ঢাকা ০১:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সুস্থতার জন্য সাঁতার

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:১১:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
  • ৩২ ১০.০০০ বার পড়া হয়েছে

ফলো করুন

সাঁতার না জানায় প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায় অনেক শিশু। প্রাণ যায় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরও। অথচ এ দেশে এত নদী ও সুইমিংপুল থাকা সত্ত্বেও শুধু অনাগ্রহের কারণে সাঁতার শেখা হয় না অনেকের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায় ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। আর দেশে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হচ্ছে। ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটি ঘোষণা করে। এর লক্ষ্য-পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা এবং প্রাক-স্কুল বয়সি শিশুর জন্য শিশুযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সহজেই পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুস্থ থাকার জন্যও সাঁতার খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সাঁতারে হৃৎপেশির কার্যক্ষমতা বাড়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা। শক্তিশালী কাঁধ, কোমর কিংবা শারীরিক গঠনের জন্য সব সময় আলাদা ব্যায়াম করতে হয়; কিন্তু সাঁতারে পাওয়া যায় একসঙ্গে সবকিছু।

সাবেক জাতীয় সাঁতারু নিবেদিতা দাস বলেন, বেঁচে থাকার জন্য সাঁতার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি দক্ষতা। যার রয়েছে নানা উপকারিতা। তাই পানির ভয় কাটিয়ে সাঁতার শেখার পরিকল্পনা করা উচিত সবার।

দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে জোড়া স্বর্ণজয়ী সাবেক সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার ভাষ্য, সুইমিংপুলে আনন্দ করতে গিয়ে অনেক সময় পানি নিয়ে সতর্ক থাকার বিষয় ভুলে যাই আমরা। পানিকে হেলা করা যাবে না। প্রকৃতির অন্যান্য শক্তির মতো পানিও যে কোনো সময় একটি আনন্দঘন পরিবেশকে ভয়ংকর করতে পারে। এ ধরনের কোনো দুঃখজনক ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক দক্ষ সাঁতারুর তত্ত্বাবধানে সাঁতার অনুশীলন করা উচিত। বর্ষাকালে নদীর পানিতে যে কারোরই ডুব দিতে মন চাইতে পারে। কিন্তু অপেশাদার সাঁতারু হলে বর্ষায় নদীতে সাঁতার কাটা একদমই উচিত নয়। আপনার শারীরিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

সাবেক সাঁতারু জুয়েল আহমেদ বলেন, সাঁতার শেখার জন্য নিয়ন্ত্রিত ও ছন্দময় উপায়ে শ্বাস নিতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। নবীন সাঁতারুদের ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এ ধরনের কাজ শরীরকে দ্রুত ক্লান্ত করে দেয়। এছাড়া এটি ঘাড় এবং কাঁধে প্রচুর পরিমাণে চাপ সৃষ্টি করে, যা আকস্মিক মোচড় বা আঘাতের কারণ হতে পারে। সাঁতারের সময় ভালোভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার জন্য মাথা ঘোরানোর সময় শ্বাস নিতে হবে এবং মাথা পানিতে থাকার সময় শ্বাস ছাড়তে হবে।

গ্রামে নদী বা পুকুরে সাঁতার শিখে থাকেন আগ্রহীরা। তবে এটি কঠিন রাজধানী ঢাকা শহরে। এখানে সুইমিংপুলই একমাত্র ভরসা। মিরপুর জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে এক ঘণ্টা করে সাঁতার কাটা যায়। এখানে ভর্তির বয়স কমপক্ষে আট বছর। রোববার ও সোমবার বাদে প্রতিদিন খোলা থাকে সুইমিংপুলটি। ভর্তি ফি তিন হাজার টাকা দিয়ে মাসের যে কোনো দিনই সাঁতার প্রশিক্ষণে ভর্তি হওয়া যাবে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৩০ দিন। যেখানে প্রতি সপ্তাহে ক্লাস থাকবে পাঁচ দিন। দ্বিতীয় মাস থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া একদিন সাঁতার কাটতে চাইলে এক ঘণ্টার জন্য ২৫০ টাকা। পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা সাঁতার শেখার ব্যবস্থা আছে।

ধানমন্ডির রিয়া গোপ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে পাঁচ বছর বয়স থেকে শুধু মেয়েরাই সাঁতার শেখার সুযোগ পায়। তবে অনূর্ধ্ব সাত বছরের ছেলেরাও সাঁতার শিখতে পারবে এখানে। পছন্দ অনুযায়ী সময়েই মেয়েরা এখানে সাঁতার শিখতে পারবে। এখানে ভর্তি ফি দেড় হাজার টাকা। মাসিক ফি চার হাজার টাকা। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ।

রোববার থেকে বৃহস্পতিবার ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘণ্টাপ্রতি সাঁতার শেখানো হয়।

ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামসংলগ্ন সুইমিংপুল শুধু ছেলেদের জন্য। সাত বছর বয়স থেকে এখানে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। প্রথম মাসে ভর্তি ফি আড়াই হাজার এবং দ্বিতীয় মাস থেকে দুই হাজার টাকা। মাসের যে কোনো দিন ভর্তি হয়ে শুরু করা যাবে ৩০ দিনের কোর্সটি।

আইসিবিসি প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্পের (প্রথম সংশোধনী) মাধ্যমে দেশব্যাপী শিশুদের সাঁতার শেখানো হচ্ছে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পটি শুরু হয়। চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি চলবে। ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলার ৩১১টি ইউনিয়নের ৩,১১৫টি গ্রামে ৮০২০টি শিশুযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ১-৫ বছর বয়সি ২ লাখ ৫০০ শিশুকে প্রারম্ভিক বিকাশ, যত্ন ও সুরক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।


