ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে. ড. রেজাউল করিম মঠবাড়ীয়া আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫ইং ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের হস্তক্ষেপে মামলা প্রত্যাহার হওয়া টাঙ্গাইলবাসী খুশি! সভাপতি/সম্পাদকের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অনিয়মের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান সিইসির পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের নতুন পোশাক চুড়ান্ত নাইজেরিয়ায় ট্যাংকার ট্রাক বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ৮৬ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করা প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের যুবদল নেতাকে পিটিয়ে আহত করেছে স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতা বরগুনার, পাথরঘাটায় সাবেক ইউপি সদস্যকে হুমকি ও মারধর চার প্রদেশে দেশ ভাগ করার কথা ভাবছে সংস্কার কমিশন

ঠাকুরগাওয়ে বুড়া শিব মন্দিরে চড়ক পূঁজা অনুষ্ঠিত

সময়ের কন্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : ১১:০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ১৯৮ ৫০০০.০ বার পাঠক

ঠাকুরগাঁও সদর প্রতিনিধি।।

নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান প্রাপ্তি, দুরারোগ্য ব্যধি হতে মুক্তি লাভ ও মনের বাসনা পুরনের আশায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঠাকুরগাঁওয়ের ঢোলারহাট ইউনিয়নের বুড়া শিবের (ফাঁটাশিব)মন্দিরে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলা নববর্ষকে বরণ উপলক্ষ্যে ১ বৈশাখ শুক্রবার বিকেলে ঠাকুরগাও জেলার সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের বুড়া শিবের মন্দিরে চড়ক পুজার আয়োজন করা হয়। এরপূর্বে বৃহস্পতিবার এখানে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শিবপূজা অনুষ্ঠিত হয় ।সেই সঙ্গে মন্দির এলাকায় মেলা বসে। মেলায় হাজার হাজার সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষ ও যুবক-যুবতী ও ভক্তের সমাগম লক্ষ্য করা যায়।

দুপুর থেকে বিকেল অবধি চলে শিবের উদ্দেশ্যে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এছাড়াও মেলায় মাটি, বাঁশ ও কাঠের তৈরী বিভিন্ন তৈজষপত্রের একাধিক দোকান শোভা পায়। জিলাপি মিষ্টি ও বাতাশা আইসক্রিমের দোকানও বসে ।চিত্ত বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ শিশুদের বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম বেলুন, বাঁশি ইত্যাদির দোকান বসে।

মহিলাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভ্যানিটি ব্যাগ,চুড়ি,দুল ও পুঁথির মালা নিয়ে একাধিক পসরা সাজানো হয় ।সেখানে ছিল নারীদের উপচে পড়া ভীড়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কার্তিক চন্দ্র বর্মন জানান, দুরারোগ্য ব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ, নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান গ্রহন সর্বোপরি মনের বাসনা পুরণের আশায় হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা বুড়া শিবের কাছে মানত করে থাকে।

মানতকারীদের মনের বাসনা পুরণ হলে কেউ এখানে পাঠা,কবুতর ইত্যাদি উৎসর্গ করে। অনেকে নগদ টাকা ও ধান, চাল, সোনা দানা দিয়ে থাকে।
শুক্রবার ( ১৫ এপ্রিল ) বিকেল ৫ টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার মৃত মতিলালের ছেলে অরবিন্দু রায়(৪৫)কে পিঠে বরশি লাগিয়ে তাকে বাঁশের মাথায় বেঁধে দিয়ে চড়কির মত ঘুরানো হয়।

প্রায় ৫০ ফুট উঁচু একটি শিমুল গাছের মাথায় কয়েকটি বাঁশ বিশেষ কায়দায় আটকিয়ে রাখা হয় এবং বাঁশের মাথায় আগেই রশি ঝুলিয়ে রাখা হয়।চড়ক পূজার আনুষ্টানিকতা শেষে অরবিন্দু নিজেই তার পিঠে আটকানো বরশির সঙ্গে ঝুলন্ত রশি বেঁধে দেয় ।

এরপর নীচে থাকা আয়োজকরা অপর একটি বাঁশ কয়েকজন মিলে দীর্ঘ প্রায় ১০ মিনিট যাবত ঘুরায়। শরীরে বরশি ফুটিয়ে চরকির মতো ঘোরানোর কারনে এ পুজাটিকে চড়ক পুজা বলে।

চরকির মতো ঘুরার আগে অরবিন্দুর সহযোগীরা তার পিঠে বরশি ফুঁটায়।পিঠে বরশি নিয়ে তিনি প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে হেটে আসেন ঢোলারহাট পলিটেকনিক কলেজ মাঠে।সেখানে উপস্থিত হাজারো হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ ভক্তদের কাছে প্রদক্ষিন করেন।

