আমার মায়ের কারণে বাবার মনে-প্রাণে কাজ করতে পেরেছিলেন: প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট টাইম : ০৪:৩২:২৩ অপরাহ্ণ, সোমবার, ৮ আগস্ট ২০২২
- / ১৬৭ ৫০০০.০ বার পাঠক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নেপথ্য ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রেও আমার মা যখন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেগুলো আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে সহায়ক হয়েছে। এ কারণে আমার আব্বা মনে-প্রাণে দেশের জন্য কাজ করতে পেরেছিলেন।
সোমবার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২’ প্রদান উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
ঐতিহাসিক ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি প্রত্যাখ্যান এবং ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের প্রাক্কালে বঙ্গমাতার সময়োচিত সিদ্ধান্ত ও পরামর্শের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন, তখন বঙ্গমাতা ৬ দফা দাবির সঙ্গে আরও দুটি দফার প্রস্তাবিত অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের অভ্যুদয় অসম্ভব ছিল।
তিনি বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছুক ছিলেন-এমন একটি ধারণার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বঙ্গমাতা। তার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আব্বা প্যারোলে মুক্তি পেলে আর আন্দোলন-সংগ্রামের কিছুই থাকত না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাও প্রত্যাহার হতো না।
তিনি বলেন, সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়েছিল, বাকি আসামিদেরও মৃত্যুদণ্ড দিত। কেউ আর বেঁচে থাকতে পারত না এবং বাংলাদেশও আর স্বাধীনতার মুখ দেখত না।
জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদানের বিষয়ে তার মায়ের পরামর্শ দেওয়ার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আমাদের বহু নেতার নানা মতামত উপেক্ষা করে আমার মায়ের মতামতটাই গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের বক্তব্য দেওয়ার সময় আব্বার হাতে কাগজ বা কোনো কিছুই ছিল না। ওনার মনের যে কথাগুলো এসেছে, সেখান থেকে সেটাই তিনি বলে গেছেন।’ কিন্তু ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে অনেক বড় বড় নেতা আব্বার হাতে চিরকুট লিখে দিতেন-এটা বলতে হবে, সেটা বলতে হবে। তখন আমার মা বলে দিতেন, তুমি কারও কথা শুনবে না। নিজের মনে যা আসে, তা-ই বলবে।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করতেন। মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) কাজ করে যাচ্ছেন-এটা উপলব্ধি করেই মা সব সময় পাশে থেকে অনুপ্র্রেরণা দিয়েছেন। একজন স্ত্রী হিসাবে কোনো কিছু দাবি তো করতেনই না, বরং আমার বাবার যা কিছু প্রয়োজন ছিল, সেট তিনিই দেখতেন।
বঙ্গমাতার আদর্শ নিয়ে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশের নারীসমাজ যেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে, সেই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারীসমাজ তারাও যেন এই আদর্শটা ধারণ করে। শুধু চাওয়া-পাওয়া, বিলাসিতা-এটাই জীবন নয়। মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে এবং একটা আদর্শ নিয়ে চললে মানুষের জন্য অনেক অবদান রাখা যেতে পারে। তিনি জানান, তার মায়ের মহৎ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তার বাবার মহৎ অর্জন স্বাধীন বাংলাদেশ।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত পাঁচ বিশিষ্ট নারীকে ‘বঙ্গমাতা পদক-২০২২’ বিতরণী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
গোপালঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বঙ্গমাতার অবদানকে চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে ২০২১ সাল থেকে বছরে আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ প্রদান করা হচ্ছে।
এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সমাজসেবা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচ বিশিষ্ট নারী পদক পেয়েছেন। তারা হলেন-রাজনীতির ক্ষেত্রে সিলেট জেলার সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, অর্থনীতিতে কুমিল্লা জেলার সেলিমা আহমাদ এমপি, শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, সমাজসেবা ক্ষেত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার আছিয়া আলম এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য (মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার)। পুরস্কার হিসাবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের পদক, সম্মাননাপত্র এবং ৪ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।