ঢাকা ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ উদযাপন।পাহাড়পুরেও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান উদযাপন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও পাবনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আবু সাইয়িদসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে পাবনার বেড়া মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে ধামরাইয়ে আব্দুল হাই স্মরণে ১৫তম ঐতিহ্যবাহী রশিটান খেলা ও আনন্দ মেলা অনুষ্ঠিত আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই – সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সাব-রেজিস্টার প্রদীপের ঘুষ দুর্নীতির অনুসন্ধানে সময়ের কন্ঠ পত্রিকা বৈষম্যহীন দেশ গড়াই হোক নববর্ষের অঙ্গীকার: প্রধান উপদেষ্টা উৎসবের উল্লাসে শেষ হলো আনন্দ শোভাযাত্রা ভাঙ্গুড়ায় পল্লী পশু চিকিৎসক ও প্রবাসীর স্ত্রী পরকীয়ায় ধরা ভোলালর চরফ্যাসনে মৎস্য অফিসের অফিস সহকারীর আলিশান বাড়ি,গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ টঙ্গীর বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামি আদালত এলাকায় জনরোষ থেকে নিরাপত্তা হেফাজতে!

আরবদের হটিয়ে যেভাবে ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল

আন্তর্জাতিক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ০১:০৪:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৬ ৫০০০.০ বার পাঠক

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকা। এখানে ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদিরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল। ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনি আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল। সে সময় মুসলমান এবং ইহুদিদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তবে ১৯৩০’র দশকে ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পারলো যে, তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে। ইহুদিরা দলে-দলে সেখানে আসে এবং জমি ক্রয় করতে থাকে।

ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়। তারা ভেবেছিল দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হলে তারা বাড়ি ফিরতে পারবে। কিন্তু ইসরাইল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি।

ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বছর দশেক আগে বিবিসি’র এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনদের কেন এই দশা হলো, সেজন্য তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত।

পেরেজ বলেন, অধিকাংশ ভূমি ফিলিস্তিনিদের হাতেই থাকতো। তাদের একটি আলাদা রাষ্ট্র হতো। কিন্তু তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা ভুল করেছে। আমরা কোনো ভুল করিনি। তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইবো?

১৮৯৭ সাল থেকেই ইহুদিরা চেয়েছিল নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। ১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে উসমানীয় (তুর্কি) সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে নেয় ব্রিটেন।

তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে। ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটসচাইল্ডকে।

তৎকালীন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সে চিঠি ‘বেলফোর ডিক্লারেশন’ হিসেবে পরিচিত। ইহুদিদের কাছে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ফিলিস্তিনের জমিতে তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ করে দেবে। যদিও রোমান আধিপত্যের সময় থেকে ইহুদিদের ছোট্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সেই জায়গায় বসবাস করতো। ইউরোপে ইহুদিদের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, সেটি তাদের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের ভাবনাকে আরও তরান্বিত করে।

১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন।এদিকে ইতোমধ্যেই জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আসতে থাকে। তখন ফিলিস্তিনি আরবরা বুঝতে পারে যে, তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

ফিলিস্তিনি আরবরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্রোহ করে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্য এবং ইহুদি নাগরিকরা। কিন্তু আরবদের সে বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।

ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্রিটিশ সৈন্যরা এতোটাই কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল যে, আরব সমাজে ভাঙন তৈরি হয়েছিল। বিপরীতে ইহুদিরা তাদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনে বদ্ধপরিকর ছিল। ব্রিটেনের সহায়তায় সে অনুযায়ী তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল।

১৯৩০’র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে। সেজন্য আরব এবং ইহুদি- দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছে ব্রিটেন।

১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি ব্রিটেনের সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছিল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পঁচাত্তর হাজার ইহুদি অভিবাসী আসবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে। অর্থাৎ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছিল।