এ সময় সনাতন ধর্মের ভক্তরা তাকে দক্ষিনা তুলে দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অরবিন্দু জানান,তিনি দীর্ঘ ১০ বছর যাবত চড়ক খেলায় অংশ নিচ্ছেন।প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখ উপলক্ষে কমপক্ষে ৮-১০ টি খেলায় অংশ নেন।

এজন্য তাকে ১০-১২ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এ খেলাটি পরিবেশন করলেও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত তিনি কোন প্রকার সম্মানী বা অনুদান পান না।
মন্দির কমিটির সভাপতি অখিল চন্দ্র বর্মন জানান, প্রতি বছর মন্দিরের উদ্যোগে এখানে শিব পুঁজা ও মেলার আয়োজন করা হয়।

মেলা হতে আয়কৃত অর্থে পুজার আনুষ্ঠানিকতা নির্বাহ করা হয়। এছাড়াও মানতের নগদ টাকা, চাল, পাঠা, কবুতর দশের উপস্থিতিতে বিক্রি করে মন্দিরের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। ২০১৯ সাল হতে এখানে ২দিন ব্যাপী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।মাঝখানে করোনার কারণে দীর্ঘ ২ বছর এখানে শিবপূজার আয়োজন বন্ধ ছিল।

স্থানীয় চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় সশরীরে মেলায় উপস্থিত থেকে পুলিশ ,চকিদার ও স্বেচ্ছাসেবকদের মেলার নিরাপত্তা বেষ্টনী সাজানো হয়।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মন নির্মল বলেন, এখন একদিনের পরিবর্তে ২দিন পালন করা হয়।শেষ দিনে চড়ক ঘোরানো হয়ে আসছে।

পিঠে বরশী ফুটিয়ে চড়ক পূজা উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে সাবেক অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন,আমরা যে একটি বছর পরিক্রমা করছি তাতে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। সেই সাথে সুখ দু:খের পাশাপশি কষ্টের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। কাজেই জীবনটা কষ্টের মধ্য দিয়ে প্রদক্ষিন বা অতিবাহিত করতে হবে। জীবনটা সব সময় সুখের হয় না।আছে দু:খ,আছে মৃত্যু।

চড়ক পূজায় এই ম্যাসেজ দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে যে,জীবন জীবন শুধু উপভোগের নয় ,কষ্টেরও ।কষ্টের মধ্য দিয়ে আমরা জীবনেকে উপভোগ করতে হবে তারই একটি প্রতীকি অনুষ্ঠান হচ্ছে চড়ক পূজা।

আরো খবর.......

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ঠাকুরগাওয়ে বুড়া শিব মন্দিরে চড়ক পূঁজা অনুষ্ঠিত

আপডেট টাইম : ১১:০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

ঠাকুরগাঁও সদর প্রতিনিধি।।

নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান প্রাপ্তি, দুরারোগ্য ব্যধি হতে মুক্তি লাভ ও মনের বাসনা পুরনের আশায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঠাকুরগাঁওয়ের ঢোলারহাট ইউনিয়নের বুড়া শিবের (ফাঁটাশিব)মন্দিরে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলা নববর্ষকে বরণ উপলক্ষ্যে ১ বৈশাখ শুক্রবার বিকেলে ঠাকুরগাও জেলার সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের বুড়া শিবের মন্দিরে চড়ক পুজার আয়োজন করা হয়। এরপূর্বে বৃহস্পতিবার এখানে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শিবপূজা অনুষ্ঠিত হয় ।সেই সঙ্গে মন্দির এলাকায় মেলা বসে। মেলায় হাজার হাজার সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষ ও যুবক-যুবতী ও ভক্তের সমাগম লক্ষ্য করা যায়।

দুপুর থেকে বিকেল অবধি চলে শিবের উদ্দেশ্যে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এছাড়াও মেলায় মাটি, বাঁশ ও কাঠের তৈরী বিভিন্ন তৈজষপত্রের একাধিক দোকান শোভা পায়। জিলাপি মিষ্টি ও বাতাশা আইসক্রিমের দোকানও বসে ।চিত্ত বিনোদনের জন্য নাগরদোলাসহ শিশুদের বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম বেলুন, বাঁশি ইত্যাদির দোকান বসে।

মহিলাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভ্যানিটি ব্যাগ,চুড়ি,দুল ও পুঁথির মালা নিয়ে একাধিক পসরা সাজানো হয় ।সেখানে ছিল নারীদের উপচে পড়া ভীড়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কার্তিক চন্দ্র বর্মন জানান, দুরারোগ্য ব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ, নিঃসন্তান দম্পতির সন্তান গ্রহন সর্বোপরি মনের বাসনা পুরণের আশায় হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা বুড়া শিবের কাছে মানত করে থাকে।

