ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াবাঙ্গা দর্গাবাজারে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাজী মো: মকবুল হোসেনের পথসভা ও গণসংযোগ জামালপুরে হাত পাখা শিল্পের প্রসার পুলিশ স্ত্রীর দাপটে বেপরোয়া জালাল উদ্দিন সাগর, সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা মোংলায় মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিশাল শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত পাকুন্দিয়া থানা পুলিশের অভিযানে ৪০০ গ্রাম গাঁজা সহ ১ আসামী গ্রেফতার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার-১ ফুলবাড়ীতে মহান মে দিবস পালিত মহান মে দিবস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন ভারতের যৌন কর্মীদের শ্রমিকের অধিকার চায়, সাথে নিরাপত্তা ও সামাজিক ন্যায়। রায়পুরে মাদ্রাসারছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণনের অভিযোগ

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম কে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেই নাটক সাজিয়েছেন তাহার গোমর ফাঁস

সময়ের কন্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক।
সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। চিকিৎসার পরিবর্তে তাঁকে থানায় এনে মামলা দেওয়া হয়।
দীর্ঘক্ষণ সচিবালয়ের একটি কক্ষে আটক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন রোজিনা ইসলাম। সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ সাংবাদিকদের প্রথমে জানায়, রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে নয়টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।
শাহবাগ থানার সামনে কান্নাতে ভেঙে পড়েন রোজিনা ইসলামের বোন।
শাহবাগ থানার সামনে কান্নাতে ভেঙে পড়েন রোজিনা ইসলামের বোন।

শাহবাগ থানার গড়িমসি
শাহবাগ থানায় আনার পর রাতভর রোজিনা ইসলামের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে গড়িমসি করে শাহবাগ থানার পুলিশ। এ সময় পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তবে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
রাত ১১টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানানো হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ সাংবাদিকদের ব্রিফ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায়। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাতে রোজিনা ইসলামকে থানাতেই রাখা হবে।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম গতকাল সোমবার করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন। দীর্ঘক্ষণ সচিবালয়ের হেনস্তার শিকার হয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

শাহবাগ থানায় তাঁকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে রাখা হয়। স্বজনদের মাধ্যমে আনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ রাতে তাঁকে দেওয়া হয়।
তাকে শাহবাগ থানায় আনার পরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত হন। তাঁরা এ সময় রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন রোজিনা ইসলামের বোন।
শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন রোজিনা ইসলামের বোন।
দিবাগত রাত দেড়টায় হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে যে রোজিনা ইসলামকে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হবে। এ সময় থানার ভেতরের প্রাঙ্গণে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ঢুকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতেও দেখা যায়। এ নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। রোজিনার পরিবারের সদস্যরাও এতে আপত্তি জানায়।
রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান তাঁর স্বামী মনিরুল ইসলাম। তিনি দেখা করে এসে সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসার ব্যবস্থা দিতে পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চায়। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।
পরিবারের প্রথমে দাবি ছিল, রাজধানীর কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু শাহবাগ থানার পুলিশ তা মানতে নারাজ। এ সময় স্বজনেরা শাহবাগ মোড়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোজিনা ইসলামকে নেওয়ার অনুরোধ করেন। সেটিতেও আপত্তি জানান শাহবাগ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অথচ এর কিছুক্ষণ আগেও থানা-পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছিলেন যে রোজিনা ইসলামের চিকিৎসা দরকার। কিন্তু আপত্তি জানানোর পরে চিকিৎসা নিয়ে আর কথা বলেননি।
রোজিনা ইসলাম এর মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানার সামনে গণমাধ্যম কর্মীদের বিক্ষোভ।
ভোররাত চারটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের থানা প্রাঙ্গণের বাইরে চলে যেতে বলেন। এ সময় সাংবাদিকেরা বের হতে থাকেন। এডিসি তখন সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমিনকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকেরা এর প্রতিবাদ জানালে তাঁদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন পুলিশের সদস্যরা।
উত্তেজিত পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সাংবাদিক মো. জাহিদুল ইসলাম ভিডিও করছিলেন বলে তাঁর ফোন কেড়ে নেন। রোজিনা ইসলামকে নারী পুলিশ দিয়ে জেলহাজতে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। রোজিনা ইসলামের বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন পুলিশের সদস্যরা। তাঁদের থানা প্রাঙ্গণের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ও স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। সেখানে বিভিন্ন গণমাধ্যমের জনাবিশেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
এখন এক কোটি দেব, পরে আর পাবেন’এই শিরোনামে।