ব্রিটেনের এ ধরনের পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নেয়নি ইহুদিরা। তারা একই সঙ্গে ব্রিটেন এবং হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনা করে। তখন ৩২ হাজার ইহুদি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। সেখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ইহুদি সৈন্যরা ব্রিটেন এবং আরবদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের বাহিনীর দ্বারা লাখ-লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের পর নতুন আরেক বাস্তবতা তৈরি হয়।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর যেসব ইহুদি বেঁচে ছিলেন, তাদের জন্য জন্য কী করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তখন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা আরও জোরালো হয়।

আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইসরাইল রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। ট্রুম্যান চেয়েছিলেন হিটলারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এক লাখ ইহুদিকে অতি দ্রুত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জায়গা দেওয়া হোক। কিন্তু ব্রিটেন বুঝতে পারছিল যে, এতো বিপুল সংখ্যক ইহুদিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে সেখানে গৃহযুদ্ধ হবে।

এ সময় ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ সৈন্যদের ওপর ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো শুরু করে। অন্যদিকে ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে জাহাজে বোঝাই হয়ে আসা হাজার-হাজার ইহুদিদের বাধা দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি।

ইহুদি সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ বাহিনীর ওপর তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি করা, যাতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সমাধানের জন্য ব্রিটেনের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এরপর বাধ্য হয়ে ব্রিটেন বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়।

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে দু’টি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য।

ওই সময় ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেওয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। কিন্তু আরবদের জনসংখ্যা এবং জমির মালিকানা ছিল ইহুদিদের দ্বিগুণ। স্বাভাবিকভাবেই আরবরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।

কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে তখন ইহুদিরা বিজয় উল্লাস শুরু করে। অবশেষে ইহুদিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেল। কিন্তু আরবরা অনুধাবন করেছিল যে, কূটনীতি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের পর আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। তখন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছেড়ে যাবার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যরা দিন গণনা করছিল। তখন ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। ওই সময়েই তাদের গোপন অস্ত্র কারখানাও ছিল। কিন্তু ইহুদিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল তাদের বিচক্ষণ নেতৃত্ব।

বিপরীতে আরবদের কোনো নেতৃত্বই ছিল না। ইহুদিরা বুঝতে পেরেছিল যে, নতুন রাষ্ট্র গঠনের পর আরবরা তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। তাই সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল ইহুদিরা।

সবার দৃষ্টি ছিল জেরুজালেম শহরের দিকে। মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জন্য পবিত্র জায়গা এটি। জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, সেখানে জেরুজালেম আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আরব কিংবা ইহুদি- কোনো পক্ষই সেটি মেনে নেয়নি। ফলে জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

জেরুজালেমে বসবাসরত ইহুদিদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আরবরা। এতে অন্য জায়গাগুলোর সঙ্গে জেরুজালেমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ইহুদিরা আরবদের ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

অনেক বিশ্লেষক বলেন, তখন ইহুদিরা আরবদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। যেহেতু আরবদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না, সেজন্য ইহুদিরা একের পর এক কৌশলগত জায়গা দখল করে নেয়।

তখন ফিলিস্তিনের একজন নেতা আল-হুসেইনি সিরিয়া গিয়েছিলেন অস্ত্র সহায়তার জন্য। কিন্তু সিরিয়া সরকার ফিলিস্তিনিদের সে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে সেখান থেকে ফিরে এসে আল হুসেইনি আবারও যুদ্ধে নামেন। এর কয়েকদিন পরেই তিনি নিহত হন।

ইহুদিরা যখন তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ইহুদি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নৃশংসতা আরবদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দলগুলো ইহুদিদের ওপর কয়েকটি আক্রমণ চালায়। কিন্তু ইহুদিদের ক্রমাগত এবং জোরালো হামলার মুখে ভেঙে পড়তে শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং অন্য আরব দেশগুলোর সরকার তাদের নিজ দেশের ভেতরে চাপে পড়ে যায়।সেসব দেশের জনগণ চেয়েছিল, যাতে ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় তারা এগিয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। একই দিন তৎকালীন ইহুদি নেতারা ঘোষণা করেন যে, সেদিন রাতেই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হবে।

ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই আরবরা আক্রমণ শুরু করে। একসঙ্গে পাঁচটি আরব দেশ ইসরাইলকে আক্রমণ করে।

