আসুন এবার পদ্মার ঘোলা পানি নিয়ে আলোচনায়,
পদ্মার ঘোলা পানি পরিশোধনের পর প্রায় ৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসে আমাদের রাজধানীবাসীর পিপাসা মেটাচ্ছে।
আর এই পরিশোধনের কাজটি হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশলদিয়ায় গড়ে তোলা পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার প্রকল্প।
আর এই প্রকল্প থেকে রাজধানীতে পানি আসে সাড়ে ২২ কোটি লিটার।
তবে এর উৎপাদন ক্ষমতা ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা,
নেটওয়ার্কের কাজ শেষ হলে।
পদ্মার তীরে গড়ে তোলা এই শোধনাগারে ঘোলা পানি কাদা ও জীবাণুমুক্তকরণসহ কয়েকটি ধাপে পরিশোধন করে পাঠানো হয়-রাজধানীতে, ঢাকা ওয়াসার পাইপলাইনে যুক্ত হয়ে এই পানি পৌঁছে যাচ্ছে পুরান ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে।
পুরান ঢাকায় নতুন পাইপ লাইন সংযোগে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, পদ্মার সেই পানি দেখে মনে হচ্ছে না এটা পদ্মার পানি, বিষয়টি নিয়ে চারিদিকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, নতুন পাইপলাইন সংযোগে মাঝেমধ্যে নোংরা পানি কিভাবে আসে? এই নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তবে-দেড় কোটির বেশি মানুষের এই রাজধানী শহরে প্রতিদিন পানির চাহিদা গড়ে ২৪০ থেকে ২৫০ কোটি লিটার।
এই পানির চাহিদা পূরণে ভূগর্ভস্থ পানির পাশাপাশি শোধনাগারের মাধ্যমে নদীর পানি পরিশোধন করে তা ব্যবহার উপযোগী করে সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা। আর সেই পানি যখন ঘোলা এবং দুর্গন্ধ যুক্ত হয় জনমনে সংশয় তো সৃষ্টি হবে,
ঢাকার ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোরব মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশলদিয়ায় পানি শোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চীন সরকারের ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তায় ১০৪ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় পদ্মা যশলদিয়া পানি শোধনাগার।
দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পরিশোধীত পানি সরবরাহ করা সম্ভব এ প্রকল্প থেকে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ২২ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করে রাজধানীতে আনছে ঢাকা ওয়াসা।
সেই পানি কিভাবে দুর্গন্ধ যুক্ত হয়?
এর কোন সমুচিত জবাব পাওয়ার যাচ্ছে না, বিষয়টি নিয়ে যখন যেখানে প্রশ্ন রাখা হয় সবাই বিষয়টিকে এরিয়ে যাবার চেষ্টা করেন।
ওয়াসার দেওয়া তথ্যমতে, যশলদিয়া থেকে পরিশোধিত পানি পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কে। সংথাটির মোট পানি সরবরাহের ১৩ শতাংশের জোগান দিচ্ছে যশলদিয়া।
এই পানি পাচ্ছে রাজধানীর বাবুবাজার, চকবাজার, লালবাগ, বংশাল, আবুল হাসনাত রোডে, নাজিমুদ্দিন রোড, তাতীবাজার, নবাবপুর, নর্থসাউথ রোড ও ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা।
যশলদিয়া প্রকল্পটি ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা নদীর সঙ্গে একটি খাল কেটে প্রকল্প স্থলে পানি আনা হচ্ছে। খাল প্রান্তে যে পাঁচটি পাম্পের মাধ্যমে এ পানি সংগ্রহ করে ওয়াসা। তবে বর্তমানে পাঁচটি পাম্প একসঙ্গে চালানো হচ্ছে না।
এর কারনে তো নোংরা পানি আসতে পারে না, নিশ্চয়ই পরীশোধন না করে সরবরাহ করা হয়েছে, কারণ এই জাতি ঢাকা ওয়াসার অতীত চরিত্র সম্পর্কে ওয়কিভ রয়েছেন,
এদিকে ওয়াসা জানায়,
প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ কোটি লিটার পানি পরিশোধন ক্ষমতা রয়েছে এ প্রকল্পটির। কিন্তু প্রকল্প সক্ষমতার পরিমাণ পানি রাজধানীতে সরবরাহ করার সুযোগ আপাতত নেই তাদের।
বিষয় টি এখানে হয়তো পরিস্কার হয়েছে,
প্রকল্পেটির সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ বলেন,
পদ্মা যশলদিয়া প্রকল্পে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ কোটি লিটার পানি পরিশোধন এবং সরবরাহ করতে সক্ষম।
কিন্তু পরিশোধিত পানি যে গতিতে ঢাকায় যাবে, তাতে ঢাকার অনেক পাইপলাইন ফেটে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে অনেক বাড়িও ধসে পড়তে পারে।
তাই আমরা বর্তমানে পরিশোধন ক্ষমতার অর্ধেক পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করছি।
