ঢাকা ০১:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৯০ ইলা লালালালা: সবুজ ঘাসের লাল দ্রোহের সুর যার কন্ঠে তরুণ আইনজীবী সাইফুলকে যেভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতিত অতিষ্ঠ জনসাধারণ সমাবেশে গিয়ে টাকা না পেয়ে বাড়ি ঘেরাও, ৫ প্রতারক আটক অভিনব সিন্ডিকেট: সয়াবিন তেলের সঙ্গে চাল-ডাল কেনা বাধ্যতামূলক! সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন হাসনাত ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়েও নার্সিং ইনস্টিটিউট ব্যবসা নিলুফার ইয়াসমিনের অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তলব পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি

লাগামহীন দুর্নীতির নায়ক নাজির আ. লতিফ একাধিক বাড়ী, ফ্লাট আর ব্যাংকে রয়েছে গচ্ছিত কোটি কোটি টাকা

সময়ের কণ্ঠ নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট টাইম : ১২:৫১:৩৪ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২
  • / ৩৯২ ৫০০০.০ বার পাঠক

রাজধানীর কর অঞ্চল-১৪ তে নাজির হিসেবে কর্মরত আ. লতিফ সরকার বহুদিন ধরেই নানা অনিয়ম ও সীমাহীন অভিযোগের যেন এক নায়ক হয়ে উঠেছেন। সুত্রমতে জানা যায়, চাকরীরত অবস্থায় দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ার পাশাপাশি নামে বেনামে বনে গেছেন অনেক বাড়ির মালিকও। কিন্তু একজন সামান্য নাজির পদে চাকরী করে কিভাবে হলেন এত টাকার মালিক সে নিয়ে থেকে গেছে সংশয় আর প্রশ্ন খোদ তার নিজ এলাকাবাসীর কাছেই।
কর অফিসে কর্মরত আরেকজন মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আ. লতিফ সরকার তার স্ত্রী নুরজাহানের নামে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখার একটি হিসেবে রেখেছেন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার স্ত্রীর নামে ওই একাউন্টে কয়েক কোটি টাকা জমা রয়েছে। দুদকের ভয়ে টাকার পাশাপাশি ক্রয়কৃত বাড়ি, ফ্লাটসহ এসবের অধিকাংশই কাগজপত্রে নিজ স্ত্রী নুরজাহানের নামেই করেছেন। এর পাশাপাশি যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলে রহমতপুরের ‘গ্রেটার কুমিল্লা’ টাওয়ারেও স্ত্রীসহ তার ছেলে নোমান সরকারের নামে এবং নিজ নামে ৮টি ফ্লাট ক্রয় সূত্রে মালিকানা নিয়ে এর মাঝে ৫টি বিক্রিও করে দিয়েছেন। আর সেই বিক্রিত অর্থ থেকে রহমতপুরের বাসিন্দা মাহিদুলের নিকট থেকে পরে একটি বাড়ি ক্রয় করেন। আর এর মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি ও ৩টি অবশিষ্ট ফ্লাটের মালিকানা এখন আ. লতিফ সরকার।