যেসব দেশ একযোগে ইসরাইলকে আক্রমণ করেছিল তারা হচ্ছে – মিশর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া। তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো। অন্যদিকে ইসরাইলের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু আরব দেশগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় ছিলনা। তাছাড়া আরব নেতৃত্ব একে অপরকে বিশ্বাস করতো না।

তবুও জেরুজালেম দখলের জন্য আরব এবং ইসরাইলের মধ্যে তীব্র লড়াই চলে।ইহুদিরা ভাবছিল, জেরুজালেম ছাড়া ইহুদি রাষ্ট্রের কোনো অর্থ নেই। অন্যদিকে মুসলমানদের জন্যও জেরুজালেম পবিত্র জায়গা। তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ইসরাইলি বাহিনী পিছু হটতে থাকে। তাদের অস্ত্রের মজুত শেষ হয়ে যায়। সম্ভাব্য পরাজয় আঁচ করতে পেরে ইহুদিরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সময় নেয়।

এ সময় আর কিছুদূর অগ্রসর হলেই মিশরীয় বাহিনী তেলআবিবের দিকে অগ্রসর হতে পারতো। তখন জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

এ যুদ্ধবিরতির সময় দু’পক্ষই শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু ইসরাইল বেশি সুবিধা পেয়েছিল। তখন চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রের চালান আসে ইসরাইলের হাতে।

যুদ্ধ বিরতী শেষ হলে নতুন করে আরবদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরাইলি বাহিনী। একর পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয় ইহুদিরা। তেলআবিব এবং জেরুজালেমের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।

জাতিসংঘের মাধ্যমে আরেকটি যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সে সংঘাত থামে। ইসরাইলি বাহিনী বুঝতে পরে তারা স্বাধীনতা লাভ করছে ঠিকই কিন্তু লড়াই এখনো থামেনি। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ছয় হাজার ইহুদি নিহত হয়েছিল।

ইহুদিরা মনে করে তারা যদি সে যুদ্ধে পরাজিত হতো তাহলে আরবরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতো।

ইসরাইলিরা মনে করেন ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ সেভাবে দুটি দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটি যদি ফিলিস্তিনিরা মেনে নিতো তাহলে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল নামের দুটি দেশ এখন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতো।

আরব দেশগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থা না থাকার কারণেই ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে এবং ইসরাইল দেশটির জন্ম হয়ে সেটি স্থায়ী হতে পেরেছে। অনেক ঐতিহাসিক বিষয়টিকে এভাবেই দেখেন।

১৯৪৮ সালের পর থেকে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করে ইসরাইল। তারা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আরবদের হটিয়ে যেভাবে ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল

আপডেট টাইম : ০১:০৪:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকা। এখানে ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদিরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল। ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনি আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল। সে সময় মুসলমান এবং ইহুদিদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তবে ১৯৩০’র দশকে ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পারলো যে, তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে। ইহুদিরা দলে-দলে সেখানে আসে এবং জমি ক্রয় করতে থাকে।

ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়। তারা ভেবেছিল দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হলে তারা বাড়ি ফিরতে পারবে। কিন্তু ইসরাইল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি।

ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বছর দশেক আগে বিবিসি’র এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনদের কেন এই দশা হলো, সেজন্য তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত।

পেরেজ বলেন, অধিকাংশ ভূমি ফিলিস্তিনিদের হাতেই থাকতো। তাদের একটি আলাদা রাষ্ট্র হতো। কিন্তু তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা ভুল করেছে। আমরা কোনো ভুল করিনি। তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইবো?

