ঢাকা ০৫:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
রায়পুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে জাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয় বাংলাদেশের কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র গাজায় দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ইসরায়েলকে নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের রায়পুরে চিকিৎসকের বিচার দাবীতে মানববন্ধন বিরামপুরে এক পা ওয়ালা শিশু সহ জমজ শিশু জন্ম দিলো এক প্রসুতি মা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে দুই চোরাকারবারি গ্রেফতার,ট্রাকসহ ২১ লক্ষ টাকার ভারতীয় চিনি জব্দ ভন্ড ও দুর্নীতিবাজদের আড্ডাখানা রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ আজমিরীগঞ্জে আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন এডুকেশন এর উদ্যেগে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ইবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত, দ্রুত হতে পারে ঘোষণা হল-অনুষদ সম্মেলন ঈদের পর মোংলায় ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

দ্বীন ইসলামে সৎ উপদেশের গুরুত্ব,মাওলানা মু. জিয়াউল হক নোমানী

প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হচ্ছে মানবতার ধর্ম কল্যাণকামিতার ধর্ম।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাধা দান দীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মূলত: দীন হলো পরস্পরের কল্যাণ কামনা। আর এটি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ ব্যতীত অসম্ভব। কারণ সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করলে পরস্পর কল্যাণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে পারে। আবার অসৎ কাজে বাধা দিলে ক্ষতি থেকে বিরত রাখা সহজ হয়। অতএব এটি দীনের অন্যতম মূলনীতি। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«الدين النصيحة.

হাদিসে পাকে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মুমিন মুসলমানদেরকে পরস্পর একে অপরের ভাই ভাই হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। একজন মুসলমান অপর মুসলমানের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের জন্য কল্যাণের সঙ্গী হয়ে থাকা ইসলামের শিক্ষা। দুনিয়ার জীবনের চলার পথে অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের উপদেশের প্রয়োজন হয়। ছোটদের জন্য উপদেশ উপকারী ও কল্যাণকর। বড়দের কর্তব্য হচ্ছে ছোটদের কল্যাণকামী হয়ে উপদেশ দেওয়া আর ছোটদেরও কর্তব্য হচ্ছে বড়দের উপদেশ কল্যাণকামিতা হিসেবে গ্রহণ করা। হাদিসে উপদেশকে কল্যাণকামিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

হজরত আবু রুকাইয়া তামিম বিন আউস দারি (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন হচ্ছে সদুপদেশ বা কল্যাণ কামনা।’ আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলমানের নেতার জন্য এবং সর্বসাধারণ মুসলিমের জন্য।’ (মুসলিম : ২০৫)।
এ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা ও সদুপদেশের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি উপদেশ ও কল্যাণকামিতাকে ইসলামের প্রধান একটি দিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এ হাদিস থেকে ইসলামে সদুপদেশের গুরুত্ব বুঝে আসে। এ ছাড়া কোরআন-হাদিসে মুসলিম উম্মাহকে সদুপদেশের বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুগে যুগে নবী ও রাসুলরা মানুষকে কল্যাণকামিতা থেকে উপদেশ দিয়েছেন। কোরআনে হজরত নুহ (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে- তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং তোমাদের সদুপদেশ দিই।’ (সুরা আরাফ : ৬২
মানুষের জন্য কল্যাণকামিতা, উপদেশ, দয়া ও সহমর্মিতা, সততা ও নিষ্ঠার জায়গা থেকেই হওয়া আবশ্যক। তার সঙ্গে যদি বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বার্থ জড়িত। এরশাদ হচ্ছে,
كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ ﴾ [ال عمران: ١١٠]
‘‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১১০]
অতএব আলোচ্য আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ মহান দায়িত্বটি আঞ্জাম দেয়ার মাঝে মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে। আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হন নি; বরং তাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নবী ও রাসূলকে। যাঁরা স্ব-স্ব জাতিকে সৎ ও কল্যাণকর কাজের প্রতি উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং অসৎ ও অকল্যাণকর কাজ হতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [النحل:٣٦]
‘‘নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুতকে পরিত্যাগ করবে”[2]।
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও এ গুণের পথিকৃত ছিলেন। তিনি নবুওয়তের পূর্বে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল ফুযুলে অংশ নিয়েছেন। ছোট বেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ গুণাবলী তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠায় আল-আমিন, আল সাদিক উপাধিতে তিনি ভুষিত ছিলেন। তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
‘‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন। মানবজাতির জন্য সকল উত্তম ও পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করেন এবং খারাপ বিষয়গুলো হারাম করেন।’’[11]
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে তাঁর রিসালাতের পূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সত্ত্বা, যাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি সৎকাজের আদেশ দেন, সকল অসৎ কর্ম হতে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন।
হযরতে জারির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি সালাত কায়েম, যাকাত আদায় এবং মুসলিম উম্মাহের জন্য নসিহাত বা সৎ উপদেশ করার প্রতি।
হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়াদ্ব (রা.) বলেন আমাদের যারা মর্যাদা লাভ করেছেন তারা অতিরিক্ত নামাজ ও রোজার মাধ্যমে লাভ করেনি বরং তারা আমাদের মাঝে এই মর্যাদা লাভ করেছেন হৃদয়ের উদারতা আত্মার পরিচ্ছন্নতা ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি কল্যাণ কামিতার মাধ্যমে।
এ কল্যাণ কামিতা হবে নিজের জন্য,অপরের জন্য, মুসলিম শাসকের জন্য সর্বোপূরি আম মুসলমানের জন্য।
সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎকাজে বাধা দান মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। মুমিন নিজে কেবল সৎকাজ করবে না, বরং সকলকে সে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে। কেননা, তারা পরস্পরের বন্ধু। অতএব একবন্ধু অপর বন্ধুর জন্য কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু কামনা করতে পারে না। এদিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ ٧١ ﴾ [التوبة: ٧١]
‘‘মুমিন নারী ও পুরুষ তারা পরস্পরের বন্ধু। তারা একে অপরকে যাবতীয় ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।’’[13]
প্রতিদিন আমরা আমাদের চারপাশে অনেক খারাপ কাজ সংঘটিত হতে দেখি। কিন্তু কেউ এ ধরনের কাজে বাধা প্রদান করি না। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা ঠিক নয়। কারণ হতে পারে মানুষ ভুলবশত ও গাফেল হিসেবে এসব কাজ করছে। বাধা না থাকলে নির্বিঘ্নে একাজ সংগঠিত হতে থাকলে এক সময় দেশ ও জাতি কেউই এ কাজের কুফল হতে রেহাই পাবে না। প্রকৃত মুসলিম ও সচেতন মানুষের অবশ্য কর্তব্য হলো এ ধরনের কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখা।
এজন্য আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, বড়দের উপদেশ মেনে নেওয়া ও ছোটদেরকে উপদেশের মাধ্যমে কল্যাণকামিতা ছড়িয়ে দেওয়া। আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

