ঢাকা ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

পাসপোর্ট অফিসে দালালের দুষ্টচক্র বাংলার আনাছে-কানাছে ছেয়ে গিয়েছে ট্র্যাভেল এজেন্সির

  • সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৭:০২:০২ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল ২০২১
  • ৩০২ ০.০০০ বার পাঠক

বিভাগীয় প্রতিনিধি চট্টগ্রাম।।

চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম দুর্নীতির কিছু কথা,
কয়েক বছর ধরে বাড়ির পাশে একটি কোচিং সেন্টার চালাচ্ছিলেন জিয়াউদ্দিন। তবে করোনাকালীন দীর্ঘদিন বেকার থাকায় কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা ওই যুবক। এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ওমানের একটি দোকানে চাকরির কথাবার্তাও হয় তার। এরপর জরুরিভিত্তিতে পাসপোর্ট তৈরি করাতে অনলাইনে ফরম পূরণ করতে যান শহরের মনসুরাবাদের বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে। তবে দালাল ছাড়া ঐ অফিসে আসায় এই ফরম সে সময় আর জমা দিতে পারেন নি তিনি।
দালালের শরণাপন্ন না হয়ে পাসপোর্ট করতে আসা এই যুবককে দায়িত্বরত উচ্চমান অফিস সহকারী প্রথমে জানান, তার মায়ের ছবি স্পষ্ট না। আবার বলেন, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটের আসল কপি লাগবে। আবার বলা হয় ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে তার ছবির তেমন মিল না থাকায় কাজ হবে না, বিভিন্ন অজুহাতের পর কি করব বুঝতে পারছিলাম না পরশেষ পর্যন্ত সেখানে কর্তব্যরত এক আনসার সদস্যকে ১ হাজার টাকা দিয়েই সেদিন কোনোরকমে ফরম জমা দেন তিনি।

এভাবে নগরীর মনসুরাবাদে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে চলছে নিয়মিত গ্রাহক হয়রানিও চক্কর বাজি দালাল ছাড়া এখানে সহজেই মিলছে না পাসপোর্ট সেবা।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পার্শ্ববর্তী কম্পিউটার দোকান উচ্ছেদ,সহ কিছুু দালালকে আটক করে পুলিশে দেয়া, অভিযোগ বক্স রেখে প্রধান পরিচালকের নজরদারি, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিংসহ নানা উদ্যোগের পরও এখানে থামছে না দালালদের দৌরাত্ম্যতম হয়রানি,
গত বছরের নভেম্বরে ছুটিতে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছিলেন ফটিকছড়ির পাইন্দংয়ের বাসিন্দা লোকমান হোসেন। দেশে এসে পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নবায়ন করার জন্য দালাল ছাড়াই গিয়েছেন মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে। তবে সেখানে গিয়ে ২নং কাউন্টারে ফরম দেয়া অফিসার জানালেন, তার ভোটার আইডি কার্ডে ‘হোসাইন’ লেখা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টে হোসেন লেখা আছে। তাই এই পাসপোর্ট মেয়াদ বাড়ানোর আগে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করাতে হবে। যদিও পরে পরিচিত এক ট্র্যাভেল এজেন্সির লোককে ফোন দিয়ে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দিয়ে ওই পাসপোর্ট জমা দেন তিনি।
ভুক্তভোগী এই প্রবাসী বলেন, ‘৫ বছর আগে প্রথমবার নিজের এলাকার এক দালালের মাধ্যমে এই পাসপোর্ট করাই। আগে তো এই আইডি কার্ড দিয়েই সব হয়েছিল। এখন কেন আবার সমস্যা হবে। আর পাসপোর্ট করতে কেন আবার ভোটার আইডি কার্ড লাগবে। আসল ব্যাপার হচ্ছে। এসব করে নিরিহ পাবলিকদের

দালালের কাছে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।’সবকিছুই মনে হচ্ছে অফিস স্টাফদের চালাকি,বিস্বাস্থ শুত্রে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গ্রাহক হয়রানি সংস্কৃতির পেছনে অন্যতম দায়ী হচ্ছে এখানকার কয়েক হাজার ট্র্যাভেল এজেন্সি। নিবন্ধিত- অনিবন্ধিত এইসব এজেন্সির আয়ের বড় অংশ আসে পাসপোর্ট অফিস থেকে। এই ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে করলে প্রতি পাসপোর্ট বাবদ ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বেশি গুনতে হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক নগরীর মুরাদপুর মোড়ের এক ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক সাংবাদিক দের জানান, একটি পাসপোর্ট করাতে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা নেন। এর মধ্যে ১০০০ টাকা দিতে হয় পাসপোর্ট অফিসে। ৫০০ টাকা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিএসবি শাখাকে ভেরিফিকেশনের জন্য দেন। সবশেষে বাকি যা আছে তা তাদের লাভ।
এদিকে দালালের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে মনসুরাবাগ পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাঈদ জানান, বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কারণে বর্তমানে এখানে দালাল নেই বললেই চলে। তবে মাঝেমধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যাপার হয়। আর সেটাও মানুষের অসচেতনতার কারণে হচ্ছে। পাশাপাশি জনবল সংকট এবং বর্তমানে শুরু হওয়া ই-পাসপোর্ট মেশিনের মাঝেমধ্যে সৃষ্ট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও মানুষকে মাঝেমধ্যে কষ্ট পেতে হচ্ছে বলে জানান বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

আরো খবর.......