এদিকে ‘গ্রেটার কুমিল্লা’ টাওয়ারের অন্যান্য বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকর্মীদেরও জানিয়েছে, এই টাওয়ারটির মূল মালিক আ. লতিফ আর তিনি বহাল আছেন টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারী হিসেবে। এমনকি অভিযোগে আরও জানা যায়, এই ভবনটি নির্মাণেও মানা হয়নি রাজউকের ভবন নীতিমালা। নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী যা এই ভবনটিকে ফেলে দিয়েছে ঝুঁকির মধ্যেও। ভবনটির প্রতিবেশী আরেক বাড়ির মালিক বিপ্লব জানান, কেউ এই বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে আসলে আ. লতিফ নানা হুমকী দেয়ার পাশাপাশি পুলিশি ভয়-ভীতিও দেখিয়ে থাকেন।
এদিকে আ. লতিফের আরও নানা অপকর্মের বিষয়ে তার নিজ গ্রামের লোকেরাও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে আসছে যার সুষ্ঠু কোনো প্রতিকার তারা পায়নি বলে জানান। এমনই একজন ভুক্তভোগী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, আ. লতিফের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরের খুরইলে অবস্থিত। আর সেখানেও তিনি কায়েম করেছেন দুর্নীতির আরেক রাজত্ব। নানা সময়ে মানুষের জমি বেদখল করেও নির্মাণ করেছে বাসা-বাড়ি। এমনকি ৬বিঘা জমি ভরাট করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও এরই মধ্যে করেছে তিনি।
আ. লতিফ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির নানা অনিয়ম নিয়ে ইতামধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান যা দুদক আমলেও নিয়েছে। আর এরমধ্য দিয়ে আ. লতিফের বিষয়টি তদন্তাধীন আছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আ. লতিফ সরকার বেনামে তৈরী করেছেন নানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য যাত্রাবাড়ির রহমতপুরের ‘মেসার্স দিনা এন্টারপ্রাইজ’ ডেমড়ার কোনাপাড়ায় ‘অনন্ত এন্টারপ্রাইজ’ উত্তর গোড়ানে ‘মেসার্স মাহি এন্টারপ্রাইজ’ পরিবাগে ‘ফাহিম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ মতিঝিলে ‘জে এন্ড আর কমিউনিকেশন’ খিলগাঁওয়ে ‘মেসার্স এম আর এন্টারপ্রাইজ’ নামের এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকও স্বয়ং আ. লতিফ সরকার।
আ. লতিফ সরকারের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হবার পর থেকেই সাধারণ এলাকাবাসী থেকে শুরু করে নিজ গ্রামের জনসাধারণরাও রেহাই পায়নি তার অত্যাচার আর হুমকির হাত থেকে।
এদিকে দুদকে অভিযোগ দাখিলকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে এমন দুর্নীতিবাজ আ. লতিফের সঠিক বিচার আমি প্রত্যাশা করি। আর যেন কোনো মানুষ তার অন্যায়ের শিকার না হয়। আর কেউ যেন নিজের কষ্টের কেনা জমি না হারায়।
এব্যাপারে আ. লতিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তিনি শুধু কালক্ষেপন করেছেন। তার ছেলে কর অঞ্চল-১২তে কর্মরত আছেন বলে তিনি টেলিফোনে জানান।
এদিকে আ. লতিফের ছেলে পরিচয় দানকারী জনৈক ব্যাক্তি বার বার এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি টেলিফোনে আরও জানান, তার বাবার পাশাপাশি তিনিও কর অঞ্চল-১২তে কর্মরত আছেন। এ সংবাদ প্রকাশ করা হলে তাদের মান সম্মানের হানি হবে।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