আরো খবর.......

জনপ্রিয় সংবাদ

রায়পুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে জাটকা নিধন ও ক্রয় বিক্রয়

দ্বীন ইসলামে সৎ উপদেশের গুরুত্ব,মাওলানা মু. জিয়াউল হক নোমানী

আপডেট টাইম : ০৩:১৬:১২ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০২২

প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হচ্ছে মানবতার ধর্ম কল্যাণকামিতার ধর্ম।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাধা দান দীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মূলত: দীন হলো পরস্পরের কল্যাণ কামনা। আর এটি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ ব্যতীত অসম্ভব। কারণ সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করলে পরস্পর কল্যাণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে পারে। আবার অসৎ কাজে বাধা দিলে ক্ষতি থেকে বিরত রাখা সহজ হয়। অতএব এটি দীনের অন্যতম মূলনীতি। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
«الدين النصيحة.

হাদিসে পাকে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মুমিন মুসলমানদেরকে পরস্পর একে অপরের ভাই ভাই হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। একজন মুসলমান অপর মুসলমানের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের জন্য কল্যাণের সঙ্গী হয়ে থাকা ইসলামের শিক্ষা। দুনিয়ার জীবনের চলার পথে অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের উপদেশের প্রয়োজন হয়। ছোটদের জন্য উপদেশ উপকারী ও কল্যাণকর। বড়দের কর্তব্য হচ্ছে ছোটদের কল্যাণকামী হয়ে উপদেশ দেওয়া আর ছোটদেরও কর্তব্য হচ্ছে বড়দের উপদেশ কল্যাণকামিতা হিসেবে গ্রহণ করা। হাদিসে উপদেশকে কল্যাণকামিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

