পানির অভাবে বিপাকে ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা
- আপডেট টাইম : ০৭:১৫:২৪ পূর্বাহ্ণ, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২
- / ১৬৯ ৫০০০.০ বার পাঠক
কৃষিতে স্বনির্ভর দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এখানকার মাটি উর্বর হওয়ায় অন্যান্য জেলার তুলনায় যেকোনো ফসল উৎপাদন হয় বেশি। ধান,পাট,গম,ভুট্টা, আখসহ সব ধরনের ফসলের আবাদ বেশ ভালো হয় বলে আশে পাশের জেলা গুলির তুলনায় এখানকার কৃষকরাও বেশ স্বনির্ভর এবং স্বচ্ছল।
তবে বর্ষার এ ভারি মৌসুমেও ছিটেফোটা বুষ্টির পানির দেখা না পাওয়ায় এর উল্টো চিত্র দেখা দিয়েছে এ জেলায়। বৃষ্টির পানির অভাবে বিপাকে পড়েছে জেলার পাট ও আমন ধান চাষিরা। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ না দিতে পারায় একদিকে কৃষকরা যেমন মাঠের পাট কাটতে পারছেন না, অন্যদিকে পাট না কাটার ফলে সেসব জমিও খালি করে তৈরী করতে পারছেন না আমন চাষের উপযোগী করে। এতে সময় মত পাট জাগ দিতে না পারলে পাটের বাজার মূল্য এবং সময় মত ধান রোপণ করতে না পারলে ধানের উৎপাদনও কমে যাওয়া সহ কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে জেলা কৃষি অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে,চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৪শ ৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরে হয়েছিল ১ হাজার ২শ ২২হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে এ বছর জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। গতবছর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ৫১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। ফলন উৎপাদন হয় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬১০ মেট্রিক টন। জুলাই ১-৩১ তারিখ পর্যন্ত মূলত আমনের চারা রোপণের কাজ চলে। কিন্তু এ বছর জুলাইয়ের শুরু থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরোলেও বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা চারা রোপণ করতে পারেননি। উপজেলা জুড়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে আমন চাষ মূলত বৃষ্টি নির্ভর। সরকারি হিসেবেই আমন চাষের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে সেচের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। যেখানে সেচের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানকার চাষিরাও বাড়তি খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। ফলে টানা ভারী বৃষ্টি না হলে কী হবে তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে চাষিদের।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, গতমাসে(জুন মাস) বৃষ্টি হয়েছিল। আমরা ধান রোপণের জন্য জমি তৈরি শুরু করেছিলাম। চলতি মাসে আর কোন বৃষ্টি হয়নি। এতে জমি শুকিয়ে ফেটে গেছে। কি করবো বুঝতে পারছিনা।
বরুনাগাও এলাকার কৃষক রহমত বলেন, এবার বৃষ্টির অভাবে খাল-বিল প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে পাট পচাতে পানির সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে এখনও পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার পাট কাটতে পারেনি চাষিরা । যারা পাট কেটেছেন বা খালি জমিতে আমনের চারা রোপণ করবেন ভেবেছিলেন তাদের অনেকেও বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় বলেন, প্রতি বছর জুলাই মাসে গড়ে ৭০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। এ বছর এখনও পর্যন্ত বড়জোর ১৭০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানির সমস্যায় অনেকে পাট কেটে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। তানিয়ে আমরাও চিনতায় আছি। এখন পর্যন্ত কেবল মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে। দ্রুত ভারী বৃষ্টিপাত না হলে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, এ বছর খরার কারনে পাট চাষিরা পাট জাগ দিতে পাছেন না আবার আমন চাষিরাও পানির অভাবে জমি তৈরী করে আমন রোপন করতে পারছে না। এ অবস্থায় উৎপাদন যেন ব্যহত না হয় সেজন্য চারার বয়স ঠিক রেখে সম্পূরক সেচ প্রদান করে রোপন-কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে বিএডিসি ও বিএমডিএর সেচ পাম্পগুলো চলমান রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে দ্রুত বৃষ্টি না হলে এ অবস্থার অবনতি হবে।