অদম্য গতিতে এগোচ্ছে -যোগাযোগ খাতে মেগা প্রকল্প
- আপডেট টাইম : ০৫:৪৫:৩১ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১
- / ৩০০ ৫০০০.০ বার পাঠক
করোনার ভয়ঙ্কর ছোবলেও থেমে নেই কাজ
- কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে
- কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বিশেষ ইউনিট
- প্রকল্পের পাশেই থাকার ব্যবস্থা
সময়ের কন্ঠ রিপোর্টার ॥
করোনার ভয়ঙ্কর ছোবলেও থেমে নেই যোগাযোগ খাতের মেগাপ্রকল্পের কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অজানা শঙ্কা উপেক্ষা করে কাক্সিক্ষত গতিতেই এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল, থার্ড টার্মিনাল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল লাইন, র্যা পিড বাস ট্রানজিটসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ। দিবারাত্রি পালাবদল করে শ্রমিকের ঘাম ঝরানো কাজের দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিটি নির্মাণ প্রকল্পে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকিও করা হচ্ছে। করোনার চলমান অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হলেও কাজ থামানো হবে না বলে জানিয়েছে একাধিক প্রকল্পসূত্র।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, একই কারণে গতবছরের দেয়া লকডাউনে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজের গতি অনেকটাই কমেছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। প্রতিটি প্রকল্পে গিয়েই দেখা যায়, কাজ চলছে অবিরাম। ভয়-শঙ্কা আর ক্লান্তির মাঝেই তর তর করে ওঠে যাচ্ছে একেকটি স্তম্ভ। বিশেষ করে চলমান করোনা সঙ্কট ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করায়-প্রতিটি প্রকল্পেই শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিতে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ চিকিৎসা ইউনিট। কয়েকটি প্রকল্পে শ্রমিকদের নির্মাণস্থলের পাশেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পের কাজে অদম্য গতির ধারাবাহিকতায় অতি সম্প্রতি ঢাকায় পৌঁছে গেছে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলে ৬টি বগি। বর্তমানে এগুলো মেট্রোরেলের মূল ট্র্যাকে বসানোর কাজ চলছে। জানা গেছে, করোনার সময়েও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাস্ট ট্র্যাক মনিটরিং টাস্কফোর্সের সভায় প্রকল্পগুলোর কাজের গতি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে চলছে সবগুলো মেগাপ্রকল্পের কাজ।
এ সব মেগা প্রকল্পের মধ্যে দেশে-বিদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত পদ্মা সেতু। এ প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশেরও বেশি। সর্বশেষ দেখা যায়, এ সেতুর স্প্যানে সড়কপথের কাজ শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে মাওয়ার দিকে এগোচ্ছে। করোনার শুরুতে গত বছর মার্চের দিকে কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হয়। করোনার উৎসস্থল চীনের অনেক জনবল এখানে কর্মরত। এতে তারাই বেশি শঙ্কিত থাকায় কিছুদিন কাজ বন্ধ রাখা হলেও পরে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার শর্তে তারা কাজে ফিরে আসেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই প্রকল্পের কাজ চলছে। শ্রমিকরাও সব নিয়ম অনুসরণ করছেন।
একই গতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পটিতে করোনার ধাক্কা লাগে গত বছরের শুরুতে। তবে এখন আর সেই বাধা নেই। প্রকল্প পরিচালক ফখরুদ্দিন এ চৌধুরী জানান, গত বছরই স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা হয় গোটা প্রকল্প এলাকা। এটির কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে বলে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সেতু উদ্বোধনের দিনই এতে রেলও চালানোর টার্গেট রয়েছে। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়েই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এ দুটো প্রকল্পের পর অন্যতম আলোচিত প্রকল্প হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল। এখানেও করোনার ছোবল ছিল। কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই কাজ চলছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের। যদিও এখানে চার শতাধিক কর্মীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবুুও থামেনি কাজ। নিয়মিত স্ক্রিনিং, টেস্ট এবং আবাসনের ব্যবস্থা করে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়লে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রকল্প কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এতে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখন প্রতিদিন ১০০ জন কর্মীর কভিড-১৯ টেস্ট করানো হচ্ছে। পজিটিভ এলে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়। আক্রান্ত কর্মীদের মধ্যে এখনও সে রকম অসুস্থতা দেখা দেয়নি। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিতে এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২১ দিন পর পুনরায় টেস্ট করে নেগেটিভ এলে তাদের কাজে যোগদান করানো হচ্ছে। কাজ চালু রাখতে প্রকল্পের পাশেই ৪০০ জনের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাইরে গেলে শ্রমিকরা করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। এজন্য এখানেই তাদের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিকুঞ্জ খালের পাশে প্রকল্পের জায়গায় আরও ৪০০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কাওলা এলাকায় আরও ৪ হাজার কর্মীর থাকার জন্য আরেকটি আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকল্প কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলেও প্রকল্পের কাজ এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের প্রায় ১৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার জমির ওপর নির্মিত হবে এই থার্ড টার্মিনাল। প্রকল্পের কাজ পেয়েছে মিৎসুবিশি, ফুজিতা ও স্যামসাং কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)।
এসব প্রকল্পের মধ্যে এখন সবার নজর কেড়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রতিদিনই একটু একটু করে হতে হতে এখন আশার আলোয় পূর্ণ। নগরবাসী এখন উন্মুখ হয়ে আছেন কবেনাগাদ এটা চালু করা হয় সেটা দেখার জন্য। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পের জন্য ৬টি বগি (ট্রেন) এরইমধ্যে দেশে পৌঁছে বসেছে রেলট্র্যাকে। এখন চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আরও ছয় সেট ট্রেন বাংলাদেশের উদ্দেশে জাপান ছেড়েছে। বগির দ্বিতীয় চালান আাগামী ১৬ জুনের মধ্যে মোংলা বন্দর হয়ে উত্তরার ডিপোতে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেল কোচ (রোলিং স্টক ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ চলমান। জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। চলমান করোনা সঙ্কটেও বিশেষ উদ্যোগে থার্ড পার্টি ইন্সপেকশনের মাধ্যমে প্রথম মেট্রো ট্রেনসেট দেশে পৌঁছে গেছে। তৃতীয় এবং চতুর্থ মেট্রা ট্রেনসেটের শিপমেন্টের সম্ভাব্য তারিখ ২০২১ সালের ১১ জুন এবং বাংলাদেশে পৌঁছানোর সম্ভাব্য তারিখ ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট। ৫ম ট্রেন সেট বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর পর্যায়ক্রমে ইনটিগ্রেটেডে টেস্ট শুরু হবে। এর পরে শুরু হবে ট্রায়াল রান। এ প্যাকেজের বাস্তব অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এ বিষয়ে প্রজেক্ট ম্যানেজার-সিপি-৮ (উপ-সচিব) এবিএম আরিফুর রহমান বলেন, ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেনসেট জাপান থেকে বাংলাদেশের পথে রওয়ানা হয়েছে। আশা করছি ১৬ জুনের মধ্যেই এগুলো দিয়াবাড়ির ডিপোতে পৌঁছবে। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫শ’ ভোল্টেজ বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে। স্টেইনলেস স্টিল বডির ট্রেনগুলোয় থাকবে লম্বালম্বি সিট। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে দু’টি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বগির দুই পাশে থাকবে চারটি করে দরজা। জাপানী স্ট্যান্ডার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১ হাজার ৭৩৮ জন। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্টকার্ড টিকেটিং ব্যবস্থা। মেট্রোরেলে ২৪টি ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় আপ ও ডাউন রুটে ৬০ হাজার যাত্রী আনা নেয়া করতে সক্ষম হবে। কারণ অধিকাংশ মানুষ বসার চেয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রমণে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে বলে দাবি করছে ডিএমটিসিএল।
উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত দেখা যায়, কর্মব্যস্ত শ্রমিকদের। মাথায় হেলমেট, হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক আর বিশেষ ড্রেস পরিহিত অবস্থায় কর্মব্যস্ত শ্রমিক কর্মচারী ও দক্ষ প্রকৌশলীদের। তারা নির্বিঘেœ নিরাপদেই আপন মনে কাজ করছেন। এ বিষয়ে প্রকল্পের শীর্ষ কর্মকর্তা এন এম সিদ্দিক জানান, করোনায়ও কাজ হচ্ছে। কোন কিছুই থেমে নেই। হয়তো কিছু অস্থায়ী শ্রমিক এ সময় বাড়ি গেছেন বলে কয়েকটি পয়েন্টে কাজের গতি সামান্য ধীর ছিল। দু’একদিন পর তাও পুরোদমে চলবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের প্রথম দিনে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেলের বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন ও রেল ট্র্যাক বসানোর কাজের সূচনা করেন- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেদিন তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশন হবে এবং মেট্রোরেল ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের জুনে। শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। বহুল আলোচিত ও স্বপ্নের এই মেট্রোরেল চালু হলে সুবিধা পাবেন ঢাকার বিপুল জনগোষ্ঠী।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রকল্পের কর্মীদের এখন শুরুতেই ১১টি প্রশ্নের মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। এরপর করোনা পরীক্ষা এবং আইসোলেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উত্তরায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আইসোলেশন সেন্টার আছে। সেখানে দুই শতাধিক কর্মীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমডি এম এ এন সিদ্দিক বলেন, এই প্রকল্পে করোনায় আক্রান্ত তাদের কেউ গুরুতর অসুস্থ হননি। এরপরও পরামর্শক, ঠিকাদার ও কর্মী সবার মধ্যে আস্থা ফেরাতে সব রকম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য কাজ চলছে যথারীতি।
রেলসূত্র জানায়, চট্টগ্রাম দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পও দ্রুত চলছে। করোনায়ও নিরাপদে রয়েছেন এখানকার সংশ্লিষ্ট নির্মাণ শ্রমিক ও প্রকৌশলসহ অন্যরা। যেভাবে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়েই শেষ করা যাবে বলে জানিয়েছে রেলসূত্র। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, ২০১০ সালে শুরু হয়েছে এ প্রকল্পের কাজ। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।
দেশের প্রথম টানেল নির্মিত হচেছ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে। বঙ্গবন্ধু টানেল নামের এই নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলছে করোনা উপেক্ষা করে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দেশীবিদেশী প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের মনোযোগ দিয়েই কাজ করছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ। তিনি জানান, বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির মাঝেও বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কাজ একদিনের জন্যও থামেনি। এ প্রকল্পের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে চীনের একঝাঁক বিশেষজ্ঞ। এছাড়া সিঙ্গাপুর, ইতালি, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু বিশেষজ্ঞও কাজ করছেন এই প্রকল্পে। এই প্রকল্পে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ২১৯ চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এছাড়া দেশীয় কর্মকর্তা ও শ্রমিক রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ’। সবকিছু ঠিকঠাক মতো এগিয়ে গেলেও আগামী ২০২২ সাল নাগাদ এ টানেল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ টানেল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। অবশিষ্ট টাকা দেবে সরকার। এই টানেলের জন্য সেগমেন্ট তৈরি হচ্ছে চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জিংজিয়াং শহরে। এই টানেলে মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। নদীর তলদেশ দিয়ে যে প্রধান অংশটি হবে তার দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় ৭৪০ মিটার সেতুর পাশে ৪ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার সড়কও নির্মিত হচ্ছে। চীনের সাংহাই শহরের আদলে এই টানেল চালু হওয়ার পর বন্দর নগরী চট্টগ্রাম হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা পয়েন্ট ও কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা পয়েন্ট যুক্ত হবে এই টানেলের মাধ্যমে।