রোজিনা ইসলাম রিপোর্ট করার জন্য এই নাটক সাজিয়েছেন সচিবালয়।

সচিবকে চিঠি দিয়ে জনপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ নিয়োগ কমিটির দুই সদস্যের। ‘ঘুষ সাধেন’ এক উপসচিবও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বড় একটি নিয়োগে বড় অঙ্কের ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন নিয়োগ কমিটিরই দুজন সদস্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে তাঁরা দাবি করেছেন, এই নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রার্থীদের একটি অংশের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের সন্দেহ হয় মৌখিক পরীক্ষা নিতে গিয়ে। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা বলছেন, লিখিত পরীক্ষায় যেসব প্রার্থী ৮০ নম্বরের মধ্যে ৬০ থেকে ৭৯ পেয়েছেন, তাঁরা মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। বরং ভালো করেন লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীরা।মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতে নিয়োগ বোর্ডের এক সদস্যকে ঘুষ ও পদোন্নতির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।

এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন আরেক মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে দেওয়া চিঠিতে নিয়োগ কমিটির এক সদস্য অভিযোগ করেন, তাঁকে নগদ এক কোটি টাকা এবং পরে আরও টাকা ও পদোন্নতি দেওয়ার লোভ দেখানো হয়।
করোনাকালে সরকারি হাসপাতালে কারিগরি জনবল ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিল। এ জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় গত বছরের ২৯ জুন। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ২ হাজার ৫২১ জন উত্তীর্ণ হন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৫ শতাংশের মতো। তবে যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ খুব ভালো নম্বর পান, যা থেকেই সন্দেহ তৈরি হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় খুব কড়াকড়িভাবে।

লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই নিয়োগসংক্রান্ত কমিটির দুজন সদস্যকে সরিয়ে দিয়েছে। অধিদপ্তর বলছে, পুরো পরীক্ষা বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য মৌখিক পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১০ পাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা সব পদের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
এ জন্য ৮০০ জনের মতো প্রার্থীকে নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ও নিয়োগ কমিটির প্রধান শেখ মো. হাসান ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা যেসব অভিযোগ করেছেন, তা আমি স্বাস্থ্যসেবা সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছি। আমার কাছে এর সকল প্রমাণ আছে।’ তিনি বলেন, ‘৮০ নম্বরের মধ্যে যখন একাধিক পরীক্ষার্থী ৭৯ পায়, তখন সেটা ভাবনার বিষয়।’
শুক্রবারে এক কোটি টাকা দেব’
অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ কমিটি থেকে যে দুজন সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাঁদের একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আ ফ ম আখতার হোসেন। তাঁর জায়গায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেওয়া হয় ডা. মো. আবুল হাশেম শেখকে। তিনি এর আগে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে এই নিয়োগসংক্রান্ত কমিটিতে সদস্যসচিব করা হয়।
আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে কেন সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) পদে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডা. আবুল হাশেম গত ৮ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দিয়ে তাঁকে ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। ওই সময় স্বাস্থ্যসচিবের দায়িত্বে ছিলেন আবদুল মান্নান। চিঠিতে ডা. হাশেম লিখেছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা) শ্রীনিবাস দেবনাথ গত ১ মার্চ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। তখনই তিনি ঘুষের প্রস্তাব দেন।
ডা. হাশেম আরও লেখেন, ‘তিনি (শ্রীনিবাস) বললেন শুক্রবারে আপনাকে এক কোটি টাকা দেব, কোথায় দেখা করব? আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী জন্য আমাকে এত টাকা দেবেন? তিনি জানালেন, আমরা যে তালিকা দেব, তাঁদেরকে ভাইভা বোর্ডে পাস করিয়ে দিতে হবে। তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেছেন।’
সেদিনের সাক্ষাৎকালে উপসচিব শ্রীনিবাস ডা. হাশেমকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) পদে পদোন্নতির লোভ দেখান বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। এতে ডা. হাশেম আরও লেখেন, কথা বলার সময় শ্রীনিবাসের মুঠোফোনে একটি ফোন আসে। শ্রীনিবাস ফোনটি তাঁকে দিয়ে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এপিএস কথা বলবেন। তখন আরিফুর নামে একজন বলেন (ডা. হাশেমকে), তিনি যেভাবে বলেছেন সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
চিঠিতে ডা. হাশেম স্বাস্থ্যসেবা সচিবকে বলেন, ‘আমি শ্রীনিবাস দেবনাথকে জানালাম, ঘুষের বিনিময়ে কোনো কাজ করতে অপারগ। …তিনি জানালেন, এক কোটি টাকা শেষ নয়, নিয়োগের পরে আরও পাবেন, চিন্তা করে দেখুন।’
ডা. হাশেমের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, শ্রীনিবাস দেবনাথ অনেকের সঙ্গে জড়িত হয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য পরিচালনা করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। তাঁরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আ ফ ম আখতার হোসেন। অন্যজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ সোহেল। ডা. হাশেমের ভাষ্যমতে, সোহেল একজন নৈশপ্রহরী ছিলেন, যিনি বিধিবহির্ভূতভাবে এমএলএসএস পদে পদোন্নতি পান।
চিঠিতে ডা. হাশেম নিয়োগ-বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার অনুরোধ জানান স্বাস্থ্যসেবা সচিবকে। চিঠি দেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয় এই নিয়োগে বড় বাণিজ্য হয়েছে। তাই অভিযোগ লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। স্বাস্থ্যসচিবকে (সাবেক) আমি মৌখিকভাবে বলেছি। তাঁরা আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।’

