ঢাকা ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৯৯০ ইলা লালালালা: সবুজ ঘাসের লাল দ্রোহের সুর যার কন্ঠে তরুণ আইনজীবী সাইফুলকে যেভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতিত অতিষ্ঠ জনসাধারণ সমাবেশে গিয়ে টাকা না পেয়ে বাড়ি ঘেরাও, ৫ প্রতারক আটক অভিনব সিন্ডিকেট: সয়াবিন তেলের সঙ্গে চাল-ডাল কেনা বাধ্যতামূলক! সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন হাসনাত ডেপুটি রেজিস্ট্রার হয়েও নার্সিং ইনস্টিটিউট ব্যবসা নিলুফার ইয়াসমিনের অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তলব পুলিশ প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তন হলেও এসআই মিজানের অসাধু নীতির পরিবর্তন হয়নি

গ্রেনেড হামলা ১৮ বছর নাটকের নাম হাওয়া ভবন জজ মিয়া নাটকের কোন জবাব নেই বিএনপির’। প্রধানমন্ত্রী

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ০৩:১১:১৪ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২২ আগস্ট ২০২২
  • / ১৭০ ৫০০০.০ বার পাঠক

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কেউ জড়িত নয় এমনটি বিএনপির প্রকাশ্য অবস্থান। তবে ওই ঘটনা নিয়ে দলটির ভেতরে বেশ অস্বস্তি আছে। আর ওই অস্বস্তি আরো বেড়ে যায় ২১ আগস্ট ঘনিয়ে এলে। কারণ ওই ঘটনা এবং তা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক অভিযোগের জবাব বিএনপি দিতে পারলেও জজ মিয়া ‘নাটক’ বিষয়টিতে যৌক্তিক জবাব দলটির কাছে নেই। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে এখন মনে করে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলেও জজ মিয়া প্রসঙ্গে তাঁরা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, ‘মামলার পুনঃ তদন্ত, সম্পূরক চার্জশিট এমনকি রায় নিয়েও আমরা কিছু কথা বলতে পারছি, কিন্তু জজ মিয়ার বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।’ তাঁরা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সারা জীবন অভিযোগ করত বিএনপি গ্রেনেড হামলা করেছে। আর আমরা বলতাম করিনি। এভাবে রাজনীতির সময় পার করা যেত। কিন্তু জজ মিয়া নাটক নিয়ে আমরা কী বলব!’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের সরকারের আমলে তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত ও বিচার করা গেলে বিএনপিকে ধ্বংস করার যে খেলা আজ আওয়ামী লীগ খেলছে সেই সুযোগ পেত না।’ তিনি বলেন, ‘২১ আগস্টের ঘটনা শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই চক্রান্ত ছিল সেদিন জাতীয়তাবাদী বিএনপির নেতৃত্বকে কবর দেওয়া, যা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বিএনপির ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দাখিলকৃত তদন্ত ও অভিযোগপত্রে শুধু উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর নাম ছিল। তারেক রহমান ও বিএনপি নেতাদের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সিআইডির পুনঃ তদন্ত ও চার্জশিটে তারেক রহমান, লুত্ফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরীসহ নতুন করে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ফলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম না থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিএনপি নেতারা। এ ছাড়া মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার, তদন্তের জন্য এফবিআই ও ইন্টারপোলকে নিয়ে আসা এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন বিএনপি সরকারের সময়েই হয়েছে বলেও তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন। অভিযোগ করছেন, মুফতি হান্নানকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও আওয়ামী লীগের বাধায় সেটি সম্ভব হয়নি।

বিএনপি আরো যেসব যুক্তি দিচ্ছে তা হলো—গ্রেনেড হামলার সঠিক তথ্যদানকারীকে এক কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা জোট সরকারের তরফ থেকেই করা হয়েছিল। হামলার দিন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হামলায় নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে একটি চিঠিও লেখেন। পাশাপাশি হামলার কয়েক দিন পর খালেদা জিয়া সংলাপে বসার আগ্রহ দেখালেও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, খুনির সঙ্গে কিসের সমঝোতা? বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সে সময় বলেন, ‘আমাকে যে খুন করতে চেয়েছে তার সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়।’ আর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেওয়া মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলছে, ওই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সাজানো।

তবে জজ মিয়া নাটকের বিষয়ে আজ পর্যন্ত যৌক্তিক কোনো জবাব বিএনপির কাছ থেকে আসেনি। পরিবারকে টাকা দিয়ে নোয়াখালীর জজ মিয়াকে আসামি করে তাঁর কাছ থেকে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে সিআইডির স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনা ‘জজ মিয়া নাটক’ হিসেবে পরিচিত। গণমাধ্যমে ফাঁস হয় যে বিষয়টি পুলিশের সাজানো ছিল।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২১ আগস্ট নিয়ে বিএনপির অস্বস্তি থাকা স্বাভাবিক। কারণ ক্ষমতায় থাকতে পুরো বিষয়টি তারা তদন্ত না করে উপেক্ষা করেছে। জজ মিয়া স্টোরি সাজিয়েছে। তা ছাড়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়ে পুরো বিষয়টি কাঁধে নিয়েছেন।’

