ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::

দিন দিন বেড়েই চলছে পণ্য, বাজারজুড়ে দীর্ঘশ্বাস

সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে চিরচেনা সেই ভিড় নেই। প্রয়োজনের তাগিদে যারা এসেছেন পণ্যের বাড়তি দাম তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস পরিণত হয়েছে দীর্ঘনিঃশ্বাসে। একটু কম দামে পণ্য কিনতে ক্রেতারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছেন। কিন্তু কোথাও মিলছে না। পকেটের সঙ্গে দামের সমন্বয় হচ্ছে না। তাই বাজারভর্তি পণ্য থাকার পরও কিনতে পারছেন না অধিকাংশ ক্রেতা।

পরিস্থিতি এমন- কেজিপ্রতি ১৮০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে চাল। চিনির দাম বাড়ছে হু-হু করে। মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দামেও যেন আগুন। ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও এখনো ক্রেতার নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় চাহিদার অর্ধেক পণ্য কিনতেই পকেট ফাঁকা হচ্ছে ভোক্তার। শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগসহ একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সব সময় সুযোগ খোঁজে। কোনো উপলক্ষ্য পেলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা করে। এবারও তাই হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহণ ভাড়া বেড়েছে এমন অজুহাতে পণ্যের দাম যা বাড়ার কথা তার চেয়েও দ্বিগুণ বাড়িয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনো সংশ্লিষ্টরা নির্বিকার। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। কঠোরভাবে বাজার তদারকি করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ালে, সেসব ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমদামি মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম- পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া। এসব মাছের দামও এখন ২০০ টাকা কেজি ছাড়িয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২২০ টাকা। যা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া প্রতিকেজি ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ১৬০-১৭০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা, গ্রাস কার্প ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা ৫০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০ টাকা, চাষের কই ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী নুরে আলম বলেন, মাছের বাজার চড়া। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় মাছ আনতে পরিবহণ খরচ বেড়েছে। এজন্য বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে পাইকাররা বেশি দাম নিচ্ছে।

এদিকে গত কয়েকদিনের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি।  এক কেজি বরবটি কিনতে ক্রেতার ৭০ টাকা গুনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি বেগুন ৬০-৭০ টাকা, শসা হাইব্রিড ৮০ ও দেশি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা, কচুরমুখী ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, টমেটো ১৩০-১৪০ টাকা।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকা। যা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৬০-৬২ টাকা। যা আগে ৫৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। আগে ৬৮-৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নাজিরশাইল মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫-৯০ টাকা। যা আগে ৭০-৮৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি সরু মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা। যা আগে ১৩০ টাকা ছিল। মাঝারি আকারের প্রতিকেজি মসুর ডাল ১৩০-১৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ১২৫ টাকা ছিল।

রাজধানীর নয়াবাজারে মো. কাইয়ুম বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির অনেক দাম। মাংস তো কেনাই যাচ্ছে না। অল্প দামে আগে ব্রয়লার মুরগি পাওয়া গেলেও সেটা এখন অনেক টাকায় কিনতে হচ্ছে। মাছ দিয়ে যে ভাত খাব তারও উপায় নেই। বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে যেখানে সাধ্যমতো বাজার করতে পারতাম। এখন সেটা করা যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় কম করে পণ্য কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। তবে যে টাকা নিয়ে বাজারে আসছি নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ২০০ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা দুই দিন আগেও ১৫৫ টাকা ছিল।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নিয়মিত বাজার তদারকি করছি। ইতোমধ্যে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। যেখানে অসাধুতা পেয়েছি, সেখানেই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনেছি। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।

আরো খবর.......

আপলোডকারীর তথ্য

আশুলিয়ায় সংসদসদস্যের নির্দেশনায় অবহেলিত জনপদে চকচকা রোড

দিন দিন বেড়েই চলছে পণ্য, বাজারজুড়ে দীর্ঘশ্বাস

আপডেট টাইম : ০৫:০৭:৫৯ অপরাহ্ণ, শুক্রবার, ১৯ আগস্ট ২০২২

সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে চিরচেনা সেই ভিড় নেই। প্রয়োজনের তাগিদে যারা এসেছেন পণ্যের বাড়তি দাম তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস পরিণত হয়েছে দীর্ঘনিঃশ্বাসে। একটু কম দামে পণ্য কিনতে ক্রেতারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছেন। কিন্তু কোথাও মিলছে না। পকেটের সঙ্গে দামের সমন্বয় হচ্ছে না। তাই বাজারভর্তি পণ্য থাকার পরও কিনতে পারছেন না অধিকাংশ ক্রেতা।

পরিস্থিতি এমন- কেজিপ্রতি ১৮০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে চাল। চিনির দাম বাড়ছে হু-হু করে। মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দামেও যেন আগুন। ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও এখনো ক্রেতার নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় চাহিদার অর্ধেক পণ্য কিনতেই পকেট ফাঁকা হচ্ছে ভোক্তার। শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগসহ একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সব সময় সুযোগ খোঁজে। কোনো উপলক্ষ্য পেলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা করে। এবারও তাই হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহণ ভাড়া বেড়েছে এমন অজুহাতে পণ্যের দাম যা বাড়ার কথা তার চেয়েও দ্বিগুণ বাড়িয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনো সংশ্লিষ্টরা নির্বিকার। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। কঠোরভাবে বাজার তদারকি করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ালে, সেসব ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

খুচরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমদামি মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম- পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া। এসব মাছের দামও এখন ২০০ টাকা কেজি ছাড়িয়েছে। বাজারে প্রতিকেজি পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২২০ টাকা। যা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া প্রতিকেজি ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ১৬০-১৭০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের প্রতিকেজি রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা, গ্রাস কার্প ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা ৫০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০ টাকা, চাষের কই ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী নুরে আলম বলেন, মাছের বাজার চড়া। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় মাছ আনতে পরিবহণ খরচ বেড়েছে। এজন্য বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে পাইকাররা বেশি দাম নিচ্ছে।

এদিকে গত কয়েকদিনের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি।  এক কেজি বরবটি কিনতে ক্রেতার ৭০ টাকা গুনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি বেগুন ৬০-৭০ টাকা, শসা হাইব্রিড ৮০ ও দেশি ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা, কচুরমুখী ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, টমেটো ১৩০-১৪০ টাকা।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকা। যা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৬০-৬২ টাকা। যা আগে ৫৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। আগে ৬৮-৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নাজিরশাইল মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫-৯০ টাকা। যা আগে ৭০-৮৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি সরু মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা। যা আগে ১৩০ টাকা ছিল। মাঝারি আকারের প্রতিকেজি মসুর ডাল ১৩০-১৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ১২৫ টাকা ছিল।

রাজধানীর নয়াবাজারে মো. কাইয়ুম বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজির অনেক দাম। মাংস তো কেনাই যাচ্ছে না। অল্প দামে আগে ব্রয়লার মুরগি পাওয়া গেলেও সেটা এখন অনেক টাকায় কিনতে হচ্ছে। মাছ দিয়ে যে ভাত খাব তারও উপায় নেই। বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে যেখানে সাধ্যমতো বাজার করতে পারতাম। এখন সেটা করা যাচ্ছে না। সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় কম করে পণ্য কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। তবে যে টাকা নিয়ে বাজারে আসছি নিমিষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ২০০ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা দুই দিন আগেও ১৫৫ টাকা ছিল।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নিয়মিত বাজার তদারকি করছি। ইতোমধ্যে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। যেখানে অসাধুতা পেয়েছি, সেখানেই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনেছি। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।