‘দুই-চার বছরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাইনি’
ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে উপসচিব শ্রীনিবাস দেবনাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি গতকাল রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি দুই-চার বছরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাইনি।’
অবশ্য শ্রীনিবাস জানান, তিনি আরিফুরকে চেনেন। তাঁরা দুজনেই ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর এই ‘ছোট ভাই’ আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস ছিলেন।
উল্লেখ্য, আরিফুর রহমান সেখ নামের একজন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন। নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
আরিফুর রহমান সেখ বর্তমানে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। ডা. হাশেমের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এ ধরনের কথা কাউকে তিনি বলেননি।

নিয়োগ কমিটির আরেক সদস্যের অভিযোগ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার অনিয়মের বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ও নিয়োগ কমিটির সদস্য শারমিন আক্তার জাহান স্বাস্থ্যসেবা সচিবকে চিঠি দেন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি উল্লেখ করেন, নিয়োগ কমিটির সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপঙ্কর বিশ্বাসের প্রস্তাব ও কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগকে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অত্যন্ত কঠিন ছিল বলে উল্লেখ করে শারমিন আক্তার আরও লিখেছেন, কঠিন প্রশ্নেও উত্তীর্ণদের বেশির ভাগ অনেক ভালো নম্বর পান। কিছু খাতা খুলে দেখা যায়, মুক্তার মতো হরফে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখা, যেখানে কলম ধরার কোনো সুযোগ নেই। এত নম্বর পাওয়া খুবই অপ্রাসঙ্গিক ছিল।
চিঠিতে শারমিন আক্তার আরও উল্লেখ করেন, মৌখিক পরীক্ষা শুরু হলে দেখা যায়, যাঁরা অনেক নম্বর পেয়েছেন, তাঁরা মৌখিক পরীক্ষার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না। যাঁরা ৪০ থেকে ৫৯ পর্যন্ত নম্বর পেয়েছেন, তাঁরা অনেক ভালো মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
শারমিন আক্তার চিঠিতে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব অভিযোগ স্বাস্থ্যসচিবকে জানানো হলে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানান। এরপর দীপঙ্কর বিশ্বাসকে নিয়োগ কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য দীপঙ্কর বিশ্বাস প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর কোনো ভূমিকা নেই। সবকিছু যেন বিধিসম্মতভাবে হয়, সেটাই তিনি দেখেছেন।

