ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ বিভাগের বার্ষিক সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মোংলা উপজেলার ২নং বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের কমিটি গঠন নরসিংদীর সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান বৈষম্যমুক্ত সাম্য ও মানবিক দেশ গড়তে জাতিকে আরও একটা ধাক্কা দিতে হবে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন অপারেশন ডেভিল হান্টে আরও ৫০৯ জন গ্রেফতার যৌথ বাহিনী পরিচালিত অপারেশন ডেভিল হান্টে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলা ও অন্যান্য অপরাধে ৯৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালের মডেলে নজর শিক্ষার্থীদের টাঙ্গাইলে বিপ্লব হত্যার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ॥ মামলার বাদি লাবু খন্দকারকে হত্যার পরিকল্পনা হাত-পা ভেঙ্গে দিয়ে লাবু খন্দকার মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মোংলায় পালিত হলো সুন্দরবন দিবস সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু শনিবার : আদিলুর রহমান অবৈধ অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে নতুন বিল পাস যুক্তরাষ্ট্রে আমিরাত সফর শেষ, দেশে ফিরছেন প্রধান উপদেষ্টা

এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালের মডেলে নজর শিক্ষার্থীদের

পাকিস্তান সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : ০৬:১০:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ২ ৫০০০.০ বার পাঠক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি চলতি মাসের মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। দলের কাঠামো, গঠনতন্ত্র, নাম ও প্রতীক নির্ধারণ নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে সব সিদ্ধান্ত।

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এই নতুন রাজনৈতিক দলটি ‘মধ্যপন্থা’র দল হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী। শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, দলটি কোনো বাইনারি প্রসেসের মধ্যে থাকবে না, মতাদর্শভিত্তিক বিভাজন থাকবে না। আমাদের সামাজিকভাবে ঐক্যের জায়গাটা গড়তে হবে।

সাম্য, ন্যায়বিচার ও সুশাসনকে ঘিরে ‘মধ্যপন্থা’র দল গঠনের পরিকল্পনা

ছাত্রদের নতুন দল গঠনের কাজটি তত্ত্বাবধান করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা চান বাংলাদেশে বামপন্থি কিংবা ডানপন্থি রাজনীতির যে ধারা, ছাত্রদের নতুন দল যেন সেটার কোনোটির মধ্যেই না থাকে। এই অবস্থানকে তারা বলছেন মধ্যপন্থি অবস্থান।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আমরা একটা মধ্যমপন্থি রাজনীতির কথা বলছি। আমরা বাম-ডান এমন যে বিভাজন আছে সেগুলোতে ঢুকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।

এক্ষেত্রে দলটি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মভিত্তিক এ ধরনের কোনো আদর্শকেই সামনে রাখতে চায় না।

তাহলে দলটি কোন আদর্শ বা লক্ষের কথা বলছে, জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, আমরা এখানে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের কথা বলছি। এটাকেই হাইলাইট করতে চাই। একইসঙ্গে একটা রাষ্ট্রে যে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে, সেই বহুত্ববাদকে স্বীকার করেই কীভাবে একটা এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়ে এগোনো যায় যেভাবে আমরা অভ্যুত্থানে এগিয়েছি, সেইটা হচ্ছে আমাদের মূল ফোকাস পয়েন্ট।

তিনি বলেন, আমরা ডানের দিকেও ঝুঁকবো না, বামের দিকেও ঝুঁকবো না। সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসনকে ঘিরে আমরা হবো একটা মধ্যপন্থি দল যেন আমরা সব ধরনের মানুষকে ধারণ করতে পারি।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাঙালি কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি যেমন আছে, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও আছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে দলীয় প্রচার এবং কৌশলে অনেকসময়ই ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।তবে এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক–– এরকম কোনো পরিচয়ে ঢুকতে চায় না ছাত্রদের সম্ভাব্য নতুন দল।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, আমরা অধিকারের রাজনীতি, দায় ও দরদের রাজনীতি এগুলোকে সামনে নিয়ে আসবো যাতে এখানে নির্দিষ্ট কোনো মত বা ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে না ওঠে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে শুধু বাংলাদেশ, এই দেশের মানুষের অধিকার এবং রাষ্ট্র গঠনের কাজ। এখানে যে কোনো ধর্মের মানুষ, যে কোনো মতের মানুষ, যে কোনো আদর্শের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে।

সফল হতে এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালে নজর

আদর্শ যেটাই হোক, ছাত্রদের নতুন দল কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবে সেটা আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে এটাও ঠিক দেশটিতে গত ৪০ বছরে নতুন তৈরি হওয়া কোনো দল ভোটের মাঠে সেভাবে সুবিধা করতে পারেনি। তবে দেশে না হলেও গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতায় আসার নজির আছে। যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে নজর কেড়েছে তুরস্কের রিচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।সফলতার মন্ত্র খুঁজতে ছাত্ররাও নতুন এই তিনটি দলের কর্মসূচি, সাংগঠনিক কাঠামো ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করছে।

জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এসব দল কীভাবে জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পেরেছে সেগুলো খতিয়ে দেখছেন তারা। এই পার্টিগুলো আসলে কীভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, জনগণের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের কৌশল নিয়েছে, তাদের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোটা কেমন -এসব বিষয় আমরা স্টাডি করছি। আমরা বোঝার চেষ্টা করছি ওই অঞ্চলের তরুণদের বোঝার ক্ষেত্রে এবং রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে তারা কী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এসেছে যেটা ওই দেশের লোকজন গ্রহণ করেছে এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে শাসনক্ষমতার দায়িত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে দেখবেন এরদেয়ানের পার্টি কিন্তু ফোকাস করেছে ইনসাফের ওপর। তার নামই হচ্ছে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। যেটা আমরাও বলছি। আমরা ন্যায়বিচারের কথা বলছি, সুশাসনের কথা বলছি। অন্যদিকে ভারতের আম আদমি পার্টি দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছে। দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম করেছে। আমরা সেগুলোও দেখছি।

নেতৃত্বে কারা?

দলটির শীর্ষ পদে কে বসবেন সেটা এখনও প্রকাশ্য নয়। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ পদে আসতে পারেন এমন গুঞ্জন প্রবল। সেক্ষেত্রে উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন তিনি। তবে শীর্ষপদে যিনিই দায়িত্ব পান না কেন এটা নিশ্চিত যে তিনি হবেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদেরই কেউ একজন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দলটির পুরো নেতৃত্বের কাঠামোয় কি শুধু তরুণরাই থাকবে, নাকি অভিজ্ঞদেরও জায়গা হবে?

এক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য থাকলেও অভিজ্ঞদের দলের নেতৃত্বের বিভিন্ন পর্যায়ে স্থান দেওয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বৈষম্যিবরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মুজমদার।

তিনি বলেন, তরুণদের পাশাপাশি সিনিয়র সিটিজেনও অনেকে আছেন, যারা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করতে ইচ্ছুক। আমরা বিভিন্ন কমিউনিটি-ভিত্তিক এবং সিভিল সোসাইটি-ভিত্তিক যারা আছেন কিংবা দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন -এরকম মানুষদেরও আমরা আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলে আনার প্রক্রিয়ায় আছি। যেমন আমাদের উপদেষ্টা প্যানেলে তরুণরা থাকবে, সিনিয়ররাও থাকবে। আবার দলের অন্যান্য কমিটিতেও তরুণদের পাশাপাশি সিনিয়ররাও থাকবেন।

সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেই আসবে ছাত্রদের নতুন দল। তবে এমন এক সময়ে নতুন দলটি আসতে যাচ্ছে যখন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেটা হলে খুব দ্রুতই নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে নতুন দলকে। সেক্ষেত্রে শুরুতে দেশের সবগুলো সংসদীয় আসনে দলটি প্রার্থী দেবে কি-না বা সে সক্ষমতা আছে কি-না, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এখন সব আসনেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলছেন সম্ভাব্য নতুন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

নাগরিক কমিটির নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিক যাত্রায় অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোকে তারা পাশে পাবেন। তবে কোনো জোটের অংশ হওয়া বা ভোটের আগে নির্বাচনি ঐক্য তৈরির চিন্তা আপাতত নেই। কারণ এককভাবেই বড় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে চান তারা।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালের মডেলে নজর শিক্ষার্থীদের

আপডেট টাইম : ০৬:১০:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি চলতি মাসের মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। দলের কাঠামো, গঠনতন্ত্র, নাম ও প্রতীক নির্ধারণ নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে সব সিদ্ধান্ত।

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এই নতুন রাজনৈতিক দলটি ‘মধ্যপন্থা’র দল হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী। শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, দলটি কোনো বাইনারি প্রসেসের মধ্যে থাকবে না, মতাদর্শভিত্তিক বিভাজন থাকবে না। আমাদের সামাজিকভাবে ঐক্যের জায়গাটা গড়তে হবে।

সাম্য, ন্যায়বিচার ও সুশাসনকে ঘিরে ‘মধ্যপন্থা’র দল গঠনের পরিকল্পনা

ছাত্রদের নতুন দল গঠনের কাজটি তত্ত্বাবধান করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা চান বাংলাদেশে বামপন্থি কিংবা ডানপন্থি রাজনীতির যে ধারা, ছাত্রদের নতুন দল যেন সেটার কোনোটির মধ্যেই না থাকে। এই অবস্থানকে তারা বলছেন মধ্যপন্থি অবস্থান।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আমরা একটা মধ্যমপন্থি রাজনীতির কথা বলছি। আমরা বাম-ডান এমন যে বিভাজন আছে সেগুলোতে ঢুকতে চাই না। আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি অথবা উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।

এক্ষেত্রে দলটি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মভিত্তিক এ ধরনের কোনো আদর্শকেই সামনে রাখতে চায় না।

তাহলে দলটি কোন আদর্শ বা লক্ষের কথা বলছে, জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, আমরা এখানে সাম্য, ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের কথা বলছি। এটাকেই হাইলাইট করতে চাই। একইসঙ্গে একটা রাষ্ট্রে যে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে, সেই বহুত্ববাদকে স্বীকার করেই কীভাবে একটা এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়ে এগোনো যায় যেভাবে আমরা অভ্যুত্থানে এগিয়েছি, সেইটা হচ্ছে আমাদের মূল ফোকাস পয়েন্ট।

তিনি বলেন, আমরা ডানের দিকেও ঝুঁকবো না, বামের দিকেও ঝুঁকবো না। সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসনকে ঘিরে আমরা হবো একটা মধ্যপন্থি দল যেন আমরা সব ধরনের মানুষকে ধারণ করতে পারি।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাঙালি কিংবা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি যেমন আছে, তেমনি ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও আছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে দলীয় প্রচার এবং কৌশলে অনেকসময়ই ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।তবে এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা ধর্মভিত্তিক–– এরকম কোনো পরিচয়ে ঢুকতে চায় না ছাত্রদের সম্ভাব্য নতুন দল।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, আমরা অধিকারের রাজনীতি, দায় ও দরদের রাজনীতি এগুলোকে সামনে নিয়ে আসবো যাতে এখানে নির্দিষ্ট কোনো মত বা ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে না ওঠে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে শুধু বাংলাদেশ, এই দেশের মানুষের অধিকার এবং রাষ্ট্র গঠনের কাজ। এখানে যে কোনো ধর্মের মানুষ, যে কোনো মতের মানুষ, যে কোনো আদর্শের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে।