১৮৯৭ সাল থেকেই ইহুদিরা চেয়েছিল নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। ১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে উসমানীয় (তুর্কি) সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে নেয় ব্রিটেন।

তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে। ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটসচাইল্ডকে।

তৎকালীন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সে চিঠি ‘বেলফোর ডিক্লারেশন’ হিসেবে পরিচিত। ইহুদিদের কাছে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ফিলিস্তিনের জমিতে তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ করে দেবে। যদিও রোমান আধিপত্যের সময় থেকে ইহুদিদের ছোট্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সেই জায়গায় বসবাস করতো। ইউরোপে ইহুদিদের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, সেটি তাদের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের ভাবনাকে আরও তরান্বিত করে।

১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন।এদিকে ইতোমধ্যেই জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আসতে থাকে। তখন ফিলিস্তিনি আরবরা বুঝতে পারে যে, তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

ফিলিস্তিনি আরবরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্রোহ করে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্য এবং ইহুদি নাগরিকরা। কিন্তু আরবদের সে বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।

ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্রিটিশ সৈন্যরা এতোটাই কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল যে, আরব সমাজে ভাঙন তৈরি হয়েছিল। বিপরীতে ইহুদিরা তাদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনে বদ্ধপরিকর ছিল। ব্রিটেনের সহায়তায় সে অনুযায়ী তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল।

১৯৩০’র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে। সেজন্য আরব এবং ইহুদি- দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছে ব্রিটেন।

১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি ব্রিটেনের সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছিল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পঁচাত্তর হাজার ইহুদি অভিবাসী আসবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে। অর্থাৎ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছিল।

ব্রিটেনের এ ধরনের পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নেয়নি ইহুদিরা। তারা একই সঙ্গে ব্রিটেন এবং হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনা করে। তখন ৩২ হাজার ইহুদি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। সেখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ইহুদি সৈন্যরা ব্রিটেন এবং আরবদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের বাহিনীর দ্বারা লাখ-লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের পর নতুন আরেক বাস্তবতা তৈরি হয়।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর যেসব ইহুদি বেঁচে ছিলেন, তাদের জন্য জন্য কী করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তখন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা আরও জোরালো হয়।

আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইসরাইল রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। ট্রুম্যান চেয়েছিলেন হিটলারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এক লাখ ইহুদিকে অতি দ্রুত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জায়গা দেওয়া হোক। কিন্তু ব্রিটেন বুঝতে পারছিল যে, এতো বিপুল সংখ্যক ইহুদিকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে সেখানে গৃহযুদ্ধ হবে।

এ সময় ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ সৈন্যদের ওপর ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো শুরু করে। অন্যদিকে ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে জাহাজে বোঝাই হয়ে আসা হাজার-হাজার ইহুদিদের বাধা দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি।

ইহুদি সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ বাহিনীর ওপর তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি করা, যাতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সমাধানের জন্য ব্রিটেনের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। এরপর বাধ্য হয়ে ব্রিটেন বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়।

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে দু’টি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য।

ওই সময় ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেওয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। কিন্তু আরবদের জনসংখ্যা এবং জমির মালিকানা ছিল ইহুদিদের দ্বিগুণ। স্বাভাবিকভাবেই আরবরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।

কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে তখন ইহুদিরা বিজয় উল্লাস শুরু করে। অবশেষে ইহুদিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেল। কিন্তু আরবরা অনুধাবন করেছিল যে, কূটনীতি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের পর আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। তখন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছেড়ে যাবার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যরা দিন গণনা করছিল। তখন ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। ওই সময়েই তাদের গোপন অস্ত্র কারখানাও ছিল। কিন্তু ইহুদিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল তাদের বিচক্ষণ নেতৃত্ব।

বিপরীতে আরবদের কোনো নেতৃত্বই ছিল না। ইহুদিরা বুঝতে পেরেছিল যে, নতুন রাষ্ট্র গঠনের পর আরবরা তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। তাই সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল ইহুদিরা।

সবার দৃষ্টি ছিল জেরুজালেম শহরের দিকে। মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জন্য পবিত্র জায়গা এটি। জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, সেখানে জেরুজালেম আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আরব কিংবা ইহুদি- কোনো পক্ষই সেটি মেনে নেয়নি। ফলে জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

জেরুজালেমে বসবাসরত ইহুদিদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আরবরা। এতে অন্য জায়গাগুলোর সঙ্গে জেরুজালেমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ইহুদিরা আরবদের ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