অবশ্য শারমিন আক্তার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই যাঁদের নামে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের সবার বিষয়ে তদন্ত করা হোক।’

‘আমরা লিংক পেয়েছিলাম’
লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মৌখিক পরীক্ষায় একটি বিশেষ কৌশল নেয় নিয়োগ কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায়ও ছোট তিনটি প্রশ্নের উত্তর লিখে দিতে বলা হয়। এতে আগে উচ্চ নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ ভুল করেন।
এদিকে লিখিত পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পেয়েছেন, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার কোনো প্রশ্নের উত্তর পারেননি এমন ছয়জনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তাঁরা দাবি করেন, অনেকেই লিখিত পরীক্ষার আগে ইন্টারনেটে একটি লিংকে উত্তর পান। সে অনুযায়ী মুখস্থ করে পরীক্ষা দেন। একজন প্রার্থী বলেন, ‘এসব নিয়োগ কি টাকা ছাড়া হয়!’
বিস্তারিত তদন্তের তাগিদ
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়মের বিষয়টি তাঁকে এখনো জানানো হয়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা দিতে সরকারি হাসপাতালগুলো জনবল ঘাটতিতে পড়েছে। এ জন্যই বড় একটি নিয়োগ জরুরি ভিত্তিতে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে জরুরি প্রয়োজনে ২০২০ সালের শুরুর দিকে এক দফায় ২০৩ জন টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় ওই নিয়োগ সম্পন্ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে নিয়োগে এমন দুর্নীতি অহরহ হয়। তবে প্রকাশিত হয় না। এবার যেসব সরকারি কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, এখন বিষয়টি বিস্তারিত তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে বুঝতে হবে দুর্নীতিবাজদের আরও ওপরের স্তরের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে।

এবং  সাংবাদিক রোজিনাকে নিয়ে শাহবাগ থানায় রাতভর নাটকীয়তা করেও লাভ হয়নি ।

অবশেষে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=491711342246309&id=101956704555110

সময়ের কন্ঠ পএিকায়া চোখ রাখন

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াবাঙ্গা দর্গাবাজারে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হাজী মো: মকবুল হোসেনের পথসভা ও গণসংযোগ

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম কে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেই নাটক সাজিয়েছেন তাহার গোমর ফাঁস

আপডেট টাইম : ১০:৩৮:১২ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১

সময়ের কন্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক।
সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁকে হেনস্তা করা হয়। স্বজনদের দাবি, শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। চিকিৎসার পরিবর্তে তাঁকে থানায় এনে মামলা দেওয়া হয়।
দীর্ঘক্ষণ সচিবালয়ের একটি কক্ষে আটক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন রোজিনা ইসলাম। সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ সাংবাদিকদের প্রথমে জানায়, রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পৌনে নয়টার দিকে তাঁকে থানায় আনা হয়।
শাহবাগ থানার সামনে কান্নাতে ভেঙে পড়েন রোজিনা ইসলামের বোন।
শাহবাগ থানার সামনে কান্নাতে ভেঙে পড়েন রোজিনা ইসলামের বোন।

শাহবাগ থানার গড়িমসি
শাহবাগ থানায় আনার পর রাতভর রোজিনা ইসলামের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে গড়িমসি করে শাহবাগ থানার পুলিশ। এ সময় পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। তবে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
রাত ১১টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানানো হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ সাংবাদিকদের ব্রিফ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায়। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাতে রোজিনা ইসলামকে থানাতেই রাখা হবে।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম গতকাল সোমবার করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেন। দীর্ঘক্ষণ সচিবালয়ের হেনস্তার শিকার হয়ে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

