ঢাকা ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
গাজীপুরে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি’র বাড়িতে ডাকতি! মঠবাড়ীয়া যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে মনে হচ্ছে আমরা মানুষ চিনতে ভুল করেছি’ বৃষ্টি নামলেই বেহাল ঢাকার সড়কগুলো, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ গাজা উপত্যকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত এলাকা ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক প্রবাসীর গাড়িতে ডাকাতি, ধাওয়া দেওয়ায় পুলিশকে এলোপাতাড়ি গুলি ৮২ শতাংশ জুলাই আহত বিষণ্নতায় ভুগছে মোংলায় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক কাউন্সিলর ও আন্তজেলা চোরচক্রের হোতা রাজ্জাক গণপিটুনিতে আহত হয়ে মৃত্যু বিএমপি গোয়েন্দা শাখার অভিযানে ৯০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ আটক ০২ জন

হাসিনার বিচার শেষ হবে কবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা:
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • / ৫ ১৫০.০০০ বার পাঠক

শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন টিম। জুলাই–অগাস্টের আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় এখন আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোন মামলায় বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মামলাটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও দুজন অভিযুক্ত রয়েছেন।

তারা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, আমরা আশা করছি, সামনে যে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে, তার আগেই আমরা ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ জমা দিতে সক্ষম হবো।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট – ১৯৭৩ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলেন তামীম।

ফলে ঈদের আগেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইয়ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে বলে জানান এই প্রসিকিউটর।

তদন্ত শেষ করে গত ১২ই মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলার বিচার কবে শেষ হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তামীম।

যদিও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার কবে শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচার শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা।

যেভাবে চলবে বিচার প্রক্রিয়া

জুলাইয়ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার জমা দেওয়া পাঁচটি অভিযোগই চূড়ান্ত করেছে প্রসিকিউশন।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুমানিক ৫০ জন সাক্ষী দিতে পারেন। প্রসিকিউটর তামীম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলাটিতে শেখ হাসিনাকে জুলাই–অগাস্ট আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সপ্তাহ দেড়েক আগে এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, জুলাইয়ে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘উস্কানিদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্ররোচনা, উস্কানি দেওয়া, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার অভিযোগও আনা হয়েছে।

তবে প্রসিকিউশন পক্ষ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার পর ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী আইনি ধাপে অগ্রসর হবে।

প্রসিকিউটর তামীম জানান, যেহেতু এ মামলার দুজন অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক, তাই এখন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেওয়া হবে।

মামলায় আরেক অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতার রয়েছেন।

তামীম বলেন, প্রথমে অভিযুক্তদের যারা পলাতক তাদেরকে ট্রাইব্যুনালের হাজির করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত দুটি জাতীয় পত্রিকায় তাদের হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হবে।

এরপর তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তাদের পলাতক ঘোষণা করা হবে।

এ পর্যায়ে পলাতকদের প্রত্যেকের পক্ষে রাষ্ট্র একজন আইনজীবী নিয়োগ করবে। যিনি স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল হিসেবে পরিচিত হবেন।

তামীম বলেন, এরপরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে। অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য ও জেরা, যুক্তি-তর্ক এরপর রায় ঘোষণা করা হয়।

আইনানুযায়ী এখন এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল সাক্ষ্য – প্রমাণ দেওয়া যাবে।

সে কারণে প্রসিকিউশন অডিও রেকর্ড এবং ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করবে বলে জানান তামীম।

ট্রাইব্যুনালের এই প্রসিকিউটর জানান, প্রথম অভিযোগের স্বপক্ষে ডিজিটাল সাক্ষ্য – প্রমাণ হিসেবে গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা যে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতি’ বলেছিলেন সেই ভিডিও উপস্থাপন করা হবে ট্রাইব্যুনালে।

এর আগে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার এভাবে রাজাকার বলার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘লেলিয়ে দেওয়া’ হয়েছিল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বিতীয় অভিযোগে ‘সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার’ অভিযোগও রয়েছে শেখ হাসিনাসহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।

তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুলি করে আহত করা, অঙ্গহানি করার ক্ষেত্রে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

