মানুষের জীবন সর্বাগ্রে : জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট টাইম : ০২:৫০:২৩ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১
- / ৩২৩ ৫০০০.০ বার পাঠক
- শঙ্কিত হবেন না, সরকার আপনাদের পাশে আছে
- ঘরে বসেই এবার নববর্ষ পালন করুন
- বেঁচে থাকলে সব আবার গুছিয়ে নিতে পারব
- পথ যত কঠিন হোক, জয় করে এগিয়ে যেতে হবে
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, ভীড় এড়িয়ে চলুন
- দেশবাসীকে পহেলা নববর্ষ ও পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার দ্বিতীয় প্রবল ঢেউয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারকে কঠোর (লকডাউন) ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে উল্লেখ করে বলেছেন, আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে- মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সব কিছু গুছিয়ে নিতে পারবো। তবে আপনাদের (দেশবাসী) শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সরকার সব সময় আপনাদের পাশে আছে। বাঙালী বীরের জাতি, নানা প্রতিকূলতা জয় করেই আমরা টিকে আছি। করোানাভাইরাসের এই মহামারিও আমরা ইনশাআল্লাহ মোকাবেলা করবো। নতুন বছরে মহান আল্লাহ’র দরবারে তাই প্রার্থণা, বিশ্বকে এই মহামারির হাত থেকে রক্ষা করুন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বাংলা নববর্ষ-১৪২৮ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রদত্ত ভাষণে দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার জন্য পুনর্বার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যুগে যুগে মহামারী আসে, আসে নানা ষড়-ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ-দুর্বিপাক। এসব মোকাবেলা করেই মানবজাতিকে টিকে থাকতে হয়। জীবনের চলার পথ মসৃণ নয়। তবে পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের তা জয় করে এগিয়ে যেতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে ১৮-দফা নির্দেশনা জারি করেছে। আমরা যদি সকলে করোনাভাইরাস মোকাবেলার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, অবশ্যই এই মহামারীকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে পহেলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, পয়লা বৈশাখ আমাদের সকল সঙ্কীর্ণতা, কুপমন্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা (লকডাউন) গ্রহণের কারণসহ সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা, অর্থনীতিতে সচল রাখাসহ প্রাণঘাতি এই ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে সুরক্ষায় তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, ঘরে বসেই পহেলা বৈশাখের আনন্দ উদযাপনসহ দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য বারংবার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতে দেশ-বিদেশের সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আপনাদের (দেশবাসী) শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর আমি দরিদ্র-নিম্ন বিত্ত মানুষদের সহায়তার জন্য কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। আমরা এতোমধ্যে পল্লী অঞ্চলে কর্মসৃজনের জন্য ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং পবিত্র রমজান ও আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬৭২ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার নি¤œবিত্ত পরিবার উপকৃত হবেন। গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মানুষকে বাঁচাতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে ॥ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনাভাইরাস আরও মরণঘাতী হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। গত বছর করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর আমাদের নানাবিধ বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে। এই মহামারি প্রতিরোধে যেহেতু মানুষের সঙ্গ-নিরোধ অন্যতম উপায়, সে জন্য আমাদের এমন কিছু পদক্ষেপ করতে হয়েছে যারফলে মানুষের জীবন-জীবিকার উপর প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল আকার ধারণ করলে মানুষের চলাচলের উপর আমাদের কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হয়। আপনারা দেখেছেন, কোনভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। জনস্থাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাই আমাদের আরও কিছু কঠোর (লকডাউন) ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমি জানি এরফলে অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবেÑ মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সব কিছু গুছিয়ে নিতে পারবো।
সরকারপ্রধান বলেন, গত বছর আমরা একটানা ৬২ দিন সাধারণ ছুটি বলবৎ করেছিলাম। আমরা এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারিনি। বিদেশের সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের যেখানেই এই মরণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে, সেখানেই এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
অর্থনীতি ভেঙ্গে না পড়ে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি ॥ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, মানুষের জীবন রক্ষার পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতি, মানুষের জীবন-জীবিকা যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে না পড়ে সেদিকে আমরা কঠোর দৃষ্টি রাখছি। সকলের সহযোগিতায় আমরা বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম, যারফলে গত বছর করোনাভাইরাস মহামারিজনিত প্রভাব আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর আমরা চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করেছিলাম। চারটি কার্যক্রম হচ্ছে- (১) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা ঃ সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেওয়া; (২) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন ঃ অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখা; (৩) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি ঃদারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি; এবং (৪) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা ঃ অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। কলকারখানায় যাতে উৎপাদন ব্যাহত না হয় সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা দিন মজুর, পরিবহন শ্রমিক, হকার, রিক্সাওয়ালা, দোকান কর্মচারি, স্কুল শিক্ষক, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন, অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সেবাদানকারী, সাংবাদিকসহ নিম্নআয়ের নানা পেশার মানুষকে সহায়তা দিয়েছি। প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে বিভিন্ন সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানলে মহামারী নিয়ন্ত্রণ হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমাদের সৌভাগ্য টিকা উৎপাদনের শুরুতেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকার ডোজ আমরা নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যেই ৫৬ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। যাঁরা প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সকলকে টিকার আওতায় নিয়ে আসবো। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, তবে টিকা দিলেই একজন সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবেন এমন নিশ্চয়তা নেই বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। কাজেই টিকা নেওয়ার পরও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলায় করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা সুবিধার আওতা আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান আইসিইউ. সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
দেশবাসীকে সর্বদা সতর্ক থাকা এবং ভিড় এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আমাদের নিজের, পরিবারের সদস্যদের এবং প্রতিবেশির সুরক্ষা প্রদানের। কাজেই ভিড় এড়িয়ে চলুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। ঘরে ফিরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গরম পানির ভাপ নিন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে ১৮-দফা নির্দেশনা জারি করেছে। আমরা যদি সকলে করোনাভাইরাস মোকাবেলার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, অবশ্যই এই মহামারিকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।
ঘরে বসে পয়লা বৈশাখ উপভোগ করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী গত বছরের মতো এবারও ঘরে বসেই পহেলা বৈশাখের আনন্দ উপভোগ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, গত বছরের মত এ বছরও আমরা বাইরে কোন অনুষ্ঠান করতে পারছিনে। কারণ করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে আঘাত হেনেছে সারা দেশে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনাভাইরাস আরও মরণঘাতী হয়ে আভির্ভূত হয়েছে। পয়লা বৈশাখের আনন্দ তাই গত বছরের মত এবারও ঘরে বসেই উপভোগ করবো আমরা। টেলিভিশন চ্যানেলসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সে সব অনুষ্ঠান উপভোগ ছাড়াও আমরা নিজেরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে পারি।
দেশবাসীকে পহেলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুসঙ্গ। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা আগের বছরের দেনা-পাওনা আদায়ের জন্য আয়োজন করতেন হালখাতা উৎসবের। গ্রামীণ পরিবারগুলো মেলা থেকে সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজষপত্র কিনে রাখতেন। গৃহস্থ বাড়িতে রান্না হতো সাধ্যমত উন্নতমানের খাবারের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬০’র দশকের শেষভাগে ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ১৯৮০’র দশকে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহির্প্রকাশ ঘটতে থাকে। মূলতঃ আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনসমূহের কর্মী-সমর্থকদের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই আজকের এই অবস্থান। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অতীতের জঞ্জাল মুছে সামনে এগিয়ে যাব ॥ এবারের নতুন বছরে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়া এবং অতীতের জঞ্জাল ধুঁয়ে মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পয়লা বৈশাখ আমাদের সকল সঙ্কীর্ণতা, কুপম-ুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
তিনি বলেন, আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি জনগোষ্ঠি বসবাস করেন, সেখানেই বাঙালি’র হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতির বিস্তার ঘটছে বর্ষবরণসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। আর পৃথিবী জুড়ে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধ। তিনি বলেন, অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করবো। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাবো সামনের দিকে। গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত- এই হোক এবারের নতুন বছরের শপথ। কবিগুরুর ভাষায় আবারও বলতে চাই- দনিশি অবসান, ওই পুরাতন বর্ষ হলো গত/ আমি আজ ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন/ করিলাম নত। বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও/ ক্ষমা করা আজিকার মতো/ পুরাতনের বছরের সাথে/ পুরাতন অপরাধ যতো।’
পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ ॥ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে পহেলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে মোবারকবাদ জানিয়ে বলেন, দেশ-বিদেশে- যে যেখানেই আছেন- সবাইকে জানাই ১৪২৮ বঙ্গাব্দের আন্তরিক শুভেচ্ছা, শুভ নববর্ষ। আজ আবাহনের দিন। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নি¯œানে শুচি হোক ধরা’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী এই গান গেয়ে আজ আমরা আবাহন করবো নতুন বছরকে। একইসঙ্গে শুরু হয়েছে মুসলমানদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস- মাহে রমজান। আমি সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাজে রজমানের মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে সময় চলে যায়। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই আমরা এক বছরের অধিক সময় পার করলাম। গত বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহের দিকে আমাদের দিকে আমাদের দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। নানা আশঙ্কা আর আতঙ্ক গ্রাস করেছিল আমাদের। সেসব মোকাবেলা করেই আমাদের টিকে থাকতে হয়েছে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের থাবায় আমরা হারিয়েছি আমাদের অনেক প্রিয়জন, আপনজনকে। আমি সকলের রূহের মাগফেরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করছি। স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণের শেষাংশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলেন-‘আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি/ পচা অতীত গিরি গুহা ছাড়ি/ খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত। সৃজিব জগৎ বিচিত্রতর বীর্যবান/ তাজা জীবন্ত সে নব সৃষ্টি শ্রম-মহান।’ দেশবাসী আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলের সহায় হোন।