রাঙ্গামাটির পাহাড়ে বিরল গোলাপি হাতি দেশে প্রথমবার, গবেষকরা বলছেন প্রাকৃতিক বিস্ময়

- আপডেট টাইম : ০৬:৪৪:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / ০ ১৫০.০০০ বার পাঠক
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার দুর্গম বরুনাছড়ির পাহাড়ে প্রথমবারের মতো দেখা মিলল এক গোলাপি রঙের বন্যহাতির শাবক। বয়স আনুমানিক দুই সপ্তাহ। একপাল বুনোহাতির দলের সাথে চলাফেরা করছে এই বিরল হাতির বাচ্চাটি।
পরিবেশবিদদের মতে, এশিয়ার অন্যান্য দেশে মাঝে মাঝে এমন হাতির খোঁজ মিললেও বাংলাদেশে এ ঘটনা প্রথম। বন বিভাগের মতে, এটি জিনগত অস্বাভাবিকতার কারণে হয়ে থাকতে পারে। দুই শ’ বছরের মধ্যে উপমহাদেশে এটি বিরলতম প্রাকৃতিক ঘটনা হতে পারে। এখনই বরকলের এলাকাটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা ও পরিবেশবিদরা। বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি ইউনিয়নে দুর্গম পাহাড়ে হাতির অবস্থান থাকা ফরেস্টের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) দায়িত্বে থাকা প্রধান সমন্বয়কারী মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনিই প্রথম দেখতে পান একটি হাতির পাল গোলাপি রঙের নতুন হাতির শাবকসহ বরুনাছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ পার হতে। পরে জাহাঙ্গীর আলম সেই দৃশ্যটি সাথে সাথে ভিডিও ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিমকে পাঠান। তিনি সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
জাহাঙ্গীর আলম জানান, বর্তমানে বরুনাছড়িতে হাতির নতুন গোলাপি শাবকটিসহ দু’টি হাতির শাবক এবং আরো ছয়টি হাতিসহ সর্বমোট আটটি হাতির এক পাল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন গোলাপি বাচ্চাসহ পাঁচটি একটি গ্রুপে, দু’টি হাতি একসাথে এবং আরো একটি বড় হাতি সেখানে অবস্থান করছে। সদ্য জন্ম নেয়া হাতির ছোট শাবকটি গোলাপি রঙের। সাধারণত বাচ্চা হাতির সারা গায়ের লোম কালো হলেও নতুন শাবকের গায়ের রঙ অনেকটাই গোলাপি এবং কিছুটা ব্যতিক্রম এই গোলাপি শাবক। যা এর আগে বাংলাদেশে কখনো রেকর্ড হয়নি। হাতির দলের সাথে থাকা এ শাবকটির বয়স আনুমানিক দুই সপ্তাহ।
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার বরুনাছড়িতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান। তিনি হাতির শাবকের গোলাপি রঙের বিষয়ে জানান, সাধারণত হাতির গায়ের রঙ কালছে ধরনের হয়ে থাকে। কোনো কারণে যদি হাতির চামড়ায় যে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয় তা যদি কোনো অস্বাভাবিকতার কারণে সেটি তৈরি না হয় তখন সেটি কিছুটা ফ্যাকাসে বা গোলাপি রঙ ধারণ করে এবং এই নতুন হাতির শাবকটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এটি অত্যন্ত একটি বিরল ঘটনা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হয় না। তিনি জানান, এটি হাতির জিনগত কোনো অস্বাভাবিকতার কারণে অনেক সময় হাতির গায়ের রঙের ভিন্নতা আসে এবং এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এই পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ পুরো এরিয়াতে এশীয় হাতির রঙ এরকম গোলাপি রঙের হয় এটি অত্যন্ত একটি বিরল ঘটনা। আগেকার দিনে যখন রাজ-রাজাদের সময়কাল ছিল তখন এই ধরনের বিরল সাদাটে বা গোলাপি হাতিগুলো রাজাদের কাছে খুবই কদরের হাতি ছিল এবং রাজারা তাদের হাতিশালায় এসব হাতি শখ করে রাখতেন এবং এসব হাতিকে তখনকার রাজারা তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় কাজে তারা ব্যবহার করতেন। এরকম একটি বিরল হাতি রাঙ্গামাটির পাহাড়ে দেখতে পাওয়া গেছে এটা অবশ্যই একটি বিরল ঘটনা এবং এটি সংরক্ষণ করা সরকারের দায়িত্ব বলে তিনি জানান।
এদিকে হাতির শাবকটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। এতে হাতির চলাচল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে উদ্বেগ স্থানীয়দের। এলাকাটিকে অবিলম্বে সংরক্ষিত ঘোষণা করে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি বলে মনে করেন অনেকে ।
পরিবেশবিদদের পরামর্শ, পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল রক্ষায় বনভূমি সংরক্ষণ জরুরি। স্থানীয় বৃক্ষ ও উদ্ভিদ দিয়ে এনরিচমেন্ট প্লান্টেশন গড়ে তুলতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করতে বন বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, পাহাড়ে হাতি সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগ ছাড়াও ফরেস্ট বিভাগের দায়িত্বরত ব্যক্তির পাশাপাশি আরো একটি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) টিম রয়েছে। তারা সব সময় পাহাড়ে থাকা হাতির সমস্যাসহ নানা বিষয়গুলো তদারক করে থাকে। আমরা এই টিমের মাধ্যমেই গত ১৩ জুন বরকলের বরুনাছড়িতে গোলাপি রঙের হাতির নতুন শাবকের কথা জানতে পারি। সেখানে গিয়ে নতুন গোলাপি রঙের হাতির শাবকের দেখা পাওয়া গেছে বলে জানিয়ে বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার জানান, নতুন এই বিস্ময়কর গোলাপি রঙের হাতির দিকে বন বিভাগ নজর রাখছে।
তবে কী কারণে হাতির শাবকটির রঙ গোলাপি এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার জানান, মিউটেশনজনিত কারণেও হাতির শাবকের রঙ এরকম পরিবর্তন হতে পারে, এটি একটি গবেষণার বিষয় এবং এটা নিশ্চিত করতে একটু সময়ও লাগবে।