প্রসিকিউটররা জানান, এসব নির্দেশের ‘টেলিফোনিক কনভারসেশন’ ডিজিটাল সাক্ষ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।

প্রসিকিউটর তামীম জানান, শেখ হাসিনার কথোপকথনের দুইটি অডিও রেকর্ড এবং জুলাই – অগাস্টে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনাগুলোর ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৫ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আগামী সপ্তাহে এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে। এর আগে একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

বাকি ২৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর তামীম।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যে অবস্থা

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

সে সময়ের ৩০টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে ট্রাইব্যুনালে। বেশিরভাগ মামলাই বিচারের শেষ ধাপ যুক্তি-তর্ক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর তামীম।

এসব মামলায় ২১৩ জন আসামি যাদের মধ্যে ৫৫ জনই মারা গেছেন। তবে এখন এসব মামলার বিচার কার্যক্রম অনেকটা থমকে রয়েছে।

এর কারণ হিসেবে তামীম জানান, আমরা সময় আবেদন করছি এখন কারণ গণ অভ্যুত্থানের পরে ট্রাইব্যুনালের এসব মামলার কোন নথিপত্র পাওয়া যায়নি। আগের প্রসিকিউটররা বাসস্থান থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার বিচার শেষ কবে?

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার শেষ হতে আনুমানিক কত দিন সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তামীম।

তামীম বলেন, ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করাটা প্রসিকিউশনের দায়িত্ব। বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা, বিচার প্রক্রিয়ার সময় এটা অ্যাবসলিউটলি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের এখতিয়ার। সে ব্যাপারে প্রসিকিউশন কোনো সময় নির্ধারণ করে বলে দিতে পারবে না।

তবে ফেসবুকে আইন উপদেষ্টা গত সোমবার শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এর আগের দিন রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।

সে বিষয়গুলো উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেটি বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল।

শেখ হাসিনার বিচার শেষ হতে কত দিন সময় লাগবে সেই বিষয়টি স্ট্যাটাসে লিখলেও সুস্পষ্ট করেননি নজরুল।

তিনি লিখেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার বিচারের শুনানী পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাল্লাহ্, ড. ইউনূস স্যারের সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় পেয়ে যাবো আমরা।

এছাড়া গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার বলে উল্লেখ করেছেন আসিফ নজরুল।

একইসঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শুনানি শুরু করার ক্ষেত্রে এর চেয়ে দ্রুততর কোনো নজির বাংলাদেশে নেই বলেও ওই পোস্টে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা।

সূত্র: বিবিসি

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

হাসিনার বিচার শেষ হবে কবে?

আপডেট টাইম : ০৬:০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন টিম। জুলাই–অগাস্টের আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় এখন আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোন মামলায় বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। মামলাটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও দুজন অভিযুক্ত রয়েছেন।

তারা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, আমরা আশা করছি, সামনে যে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে, তার আগেই আমরা ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ জমা দিতে সক্ষম হবো।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট – ১৯৭৩ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলেন তামীম।

ফলে ঈদের আগেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইয়ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে বলে জানান এই প্রসিকিউটর।

তদন্ত শেষ করে গত ১২ই মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলার বিচার কবে শেষ হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তামীম।

যদিও আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিচার কবে শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এই বিচার শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা।

যেভাবে চলবে বিচার প্রক্রিয়া

জুলাইয়ে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার জমা দেওয়া পাঁচটি অভিযোগই চূড়ান্ত করেছে প্রসিকিউশন।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুমানিক ৫০ জন সাক্ষী দিতে পারেন। প্রসিকিউটর তামীম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলাটিতে শেখ হাসিনাকে জুলাই–অগাস্ট আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সপ্তাহ দেড়েক আগে এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, জুলাইয়ে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘উস্কানিদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্ররোচনা, উস্কানি দেওয়া, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার অভিযোগও আনা হয়েছে।

তবে প্রসিকিউশন পক্ষ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার পর ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী আইনি ধাপে অগ্রসর হবে।

প্রসিকিউটর তামীম জানান, যেহেতু এ মামলার দুজন অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক, তাই এখন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেওয়া হবে।