হজরত আবু রুকাইয়া তামিম বিন আউস দারি (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন হচ্ছে সদুপদেশ বা কল্যাণ কামনা।’ আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলমানের নেতার জন্য এবং সর্বসাধারণ মুসলিমের জন্য।’ (মুসলিম : ২০৫)।
এ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা ও সদুপদেশের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি উপদেশ ও কল্যাণকামিতাকে ইসলামের প্রধান একটি দিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এ হাদিস থেকে ইসলামে সদুপদেশের গুরুত্ব বুঝে আসে। এ ছাড়া কোরআন-হাদিসে মুসলিম উম্মাহকে সদুপদেশের বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুগে যুগে নবী ও রাসুলরা মানুষকে কল্যাণকামিতা থেকে উপদেশ দিয়েছেন। কোরআনে হজরত নুহ (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে- তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং তোমাদের সদুপদেশ দিই।’ (সুরা আরাফ : ৬২
মানুষের জন্য কল্যাণকামিতা, উপদেশ, দয়া ও সহমর্মিতা, সততা ও নিষ্ঠার জায়গা থেকেই হওয়া আবশ্যক। তার সঙ্গে যদি বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বার্থ জড়িত। এরশাদ হচ্ছে,
كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ ﴾ [ال عمران: ١١٠]
‘‘তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১১০]
অতএব আলোচ্য আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এ মহান দায়িত্বটি আঞ্জাম দেয়ার মাঝে মানুষের কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে। আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হন নি; বরং তাদের হেদায়াতের জন্য প্রেরণ করেছেন কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নবী ও রাসূলকে। যাঁরা স্ব-স্ব জাতিকে সৎ ও কল্যাণকর কাজের প্রতি উৎসাহ যুগিয়েছেন এবং অসৎ ও অকল্যাণকর কাজ হতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [النحل:٣٦]
‘‘নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুতকে পরিত্যাগ করবে”[2]।
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও এ গুণের পথিকৃত ছিলেন। তিনি নবুওয়তের পূর্বে অন্যায় অবিচার রুখতে হিলফুল ফুযুলে অংশ নিয়েছেন। ছোট বেলা থেকে মৌলিক মানবীয় সৎ গুণাবলী তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠায় আল-আমিন, আল সাদিক উপাধিতে তিনি ভুষিত ছিলেন। তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿يَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
‘‘তিনি সৎকাজের আদেশ করেন এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ করেন। মানবজাতির জন্য সকল উত্তম ও পবিত্র জিনিসগুলো বৈধ করেন এবং খারাপ বিষয়গুলো হারাম করেন।’’[11]
সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হতে নিষেধ রাসূলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে তাঁর রিসালাতের পূর্ণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সত্ত্বা, যাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ বলেন, তাকে পাঠানো হয়েছে যাতে তিনি সৎকাজের আদেশ দেন, সকল অসৎ কর্ম হতে বারণ করেন, সব উত্তম বিষয় হালাল করেন এবং অপবিত্রগুলো হারাম করেন।
হযরতে জারির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি সালাত কায়েম, যাকাত আদায় এবং মুসলিম উম্মাহের জন্য নসিহাত বা সৎ উপদেশ করার প্রতি।
হযরত ফুযাইল ইবনে ইয়াদ্ব (রা.) বলেন আমাদের যারা মর্যাদা লাভ করেছেন তারা অতিরিক্ত নামাজ ও রোজার মাধ্যমে লাভ করেনি বরং তারা আমাদের মাঝে এই মর্যাদা লাভ করেছেন হৃদয়ের উদারতা আত্মার পরিচ্ছন্নতা ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি কল্যাণ কামিতার মাধ্যমে।
এ কল্যাণ কামিতা হবে নিজের জন্য,অপরের জন্য, মুসলিম শাসকের জন্য সর্বোপূরি আম মুসলমানের জন্য।
সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎকাজে বাধা দান মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব। মুমিন নিজে কেবল সৎকাজ করবে না, বরং সকলকে সে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালাতে হবে। কেননা, তারা পরস্পরের বন্ধু। অতএব একবন্ধু অপর বন্ধুর জন্য কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু কামনা করতে পারে না। এদিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন-
﴿وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَيُطِيعُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ سَيَرۡحَمُهُمُ ٱللَّهُۗ ٧١ ﴾ [التوبة: ٧١]
‘‘মুমিন নারী ও পুরুষ তারা পরস্পরের বন্ধু। তারা একে অপরকে যাবতীয় ভাল কাজের নির্দেশ দেয়, অন্যায় ও পাপ কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক যাদের প্রতি অচিরেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।’’[13]
প্রতিদিন আমরা আমাদের চারপাশে অনেক খারাপ কাজ সংঘটিত হতে দেখি। কিন্তু কেউ এ ধরনের কাজে বাধা প্রদান করি না। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা ঠিক নয়। কারণ হতে পারে মানুষ ভুলবশত ও গাফেল হিসেবে এসব কাজ করছে। বাধা না থাকলে নির্বিঘ্নে একাজ সংগঠিত হতে থাকলে এক সময় দেশ ও জাতি কেউই এ কাজের কুফল হতে রেহাই পাবে না। প্রকৃত মুসলিম ও সচেতন মানুষের অবশ্য কর্তব্য হলো এ ধরনের কাজ হতে মানুষকে বিরত রাখা।
এজন্য আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, বড়দের উপদেশ মেনে নেওয়া ও ছোটদেরকে উপদেশের মাধ্যমে কল্যাণকামিতা ছড়িয়ে দেওয়া। আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।