মানতকারীদের মনের বাসনা পুরণ হলে কেউ এখানে পাঠা,কবুতর ইত্যাদি উৎসর্গ করে। অনেকে নগদ টাকা ও ধান, চাল, সোনা দানা দিয়ে থাকে।
শুক্রবার ( ১৫ এপ্রিল ) বিকেল ৫ টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার মৃত মতিলালের ছেলে অরবিন্দু রায়(৪৫)কে পিঠে বরশি লাগিয়ে তাকে বাঁশের মাথায় বেঁধে দিয়ে চড়কির মত ঘুরানো হয়।

প্রায় ৫০ ফুট উঁচু একটি শিমুল গাছের মাথায় কয়েকটি বাঁশ বিশেষ কায়দায় আটকিয়ে রাখা হয় এবং বাঁশের মাথায় আগেই রশি ঝুলিয়ে রাখা হয়।চড়ক পূজার আনুষ্টানিকতা শেষে অরবিন্দু নিজেই তার পিঠে আটকানো বরশির সঙ্গে ঝুলন্ত রশি বেঁধে দেয় ।

এরপর নীচে থাকা আয়োজকরা অপর একটি বাঁশ কয়েকজন মিলে দীর্ঘ প্রায় ১০ মিনিট যাবত ঘুরায়। শরীরে বরশি ফুটিয়ে চরকির মতো ঘোরানোর কারনে এ পুজাটিকে চড়ক পুজা বলে।

চরকির মতো ঘুরার আগে অরবিন্দুর সহযোগীরা তার পিঠে বরশি ফুঁটায়।পিঠে বরশি নিয়ে তিনি প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে হেটে আসেন ঢোলারহাট পলিটেকনিক কলেজ মাঠে।সেখানে উপস্থিত হাজারো হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ ভক্তদের কাছে প্রদক্ষিন করেন।

এ সময় সনাতন ধর্মের ভক্তরা তাকে দক্ষিনা তুলে দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অরবিন্দু জানান,তিনি দীর্ঘ ১০ বছর যাবত চড়ক খেলায় অংশ নিচ্ছেন।প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখ উপলক্ষে কমপক্ষে ৮-১০ টি খেলায় অংশ নেন।

এজন্য তাকে ১০-১২ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এ খেলাটি পরিবেশন করলেও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত তিনি কোন প্রকার সম্মানী বা অনুদান পান না।
মন্দির কমিটির সভাপতি অখিল চন্দ্র বর্মন জানান, প্রতি বছর মন্দিরের উদ্যোগে এখানে শিব পুঁজা ও মেলার আয়োজন করা হয়।

মেলা হতে আয়কৃত অর্থে পুজার আনুষ্ঠানিকতা নির্বাহ করা হয়। এছাড়াও মানতের নগদ টাকা, চাল, পাঠা, কবুতর দশের উপস্থিতিতে বিক্রি করে মন্দিরের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। ২০১৯ সাল হতে এখানে ২দিন ব্যাপী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।মাঝখানে করোনার কারণে দীর্ঘ ২ বছর এখানে শিবপূজার আয়োজন বন্ধ ছিল।

স্থানীয় চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় সশরীরে মেলায় উপস্থিত থেকে পুলিশ ,চকিদার ও স্বেচ্ছাসেবকদের মেলার নিরাপত্তা বেষ্টনী সাজানো হয়।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মন নির্মল বলেন, এখন একদিনের পরিবর্তে ২দিন পালন করা হয়।শেষ দিনে চড়ক ঘোরানো হয়ে আসছে।

পিঠে বরশী ফুটিয়ে চড়ক পূজা উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে সাবেক অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন,আমরা যে একটি বছর পরিক্রমা করছি তাতে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। সেই সাথে সুখ দু:খের পাশাপশি কষ্টের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। কাজেই জীবনটা কষ্টের মধ্য দিয়ে প্রদক্ষিন বা অতিবাহিত করতে হবে। জীবনটা সব সময় সুখের হয় না।আছে দু:খ,আছে মৃত্যু।

চড়ক পূজায় এই ম্যাসেজ দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে যে,জীবন জীবন শুধু উপভোগের নয় ,কষ্টেরও ।কষ্টের মধ্য দিয়ে আমরা জীবনেকে উপভোগ করতে হবে তারই একটি প্রতীকি অনুষ্ঠান হচ্ছে চড়ক পূজা।