জজ মিয়ার ঘটনা ছাড়াও জোট সরকার আমলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়েও বিএনপির মধ্যে অস্বস্তি আছে। দলটির নেতাদের পাশাপাশি সুধীসমাজেরও অনেকে মনে করেন, ওই প্রতিবেদন জনগণের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য করা যায়নি। কারণ বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের ভাবমূর্তির সংকট ছিল।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এক নিবন্ধে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে লেখেন, ‘মোট ৪০ দিনের অনুসন্ধানে(?) প্রস্তুত তথাকথিত তদন্ত প্রতিবেদনে সেসব মনগড়া তথ্যই দেওয়া হয়েছিল, যা জোট সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা বলেছিলেন। আর তদন্ত কমিশনের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহীম যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা তো সেই একই কথা, যা বলেছিলেন চারদলীয় জোটের নেতা-মন্ত্রীরা।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে, ‘গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন ছিল একেবারেই ভুয়া। কারণ বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের কোনো ক্রেডিবিলিটি ছিল না। তিনি অনেক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অথচ জোট সরকার শুধু একটি সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারলেই তাদের মুখরক্ষা হতো। তা না করে তারা জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।’

২০০৪ সালের ২ অক্টোবর বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের কমিশন সরকারের কাছে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে এই গ্রেনেড হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল বলে উল্লেখ করে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা বলতে সে সময় ভারতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়। কিন্তু এর ফলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ছাড়াও সেই সময়ের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা গ্রেনেড হামলা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক নেতারা পরিপূর্ণভাবে অন্ধকারে ছিলেন বলে পরবর্তীকালে জানা যায়। দলটির অনেকের মনে করেন যে বাবর, হারিছ ও সালাম পিন্টুর ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই তারেক রহমান ফেঁসে গেছেন। বিএনপির বিব্রত হওয়ার কারণ এটাই।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ২১ আগস্টের ঘটনা বিএনপিকে দুর্বল করেছে। পাশাপাশি ওই ঘটনা রাজনীতিতে স্থায়ী অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। ওই ক্ষত রাজনীতির পারস্পরিক ন্যূনতম বোঝাপড়ার জায়গাটিও নষ্ট করে দিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হামলার ঘটনা ভয়াবহ এবং হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। এই হামলার ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিচলিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপিকে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপিকে জড়ানো হয়েছে।’

Courtesy: কালের কণ্ঠ

#21August #GrenadeAttack #২১আগস্ট #গ্রেনেডহামলা #বিএনপিজামাত #জঙ্গিহামলা #জজমিয়া

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গ্রেনেড হামলা ১৮ বছর নাটকের নাম হাওয়া ভবন জজ মিয়া নাটকের কোন জবাব নেই বিএনপির’। প্রধানমন্ত্রী

আপডেট টাইম : ০৩:১১:১৪ অপরাহ্ণ, সোমবার, ২২ আগস্ট ২০২২

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কেউ জড়িত নয় এমনটি বিএনপির প্রকাশ্য অবস্থান। তবে ওই ঘটনা নিয়ে দলটির ভেতরে বেশ অস্বস্তি আছে। আর ওই অস্বস্তি আরো বেড়ে যায় ২১ আগস্ট ঘনিয়ে এলে। কারণ ওই ঘটনা এবং তা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক অভিযোগের জবাব বিএনপি দিতে পারলেও জজ মিয়া ‘নাটক’ বিষয়টিতে যৌক্তিক জবাব দলটির কাছে নেই। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে এখন মনে করে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলেও জজ মিয়া প্রসঙ্গে তাঁরা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, ‘মামলার পুনঃ তদন্ত, সম্পূরক চার্জশিট এমনকি রায় নিয়েও আমরা কিছু কথা বলতে পারছি, কিন্তু জজ মিয়ার বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।’ তাঁরা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সারা জীবন অভিযোগ করত বিএনপি গ্রেনেড হামলা করেছে। আর আমরা বলতাম করিনি। এভাবে রাজনীতির সময় পার করা যেত। কিন্তু জজ মিয়া নাটক নিয়ে আমরা কী বলব!’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের সরকারের আমলে তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত ও বিচার করা গেলে বিএনপিকে ধ্বংস করার যে খেলা আজ আওয়ামী লীগ খেলছে সেই সুযোগ পেত না।’ তিনি বলেন, ‘২১ আগস্টের ঘটনা শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই চক্রান্ত ছিল সেদিন জাতীয়তাবাদী বিএনপির নেতৃত্বকে কবর দেওয়া, যা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বিএনপির ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দাখিলকৃত তদন্ত ও অভিযোগপত্রে শুধু উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর নাম ছিল। তারেক রহমান ও বিএনপি নেতাদের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সিআইডির পুনঃ তদন্ত ও চার্জশিটে তারেক রহমান, লুত্ফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরীসহ নতুন করে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ফলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম না থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিএনপি নেতারা। এ ছাড়া মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার, তদন্তের জন্য এফবিআই ও ইন্টারপোলকে নিয়ে আসা এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন বিএনপি সরকারের সময়েই হয়েছে বলেও তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন। অভিযোগ করছেন, মুফতি হান্নানকে দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও আওয়ামী লীগের বাধায় সেটি সম্ভব হয়নি।

বিএনপি আরো যেসব যুক্তি দিচ্ছে তা হলো—গ্রেনেড হামলার সঠিক তথ্যদানকারীকে এক কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা জোট সরকারের তরফ থেকেই করা হয়েছিল। হামলার দিন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এক বিবৃতিতে হামলার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হামলায় নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে একটি চিঠিও লেখেন। পাশাপাশি হামলার কয়েক দিন পর খালেদা জিয়া সংলাপে বসার আগ্রহ দেখালেও আওয়ামী লীগের তরফ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, খুনির সঙ্গে কিসের সমঝোতা? বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা সে সময় বলেন, ‘আমাকে যে খুন করতে চেয়েছে তার সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়।’ আর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেওয়া মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলছে, ওই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সাজানো।

তবে জজ মিয়া নাটকের বিষয়ে আজ পর্যন্ত যৌক্তিক কোনো জবাব বিএনপির কাছ থেকে আসেনি। পরিবারকে টাকা দিয়ে নোয়াখালীর জজ মিয়াকে আসামি করে তাঁর কাছ থেকে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে সিআইডির স্বীকারোক্তি আদায়ের ঘটনা ‘জজ মিয়া নাটক’ হিসেবে পরিচিত। গণমাধ্যমে ফাঁস হয় যে বিষয়টি পুলিশের সাজানো ছিল।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২১ আগস্ট নিয়ে বিএনপির অস্বস্তি থাকা স্বাভাবিক। কারণ ক্ষমতায় থাকতে পুরো বিষয়টি তারা তদন্ত না করে উপেক্ষা করেছে। জজ মিয়া স্টোরি সাজিয়েছে। তা ছাড়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়ে পুরো বিষয়টি কাঁধে নিয়েছেন।’

জজ মিয়ার ঘটনা ছাড়াও জোট সরকার আমলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়েও বিএনপির মধ্যে অস্বস্তি আছে। দলটির নেতাদের পাশাপাশি সুধীসমাজেরও অনেকে মনে করেন, ওই প্রতিবেদন জনগণের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য করা যায়নি। কারণ বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের ভাবমূর্তির সংকট ছিল।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এক নিবন্ধে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে লেখেন, ‘মোট ৪০ দিনের অনুসন্ধানে(?) প্রস্তুত তথাকথিত তদন্ত প্রতিবেদনে সেসব মনগড়া তথ্যই দেওয়া হয়েছিল, যা জোট সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা বলেছিলেন। আর তদন্ত কমিশনের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহীম যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা তো সেই একই কথা, যা বলেছিলেন চারদলীয় জোটের নেতা-মন্ত্রীরা।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে, ‘গ্রেনেড হামলা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন ছিল একেবারেই ভুয়া। কারণ বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের কোনো ক্রেডিবিলিটি ছিল না। তিনি অনেক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অথচ জোট সরকার শুধু একটি সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারলেই তাদের মুখরক্ষা হতো। তা না করে তারা জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে।’

২০০৪ সালের ২ অক্টোবর বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের কমিশন সরকারের কাছে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে এই গ্রেনেড হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হাত ছিল বলে উল্লেখ করে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা বলতে সে সময় ভারতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়। কিন্তু এর ফলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ছাড়াও সেই সময়ের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা গ্রেনেড হামলা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক নেতারা পরিপূর্ণভাবে অন্ধকারে ছিলেন বলে পরবর্তীকালে জানা যায়। দলটির অনেকের মনে করেন যে বাবর, হারিছ ও সালাম পিন্টুর ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই তারেক রহমান ফেঁসে গেছেন। বিএনপির বিব্রত হওয়ার কারণ এটাই।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ২১ আগস্টের ঘটনা বিএনপিকে দুর্বল করেছে। পাশাপাশি ওই ঘটনা রাজনীতিতে স্থায়ী অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। ওই ক্ষত রাজনীতির পারস্পরিক ন্যূনতম বোঝাপড়ার জায়গাটিও নষ্ট করে দিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হামলার ঘটনা ভয়াবহ এবং হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। এই হামলার ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিচলিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপিকে ধ্বংস করার সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বিএনপিকে জড়ানো হয়েছে।’

Courtesy: কালের কণ্ঠ

#21August #GrenadeAttack #২১আগস্ট #গ্রেনেডহামলা #বিএনপিজামাত #জঙ্গিহামলা #জজমিয়া