প্রিন্ট
ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা

সুস্থতার জন্য সাঁতার

আপডেট সময় ১২:১১:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

ফলো করুন

সাঁতার না জানায় প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায় অনেক শিশু। প্রাণ যায় প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরও। অথচ এ দেশে এত নদী ও সুইমিংপুল থাকা সত্ত্বেও শুধু অনাগ্রহের কারণে সাঁতার শেখা হয় না অনেকের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায় ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। আর দেশে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হচ্ছে। ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটি ঘোষণা করে। এর লক্ষ্য-পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা এবং প্রাক-স্কুল বয়সি শিশুর জন্য শিশুযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সহজেই পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুস্থ থাকার জন্যও সাঁতার খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সাঁতারে হৃৎপেশির কার্যক্ষমতা বাড়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা। শক্তিশালী কাঁধ, কোমর কিংবা শারীরিক গঠনের জন্য সব সময় আলাদা ব্যায়াম করতে হয়; কিন্তু সাঁতারে পাওয়া যায় একসঙ্গে সবকিছু।

সাবেক জাতীয় সাঁতারু নিবেদিতা দাস বলেন, বেঁচে থাকার জন্য সাঁতার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি দক্ষতা। যার রয়েছে নানা উপকারিতা। তাই পানির ভয় কাটিয়ে সাঁতার শেখার পরিকল্পনা করা উচিত সবার।

দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে জোড়া স্বর্ণজয়ী সাবেক সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার ভাষ্য, সুইমিংপুলে আনন্দ করতে গিয়ে অনেক সময় পানি নিয়ে সতর্ক থাকার বিষয় ভুলে যাই আমরা। পানিকে হেলা করা যাবে না। প্রকৃতির অন্যান্য শক্তির মতো পানিও যে কোনো সময় একটি আনন্দঘন পরিবেশকে ভয়ংকর করতে পারে। এ ধরনের কোনো দুঃখজনক ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক দক্ষ সাঁতারুর তত্ত্বাবধানে সাঁতার অনুশীলন করা উচিত। বর্ষাকালে নদীর পানিতে যে কারোরই ডুব দিতে মন চাইতে পারে। কিন্তু অপেশাদার সাঁতারু হলে বর্ষায় নদীতে সাঁতার কাটা একদমই উচিত নয়। আপনার শারীরিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

সাবেক সাঁতারু জুয়েল আহমেদ বলেন, সাঁতার শেখার জন্য নিয়ন্ত্রিত ও ছন্দময় উপায়ে শ্বাস নিতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। নবীন সাঁতারুদের ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এ ধরনের কাজ শরীরকে দ্রুত ক্লান্ত করে দেয়। এছাড়া এটি ঘাড় এবং কাঁধে প্রচুর পরিমাণে চাপ সৃষ্টি করে, যা আকস্মিক মোচড় বা আঘাতের কারণ হতে পারে। সাঁতারের সময় ভালোভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার জন্য মাথা ঘোরানোর সময় শ্বাস নিতে হবে এবং মাথা পানিতে থাকার সময় শ্বাস ছাড়তে হবে।

গ্রামে নদী বা পুকুরে সাঁতার শিখে থাকেন আগ্রহীরা। তবে এটি কঠিন রাজধানী ঢাকা শহরে। এখানে সুইমিংপুলই একমাত্র ভরসা। মিরপুর জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে এক ঘণ্টা করে সাঁতার কাটা যায়। এখানে ভর্তির বয়স কমপক্ষে আট বছর। রোববার ও সোমবার বাদে প্রতিদিন খোলা থাকে সুইমিংপুলটি। ভর্তি ফি তিন হাজার টাকা দিয়ে মাসের যে কোনো দিনই সাঁতার প্রশিক্ষণে ভর্তি হওয়া যাবে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৩০ দিন। যেখানে প্রতি সপ্তাহে ক্লাস থাকবে পাঁচ দিন। দ্বিতীয় মাস থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া একদিন সাঁতার কাটতে চাইলে এক ঘণ্টার জন্য ২৫০ টাকা। পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা সাঁতার শেখার ব্যবস্থা আছে।

ধানমন্ডির রিয়া গোপ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে পাঁচ বছর বয়স থেকে শুধু মেয়েরাই সাঁতার শেখার সুযোগ পায়। তবে অনূর্ধ্ব সাত বছরের ছেলেরাও সাঁতার শিখতে পারবে এখানে। পছন্দ অনুযায়ী সময়েই মেয়েরা এখানে সাঁতার শিখতে পারবে। এখানে ভর্তি ফি দেড় হাজার টাকা। মাসিক ফি চার হাজার টাকা। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ।

রোববার থেকে বৃহস্পতিবার ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘণ্টাপ্রতি সাঁতার শেখানো হয়।

ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামসংলগ্ন সুইমিংপুল শুধু ছেলেদের জন্য। সাত বছর বয়স থেকে এখানে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। প্রথম মাসে ভর্তি ফি আড়াই হাজার এবং দ্বিতীয় মাস থেকে দুই হাজার টাকা। মাসের যে কোনো দিন ভর্তি হয়ে শুরু করা যাবে ৩০ দিনের কোর্সটি।

আইসিবিসি প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্পের (প্রথম সংশোধনী) মাধ্যমে দেশব্যাপী শিশুদের সাঁতার শেখানো হচ্ছে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পটি শুরু হয়। চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি চলবে। ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলার ৩১১টি ইউনিয়নের ৩,১১৫টি গ্রামে ৮০২০টি শিশুযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ১-৫ বছর বয়সি ২ লাখ ৫০০ শিশুকে প্রারম্ভিক বিকাশ, যত্ন ও সুরক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।


প্রিন্ট