শাহবাগ থানায় তাঁকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে রাখা হয়। স্বজনদের মাধ্যমে আনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ রাতে তাঁকে দেওয়া হয়।
তাকে শাহবাগ থানায় আনার পরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত হন। তাঁরা এ সময় রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন রোজিনা ইসলামের বোন।
শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন রোজিনা ইসলামের বোন।
দিবাগত রাত দেড়টায় হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে যে রোজিনা ইসলামকে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হবে। এ সময় থানার ভেতরের প্রাঙ্গণে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ঢুকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতেও দেখা যায়। এ নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। রোজিনার পরিবারের সদস্যরাও এতে আপত্তি জানায়।
রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান তাঁর স্বামী মনিরুল ইসলাম। তিনি দেখা করে এসে সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা ইসলামকে চিকিৎসার ব্যবস্থা দিতে পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চায়। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।
পরিবারের প্রথমে দাবি ছিল, রাজধানীর কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে তাঁকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু শাহবাগ থানার পুলিশ তা মানতে নারাজ। এ সময় স্বজনেরা শাহবাগ মোড়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোজিনা ইসলামকে নেওয়ার অনুরোধ করেন। সেটিতেও আপত্তি জানান শাহবাগ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অথচ এর কিছুক্ষণ আগেও থানা-পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছিলেন যে রোজিনা ইসলামের চিকিৎসা দরকার। কিন্তু আপত্তি জানানোর পরে চিকিৎসা নিয়ে আর কথা বলেননি।
রোজিনা ইসলাম এর মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানার সামনে গণমাধ্যম কর্মীদের বিক্ষোভ।
ভোররাত চারটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের থানা প্রাঙ্গণের বাইরে চলে যেতে বলেন। এ সময় সাংবাদিকেরা বের হতে থাকেন। এডিসি তখন সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমিনকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকেরা এর প্রতিবাদ জানালে তাঁদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন পুলিশের সদস্যরা।
উত্তেজিত পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সাংবাদিক মো. জাহিদুল ইসলাম ভিডিও করছিলেন বলে তাঁর ফোন কেড়ে নেন। রোজিনা ইসলামকে নারী পুলিশ দিয়ে জেলহাজতে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। রোজিনা ইসলামের বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন পুলিশের সদস্যরা। তাঁদের থানা প্রাঙ্গণের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ও স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। সেখানে বিভিন্ন গণমাধ্যমের জনাবিশেক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
এখন এক কোটি দেব, পরে আর পাবেন’এই শিরোনামে।

রোজিনা ইসলাম রিপোর্ট করার জন্য এই নাটক সাজিয়েছেন সচিবালয়।

সচিবকে চিঠি দিয়ে জনপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ নিয়োগ কমিটির দুই সদস্যের। ‘ঘুষ সাধেন’ এক উপসচিবও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বড় একটি নিয়োগে বড় অঙ্কের ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন নিয়োগ কমিটিরই দুজন সদস্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে তাঁরা দাবি করেছেন, এই নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রার্থীদের একটি অংশের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের সন্দেহ হয় মৌখিক পরীক্ষা নিতে গিয়ে। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা বলছেন, লিখিত পরীক্ষায় যেসব প্রার্থী ৮০ নম্বরের মধ্যে ৬০ থেকে ৭৯ পেয়েছেন, তাঁরা মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। বরং ভালো করেন লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীরা।মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিতে নিয়োগ বোর্ডের এক সদস্যকে ঘুষ ও পদোন্নতির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল।

এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন আরেক মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে দেওয়া চিঠিতে নিয়োগ কমিটির এক সদস্য অভিযোগ করেন, তাঁকে নগদ এক কোটি টাকা এবং পরে আরও টাকা ও পদোন্নতি দেওয়ার লোভ দেখানো হয়।
করোনাকালে সরকারি হাসপাতালে কারিগরি জনবল ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিল। এ জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় গত বছরের ২৯ জুন। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ২ হাজার ৫২১ জন উত্তীর্ণ হন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৫ শতাংশের মতো। তবে যাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁদের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ খুব ভালো নম্বর পান, যা থেকেই সন্দেহ তৈরি হয়। পরে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় খুব কড়াকড়িভাবে।

লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই নিয়োগসংক্রান্ত কমিটির দুজন সদস্যকে সরিয়ে দিয়েছে। অধিদপ্তর বলছে, পুরো পরীক্ষা বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য মৌখিক পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১০ পাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা সব পদের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
এ জন্য ৮০০ জনের মতো প্রার্থীকে নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ও নিয়োগ কমিটির প্রধান শেখ মো. হাসান ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা যেসব অভিযোগ করেছেন, তা আমি স্বাস্থ্যসেবা সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছি। আমার কাছে এর সকল প্রমাণ আছে।’ তিনি বলেন, ‘৮০ নম্বরের মধ্যে যখন একাধিক পরীক্ষার্থী ৭৯ পায়, তখন সেটা ভাবনার বিষয়।’
শুক্রবারে এক কোটি টাকা দেব’
অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ কমিটি থেকে যে দুজন সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাঁদের একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আ ফ ম আখতার হোসেন। তাঁর জায়গায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেওয়া হয় ডা. মো. আবুল হাশেম শেখকে। তিনি এর আগে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে এই নিয়োগসংক্রান্ত কমিটিতে সদস্যসচিব করা হয়।
আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে কেন সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) পদে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডা. আবুল হাশেম গত ৮ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি দিয়ে তাঁকে ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। ওই সময় স্বাস্থ্যসচিবের দায়িত্বে ছিলেন আবদুল মান্নান। চিঠিতে ডা. হাশেম লিখেছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা) শ্রীনিবাস দেবনাথ গত ১ মার্চ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। তখনই তিনি ঘুষের প্রস্তাব দেন।
ডা. হাশেম আরও লেখেন, ‘তিনি (শ্রীনিবাস) বললেন শুক্রবারে আপনাকে এক কোটি টাকা দেব, কোথায় দেখা করব? আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী জন্য আমাকে এত টাকা দেবেন? তিনি জানালেন, আমরা যে তালিকা দেব, তাঁদেরকে ভাইভা বোর্ডে পাস করিয়ে দিতে হবে। তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেছেন।’
সেদিনের সাক্ষাৎকালে উপসচিব শ্রীনিবাস ডা. হাশেমকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) পদে পদোন্নতির লোভ দেখান বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। এতে ডা. হাশেম আরও লেখেন, কথা বলার সময় শ্রীনিবাসের মুঠোফোনে একটি ফোন আসে। শ্রীনিবাস ফোনটি তাঁকে দিয়ে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এপিএস কথা বলবেন। তখন আরিফুর নামে একজন বলেন (ডা. হাশেমকে), তিনি যেভাবে বলেছেন সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
চিঠিতে ডা. হাশেম স্বাস্থ্যসেবা সচিবকে বলেন, ‘আমি শ্রীনিবাস দেবনাথকে জানালাম, ঘুষের বিনিময়ে কোনো কাজ করতে অপারগ। …তিনি জানালেন, এক কোটি টাকা শেষ নয়, নিয়োগের পরে আরও পাবেন, চিন্তা করে দেখুন।’
ডা. হাশেমের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, শ্রীনিবাস দেবনাথ অনেকের সঙ্গে জড়িত হয়ে নিয়োগ-বাণিজ্য পরিচালনা করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। তাঁরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আ ফ ম আখতার হোসেন। অন্যজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ সোহেল। ডা. হাশেমের ভাষ্যমতে, সোহেল একজন নৈশপ্রহরী ছিলেন, যিনি বিধিবহির্ভূতভাবে এমএলএসএস পদে পদোন্নতি পান।
চিঠিতে ডা. হাশেম নিয়োগ-বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার অনুরোধ জানান স্বাস্থ্যসেবা সচিবকে। চিঠি দেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয় এই নিয়োগে বড় বাণিজ্য হয়েছে। তাই অভিযোগ লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। স্বাস্থ্যসচিবকে (সাবেক) আমি মৌখিকভাবে বলেছি। তাঁরা আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।’

‘দুই-চার বছরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাইনি’
ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে উপসচিব শ্রীনিবাস দেবনাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি গতকাল রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি দুই-চার বছরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাইনি।’
অবশ্য শ্রীনিবাস জানান, তিনি আরিফুরকে চেনেন। তাঁরা দুজনেই ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর এই ‘ছোট ভাই’ আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস ছিলেন।
উল্লেখ্য, আরিফুর রহমান সেখ নামের একজন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন। নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
আরিফুর রহমান সেখ বর্তমানে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। ডা. হাশেমের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এ ধরনের কথা কাউকে তিনি বলেননি।