মামলায় আরেক অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতার রয়েছেন।

তামীম বলেন, প্রথমে অভিযুক্তদের যারা পলাতক তাদেরকে ট্রাইব্যুনালের হাজির করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত দুটি জাতীয় পত্রিকায় তাদের হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হবে।

এরপর তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তাদের পলাতক ঘোষণা করা হবে।

এ পর্যায়ে পলাতকদের প্রত্যেকের পক্ষে রাষ্ট্র একজন আইনজীবী নিয়োগ করবে। যিনি স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল হিসেবে পরিচিত হবেন।

তামীম বলেন, এরপরই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে। অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য ও জেরা, যুক্তি-তর্ক এরপর রায় ঘোষণা করা হয়।

আইনানুযায়ী এখন এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল সাক্ষ্য – প্রমাণ দেওয়া যাবে।

সে কারণে প্রসিকিউশন অডিও রেকর্ড এবং ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করবে বলে জানান তামীম।

ট্রাইব্যুনালের এই প্রসিকিউটর জানান, প্রথম অভিযোগের স্বপক্ষে ডিজিটাল সাক্ষ্য – প্রমাণ হিসেবে গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা যে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতি’ বলেছিলেন সেই ভিডিও উপস্থাপন করা হবে ট্রাইব্যুনালে।

এর আগে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার এভাবে রাজাকার বলার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘লেলিয়ে দেওয়া’ হয়েছিল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বিতীয় অভিযোগে ‘সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার’ অভিযোগও রয়েছে শেখ হাসিনাসহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।

তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুলি করে আহত করা, অঙ্গহানি করার ক্ষেত্রে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

প্রসিকিউটররা জানান, এসব নির্দেশের ‘টেলিফোনিক কনভারসেশন’ ডিজিটাল সাক্ষ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।

প্রসিকিউটর তামীম জানান, শেখ হাসিনার কথোপকথনের দুইটি অডিও রেকর্ড এবং জুলাই – অগাস্টে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনাগুলোর ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৫ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আগামী সপ্তাহে এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে। এর আগে একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

বাকি ২৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর তামীম।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যে অবস্থা

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

সে সময়ের ৩০টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে ট্রাইব্যুনালে। বেশিরভাগ মামলাই বিচারের শেষ ধাপ যুক্তি-তর্ক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর তামীম।

এসব মামলায় ২১৩ জন আসামি যাদের মধ্যে ৫৫ জনই মারা গেছেন। তবে এখন এসব মামলার বিচার কার্যক্রম অনেকটা থমকে রয়েছে।

এর কারণ হিসেবে তামীম জানান, আমরা সময় আবেদন করছি এখন কারণ গণ অভ্যুত্থানের পরে ট্রাইব্যুনালের এসব মামলার কোন নথিপত্র পাওয়া যায়নি। আগের প্রসিকিউটররা বাসস্থান থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার বিচার শেষ কবে?

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচার শেষ হতে আনুমানিক কত দিন সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তামীম।

তামীম বলেন, ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করাটা প্রসিকিউশনের দায়িত্ব। বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা, বিচার প্রক্রিয়ার সময় এটা অ্যাবসলিউটলি ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের এখতিয়ার। সে ব্যাপারে প্রসিকিউশন কোনো সময় নির্ধারণ করে বলে দিতে পারবে না।

তবে ফেসবুকে আইন উপদেষ্টা গত সোমবার শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এর আগের দিন রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।

সে বিষয়গুলো উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে একটি বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেটি বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল।

শেখ হাসিনার বিচার শেষ হতে কত দিন সময় লাগবে সেই বিষয়টি স্ট্যাটাসে লিখলেও সুস্পষ্ট করেননি নজরুল।

তিনি লিখেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার বিচারের শুনানী পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাল্লাহ্, ড. ইউনূস স্যারের সরকারের শাসনামলেই এই বিচারের রায় পেয়ে যাবো আমরা।

এছাড়া গণহত্যার বিচার, আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার বলে উল্লেখ করেছেন আসিফ নজরুল।

একইসঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শুনানি শুরু করার ক্ষেত্রে এর চেয়ে দ্রুততর কোনো নজির বাংলাদেশে নেই বলেও ওই পোস্টে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা।

সূত্র: বিবিসি