লাগামহীন দুর্নীতির নায়ক নাজির আ. লতিফ একাধিক বাড়ী, ফ্লাট আর ব্যাংকে রয়েছে গচ্ছিত কোটি কোটি টাকা

আপডেট টাইম : ১২:৫১:৩৪ অপরাহ্ণ, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২

রাজধানীর কর অঞ্চল-১৪ তে নাজির হিসেবে কর্মরত আ. লতিফ সরকার বহুদিন ধরেই নানা অনিয়ম ও সীমাহীন অভিযোগের যেন এক নায়ক হয়ে উঠেছেন। সুত্রমতে জানা যায়, চাকরীরত অবস্থায় দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ার পাশাপাশি নামে বেনামে বনে গেছেন অনেক বাড়ির মালিকও। কিন্তু একজন সামান্য নাজির পদে চাকরী করে কিভাবে হলেন এত টাকার মালিক সে নিয়ে থেকে গেছে সংশয় আর প্রশ্ন খোদ তার নিজ এলাকাবাসীর কাছেই।
কর অফিসে কর্মরত আরেকজন মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আ. লতিফ সরকার তার স্ত্রী নুরজাহানের নামে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখার একটি হিসেবে রেখেছেন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার স্ত্রীর নামে ওই একাউন্টে কয়েক কোটি টাকা জমা রয়েছে। দুদকের ভয়ে টাকার পাশাপাশি ক্রয়কৃত বাড়ি, ফ্লাটসহ এসবের অধিকাংশই কাগজপত্রে নিজ স্ত্রী নুরজাহানের নামেই করেছেন। এর পাশাপাশি যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলে রহমতপুরের ‘গ্রেটার কুমিল্লা’ টাওয়ারেও স্ত্রীসহ তার ছেলে নোমান সরকারের নামে এবং নিজ নামে ৮টি ফ্লাট ক্রয় সূত্রে মালিকানা নিয়ে এর মাঝে ৫টি বিক্রিও করে দিয়েছেন। আর সেই বিক্রিত অর্থ থেকে রহমতপুরের বাসিন্দা মাহিদুলের নিকট থেকে পরে একটি বাড়ি ক্রয় করেন। আর এর মধ্য দিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি ও ৩টি অবশিষ্ট ফ্লাটের মালিকানা এখন আ. লতিফ সরকার।
এদিকে ‘গ্রেটার কুমিল্লা’ টাওয়ারের অন্যান্য বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকর্মীদেরও জানিয়েছে, এই টাওয়ারটির মূল মালিক আ. লতিফ আর তিনি বহাল আছেন টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারী হিসেবে। এমনকি অভিযোগে আরও জানা যায়, এই ভবনটি নির্মাণেও মানা হয়নি রাজউকের ভবন নীতিমালা। নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী যা এই ভবনটিকে ফেলে দিয়েছে ঝুঁকির মধ্যেও। ভবনটির প্রতিবেশী আরেক বাড়ির মালিক বিপ্লব জানান, কেউ এই বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে আসলে আ. লতিফ নানা হুমকী দেয়ার পাশাপাশি পুলিশি ভয়-ভীতিও দেখিয়ে থাকেন।
এদিকে আ. লতিফের আরও নানা অপকর্মের বিষয়ে তার নিজ গ্রামের লোকেরাও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে আসছে যার সুষ্ঠু কোনো প্রতিকার তারা পায়নি বলে জানান। এমনই একজন ভুক্তভোগী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, আ. লতিফের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরের খুরইলে অবস্থিত। আর সেখানেও তিনি কায়েম করেছেন দুর্নীতির আরেক রাজত্ব। নানা সময়ে মানুষের জমি বেদখল করেও নির্মাণ করেছে বাসা-বাড়ি। এমনকি ৬বিঘা জমি ভরাট করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও এরই মধ্যে করেছে তিনি।
আ. লতিফ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির নানা অনিয়ম নিয়ে ইতামধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান যা দুদক আমলেও নিয়েছে। আর এরমধ্য দিয়ে আ. লতিফের বিষয়টি তদন্তাধীন আছে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আ. লতিফ সরকার বেনামে তৈরী করেছেন নানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য যাত্রাবাড়ির রহমতপুরের ‘মেসার্স দিনা এন্টারপ্রাইজ’ ডেমড়ার কোনাপাড়ায় ‘অনন্ত এন্টারপ্রাইজ’ উত্তর গোড়ানে ‘মেসার্স মাহি এন্টারপ্রাইজ’ পরিবাগে ‘ফাহিম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ মতিঝিলে ‘জে এন্ড আর কমিউনিকেশন’ খিলগাঁওয়ে ‘মেসার্স এম আর এন্টারপ্রাইজ’ নামের এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকও স্বয়ং আ. লতিফ সরকার।
আ. লতিফ সরকারের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হবার পর থেকেই সাধারণ এলাকাবাসী থেকে শুরু করে নিজ গ্রামের জনসাধারণরাও রেহাই পায়নি তার অত্যাচার আর হুমকির হাত থেকে।
এদিকে দুদকে অভিযোগ দাখিলকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান জানান, ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে এমন দুর্নীতিবাজ আ. লতিফের সঠিক বিচার আমি প্রত্যাশা করি। আর যেন কোনো মানুষ তার অন্যায়ের শিকার না হয়। আর কেউ যেন নিজের কষ্টের কেনা জমি না হারায়।
এব্যাপারে আ. লতিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তিনি শুধু কালক্ষেপন করেছেন। তার ছেলে কর অঞ্চল-১২তে কর্মরত আছেন বলে তিনি টেলিফোনে জানান।
এদিকে আ. লতিফের ছেলে পরিচয় দানকারী জনৈক ব্যাক্তি বার বার এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি টেলিফোনে আরও জানান, তার বাবার পাশাপাশি তিনিও কর অঞ্চল-১২তে কর্মরত আছেন। এ সংবাদ প্রকাশ করা হলে তাদের মান সম্মানের হানি হবে।