নিয়োগ কমিটির আরেক সদস্যের অভিযোগ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার অনিয়মের বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ও নিয়োগ কমিটির সদস্য শারমিন আক্তার জাহান স্বাস্থ্যসেবা সচিবকে চিঠি দেন গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। তিনি উল্লেখ করেন, নিয়োগ কমিটির সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপঙ্কর বিশ্বাসের প্রস্তাব ও কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগকে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অত্যন্ত কঠিন ছিল বলে উল্লেখ করে শারমিন আক্তার আরও লিখেছেন, কঠিন প্রশ্নেও উত্তীর্ণদের বেশির ভাগ অনেক ভালো নম্বর পান। কিছু খাতা খুলে দেখা যায়, মুক্তার মতো হরফে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লেখা, যেখানে কলম ধরার কোনো সুযোগ নেই। এত নম্বর পাওয়া খুবই অপ্রাসঙ্গিক ছিল।
চিঠিতে শারমিন আক্তার আরও উল্লেখ করেন, মৌখিক পরীক্ষা শুরু হলে দেখা যায়, যাঁরা অনেক নম্বর পেয়েছেন, তাঁরা মৌখিক পরীক্ষার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না। যাঁরা ৪০ থেকে ৫৯ পর্যন্ত নম্বর পেয়েছেন, তাঁরা অনেক ভালো মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
শারমিন আক্তার চিঠিতে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব অভিযোগ স্বাস্থ্যসচিবকে জানানো হলে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানান। এরপর দীপঙ্কর বিশ্বাসকে নিয়োগ কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য দীপঙ্কর বিশ্বাস প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর কোনো ভূমিকা নেই। সবকিছু যেন বিধিসম্মতভাবে হয়, সেটাই তিনি দেখেছেন।

অবশ্য শারমিন আক্তার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই যাঁদের নামে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের সবার বিষয়ে তদন্ত করা হোক।’

‘আমরা লিংক পেয়েছিলাম’
লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মৌখিক পরীক্ষায় একটি বিশেষ কৌশল নেয় নিয়োগ কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষায়ও ছোট তিনটি প্রশ্নের উত্তর লিখে দিতে বলা হয়। এতে আগে উচ্চ নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ ভুল করেন।
এদিকে লিখিত পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পেয়েছেন, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার কোনো প্রশ্নের উত্তর পারেননি এমন ছয়জনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তাঁরা দাবি করেন, অনেকেই লিখিত পরীক্ষার আগে ইন্টারনেটে একটি লিংকে উত্তর পান। সে অনুযায়ী মুখস্থ করে পরীক্ষা দেন। একজন প্রার্থী বলেন, ‘এসব নিয়োগ কি টাকা ছাড়া হয়!’
বিস্তারিত তদন্তের তাগিদ
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়মের বিষয়টি তাঁকে এখনো জানানো হয়নি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা দিতে সরকারি হাসপাতালগুলো জনবল ঘাটতিতে পড়েছে। এ জন্যই বড় একটি নিয়োগ জরুরি ভিত্তিতে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে জরুরি প্রয়োজনে ২০২০ সালের শুরুর দিকে এক দফায় ২০৩ জন টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতির প্রমার্জনায় ওই নিয়োগ সম্পন্ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে নিয়োগে এমন দুর্নীতি অহরহ হয়। তবে প্রকাশিত হয় না। এবার যেসব সরকারি কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, এখন বিষয়টি বিস্তারিত তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যদি তা না হয়, তাহলে বুঝতে হবে দুর্নীতিবাজদের আরও ওপরের স্তরের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে।

এবং  সাংবাদিক রোজিনাকে নিয়ে শাহবাগ থানায় রাতভর নাটকীয়তা করেও লাভ হয়নি ।

অবশেষে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=491711342246309&id=101956704555110

সময়ের কন্ঠ পএিকায়া চোখ রাখন