শেখ সিরাজুল ইসলাম : খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চাঁদখালী বাজার হতে পার্শ্ববর্তী কয়রার নকশা পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা মাসোয়ারার বিনিময়ে বীরদর্পে চলছে শতাধিক অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি। লক্ষ লক্ষ টাকা মাসোয়ারা পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও প্রভাবশালী মহল পরিবেশ বিধ্বংসী এই অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি উচ্ছেদ করতে নারাজ এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশে ও জনবসতি এলাকায় এই পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানো হচ্ছে। একেকটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে তিন থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। কয়লা তৈরীর জন্য প্রতিমাসে এসব চুল্লিতে লক্ষাধিক মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে গাছগাছালি, উজাড় হচ্ছে বন, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় সব দিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। পাইকগাছার চাঁদখালী বাজারের পর থেকে সারিবদ্ধ ভাবে অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন , মিন্টু , মিঠু, দিপু, জিয়া ,লাচু , হাবিব , খোকন মেম্বার, সাঈদ, শাহাদাত এনামুল মাষ্টার, আইয়ুব, জিল্লু সহ কয়েকজন। পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার নকশা এলাকায় কাঠ কয়লার চুল্লি চালাচ্ছেন মোঃ ইকরামিন সহ কয়েকজন। অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য চুল্লি মালিকদের রয়েছে একটি কমিটি। এই কমিটি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সবদিক ম্যানেজ করে থাকেন। জানা গেছে কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ী খোকন মেম্বার ও সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন মিঠু নামের একজন কাঠ কয়লা চুল্লি ব্যবসায়ী। জানতে চাইলে সাবেক এই মেম্বার অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা যে যার মত চুল্লি চালায়। তিনি আরো বলেন, আমি সরকারি দল করি, এমপি মানে উপজেলা যুবলীগ মানে ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি আমি, সবাই আমার দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাবে তা হবে না। কথা বলার সময় সাবেক এই মেম্বারের কথাগুলো জড়িয়ে ওলট পালট হয়ে যাচ্ছিল। তবে খোকন মেম্বার অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও চুল্লি মালিক মিঠু সহ দূই চুল্লি মালিক ও এলাকার অনেকেই সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, কাঠ-কয়লার চুল্লির কারণে রাস্তা দিয়ে চলা যায় না, চোখ জ্বালা করতে থাকে, দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকাবাসী আরও বলেন, এসকল কাঠ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারা আরো বলেন, কয়লার চুল্লি মালিকরা এলাকার প্রভাবশালী মহল সহ বিভিন্ন মহল ও দপ্তর মাসোয়ারা দিয়ে ম্যানেজ করে এই অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে তাদের এই অবৈধ কাজে তেমন কোনো বাধা আসে না এবং কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পায় না। এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকি সহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এলাকাবাসী আরও বলেন, এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের উপরে বড় বড় নেতাদের ছায়া রয়েছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এ এলাকাটি অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির নগরীতে পরিণত হয়েছে। পাইকগাছা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছগাছালি ও বন উজাড় করে সারিবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন যানবাহনে তাজা কাচা কাঠ গিয়ে পৌছাচ্ছে এসব কাঠ-কয়লা চুল্লিতে। কোন প্রকার বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই বীরদর্পে পরিবেশ বিধ্বংসী এই অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি চালানো হচ্ছে। কাঠ কয়লার চুল্লি চালানোর জন্য বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জিল্লু, খোকন মেম্বার, এনামুল মাষ্টার ও মিঠু নামের চুল্লি মালিক বলেন, আমাদের কোনো কাগজপত্র নাই, বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এটা চালাতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চুল্লি মালিক জিল্লু বলেন, বছরে একবার খুলনা থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আসেন, কিন্তু আসার আগে ফোনে জানিয়ে দেয় তখন সবাই কয়েকদিন চুল্লি বন্ধ রাখে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু ইলিয়াস বলেন, আমি অল্প কিছুদিন হলো চেয়ারম্যান হয়েছি, কয়লার চুল্লির বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে এলাকার অনেকে বলছেন, চেয়ারম্যানের এক আপনজন এই অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লির ব্যবসা করছেন যে কারণে তিনি কোন ব্যবস্থা নিবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বলেন, আমরা যেখানে এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালাচ্ছি, ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই চাঁদখালী ও নাকশা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। দ্রুত পরিবেশ বিধ্বংসী অবৈধ কাঠ কয়লার চুল্লি উচ্ছেদসহ চুল্লি মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।