বজনরা জানায়, জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকে সক্রিয় ছিল সাদমান। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতনের খবর পেয়ে সহপাঠী ছাত্র-জনতার সঙ্গে কেরানীগঞ্জ থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে রওয়ানা হয় সে। মিছিলটি বংশাল থানার সামনে এলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তারা। একপর্যায়ে পুলিশ ওই বিজয় মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এতে সাদমানের বুকে বুলেট বিদ্ধ হয়। এ সময় বন্ধু রাফি ও আল আমিন তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। বিকাল ৫টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর আগে তিনবার মাকে ডেকেছিল সাদমান। ওই রাতেই বন্ধুরা অ্যাম্বুলেন্সে করে কুমিল্লা নগরীর বাসায় তার লাশ নিয়ে আসে। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের তালিকার ৬২৩ নম্বরে সাদমানের নাম রয়েছে। শহীদ সাদমানের মা কাজী শারমিন আক্তার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফ্যাসিবাদের হোতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, ছেলে হত্যার ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বংশাল থানায় হত্যা মামলা করেছি। আমার ছেলের রক্তমাখা গেঞ্জি-প্যান্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। ২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা করেছি। মৃত্যুর ১১ মাস অতিবাহিত হলো এখনো বিচারকার্য শুরু হয়নি। ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই। যারা আমার বুক খালি করেছে তাদের বিচার চাই। বর্তমান সরকারের কাছে একইটাই দাবি-আমার ছেলের হত্যাকারীসহ সব হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
কাজী শারমিন বলেন, আমার ছেলে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। এটা ভেবে গর্ববোধ করি ও মনকে সান্ত্বনা দেই। এ দেশ সবার। আর কখনো যেন অত্যাচারী সরকার না আসে। কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এদেশে আর কোনো স্বৈরাচারকে দেখতে চাই না। তিনি বলেন, নতুন কোনো ফ্যাসিস্টের জন্ম হলে আমার মতো মায়েরা তাদের সন্তানকে আন্দোলনে পাঠিয়ে সরকারের পতন ঘটাবে।
শহীদ সাদমানের ছোটভাই এইচএসসি পরীক্ষার্থী আশরাফুল আমিন সাফি বলেন, আম্মু সারাদিন ভাইয়ের পুরোনো ছবি দেখে সময় কাটান। ২৫ জুলাই ঢাকায় যাওয়ার সময় নতুন গামছা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়। আমি বলছি আমি নেব আর ভাইয়া বলেছে সে নেবে। আম্মুও ভাইয়াকে দিতে বলেন। তখন আমিও তাকে দিয়ে দেই। কিন্তু ভাইয়া গামছা নেয়নি। ভাইয়ার লাশ বাড়িতে আনা হলে তার মাথার নিচে গামছাটি রেখে দেওয়া হয়। সেটি রক্তে রঞ্জিত হয়। সেই স্মৃতি এখনো আমাকে কাঁদায়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, আমরা শহীদ সাদমানের পরিবারের খোঁজখবর রাখছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুদান আসলে পরিবারের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে।
প্রিন্ট