বিষয় টিকে কে হাস্যকর বলছেন,
তিনি জানান, প্রকল্পে নদী থেকে পানি নিতে পাঁচটি পাম্প থাকলেও প্রতিদিন দুটি করে পাম্প চালানো হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে পাঁচটি পাম্পকেই বদল করে করে চালানো হচ্ছে।
তবে প্রতিদিন দুইটির বেশি পাম্প চালানো হচ্ছে না। আর এদিকে বংশাল আবুল হাসনাত রোডে নাজিমুদ্দিন রোডের পানির তেমন প্রেসার না থাকার কারণে অনেকে জেড-পাম্প দিয়ে পানি টেনে ট্যাংকিতে প্রবেশ করাচ্ছেন।
এই বিষয় বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা ওয়াসার কর্তৃপক্ষ নিকট অভিযোগ করা হলে-তারা বলেন পেশার বাড়ানো হবে।
গ্রাহকদের নেতাদের মত মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বেড়াচ্ছেন ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
অনলাইন কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে প্রকল্প পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ওয়াহিদুল ইসলাম মুরাদ জানান,
পাম্প চালু করা, বন্ধ করা, ত্রুটি শনাক্ত, সমাধান- সবই একটি কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এ ছাড়া প্রকল্প কাজে নিয়োজিত কর্মী কে, কখন, কোথায় অবস্থান করছে তাও কন্ট্রোলরুম থেকে তদারক করা হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়,
পদ্মা নদীর পানি পাম্পের মাধ্যমে প্রকল্পে এনে ক্লোরিং মেশানো হয় পানিকে জীবাণুমুক্ত করতে। এরপর পানি থেকে কাদা আলাদা করা হয়। সেখান থেকে তা পাঠানো হয় ফ্লিটারের মাধ্যমে পরিশোধন করতে। কয়েক স্তরে পরিশোধনের পর ব্যবহার উপযোগী পানি সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানীর ওয়াসা পাইপলাইনে।
একটি বিষয় একটু সান্তনা পাওয়া যায়-
পদ্মা নদীর পানি পরিশোধন করে গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে পানি কতটা নিরাপদ থাকে, জানতে চাইলে ওয়াসার এই প্রকৌশলী বলেন,
আমরা মনে করি এই পানি সব কাজে ব্যবহার উপযোগী।
তবে গ্রাহকের রিজার্ভ ট্যাংকে যাওয়ার পর পানি দূষিত হতে পারে।
কারণ অনেকেরই রিজার্ভ টাংকি বা পাইপে ময়লা জমে আছে,
ফাটলও থাকতে পারে।
এ ক্ষেত্রে পানি দূষিত হওয়ার সুযোগ থাকে। তাই আমরা পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করতে বলি।
পদ্মা যশলদিয়ার পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী পানি কবে উৎপাদন এবং রাজধানীতে সরবরাহ করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ বলেন,
ঢাকা শহরে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ চলছে।
কাজ শেষ হলে প্রকল্পক্ষমতা অর্থাৎ ৪৫ কোটি লিটার পানি প্রতি ২৪ ঘন্টায় পরিশোধন এবং তা সরবরাহ করা যাবে।
খাতা কলমে এবং বাস্তবে কোনো দিকেই ঢাকায় পানির কোনো অভাব নেই বলে জানান ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম।
তিনি বলেন,
২০১৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে আমরা ঢাকার পানির চাহিদা এবং সরবরাহের সমতা এনেছি।
থিউরিটিক্যাল এব্বং প্রাকটিক্যাল কোনো দিক থেকেই পানির অভাব নেই।
বর্তমানে ৩৩ থেকে ৩৪ শতাংশ পরিশোধিত পানি এবং বাকিটা ভূগর্ভস্থ পানি ঢাকা ওয়াসা সরবরাহ করছে। এটিকে ৭০ শতাংশ পরিশোধিত পানি এবং ৩০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানির লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যেতে আমরা কাজ করছি।
১৪৫টি ডিসট্রিক মিটার এরিয়ায় (ডিএমএ) ঢাকা শহরকে ভাগ করে নতুন পাইপলাইন তৈরির কাজ করছে ঢাকা ওয়াসা। এই পাইপলাইন তৈরির কাজ শেষ হলে পদ্মা যশলদিয়া প্রকল্পের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করে তা ঢাকার গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো যাবে বলে জানান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচালক।
বিশুদ্ধ পানি পাবার বিষয়-
বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার অন্তরায় হিসেবে গ্রাহকের রিজার্ভ ট্যাংক ও পাইপ অপরিষ্কার থাকাকে কারণ মনে করেন তাসকিম এ খান।
তিনি বলেন, ‘রিজার্ভার বা ছাদের ওপর যে ট্যাংক থাকে সেটাকে যদি তিন মাস পর পর পরিষ্কার করা না হয়, যতই ভাল পানি দেওয়া হোক লাভ হবে না।‘। বিশুদ্ধ পানি পেতে প্রতি তিন মাস পর পর বাসার রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কার করতে গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।