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রচন্ড খড়া রোদে ডিএমপি কমিশনারের স্বস্থির উদ্যোগ

পাসপোর্ট অফিসে দালালের দুষ্টচক্র বাংলার আনাছে-কানাছে ছেয়ে গিয়েছে ট্র্যাভেল এজেন্সির

আপডেট টাইম : ০৭:০২:০২ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল ২০২১

বিভাগীয় প্রতিনিধি চট্টগ্রাম।।

চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম দুর্নীতির কিছু কথা,
কয়েক বছর ধরে বাড়ির পাশে একটি কোচিং সেন্টার চালাচ্ছিলেন জিয়াউদ্দিন। তবে করোনাকালীন দীর্ঘদিন বেকার থাকায় কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাসিন্দা ওই যুবক। এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে ওমানের একটি দোকানে চাকরির কথাবার্তাও হয় তার। এরপর জরুরিভিত্তিতে পাসপোর্ট তৈরি করাতে অনলাইনে ফরম পূরণ করতে যান শহরের মনসুরাবাদের বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে। তবে দালাল ছাড়া ঐ অফিসে আসায় এই ফরম সে সময় আর জমা দিতে পারেন নি তিনি।
দালালের শরণাপন্ন না হয়ে পাসপোর্ট করতে আসা এই যুবককে দায়িত্বরত উচ্চমান অফিস সহকারী প্রথমে জানান, তার মায়ের ছবি স্পষ্ট না। আবার বলেন, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটের আসল কপি লাগবে। আবার বলা হয় ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে তার ছবির তেমন মিল না থাকায় কাজ হবে না, বিভিন্ন অজুহাতের পর কি করব বুঝতে পারছিলাম না পরশেষ পর্যন্ত সেখানে কর্তব্যরত এক আনসার সদস্যকে ১ হাজার টাকা দিয়েই সেদিন কোনোরকমে ফরম জমা দেন তিনি।

এভাবে নগরীর মনসুরাবাদে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে চলছে নিয়মিত গ্রাহক হয়রানিও চক্কর বাজি দালাল ছাড়া এখানে সহজেই মিলছে না পাসপোর্ট সেবা।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পার্শ্ববর্তী কম্পিউটার দোকান উচ্ছেদ,সহ কিছুু দালালকে আটক করে পুলিশে দেয়া, অভিযোগ বক্স রেখে প্রধান পরিচালকের নজরদারি, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিংসহ নানা উদ্যোগের পরও এখানে থামছে না দালালদের দৌরাত্ম্যতম হয়রানি,
গত বছরের নভেম্বরে ছুটিতে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছিলেন ফটিকছড়ির পাইন্দংয়ের বাসিন্দা লোকমান হোসেন। দেশে এসে পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নবায়ন করার জন্য দালাল ছাড়াই গিয়েছেন মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে। তবে সেখানে গিয়ে ২নং কাউন্টারে ফরম দেয়া অফিসার জানালেন, তার ভোটার আইডি কার্ডে ‘হোসাইন’ লেখা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টে হোসেন লেখা আছে। তাই এই পাসপোর্ট মেয়াদ বাড়ানোর আগে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করাতে হবে। যদিও পরে পরিচিত এক ট্র্যাভেল এজেন্সির লোককে ফোন দিয়ে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা দিয়ে ওই পাসপোর্ট জমা দেন তিনি।
ভুক্তভোগী এই প্রবাসী বলেন, ‘৫ বছর আগে প্রথমবার নিজের এলাকার এক দালালের মাধ্যমে এই পাসপোর্ট করাই। আগে তো এই আইডি কার্ড দিয়েই সব হয়েছিল। এখন কেন আবার সমস্যা হবে। আর পাসপোর্ট করতে কেন আবার ভোটার আইডি কার্ড লাগবে। আসল ব্যাপার হচ্ছে। এসব করে নিরিহ পাবলিকদের

দালালের কাছে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।’সবকিছুই মনে হচ্ছে অফিস স্টাফদের চালাকি,বিস্বাস্থ শুত্রে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গ্রাহক হয়রানি সংস্কৃতির পেছনে অন্যতম দায়ী হচ্ছে এখানকার কয়েক হাজার ট্র্যাভেল এজেন্সি। নিবন্ধিত- অনিবন্ধিত এইসব এজেন্সির আয়ের বড় অংশ আসে পাসপোর্ট অফিস থেকে। এই ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে করলে প্রতি পাসপোর্ট বাবদ ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা বেশি গুনতে হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক নগরীর মুরাদপুর মোড়ের এক ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক সাংবাদিক দের জানান, একটি পাসপোর্ট করাতে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা নেন। এর মধ্যে ১০০০ টাকা দিতে হয় পাসপোর্ট অফিসে। ৫০০ টাকা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিএসবি শাখাকে ভেরিফিকেশনের জন্য দেন। সবশেষে বাকি যা আছে তা তাদের লাভ।
এদিকে দালালের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়ে মনসুরাবাগ পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাঈদ জানান, বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কারণে বর্তমানে এখানে দালাল নেই বললেই চলে। তবে মাঝেমধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যাপার হয়। আর সেটাও মানুষের অসচেতনতার কারণে হচ্ছে। পাশাপাশি জনবল সংকট এবং বর্তমানে শুরু হওয়া ই-পাসপোর্ট মেশিনের মাঝেমধ্যে সৃষ্ট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও মানুষকে মাঝেমধ্যে কষ্ট পেতে হচ্ছে বলে জানান বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।