অনেক বিশ্লেষক বলেন, তখন ইহুদিরা আরবদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। যেহেতু আরবদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না, সেজন্য ইহুদিরা একের পর এক কৌশলগত জায়গা দখল করে নেয়।

তখন ফিলিস্তিনের একজন নেতা আল-হুসেইনি সিরিয়া গিয়েছিলেন অস্ত্র সহায়তার জন্য। কিন্তু সিরিয়া সরকার ফিলিস্তিনিদের সে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে সেখান থেকে ফিরে এসে আল হুসেইনি আবারও যুদ্ধে নামেন। এর কয়েকদিন পরেই তিনি নিহত হন।

ইহুদিরা যখন তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ইহুদি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নৃশংসতা আরবদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দলগুলো ইহুদিদের ওপর কয়েকটি আক্রমণ চালায়। কিন্তু ইহুদিদের ক্রমাগত এবং জোরালো হামলার মুখে ভেঙে পড়তে শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং অন্য আরব দেশগুলোর সরকার তাদের নিজ দেশের ভেতরে চাপে পড়ে যায়।সেসব দেশের জনগণ চেয়েছিল, যাতে ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় তারা এগিয়ে যায়।

অন্যদিকে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। একই দিন তৎকালীন ইহুদি নেতারা ঘোষণা করেন যে, সেদিন রাতেই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হবে।

ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই আরবরা আক্রমণ শুরু করে। একসঙ্গে পাঁচটি আরব দেশ ইসরাইলকে আক্রমণ করে।

যেসব দেশ একযোগে ইসরাইলকে আক্রমণ করেছিল তারা হচ্ছে – মিশর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া। তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো। অন্যদিকে ইসরাইলের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু আরব দেশগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় ছিলনা। তাছাড়া আরব নেতৃত্ব একে অপরকে বিশ্বাস করতো না।

তবুও জেরুজালেম দখলের জন্য আরব এবং ইসরাইলের মধ্যে তীব্র লড়াই চলে।ইহুদিরা ভাবছিল, জেরুজালেম ছাড়া ইহুদি রাষ্ট্রের কোনো অর্থ নেই। অন্যদিকে মুসলমানদের জন্যও জেরুজালেম পবিত্র জায়গা। তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ইসরাইলি বাহিনী পিছু হটতে থাকে। তাদের অস্ত্রের মজুত শেষ হয়ে যায়। সম্ভাব্য পরাজয় আঁচ করতে পেরে ইহুদিরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সময় নেয়।

এ সময় আর কিছুদূর অগ্রসর হলেই মিশরীয় বাহিনী তেলআবিবের দিকে অগ্রসর হতে পারতো। তখন জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

এ যুদ্ধবিরতির সময় দু’পক্ষই শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু ইসরাইল বেশি সুবিধা পেয়েছিল। তখন চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রের চালান আসে ইসরাইলের হাতে।

যুদ্ধ বিরতী শেষ হলে নতুন করে আরবদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরাইলি বাহিনী। একর পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয় ইহুদিরা। তেলআবিব এবং জেরুজালেমের ওপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।

জাতিসংঘের মাধ্যমে আরেকটি যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সে সংঘাত থামে। ইসরাইলি বাহিনী বুঝতে পরে তারা স্বাধীনতা লাভ করছে ঠিকই কিন্তু লড়াই এখনো থামেনি। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ছয় হাজার ইহুদি নিহত হয়েছিল।

ইহুদিরা মনে করে তারা যদি সে যুদ্ধে পরাজিত হতো তাহলে আরবরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতো।

ইসরাইলিরা মনে করেন ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ সেভাবে দুটি দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটি যদি ফিলিস্তিনিরা মেনে নিতো তাহলে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল নামের দুটি দেশ এখন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতো।

আরব দেশগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থা না থাকার কারণেই ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে এবং ইসরাইল দেশটির জন্ম হয়ে সেটি স্থায়ী হতে পেরেছে। অনেক ঐতিহাসিক বিষয়টিকে এভাবেই দেখেন।

১৯৪৮ সালের পর থেকে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করে ইসরাইল। তারা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা