শিক্ষার্থীরা নতুন দল করলে কত শতাংশ মানুষ ভোট দেবে?
- আপডেট টাইম : ০৬:২৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১৫ ৫০০০.০ বার পাঠক
দেশে এখন নির্বাচন হলে কোন দলকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ৩৮ শতাংশ মানুষ। বাকিদের ১৬ শতাংশ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৩ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ইসলামী দল ও ১ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের কোনো রাজনৈতিক দল হলে তাদের ভোট দেবেন ৪০ শতাংশ মানুষ। আর ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন ৪৪ শতাংশ মানুষ। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার পিআইবিতে এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডির আয়োজনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ : মানুষ কী ভাবছে’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে দেশ ঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে করেন ৫৬ শতাংশ মানুষ। আর ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করছেন দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে চলছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার দেশ ভালো পরিচালনা করবে কিনা, এমন প্রশ্নে ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ১৫ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ২৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তিন বছর বা তার বেশি (উত্তরদাতার ১৮ শতাংশ অন্তত স্নাতক পাশ করেছেন আর ২০ শতাংশের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই)। ১৬ শতাংশ বলেছেন দুই বছর (তাদের ৩২ শতাংশ অন্তত স্নাতক করেছেন আর ১৭ শতাংশের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই)। ১৪ শতাংশ বলেছেন এক বছর (তাদের ১৪ শতাংশ অন্তত স্নাতক করেছেন আর ১২ শতাংশের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই), ১৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন তিন থেকে ছয় মাস (তাদের ১৯ শতাংশ অন্তত স্নাতক করেছেন আর ১৭ শতাংশের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই)। অন্তর্বর্তী সরকারের অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন ৫ শতাংশ মানুষ।
জরিপে জানতে চাওয়া হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কাজের প্রচেষ্টা কেমন, তাতে ১০০ নম্বরের মধ্যে কত দেবেন-এমন প্রশ্নে ৪০ শতাংশ মানুষ সরকারকে ৮১ থেকে ১০০ নম্বর দিয়েছেন। ৬১ থেকে ৮০ নম্বর দিয়েছেন ২১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৬০ নম্বর দিয়েছেন ১৯ শতাংশ আর ২১ থেকে ৪০ নম্বর দিয়েছেন ৭ শতাংশ মানুষ। সরকারকে শূন্য থেকে ২০ নম্বর দিয়েছেন ১৩ শতাংশ মানুষ। অবশ্য গত আগস্টে সরকারকে ৮১ থেকে ১০০ নম্বর দিয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ মানুষ। সেই হিসাব দেখলে বোঝা যায়, সরকারের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে আস্থাশীল মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে। জরিপে গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণিপেশার চার হাজার ১৫৮ মানুষের মতামত নেওয়া হয়। তাদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী; ৫১ শতাংশ গ্রামের ও ৪৯ শতাংশ শহুরে। জরিপে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, চলমান সমস্যা, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে মানুষের মতামত জানতে চাওয়া হয়। গত ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এই জরিপ চালানো হয়। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বিআইজিডির পালস সার্ভের প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, রাজনীতি ও অর্থনীতি মিলিয়ে আশাবাদী ৩৭ শতাংশ মানুষ আর নিরাশাবাদী ২৯ শতাংশ। আগের জরিপে আশাবাদী ছিলেন ৬৮ শতাংশ আর নিরাশাবাদী ১৩ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছে বলে জরিপে মত দিয়েছেন ৪১ শতাংশ মানুষ। এ ক্ষেত্রে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছেন ২৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে কিছুই পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করেন ২৫ শতাংশ মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আবার পরিবর্তন করার বিষয়ে জরিপে ৪৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, সরকার জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে। ২১ শতাংশ মানুষের মতে, সরকার ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় এমনটা হচ্ছে আর ২৪ শতাংশের মত হলো, সরকার নিজের সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারছে না। অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা, অনিয়ম-দুর্নীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে শক্ত হাতে দেশ পরিচালনা করছে কিনা, এই প্রশ্নে ৫৬ শতাংশ মানুষ হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে না-সূচক উত্তর দিয়েছেন ৩৯ শতাংশ।
জরিপের ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল ও উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহমেদ আহসান, বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মির্জা এম হাসান, নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চায়, যাতে তারা বুঝতে পারে সরকার কীভাবে এবং কী কী কাজ করে দেশের উন্নতি করবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আমরা জানি যে, বর্তমানে দেশে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে; তবে এটাও মনে রাখা দরকার, অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত সময়কালে একাধিক জটিল সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত কঠিন বটে।
বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা এম হাসান বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর আগস্টে মানুষের আশা বেড়েছিল। তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই আশা পূরণ না হওয়ায় জনসাধারণ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সময় সরকারকে জনগণের এই উদ্বেগের কথা বিবেচনা করতে হবে।