টঙ্গীর মাদক সম্রাজ্ঞী মোমেলা কোটি টাকার বাড়ি-গাড়ি রেখে থাকেন বস্তিতে

- আপডেট টাইম : ১১:০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
- / ১ ১৫০.০০০ বার পাঠক
রাজধানীর উত্তরা লাগোয়া শিল্পনগরী টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তিকে মাদকের হাট বলা হয়। এই মাদকের হাট নিয়ন্ত্রণ করেন মাদক সম্রাজ্ঞী মোমেলা।ব্যাংকের মাঠ বস্তিতে চলে মাদকের রমরমা কারবার। থানা প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযান ও কড়া নজরদারিতেও থেমে নেই মাদক ব্যবসায়।
ব্যাংকের মাঠ বস্তির মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী, তাদের মধ্যে মোমেলা অন্যতম। মোমেলা মাদ্রকসম্রাজ্ঞী মাদকের কারবার করে গড়েছেন বিপুল সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি। তার পরও থাকেন টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তিতে।টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তিতে হরদম বিক্রি হচ্ছে মাদক। তবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। অপরিচিত কারও কাছে মাদক বিক্রি করেন না ব্যবসায়ীরা।
মাদক সম্রাজ্ঞী মোমেলা একাধিক বার পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল খেটেছেন।সে জেলখানা থেকে বাহির হয়ে সোজা আবার ব্যাংকের মাঠ বস্তিতে। মোমেলা ৩/৪ টি আলাশান বাড়ির মালিক এবং বিপুল পরিমান টাকা মালিক।টঙ্গীর আলোচিত মাদকসম্রাজ্ঞী মোমেলা বেগম (৪০)। থাকেন মাদক অধ্যুষিত টঙ্গীর কো-অপারেটিভ ব্যাংক মাঠ বস্তিতে। এক যুগ ধরে বস্তিতে বসে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা। তাতে গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। খোদ টঙ্গীতেই রয়েছে মোমেলার তিনটি অলিশান বাড়ি ও একাধিক গাড়ি। একাধিক বাড়ি-গাড়ি থাকা সত্ত্বেও বস্তি ছাড়েননি মোমেলা।
মাদক মামলায় একাধিকবার জেল খেটে জামিনে বের হয়ে ফের বস্তিতে গিয়ে ওঠেন তিনি। সেখানে বসে আবার চালিয়ে যান মাদক ব্যবসা। আওয়ামীলীগের সময় স্থানীয় সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এক যুগ ধরে চলিয়েছেন মোমেলা বেগমের মাদক সাম্রাজ্য।বর্তমান ৫ ই আগস্টের পর মোমেলা বেগম খোলস পাল্টিয়ে বিএনপির কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা বানিজ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবার বড় চালান ও দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ফেনসিডিলের চালান টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তিতে নিয়ে আসেন মোমেলা বেগম। এরপর ছোট ছোট চালানে সেসব পৌঁছে দেন টঙ্গী ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয় প্রশাসনের মাদক ব্যবসায়ীদের নামের তালিকার শীর্ষে রয়েছে মোমেলা বেগমের নাম।
মোমেরা মাদক বিক্রির টাকায় টঙ্গীতে কিনেছেন তিনটি বাড়ি। ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের মরকুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন কুদ্দুস খলিফা রোডে ‘জাহিদ হাসান ভিলা’ নামে একটি বহুতল বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। একই ওয়ার্ডের শিলমুন পূর্বপাড়া যুগীবাড়ি রোডে মাতৃকোল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির স্বপন মাস্টারের কাছ থেকে কেনেন অর্ধকোটি টাকার একটি বাড়ি। পুবাইলের করমতলা পূর্বপাড়া আবাসিক এলাকায় পৌনে ৪ কাঠা জমির ওপর একটি আধাপাকা বাড়ি রয়েছে তার। ব্যাংক মাঠ বস্তিতে রয়েছে একাধিক আধাপাকা ঘর।মোমেলা তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলমকে কিনে দিয়েছেন চারটি মিনি ট্রাক ও সিএনজি। মেয়েজামাই পুলিশের কথিত সোর্স হৃদয়কে কিনে দিয়েছেন ২০ লাখ টাকা দামের একটি প্রাইভেটকার।
এ ছাড়া টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মোমেলার রয়েছে নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
সূত্র জানায়, ২০১০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মোমেলার বিরুদ্ধে টঙ্গী পূর্ব থানা, গাজীপুর ডিবি, র্যাব ও গাজীপুর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ১৭/২০টি মাদক মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে মোমেলা বেগমের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমার থানা এলাকায় সব সময় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা রি-কভার ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারি না।
বস্তির মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যপারে তথ্য সংগ্রহ চলছে। প্রত্যেকের নামে একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে। খুব শিগগির ব্যাপক আকারে মাদকবিরোধী অভিযান হবে টঙ্গীর বস্তিগুলোতে।’ এ ছাড়া নিয়মিতই মাদকসহ গ্রেফতার করে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।