সফল হতে এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালে নজর

আদর্শ যেটাই হোক, ছাত্রদের নতুন দল কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবে সেটা আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে এটাও ঠিক দেশটিতে গত ৪০ বছরে নতুন তৈরি হওয়া কোনো দল ভোটের মাঠে সেভাবে সুবিধা করতে পারেনি। তবে দেশে না হলেও গত কয়েক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতায় আসার নজির আছে। যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে নজর কেড়েছে তুরস্কের রিচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।সফলতার মন্ত্র খুঁজতে ছাত্ররাও নতুন এই তিনটি দলের কর্মসূচি, সাংগঠনিক কাঠামো ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করছে।

জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, এসব দল কীভাবে জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পেরেছে সেগুলো খতিয়ে দেখছেন তারা। এই পার্টিগুলো আসলে কীভাবে জনগণের কাছে গিয়েছে, জনগণের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের কৌশল নিয়েছে, তাদের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোটা কেমন -এসব বিষয় আমরা স্টাডি করছি। আমরা বোঝার চেষ্টা করছি ওই অঞ্চলের তরুণদের বোঝার ক্ষেত্রে এবং রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে তারা কী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এসেছে যেটা ওই দেশের লোকজন গ্রহণ করেছে এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে শাসনক্ষমতার দায়িত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে দেখবেন এরদেয়ানের পার্টি কিন্তু ফোকাস করেছে ইনসাফের ওপর। তার নামই হচ্ছে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি। যেটা আমরাও বলছি। আমরা ন্যায়বিচারের কথা বলছি, সুশাসনের কথা বলছি। অন্যদিকে ভারতের আম আদমি পার্টি দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছে। দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম করেছে। আমরা সেগুলোও দেখছি।

নেতৃত্বে কারা?

দলটির শীর্ষ পদে কে বসবেন সেটা এখনও প্রকাশ্য নয়। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এ পদে আসতে পারেন এমন গুঞ্জন প্রবল। সেক্ষেত্রে উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন তিনি। তবে শীর্ষপদে যিনিই দায়িত্ব পান না কেন এটা নিশ্চিত যে তিনি হবেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদেরই কেউ একজন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দলটির পুরো নেতৃত্বের কাঠামোয় কি শুধু তরুণরাই থাকবে, নাকি অভিজ্ঞদেরও জায়গা হবে?

এক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য থাকলেও অভিজ্ঞদের দলের নেতৃত্বের বিভিন্ন পর্যায়ে স্থান দেওয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বৈষম্যিবরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মুজমদার।

তিনি বলেন, তরুণদের পাশাপাশি সিনিয়র সিটিজেনও অনেকে আছেন, যারা আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করতে ইচ্ছুক। আমরা বিভিন্ন কমিউনিটি-ভিত্তিক এবং সিভিল সোসাইটি-ভিত্তিক যারা আছেন কিংবা দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন -এরকম মানুষদেরও আমরা আমাদের নতুন রাজনৈতিক দলে আনার প্রক্রিয়ায় আছি। যেমন আমাদের উপদেষ্টা প্যানেলে তরুণরা থাকবে, সিনিয়ররাও থাকবে। আবার দলের অন্যান্য কমিটিতেও তরুণদের পাশাপাশি সিনিয়ররাও থাকবেন।

সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেই আসবে ছাত্রদের নতুন দল। তবে এমন এক সময়ে নতুন দলটি আসতে যাচ্ছে যখন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেটা হলে খুব দ্রুতই নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে নতুন দলকে। সেক্ষেত্রে শুরুতে দেশের সবগুলো সংসদীয় আসনে দলটি প্রার্থী দেবে কি-না বা সে সক্ষমতা আছে কি-না, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও এখন সব আসনেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলছেন সম্ভাব্য নতুন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

নাগরিক কমিটির নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিক যাত্রায় অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোকে তারা পাশে পাবেন। তবে কোনো জোটের অংশ হওয়া বা ভোটের আগে নির্বাচনি ঐক্য তৈরির চিন্তা আপাতত নেই। কারণ এককভাবেই বড় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে চান তারা।