কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় যেসব তথ্য পাওয়া গেল
- আপডেট টাইম : ০৬:৫৯:২০ পূর্বাহ্ণ, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
- / ৮০ ৫০০০.০ বার পাঠক
আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীরা নিজেদের হলফনামা জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে আয় ও সম্পদে এগিয়ে দুইবারের সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তাহসীন বাহার সূচনা আয়ের দিক থেকে পিছিয়ে। নগর আওয়ামী লীগের এমবিবিএস ডিগ্রিধারী এ নেতার আয় আসে ব্যবসা থেকে।
চার প্রার্থীর মধ্যে আয় ও সম্পদে সবচেয়ে পিছিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম। আর মামলা বেশি বিএনপির আরেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারের বিরুদ্ধে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটির এ ভোটে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা- কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটির দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার।
নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে ততই তারা দিনরাত এক করে চালাচ্ছেন প্রচার।
সম্পদে এগিয়ে সাক্কু
দুই মেয়াদে কুমিল্লা নগরপ্রধানের দায়িত্ব পালন করা বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট করছেন। হলফনামায় পেশা হিসেবে ঠিকাদারি ব্যবসা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস উল্লেখ করেছেন।
বাড়িভাড়া থেকে সাক্কুর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক আয় দুই লাখ এবং ব্যাংকের সুদ থেকে পান ৫০৭ টাকা।
তার অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ এবং ব্যাংকে জমা আছে ৪৩ হাজার ২৯ টাকা। স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলির কাছে নগদ টাকা আছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪৪ এবং ব্যাংকে আছে ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ১০৯ টাকা।
বন্ড, সঞ্চয়পত্র এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ২ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্রে সাক্কুর স্ত্রীর বিনিয়োগ রয়েছে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৫ টাকা।
তার একটি ল্যান্ডক্রুজার জিপ এবং তার স্ত্রীর একটি জিপ রয়েছে। তাদের স্বর্ণ আছে ১০ তোলা করে; যা ৫০ হাজার টাকা করে কেনা হয়েছিল। এছাড়া ৪৭ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও এক লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে সাক্কুর মনোহরগঞ্জের শরীফপুর গ্রামে ২০ একর জমি রয়েছে। এছাড়া লালমাই মৌজায় ২৫০ শতক জমি ও পুকুর রয়েছে। স্ত্রীর নামে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ১ দশমিক ২৩ একর ডাঙা জমি আছে।এছাড়া দুজনের নামে ঢাকা ও কুমিল্লায় অকৃষি জমি, দালান, দোকান আবাসিক ও বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।
তবে তার কোনো দায়-দেনা বা ঋণ নেই।
এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একটি এবং আয়কর অধ্যাদেশ আইনে একটিসহ দুটি মামলা বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
এছাড়া অতীতে বিভিন্ন ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা ছিল; তবে সেগুলো থেকে তিনি খালাস ও অব্যাহতি পেয়েছেন।
মামলার বিষয়ে সাক্কু বলেন, “ রাজনীতি করতে গিয়ে আমি এসব মামলার শিকার হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিটি মামলাই অসত্য এবং ষড়যন্ত্রমূলক।“
মামলায় এগিয়ে কায়সার
কুমিল্লা মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম উল্লেখ করেছেন।
হলফনামা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বর্তমানে নয়টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে- বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি, বিস্ফোরক আইনে তিনটি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি এবং মারামারির ঘটনায় একটি রয়েছে।
এর আগেও কায়সারের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা ছিল। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনে চারটি ও মারামারির ঘটনায় দুটি করা হয়। এসব মামলার মধ্যে দুটির কার্যক্রম স্থগিত এবং চারটি থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে বলে হলফনামায় বলা হয়েছে।
ঘোড়া প্রতীকের এ প্রার্থী একজন চাকুরিজীবী। চাকরি থেকে তার বার্ষিক আয় চার লাখ টাকা। ব্যাংকের সুদ ও অন্য উৎস থেকে আসে মাসে দেড় হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার নগদ রয়েছে ৩২ লাখ ৪০ হাজার ৩৭ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭২০ টাকা এবং বন্ড কেনা রয়েছে ৪০ হাজার টাকার।
কায়সারের কাছে ৩০ তোলা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ২০ ভরি সোনা। ১ লাখ ৯ হাজার টাকার টিভি ও ফ্রিজ রয়েছে এবং স্ত্রীর আড়াই লাখ টাকায় কেনা এলইডি টিভি, এয়ারকুলার ও ডাইনিং টেবিল রয়েছে। এছাড়া সাড়ে চার লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার স্ত্রীর।
তার কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। দায়-দেনাও নেই।
এত মামলা কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাকে প্রতিহত করতে এগুলো দায়ের করা হয়েছে।
কায়সার বলেন, “ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রামের সামনে থাকায় আমাকে এত মামলার ভার বহন করতে হয়েছে। যে কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাকে ঘিরে মাঠে নেমে পড়েছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমার বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
এমবিবিএস ডিগ্রিধারী সূচনার পেশা ব্যবসা
শিক্ষাগত যোগ্যতায় বাকি তিন প্রার্থীর চাইতে এগিয়ে রয়েছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা।
হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস এবং পেশা হিসেবে কমিশন ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা সূচনা।
হলফনামা অনুযায়ী, সূচনা বর্তমানে ও অতীতে কোনো মামলায় অভিযুক্ত হননি। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ১০ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা আয় করেন তিনি।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার কাছে নগদ রয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৯০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৯১০ টাকা।
ব্যবসা থেকে আয়ের মধ্যে তিনি নাইস পাওয়ার অ্যান্ড আইটি থেকে পান ৮ লাখ টাকা, সোনালী সুইটস লিমিটেড থেকে ২৫ লাখ টাকা, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ১৫ লাখ টাকা, এমবি টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাক্টরি থেকে চার লাখ টাকা ও গোমতী ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ১০ লাখ টাকা।
এছাড়া পোস্টাল ও সেভিংস সনদসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতের বিনিয়োগ ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
বাস প্রতীকের এ প্রার্থীর ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকার জিপ গাড়ি আছে।
১ লাখ টাকা মূল্যের ৪০ তোলা সোনা, ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া ব্যবসায় পুঁজি ৫ লাখ টাকা বলে হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে সূচনার রাজধানীর উত্তরায় ৪২ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। কোনো দায়-দেনা বা ঋণ নেই এ প্রার্থীরও।
তানিমের সম্পদ অন্যদের চেয়ে কম
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হাতি প্রতীকের এ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। তিনি পেশায় ঠিকাদার।
হলফনামা অনুযায়ী, তানিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি, বিস্ফোরক আইনে একটি ও জননিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা ছিল। অস্ত্র মামলায় খালাস এবং অপর তিন মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি।
ব্যবসা থেকে তানিমের বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ২ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা, ব্যাংকে নিজ নামে ২০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা রয়েছে। স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণ এবং টিভি, ফ্রিজ, খাট ও সোফা রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় ৮ শতক জমির মধ্যে তিনি ২ শতকের মালিক। তবে এনআরবিসি ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ আছে তার।