দেশের ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দী ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। তবে বন্যাকবলিত আরও দুই জেলার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত দুই দিনে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কক্সবাজারে দুজন, ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন। পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া কক্সবাজারের দুজন নিখোঁজ আছেন।
বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আরও চার জেলাসহ মোট ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে।
জেলাগুলো হলো- ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছেন সেনাসদস্যরা।
এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষ গত তিন দশকে এমন বন্যা দেখেনি। নজিরবিহীন বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা ও ফেনী অংশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫ কিলোমিটার মহাসড়ক এক থেকে দেড়ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। এতে কার্যত ওই সব এলাকার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
এ ছাড়া ফেনী ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একইভাবে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেটের সঙ্গেও সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, দেশের বন্যাকবলিত জেলা ১০টি। আর প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। বন্যায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
বন্যার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে শফিকুল আলম জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে টানা বৃষ্টি হয়েছে এবার। ১৬ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছিল। আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, শনিবার (২৪ আগস্ট) নাগাদ বৃষ্টি একটু কমতে পারে।
বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনা মোতায়েন সর্ম্পকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন, ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এ ছাড়া ফেনী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাঁচটি চিকিৎসা দল সহায়তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছে।
বৃহস্পতিবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মোবাইল টাওয়ার অচল বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় মোবাইল ফোনের ২১ দশমিক ৬ শতাংশ টাওয়ার অচল হয়ে গেছে। ফেনী ও খাগড়াছড়ি জেলার প্রায় অর্ধেক মোবাইল টাওয়ার কাজ করছে না। এসব এলাকায় নেটওয়ার্কব্যবস্থা সচল রাখতে ভি–স্যাট পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত বন্যাপ্লাবিত জেলাগুলোয় মোট ৬ হাজার ৯৮৬টি টাওয়ারের মধ্যে ৫ হাজার ৪৭৬টি সচল আছে। টাওয়ার অচল হয়েছে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনীতে, এই জেলার টাওয়ারের ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ অচল হয়ে গেছে। আর খাগড়াছড়ির ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ টাওয়ার এখন অচল আছে। এসব টাওয়ার সচল করতে কাজ করা হচ্ছে।